
বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে অন্তর্বর্তী সরকার শতাধিক নিত্যপণ্যের ওপর ভ্যাট ও শুল্ক আরোপ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন সিপিবি ও বাসদ নেতারা। তারা বলেছেন, দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়লে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন আরও বিপদের মুখে পড়বে।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সিপিবি ও বাসদের বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন নেতারা।
শতাধিক পণ্যে শুল্ক-করারোপ, টিসিবির ট্রাকসেল বন্ধ, ৪৩ লাখ পরিবারের ফ্যামিলি কার্ড বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং গ্রাম-শহরে শ্রমজীবীদের জন্য রেশন ও ন্যায্যমূল্যের দোকান চালুর দাবিতে আয়োজন করা হয় এসব বিক্ষোভ সমাবেশ। বাজার সংস্কার করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান বাম নেতারা।
সিপিবির সমাবেশে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। ভ্যাটের নামে অপ্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর মধ্য দিয়ে সাধারণ জনগণের পকেট কাটা তো ছিল স্বৈরাচার শাসকের নীতি।’
তিনি বলেন, ‘উচ্চ মুদ্রাস্ফীতিতে সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। এ সময় সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল, সরকার জনগণের দাবি অনুযায়ী রেশনব্যবস্থা, ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা নেবে। সরকার এ পথে না হেঁটে বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে ভ্যাট বৃদ্ধি, সরকারি কর্মচারীদের প্রণোদনা দেওয়াসহ নানা সংকট মোকাবিলায় সাধারণ মানুষের পকেট কাটার যে নীতি বেছে নিল, তা দেশবাসী প্রত্যাখ্যান করছেন।’
বাসদ ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে দলটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘আইএমএফের পরামর্শে এই করারোপের কোনো নৈতিক ভিত্তি বর্তমান সরকারের নেই। এটি শ্রমজীবী, কর্মজীবী নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের শামিল।’
বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও গণমুক্তি ইউনিয়নের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন আহমেদ নাসুর সভাপতিত্বে সোমবার সেগুনবাগিচার আ ফ ম মাহবুবুল হক মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ মাহবুব) কেন্দ্রীয় নেতা মহিনউদ্দিন চৌধুরী লিটন, বাংলাদেশের সোশ্যালিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সভাপতি মাসুদ খান।
তারা বলেন, ‘সরকার ঘোষণা দিয়েছে সিন্ডিকেট ও ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না। এভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতাই শুধু নয়, তাদের সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। এখনো নির্দিষ্ট কিছু করপোরেট ও ফড়িয়া সিন্ডিকেটই মূলত বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকারের সিদ্ধান্ত দেশীয় সিন্ডিকেট, একচেটিয়া পুঁজিপতি ও সাম্রাজ্যবাদেরই স্বার্থরক্ষা করছে।’