
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকার ও ছাত্রদের মনোভাব নিয়ে সন্দিহান বিএনপি। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আগে কেন স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা চলছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দলটি।
সোমবার ( ৬ জানুয়ারি) রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা হয়।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রে সরকার প্রথমে বলল এর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা ছাত্রদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তারা ঘোষণাপত্র তৈরির দায়িত্ব নিল। অন্তর্বর্তী সরকার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সংবিধান বাতিল করার ম্যান্ডেট কে দিয়েছে? সংবিধানের বাইরে গেলে তো দেশে আবারও অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে। ফলে সংবিধানের আলোকেই সরকারকে সবকিছু বিবেচনা করতে হবে।
বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ সফর ও উন্নত চিকিৎসার ব্যাপারে দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়। স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা করানোর ব্যাপারে শুরু থেকেই বাধা দিয়ে এসেছে। তিনি বিদেশে চিকিৎসা শেষে দেশ ও জনগণের মাঝে ফিরে আসবেন- বৈঠকে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও ভোটার হওয়ার সবনিম্ন বয়স ১৭ বছর হওয়া নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। দুজন সদস্য বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কেন আয়োজনের চেষ্টা চলছে। অতীতে কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো স্থানীয় সরকার নির্বাচন করেনি? এর পেছনে সরকারের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে! ওই নেতারা আরও বলেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভোটার হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর। উপমহাদেশে বাংলাদেশের প্রতিবেশী সব দেশেই ভোটার হওয়ার বয়স ১৮ বছর। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপে ১৮ বছরের আগে কেউ ভোট দিতে পারে না।
তখন একজন সদস্য বলেন, দেখা যাবে আগামী দিনে কেউ একজন এসে বলবেন ভোটার হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৬ বছর। বাংলাদেশসহ উন্নত বিশ্বের সব দেশেই সাবালক ধরা হয় ১৮ বছর থেকে। ভোটার হওয়ার সর্বনিম্ন বয়সসীমা বদলানোর কোনো দরকার নেই। যারা বদলানোর কথা বলছেন তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় খবরের কাগজকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে পারে না। তাদের কাজ হলো জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের তোড়জোড় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হতে পারে। এতে হয়তো কিছু লোক বেনিফিশিয়ারি হবে। কিছু রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ওই বৈঠকের আলোচনায় উঠে আসে। বৈঠকে অংশ নিয়ে নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক সদস্য বলেন, দেশের জনগণ ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৫ সালের শেষে অথবা প্রয়োজনে আরও ৬ মাস বাড়ানোর কথা বলেছে। এই কথার কোনো অর্থ নাই। কেন জানি তারা ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করছে। দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চায়। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা না দেওয়ার পেছনে সরকারের সঙ্গে ছাত্র নেতৃত্ব যোগ দিতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করেন। তাদের মতে, এতে ছাত্ররা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে কিছুটা সময় পাবে। আবার সরকারের কেউ কেউ এই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে সহায়তা করছে। দেশের প্রধান ইস্যু নির্বাচনের পথকে আরও বিলম্বিত করতে একটার পর একটা ইস্যু সৃষ্টি করা হচ্ছে।
বৈঠকে স্থায়ী কমিটির তিনজন নেতা বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানের আলোকে র্তী সরকার গঠনসহ সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে সংবিধান বাতিলের কথা যারা বলছেন, তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। তাদের মতে, এর আগে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের অপসারণ ইস্যুতে এই চক্রটি দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করেছিল। এদের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলসহ সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়। ২ ঘণ্টার বৈঠক শেষ হয় ১০টা ৪৫ মিনিটে। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম), ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন প্রমুখ।