বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং সাবেক সংসদ সদস্য বেগম রোজী কবির আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) ভোর ৫টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
তিনি দীর্ঘদিন যাবত লিভারজনিত রোগে ভুগছিলেন। রোজি কবির দুই ছেলে, দুই মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও রাজনৈতিক সহকর্মী রেখে গেছেন।
জানা যায়, ঢাকা থেকে মরদেহ চট্টগ্রাম নিয়ে আসার পরে জানাজার সময় ঠিক করা হবে।
এদিকে বেগম রোজি কবিরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন।
এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, বেগম রোজি কবিবের মৃত্যুর সংবাদ ছিল আমার জন্য ভীষণ কষ্টের। বিএনপির রাজনীতিতে তিনি ছিলেন একজন সৎ, ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতা। বিএনপি প্রতিষ্ঠার সময় থেকে চট্টগ্রামে দলকে সুসংগঠিত করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। সংসদ সদস্য থাকাকালীন চট্টগ্রামের উন্নয়নে তিনি কাজ করে গেছেন। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তিনি গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার একদফা আন্দোলনে সাহসী নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি ছিলেন দল-অন্তঃপ্রাণ নেতা। চট্টগ্রামে বিএনপির রাজনীতিতে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
তিনি মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবার ও স্বজনের গভীর সমবেদনা জানান।
রাজনৈতিক জীবনে রোজী কবির তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিএনপির জন্মলগ্ন থেকে দলটির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অসামান্য ভূমিকা পালন করেন বেগম খালেদা জিয়ার বিশ্বস্ত এই সহযোদ্ধা।
তিনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দল চট্টগ্রাম নগর কমিটির সভাপতি, মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারীসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
মূলত, তার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় বড় ভাই সাবেক ডেপুটি স্পিকার ও পরিকল্পনামন্ত্রী ব্যারিস্টার সুলতান আহমেদের হাত ধরে।
জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ছাড়াও তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বোর্ড মেম্বার ছিলেন।
সফল এই রাজনীতিবিদের রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বিচরণ ছিল উল্লেখ করার মতো। তিনি লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট, বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি, ডায়বেটিক অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ থ্যালেসামিয়া সমিতি, সাহিক, বিএনএসবি, শিশু একাডেমি, মহিলা ক্রীড়া সমিতি এবং আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
বেগম রোজী কবির চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর হালিশহরে প্রখ্যাত জমিদার পরিবার আজগর আলী চৌধুরীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দক্ষিণ হালিশহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল মাবুদ সওদাগরের ছেলে এবং বন্দর থানা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং চট্টগ্রামের বিখ্যাত হোটেল শাহজান এবং এশিয়াটিক কটনমিলের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। রত্নগর্ভা বেগম রোজী কবিরের দুই ছেলে, দুই মেয়ে বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশ-বিদেশে কর্মরত আছেন।
তার মৃত্যুতে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
অমিয়/