আওয়ামী লীগের আলোচিত-সমালোচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভারতে পালিয়ে গেছেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই তিনি কোথায় আছেন তা নিয়ে নানা কৌতূহল ও গুঞ্জন ছিল। কিন্তু তার অবস্থান সম্পর্কে গতকাল মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) নিশ্চিত হওয়া গেছে।
কলকাতায় অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের অন্তত তিনজন কেন্দ্রীয় নেতা খবরের কাগজকে নিশ্চিত করে বলেছেন, গত শনিবার সকালে স্ত্রীসহ কলকাতায় এসেছেন ওবায়দুল কাদের। গত শুক্রবার শেষ রাতে উত্তরবঙ্গের কোনো একটি রুট দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে ঢোকেন আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই নেতা।
দলটির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক খবরের কাগজকে বলেন, ‘দেখা হয়নি, ফোনেও কথা হয়নি। তবে তিনি (কাদের) কলকাতায় এসেছেন এটুকু জানি। তবে তিনি সেখানে অবস্থান করবেন না। দুই-তিন দিন কলকাতায় থেকে আগামী সপ্তাহে দিল্লি চলে যাবেন। তিনি সাধারণ সম্পাদক থাকবেন কি না, এরপরে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
কলকাতায় আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগের মধ্যম সারির কয়েকজন নেতা জানান, ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা তাকে ভালোভাবে নেননি। বিশেষ করে দ্বিতীয়বার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলে তার প্রতি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন সময় বেফাঁস কথাবার্তা বলে দলকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করে দেন ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের মতো একটি দল ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পেছনে কেউ কেউ তাকে দায়ী করে থাকেন। ফলে কলকাতায় অবস্থান করলে এখানে থাকা ক্ষুব্ধ নেতারা ওবায়দুল কাদেরকে দেখলে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারেন। আর এমন পরিস্থিতিতে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটাও অস্বাভাবিক নয়। তাই তিনি দিল্লি চলে যাবেন। দেশে থাকলেও একই ঘটনা ঘটতে পারত। তার ওপর নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ।
গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। ওই দিন থেকেই দলটির মন্ত্রী-এমপিসহ উচ্চপর্যায়ের নেতারা কলকাতায় পালাতে শুরু করেন। এরপর থেকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ও এর বাইরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ভারত যাওয়ার সময় ওবায়দুল কাদেরকে সঙ্গে নিয়ে যাননি। ফলে ঢাকায় ঘুরেফিরে প্রশ্ন ওঠে তাহলে দলটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা ওবায়দুল কাদের কোথায়?
অনেকে ধারণা করেছিলেন ভারত হয়ে তিনি সিঙ্গাপুর চলে গেছেন। আবার কেউ কেউ মত দেন তিনি দেশেই আছেন। ওবায়দুল কাদের যশোরের একটি বাড়িতে অবস্থান করছেন- এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে গত আগস্টে সেখানে অভিযানও চালানো হয়। সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কারের ঘোষণাও দেয় সরকার। গত ১৯ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এমন ঘোষণা দিয়েছেন।
সর্বশেষ গত শনিবার রাতে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আছেন- এমন সন্দেহে একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হয়। হালিশহরের শান্তিবাগের ওই ফ্ল্যাটে ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রী ইশরাতুন্নেসার বড় ভাই নুরুল হুদাকে পায় পুলিশ।