ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর এখন একটি মঙ্গলময় রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলাই প্রধান উদ্দেশ্য বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে 'সংবিধান সংস্কার' শীর্ষক সেমিনারে তিনি একথা বলেন।
মঈন খান বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো এমন একটি সিস্টেম তৈরি করা যার মাধ্যমে আমরা একটি রাষ্ট্রব্যবস্থার সৃষ্টি করবো যা জনগণের জন্য মঙ্গলকর হবে। এর জন্য যে কাজ করা প্রয়োজন তাই আমরা করবো। আমাদের উদ্দেশ্য সৎ হলে এতে কোনো বাধা থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ আর ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান পরস্পরবিরোধী নয় বরং একটি অপরটির পরিপূরক। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়টিকে পর্যালোচনা করলে কোনো সংঘাত থাকবে না। এটা স্পষ্ট করতে হবে সংঘাতের রাজনীতিতে কোনো উন্নয়ন হবে না।
সেমিনারে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, তিন মাসের মধ্যে ঐক্যের মধ্যে ফাটল দেখা যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী শক্তি ফিরে আসতে পারে।
আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের চেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল দেশে নেই। কিন্তু তারা গণতন্ত্রের কথা বলে দেশকে ধ্বংস করেছে। নিজেদের স্বৈরাচারী শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। গণতন্ত্রের মুখোশ পরে স্বৈরশাসকে অবতীর্ণ হয়েছে। পরে আবার গণঅভ্যুত্থানে তারা হারিয়ে গেছে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ক্ষমতার এমন ভারসাম্য তৈরি করতে হবে যাতে কেউ জনগণকে ছাপিয়ে যেতে না পারে। সেইসঙ্গে কার্যকর করতে হবে সংসদকে।
সাকি বলেন, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে দুইবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না এমন বিধান চালু করা উচিত।
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানোসহ সংবিধান সংস্কারে নাগরিক ঐক্যের ৫ প্রস্তাব
সেমিনারে সংবিধান সংস্কারের লক্ষ্যে ৫ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছে রাজনৈতিক দল নাগরিক ঐক্য। সংবিধান সংস্কারবিষয়ক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার।
তিনি বলেন, সংবিধানের পুনর্লিখন বা বর্তমান সংবিধান ছুড়ে ফেলে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে গেলে যে প্যানডোরার বাক্স খুলে যাবে, তা বন্ধ করা অসম্ভব হয়ে উঠবে। কেউ ইসলামিক প্রজাতন্ত্র চাইতে পারে, কেউ চাইতে পারে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকে ভিত্তি করেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, কেউ আবার চাইতে পারে চব্বিশের আন্দোলনকে ভিত্তি ধরে নতুন করে বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা হবে। রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজসহ অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে বিভাজন এত স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে যে, তা সংঘাতে রূপ নিতে পারে।
নাগরিক ঐক্যের যে পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরে রয়েছে, তা হলো—সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্রের উৎস প্রধানমন্ত্রীকেন্দ্রিক জবাবদিহিতাহীন স্বেচ্ছাচারী কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা ব্যবস্থার বদল ঘটিয়ে সংসদ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার পৃথককরণ ও যৌক্তিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা; সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার করে আস্থা ভোট ও বাজেট পাস ছাড়াই সব বিলে স্বাধীন মতামত প্রদান ও জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার নিশ্চিত করা; জনগণের ওপর নিবর্তনমূলক আইন প্রয়োগের সাংবিধানিক ক্ষমতা বাতিল করা; বিচার বিভাগের পরিপূর্ণ কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করে গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠা করা; নির্বাহী বিভাগের আর্থিক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ রহিত করা।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
জয়ন্ত সাহা/এমএ/