বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান বলেছেন, আমরা হাসিনাকে তাড়াইছি প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হবে, পার্লামেন্ট সরকার হবে। তারপর স্থানীয় নির্বাচন হবে। এর বাইরে যারা রঙ বেরঙের কথা বলে তারা রঙ দেখছে রঙের কৌটা দেখছে না।
তিনি বলেন, আমরা গত ৩ আগস্ট স্লোগান দিয়েছিলাম "এক দফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি।" হাসিনা কি স্থানীয় সরকারের উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলো? সেতো কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিল। আমরাতো কেন্দ্রীয় সরকার, পার্লামেন্ট সরকারের পতন চেয়েছিলাম। কেন্দ্রীয় সরকারের পতন চেয়েছিলাম বলেই তো এখন কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচন হবে।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় জেলা শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে জেলা বিএনপি আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে এবং রাষ্ট্রের পতিত ফ্যাসিবাদীদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবিলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি এ জনসভার আয়োজন করে।
জামায়াতে ইসলামীকে মুনাফিক আখ্যায়িত করে তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বেশি বাড়াবাড়ি কইরেন না। বিএনপিরে লাল চোখ দেখাবেন না। ১৮ বছর বিএনপির ডানার নিচে লুকিয়ে ছিলেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শাড়ির আঁচল দিয়ে সন্তানের মতো লুকিয়ে রেখেছিল। এখন যেই না একটু সুযোগ পাইছেন তেমনি স্লোগান দেওয়া শুরু করেছেন, 'নৌকা আর ধানের শীষ, দুই সাপের এক বিষ।' আপনাদের যে আশ্রয় দিয়ে পাললো সামান্য একটু সুযোগ পাইছেন সব দখল কইরা ফেলছেন। এখন বলতেছেন সব ক্ষমতা আমরা নিমু বিএনপি আর আসতে পারবে না।
কোনো দলকেই বিএনপি শত্রু মনে করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ পালাইছে। আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নাই। হ্যাঁ জামায়াতে ইসলামী আছে। আমি জামায়াতে ইসলামীকে শত্রু মনে করি না। কিন্তু যদি ওই আইয়ুব খানের মতো, যদি ওই হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের মতো বাহানা করেন। চক্রান্ত করেন। জটিল পথে কুটিল পথে যদি নির্বাচনকে ধ্বংস করতে চান তাহলে কিন্তু বিএনপি কাউকে ছাড়বে না।
সাধারণ জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, "আজকে যারা নতুন করে এই দেশটাকে পাকিস্তানের পক্ষে নিয়ে যেতে চায়, তাদেরকে আপনারা চিনেন না। চিনতে পারছেন না আপনারা। তাদের চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয় নাই। আমরা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ চাই। আমরা জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশ চাই। আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রের বাংলাদেশ চাই। আমরা আগামী দিনে মেহনতী মানুষের বাংলাদেশ চাই। সেই বাংলাদেশ চাই বলেই আগামী দিনে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মানুষের অধিকারের দ্বার গণতন্ত্রের মাধ্যমে খুলতে চাই। সেই গণতন্ত্র বাংলাদেশে আমরা অবশ্যই কায়েম করবো। রাতের আঁধারে যারা চক্রান্ত করতে চান। যাদের বাপ দাদার নাম নাই, চান মলের বিয়াই। শতকরা দুই শতাংশ ভোট পাইবো না, ২০০ শতাংশের গল্প করেন। আমাদের নেত্রী অসুস্থ। উনি সুস্থ হয়ে দেশে আসলে ৫০ শতাংশ সমস্যার সমাধান এমনিতেই হয়ে যাবে।"
তিনি বলেন, হাসিনা কি করলো। হাসিনা উড়ে গেলো দিল্লি। মনে করতেছে দিল্লি থেকে বৈজন্তি মালা ট্যাংক নিয়া আসবো। আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে দেখা যাবে না আমি বলে গেলাম। শেখ হাসিনার সরকার, আপনি ২০১৪ সনে মানুষকে ভোট দিতে দেন নাই। ১৫৩টা পার্লামেন্ট সিট বিনা ভোটে নির্বাচিত করেছেন। ২০১৮ সনে আমাদের ধোঁকা দিয়ে নির্বাচনে নিছিলেন। নিয়া আপনি দিনের ভোট রাইতে করছেন। নিশি রাইতের এমপি বানাইছেন। ১৮ সনে মানুষকে আপনি বঞ্চিত করছেন। আর ২০২৪ সনের ৭ই জানুয়ারি আমি আর ডামির ভোট করছেন। নৌকা আর ট্রাক। কোনো মার্কাই মার্কা না, সব মার্কা হাসিনার মার্কা। সেই ৩টা নির্বাচনে আজকে যে যুবকের বয়স ৩৬ বছর সে ভোট দিতে পারে নাই। সেই ভোটটা আমরা দিতে চাই।
সকল চক্রান্ত রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, এই দেশে ইলেকশন হবে এবং সেটা পার্লামেন্ট ইলেকশন। ১৮ কোটি মানুষের দেশ। তারা হলো দেশের মালিক। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিবে তাদের বাড়ির পাহারাদার কে হবে? চক্রান্ত কইরেন না। চক্রান্ত করা ভালো না। আমি বলি সবসময় হাসিনার সময় ছিলো গভীর অন্ধকার। কিন্তু টর্চলাইট মারলে দেখা যাইতো। এখন হইলো গভীর কুয়াশা। এখন দুইটা লাইট জ্বালাইলেও গাড়ি চলতে চায় না। ইউনুস সাহেব দেশটা কুয়াশা হয়ে গেছে। আপনার কাছ থেকে বাংলাদেশের মানুষ এটা আশা করে না। আপনি বাংলার সুসন্তান। আমি মনে করি ১০টা মন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী যোগ করলে আপনি তার চেয়েও লম্বা। আপনি শুধু একজন প্রধানমন্ত্রী থাকার জন্য দেশটার সর্বনাশ কইরেন না ইউনুস সাহেব। এই ছেলেপেলের কথায় এখনো চুলদাড়ি উঠছে না। আমি ছেলেদের বাজে কথা বলতে চাই না। কিন্তু যে ছেলেরা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কথা বললে সাথে সাথে বেয়াদবের মতো উত্তর দেয় তাদেরকে বলি 'একসময় আমি হাসিনাকে বলতাম সাধু সাবধান।' যারা এসব করতাছেন তাদেরকে বলছি সাধু সাবধান। এইদিন কিন্তু থাকবে না। দিন কিন্তু আইসা পড়ছে। এই মূহুর্তে ইলেকশন হলে আল্লাহর রহমতে, আল্লাহর দয়ায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে দুই-তৃতীয়াংশের ওপরে মেজরিটি পাবে। এটা কেউ ঠেকাইতে পারবে না। সেই দলটাকে আপনারা বঞ্চিত করতে চান, চক্রান্ত করে। এই চক্রান্ত হতে দেওয়া যাবে না।
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মোঃ ওয়ারেছ আলী মামুন, আবু ওয়াহাব আকন্দ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য লায়লা বেগম, শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল। সভা সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম।
তাসলিমা/সিফাত/