
এই গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট যে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি, যারা এতগুলো মানুষকে হত্যা করে রাজপথে রক্ত ঝরিয়েছে, গুলি করেছে এবং বাংলাদেশকে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রকে বিদেশি তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছে; সেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার নৈতিক ভিত্তি এবং নৈতিক অধিকার নাই। এ দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের কবর রচনা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুর গণঅধিকার পরিষদের জেলা কার্যালয় উদ্বোধনকালে সাংবাদিকদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন তিনি।
রংপুর জেলা ও মহানগর গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয়ের উদ্বোধন উপলক্ষে সভাপতিত্ব করেন জেলা সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) শের এ খোদা আসাদুল্লাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রাশেদ খাঁন, গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ও মুখপাত্র মো. ফারুক হাসান, জেলা সদস্য সচিব আশিকুর রহমান আশিক।
নুরুল হক নুর বলেন, গণঅধিকার পরিষদ বাংলাদেশের ব্যতিক্রমী একটি রাজনৈতিক দল। সেনা সামরিক বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় কিংবা সরকারের অনুগত কোনো দল নয়। গণঅধিকার পরিষদ আন্দোলনের অগ্নিগর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া একটি দল। পুরোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত রেখে আগামীর নতুন বাংলাদেশ গঠন সম্ভব নয়। বাংলাদেশের বর্তমান যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা, ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার। তাই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মাধ্যমে আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।
তিনি বলেন, বিগত দেড় দশকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের যে দুঃশাসন সেটা কার্যত বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে একটি সংকটে ফেলেছিল। যার ফলে এই গণ-অভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। এই গণ-অভ্যুত্থানের আইনি, রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সকল বৈধতাদানের জন্য একটি ঘোষণাপত্র প্রয়োজন ছিল।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু একটি নির্বাচনের জন্য এবং একটি ভোটের জন্য এই গণ-অভ্যুত্থান হয়নি। রাষ্ট্র পুনর্গঠন মেরামত এবং সংস্কারের মাধ্যমে গণ-আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে। তাই আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাষ্ট্রসংস্কার অনিবার্য হয়ে উঠেছে। সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার আলোকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শেষে, সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থাপন করবে। সেটার অধিকাংশ বাস্তবায়নের পরে তারা নির্বাচনের পথে হাঁটবেন।
নুর বলেন, বর্তমান সরকারকে গতিশীল করার জন্য জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করার আহ্বান জানান তিনি। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হলে এই নির্বাচন সবচেয়ে মডেল এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে।
তিনি বলেন, এই সরকারের যে জনসমর্থন বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে একটা বিরাট জনসমর্থন রাজনৈতিক দলের বাইরে ও নাগরিক সমাজ ও সামাজিক সংগঠনগুলো সরকারকে সমর্থন দিয়েছে। একটা গণ-অভ্যুত্থানের পরে সংবিধান পরিবর্তন হয় এবং পূর্বের সংবিধান স্থগিত করা হয় এই জায়গায় যদি ঘোষণাপত্র দেওয়া হয় তা হলে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের আচরণ আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের মতো হয়ে উঠেছে। এটি মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি করেছে। পূর্বের সিস্টেম যদি বলবৎ থাকে, তা হলে কি আমরা এই বাংলাদেশের জন্য জীবন দিয়েছি বলেও গন্তব্য করেন তিনি।
সেলিম সরকার/জোবাইদা/