
চাঁদাবাজি-দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা বিএনপির সভাপতি ওমর আলীসহ ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ৯ নেতার পদ-পদবি স্থগিত করেছে জেলা বিএনপি। একই সঙ্গে গঠন করা হয়েছে একটি তদন্ত কমিটি। আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরই পদ হারানোদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেবে দল।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) রাতে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. আবু নাছির ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ স্বাক্ষরিত পত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পদ হারানোরা হলেন- বাঘাইছড়ি উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. ওমর আলী, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম জিন্নাত, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আমির হোসেন, পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদাৎ মোল্লা, কাচালং কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব সারওয়ার গাজী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো. নুর উদ্দিন, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ইমরান হোসেন জুম্মান, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রহমান ও পৌর যুবদলের সদস্য নুর কবির। এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রায় একই অভিযোগে বাঘাইছড়ি পৌর বিএনপির সদস্য মো. নাছির, বাঘাইছড়ি পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. বখতেয়ারকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এই নেতাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সিগারেট ব্যবসা, বাজার ফান্ড, পৌর টোল, বালুর মহাল দখল, জনগণকে জিম্মি করে টাকা আদায়, কাজ বন্ধ করে চাঁদা আদায়, রাতের আঁধারে বিভিন্ন বাগানের গাছ কেটে নেওয়াসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে।
এসব নেতার বিরুদ্ধে দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি কার্যকলাপ এবং দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগের ভিত্তিতে রাঙামাটি জেলা বিএনপি তাদের দলীয় পদ-পদবি স্থগিত করেছে। গেল ১৫ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত তিনটি পৃথক পত্রের মাধ্যমে দলীয় পদ স্থগিত করে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে জেলা বিএনপি।
সম্প্রতি বাঘাইছড়ি উপজেলা ও পৌর বিএনপি নেতৃবৃন্দের লিখিত অভিযোগ ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আপনারা দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করাসহ দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত রয়েছেন। এরূপ অপকর্ম হতে বিরত থাকার জন্য কেন্দ্রীয় ও রাঙামাটি জেলা বিএনপির পক্ষ হতে দলের সকল নেতাকর্মীকে বহুবার নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু আপনারা দলের দায়িত্বশীল পদে বহাল থেকে দলের সকল নির্দেশনা অমান্য করে এসব গঠনতন্ত্র ও শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে দলীয় সুনাম ও দলীয় শৃঙ্খলা নষ্ট করছেন। এ কারণে আপনাদের সকল পর্যায়ের দলীয় পদ-পদবি ও পদের কার্যক্রম দলের গঠনতন্ত্রের ৫ (গ) ধারা মোতাবেক অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হলো।
এ ছাড়া পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এই নেতাদের দলের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা কোনো দলীয় পদ-পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না।
এদিকে দলের জন্য বিব্রতকর ও মানহানিকর এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে উল্লিখিত অভিযোগ তদন্ত ও স্বচ্ছতার সঙ্গে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য রাঙামাটি জেলা বিএনপি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মো. আবু নাছিরকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আলী বাবর, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শাকিল, এসএম শফিউল আজম এবং আব্দুল কুদ্দুছ।
এই কমিটিকে আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সরেজমিনে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জিয়াউর জুয়েল/জোবাইদা/