
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের জনগণ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীকে বর্জন করতে চাইছে বলে মন্তব্য করেছেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বর্ষীয়ান বামপন্থি নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তিনি বলেছেন, বামপন্থিরা এবার নিজেদের সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবতীর্ণ হবেন। এদিকে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিপিবির ঢাকা সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময় তারা এসব কথা বলেন ও দাবি জানান।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘এবারের গণ-অভ্যুত্থানে জনগণ বলে দিয়েছে...নৌকা-লাঙ্গল-দাঁড়িপাল্লা আর শীষ; সব সাপেরই দাঁতে বিষ। এই চারটাকে বাদ দিয়ে বাকি সবাই একত্রিত হন। নয়া যুক্তফ্রন্ট গড়ে তোলেন। সেই যুক্তফ্রন্টের সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। সেই বার্তা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।’
সেলিম বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী লীগের বয়ান মিথ্যা ও কুৎসিত। তারা মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করেছে লুটপাটের জন্য। আওয়ামী লীগের বয়ানের কবর দিতে চাই আমরা। কিন্তু সেই কারণে কেউ যদি মুক্তিযুদ্ধকে কবর দিতে আসেন, মুক্তিযুদ্ধের মতো গর্জে উঠব।’
একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সেলিম বলেন, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যদি বাংলার মাটিতে তৎপরতা চালানোর অধিকার না থাকে, জামায়াতে ইসলামীর কোনো অধিকার থাকতে পারে না। সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী শক্তি একবার আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করে, আরেকবার বিএনপির কাঁধে ভর করে শক্তিশালী হয়েছে। তারা এখন বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে সেলিম বলেন, ‘যারা মনে করছেন, এখন বিরাজনীতিকীকরণ করবেন, সুশীল সমাজকে নিয়ে এসে নেতৃত্ব দেবেন কিংবা ওয়ান-ইলেভেনের মতো আরও একটা ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করবেন, তাদের বলব এ চেষ্টা করতে যাবেন না। এখন রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্মিলিতভাবে এ ঘোষণা দিতে হবে যে রাজনীতির বাইরে কোনো খেলা বাংলার মাটিতে হবে না।’
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘সংস্কারের নামে কী করতে চান, পরিষ্কার করে বলেন। এখন জরুরি কাজ হলো, এক মুহূর্ত দেরি না করে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। এইটার কোনো বিকল্প নাই।’
অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনার টেবিলে বসলেও সিপিবি নেতাদের সঙ্গে নির্বাচনের প্রসঙ্গে যে আলোচনা হয়নি তা জানিয়ে দেন প্রিন্স। তিনি বলেন, ‘শুনে রাখেন ভাই, তারা আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে না। তিনবার ডাকছিল ইস্যুভিত্তিক সংলাপে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে তারা বলছিল, তারা কথা বলবে (নির্বাচন নিয়ে)। কিন্তু এখনো সংলাপ করে নাই। আশা করব, আন্দোলনকারী শক্তিগুলোর সঙ্গে সরকার কথা বলবে। কথা বলে যতটুকু ঐকমত্য করা যায়.. কাজ শুরু করবে তারা।’
নির্বাচন নিয়ে কালক্ষেপণ করলে নানা অপশক্তি সুযোগ নেবে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রিন্স বলেন, ‘আপনি যদি ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চান তাহলে নানা অপশক্তি সুযোগ নেবে, আপনি শেষ কাজ করতে পারবেন না।’
সিপিবি সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, সংস্কার, নির্বাচন ও গণতন্ত্র একটি গোলক ধাঁধায় ঘুরতে থাকলে দেশ সংকটের মধ্যে পড়বে।
মাহফুজ/এমএ/