
নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য অস্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন করেন মহাসচিব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যেহেতু হয়ে গেছে তাই নির্বাচন বিলম্বের প্রয়োজন নেই। জনগণ এই ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার স্পষ্ট বক্তব্য আশা করে। নির্বাচন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো শেষ করেই দ্রুত নির্বাচন দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল ও অন্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা উচিত।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্থায়ী কমিটি মনে করে, বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০২৬ এর প্রথমার্ধে নির্বাচন করার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা যা একেবারে অস্পষ্ট। তার বক্তব্যে নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময়ের কথা বলা হলেও নির্বাচনের রোডম্যাপ সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করেননি। আবার তার প্রেস সচিব বলেছেন, ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যা পরস্পরবিরোধী। এই ধরনের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য আরও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।’
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি এই রায়কে সাধুবাদ জানায়। একই সঙ্গে আদালত স্বীকৃতি দিয়েছেন যে, নির্বাচিত পরবর্তী সংসদই সংবিধান সংশোধনীর একমাত্র উপযুক্ত ফোরাম।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মোট ৫৫টি দফায় সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে প্রস্তাবনায় এবং তফসিলে ব্যাপক পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন ও বিয়োজন করার মধ্য দিয়ে সংবিধানকে একদলীয় শাসন এবং রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের প্রধানতম হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছিল। সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্থ করে গণতন্ত্রকে বেহাত করে দেওয়া হয়েছিল। আদালত রায়ের ঘোষণার সময়ে কিছু কিছু বিষয়ে মন্তব্য ও পর্যবেক্ষণসহ উক্ত সংশোধনীর গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ অবৈধ ঘোষণা করেছেন, কিছু অংশ সংরক্ষণ করেছেন এবং অধিকাংশ আগামী সংসদের বিবেচনার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু রিট আবেদনকারীরাসহ দেশের জনসাধারণ আদালতের কাছে আরও বেশি কিছু সিদ্ধান্ত আশা করেছিলো।’
স্থায়ী কমিটির সভায় অবিলম্বে ফ্যাসীবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুর্ণবহাল এমন প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুরোপুরি বহাল হয়েছে তা এখনো বলা যাবে না। আদালত রিভিউ শেষে পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছে এবং জনগণের পক্ষে রায় এসেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাইরে ২০১৪, ১৮ ও ২৪ সালের নির্বাচন ছিল ভোটারবিহীন নির্বাচন এবং অবৈধ নির্বাচন। ডামি ভোটের বিষয়েও জনগণ চাইলে আদালতের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়া যেতে পারে।’
বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে এই সংবাদ সম্মেলন চলে প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী। এতে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম) এবং অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
শফিকুল ইসলাম/সাদিয়া নাহার/অমিয়/