
দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরে বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ মুহিবউল্লাহ বাবুনগরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কুমিল্লার পাঁচবারের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) তিনি এই সাক্ষাৎ করেন।
দেশে আসার পর বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ নিজের নির্বাচনি আসন কুমিল্লার মুরাদনগরে শোকরানা মাহফিলসহ নানা কর্মসূচিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এরই মধ্যে আলেম ওলামাদের সঙ্গে ভালবাসার টানে ছুটে যান বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় বিদ্যাপিঠ দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসাসহ বেশ কয়েকটি দেশসেরা কাওমী মাদ্রাসায়।
সফরের শুরুতেই তিনি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি বাবুনগর মাদ্রাসায় যান। এ সময় তাকে অভ্যর্থনা জানান বাবুনগর মাদরাসার আলেম ওলামাগনসহ হেফাজতে ইসলামের নেতারা। এ সময় তিনি হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ মুহিবউল্লাহ বাবুনগরীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। হেফাজতে ইসলামের আমিরের স্বাস্থ্যের খবর নেন সাবেক এই মন্ত্রী।
হেফাজতে ইসলামের আমিরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতিচারণ করেন এবং দীর্ঘ আলাপ শেষে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য দোয়া চান।
দীর্ঘ ১৩ বছর পর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে হেফাজতে ইসলামের আমির বলেন- ‘এ দেশের আলেম-ওলামারা কায়কোবাদ সাহেবকে খুব ভালবাসেন। কারণ তিনি সবসময়ই আলেম-ওলামা মাদ্রাসার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখেন। তার মতো দ্বীনদার পরহেজগার নেতা সব থানায় থাকলে দেশের মানুষ উপকৃত হতো। আল্লাহ, রাসূল, ইসলাম নিয়ে কেউ কটূক্তি করার সাহস পেত না। তিনি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।
সেখান থেকে নানুপুর ওবায়দিয়া মাদ্রাসায় যান সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদ। সেখানে নানুপুর মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল পীরে কামেল মাও সালাহউদ্দিন নানুপুরীসহ মাদরাসা ও দরবারের হাজার হাজার ছাত্র শিক্ষক ও তৌহিদী জনতা স্বাগত জানান।
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদকে নিজেদের অভিভাবক মনে করেন আলেম ওলামা পীর মাশায়েখ ও কুরআনপ্রেমী জনতা। আল্লাহতায়লা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদকে জাতির খেদমতে আরও অনেক হায়াত দান করুক বলে মন্তব্য করেছেন নানুপুরের বর্তমান পীর মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরী।
এরপর সাবেক এই এমপি দেশের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি মারকায মেখল মাদরাসায় যান। বিশ্বব্যাপী স্বনামধন্য আরবি বিশ্ববিদ্যালয় হাটহাজারী মাদরাসায় গেলে মাদরাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা খলিল আহমদ ক্বুরাইশী, মাওলানা আনোয়ার শাহ আযহারী, মাওলানা মুনির আহমদ, মাওলানা শফিউল আলম, মাওলানা আবদুস সবুরসহ সমস্ত উস্তাদরা অভ্যর্থনা জানান সাবেক এ মন্ত্রীকে।
কাওমি অঙ্গনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাটহাজারী মাদ্রাসার উস্তাদ তোলাবার ভালবাসায় সিক্ত সাবেক এই মন্ত্রী বলেন- ‘আলেম ওলামারা নবিদের ওয়ারিশ। তাদের সম্মান করলে আল্লাহ খুশি হন। আর তাদের যারা বেইজ্জত করে জুলুম নির্যাতন করে আল্লাহ তাদেরকে বেইজ্জত করেন। আলেম ওলামাদের সম্মান করুন। আল্লাহর বিধানমতে জিবন পরিচালনা করার আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় তিনি শীর্ষ দুই আলেমকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের মিথ্যা মামলার খড়গ ও জীবনের হুমকি নিয়ে ১৩ বছর দেশান্তর থেকে ফেরার পর সর্বপ্রথম আমার মায়ের কবর জিয়ারত করেছি। এরপরই দুই আকাবিরের কবর জিয়ারত ও শীর্ষ আলেমদের সঙ্গে সাক্ষাতে চট্টগ্রাম সফরে এসেছি। আমার জন্য খাস করে দোয়া করবেন, যেন দেশ, জাতি, উম্মাহ ও দ্বীনের কল্যাণে কাজ করে যেতে পারি।
আলেম ওলামাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি সাবেক মন্ত্রী কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফি (র.) আওয়ামী লীগের নির্যাতনের শিকার সাবেক আমির শহিদ আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী (র.) মুফতীয়ে আজম ফয়জুল্লাহ (র.), আল্লামা জমিরউদ্দীন নানুপুরী (র.), আল্লামা সুলতান আহমদ নানুপুরী আল্লামা হারুন (র.)-এর কবরে জিয়ারত করেন।
বিশেষ করে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আওয়ামী জালিম স্বৈরশাসকের বিচারিক হত্যাকাণ্ডের শিকার শহিদ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কবরে জিয়ারত করেন।
দীর্ঘ এ সফরে কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের সফরসঙ্গী ছিলেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক মাও. গাজী মুহাম্মদ ইয়াকুব ওসমানীসহ বিএনপি নেতারা।
সুমন/