
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি মেহনতি মানুষ ও শ্রমিক শ্রেণির গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকলেও তাদের সঙ্গে সরকারের বহু যোজন দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেণের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে জাতীয় স্মরণসভায় তিনি এ কথা বলেন।
সাইফুল হক বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকে আমি বলি, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থান। ছাত্রদের পরে কেউ যদি প্রাণ দিয়ে থাকেন, তারা হলেন এই মেহনতি মানুষ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা এখন সরকারের কাছ থেকে যোজন যোজন দূরে। এ সরকারে তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। উপরন্তু তাদের কোনো ভাষা, তাদের কোনো গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা ও আপত্তি শোনার মতো সময় এই সরকারের গত পাঁচ মাসে হয়নি।’
দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রবল আকার ধারণ করলেও অন্তর্বর্তী সরকারের তা নিয়ে বড় ভাবনা নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাইফুল হক বলেন, ‘বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হয়েছে। গত পাঁচ মাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগ যেখানে সেটি হলো বৈষম্য নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। বিশেষ করে অর্থনৈতিক যে বৈষম্য তা নিয়ে কার্যত কোনো আলোচনা হয়নি। শুধু ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রতি বছরের মতো এবারও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। এবার বলা হয়েছে, ১৬ বিলিয়ন ডলার আওয়ামী লীগ আমলে দেশ থেকে পাচার করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দুর্বৃত্ত অর্থনীতি যদি রূপান্তর করা না যায়, যদি পরিবর্তন করা না যায়, তাহলে ওপর ওপর রাজনৈতিক সংস্কার দিয়ে বেশি দূর যাওয়া যাবে না। অর্থনীতির দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে রাজনীতির যে নেক্সাস এটা পরিবর্তন করা মনোযোগের ভেতরে নেই। আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা শুভঙ্করের ফাঁকির মতো।’
অর্থনৈতিক বৈষম্যের পাশাপাশি সামাজিক, জাতিগত ও ভাষার যে বৈষম্য কিংবা বাঙালি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে পাহাড় বা সমতলের নানা জনগোষ্ঠীর বৈষম্যগুলো নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে তাৎপর্যপূর্ণ কোনো আলোচনা হয়নি বলে হতাশা প্রকাশ করেন সাইফুল হক।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম এ সংগঠক বলেন, ‘আমাদের ছাত্ররা এখন রাজনৈতিক সংস্কারের বিষয়ে যতটা আগ্রহী, ততটাই আগ্রহী রাজনৈতিক দলগুলো, শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা। কিন্তু অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য অথবা জাতিগত যে বৈষম্য তা নিয়ে আলোচনা নেই বললেই চলে। আমার কাছে মনে হচ্ছে, ওপর ওপর কিছু আলোচনা হবে। শিক্ষিত বা মধ্যবিত্ত সমাজে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সংস্কার নিয়ে যত আলোচনা হোক, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংস্কার না হলে তা অর্থহীন থেকে যাবে।’
স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন নিজেরা করি-র নির্বাহী পরিচালক খুশী কবির, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, এলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি বিচিত্রা তির্কি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদুল সুমন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে রবীন্দ্রনাথ সরেণের কর্মময় জীবনের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক পাভেল পার্থ।
জয়ন্ত/নাবিল/