
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ করে প্রায় ১০০ পণ্য ও সেবায় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও শুল্ক বৃদ্ধি করায় তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ জানিয়ে রবিবার (১২ জানুয়ারি) বিবৃতি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও খেলাফত মজলিস। এ ছাড়া বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে পৃথকভাবে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করবে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহার চায় জামায়াত
বর্ধিত ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, আরোপিত শুল্কের কারণে দৈনন্দিন জীবনযাপনের খরচ আরও এক দফা বাড়বে। নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে। শতাধিক পণ্যের ওপর আরোপিত ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধিতে জনগণের মধ্যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘কর বৃদ্ধিতে সরকার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়টিতে নজর রাখেনি। জীবনযাত্রায় বাড়তি চাপ যাতে তৈরি না হয়, সে জন্য অবিলম্বে শতাধিক পণ্যের ওপর আরোপিত ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’
জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি থেকে বিরত থাকার আহ্বান চরমোনাই পীরের
বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও শুল্ক বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্যাসের দাম প্রায় ১৫০ শতাংশ বাড়ানোর গণবিরোধী সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম চরমোনাই পীর।
তিনি বলেন, সরকার রাজনৈতিক দল ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা না করে মানুষের ওপর বর্ধিত ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে জনরোষ বৃদ্ধি পাবে। এ পরিস্থিতিতে জনগণের ওপর যাতে অর্থনৈতিকভাবে কোনো রকম চাপ সৃষ্টি না হয়, সে বিষয় ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান চরমোনাই পীর।
তিনি বলেন, ভ্যাট বাড়ালে বাজারে পণ্যের মূল্য বাড়বে এবং গরিব ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবনযাপন আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
নতুন করারোপ জনজীবনে দুর্বিষহ অবস্থার সৃষ্টি করবে: খেলাফত মজলিস
প্রায় ১০০ পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপ ও টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে খেলাফত মজলিস। দলটির আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘ইন্টারনেট ব্যবহার, এলপি গ্যাসসহ প্রয়োজনীয় অনেক পণ্য ও সেবা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণে জনজীবনে দুর্বিষহ অবস্থার সৃষ্টি হবে। মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অন্যায্য শর্ত পূরণে সরকার জনগণের ওপর নতুন করে এই করের বোঝা চাপিয়েছে। আমরা সরকারি এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।’
ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ‘আগুনে ঘি ঢালার মতো’: সাইফুল হক
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক রবিবার শেরপুরে জেলা প্রতিনিধি সম্মেলনে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, অস্বাভাবিকভাবে প্রায় ১০০ পণ্যের ওপর ভ্যাট ও কর আরোপের সিদ্ধান্ত ‘আগুনে ঘি ঢালার’ মতো। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ যখন দিশেহারা, তখন এই পদক্ষেপ জনদুর্ভোগ আরও চরমে নিয়ে যাবে। সরকারের ব্যর্থতার দায়ে মানুষ শাস্তি পেতে পারে না। আইএমএফের পরামর্শে নেওয়া এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানান তিনি।
ফ্যাসিস্টের রাস্তায় হাঁটছে সরকার: মাহমুদ স্বপন
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেছেন, পণ্যের দামের ওপর নতুন করে ভ্যাট বসিয়ে বর্তমান সরকার বিগত ফ্যাসিস্টদের দেখানো পথেই হাঁটছে। গণ-অভ্যুত্থানে হাজার হাজার মানুষ জীবন দিয়েছে সামগ্রিক রাজনীতি ও রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তনের জন্য। কিন্তু আন্দোলনের অগ্রসৈনিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া, জনগণের পকেট কাটতে ভ্যাট বসানোর সরকার নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
রবিবার সকালে রাজধানীর মিরপুরে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।