
দলকে সমৃদ্ধ করতে মেধাবী ও আদর্শবান লোকদের দলে আনতে নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, ‘মেধাবী, সততা ও আদর্শবান মানুষকে দলে আনতে হবে। আমাদের ভালো মানুষ দরকার। দলকে সমৃদ্ধ করতে হবে। রাষ্ট্র থেকে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। সেজন্যই কাজের লোকদের বের করে আনতে হবে।’
সোমবার (২০ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে ভার্চ্যুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় ২০ টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করে নিজের সদস্যপদ নবায়ন করেন তারেক রহমান। পরে মির্জা ফখরুল, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কোষাধ্যক্ষ রাশিদুজ্জামান মিল্লাতসহ কয়েকজন নির্ধারিত ফি দিয়ে একসঙ্গে সদস্যপদ নবায়ন করেন। আগামীকাল মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে সদস্য ফরম সংগ্রহ করা যাবে।
তারেক রহমান বলেন, ‘সদস্যপদ নবায়ন করার দিনটি আমাদের জন্য আনন্দের। দীর্ঘদিন গ্রাম-গঞ্জের অসংখ্য নেতা-কর্মী অবর্ণনীয় নির্যাতনের মধ্য দিয়ে গেছেন। তা-ও আজকে তারা এই দলের সঙ্গে আছেন। এখনো যারা দল ধরে রেখেছে, তাদের আবারও আমরা একত্রিত করতে চাই। সেজন্যই সদস্যপদ নবায়ন কার্যক্রম শুরু। সারা দেশে লাখ কোটি নেতা-কর্মীর মাঝে আমরা আনন্দ ছড়িয়ে দিতে চাই। আমরা জনগণের সমর্থন পাব, ইনশাআল্লাহ।’
তিনি বলেন, ‘দেশের ওপর দিয়ে একটা ঝড় গেছে। যাতে দেশটি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। প্রত্যেক সেক্টরকে লন্ডভন্ড করে দেওয়া হয়েছে। নেতা-কর্মীদের গুম-খুন করা হয়েছে। বিএনপিসহ অন্য দলের নেতা-কর্মীদের গুম-খুন ও পঙ্গু করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও নিষ্পেষিত করা হয়েছে। এখন সেই ঝড় কেটে গেছে। তবে মানুষ ঝড়ের পর কিন্তু লন্ডভন্ড অবস্থার পুনর্গঠন করে। এই ঝড়ে আমরা বহু সহকর্মীকে হারিয়েছি। অনেকেই হয়তো রাজনীতি থেকে সরে গেছেন।’
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘দল পুনর্গঠনের পর আমরা রাষ্ট্রকেও পুনর্গঠন করব। ৩১ দফা কার্যকর করা হবে। সেজন্য মেধাবী, সততা ও আদর্শবান মানুষকে দলে আনতে হবে। যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকরা কিন্তু এই কাজ বাস্তবায়ন করবেন। সারা দেশের নেতা-কর্মী ও মানুষ আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। অতীতের মতোই আপনারা এই কর্মসূচিটি সফল করবেন।’
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘গতবার কিন্তু আমাদের কর্মসূচিতে একটি দুর্বলতা ছিল। এবার সেটিকে পাশ কাটিয়ে আমাদের তৃণমূলের আরও গভীরে যেতে হবে। বক্তৃতা নয়, আমাদের দরকার কাজ। যে উদ্যম নিয়ে আমরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, আসুন আমরা সবাই মিলে কাজ শুরু করি যাতে দল এবং দেশকে পুনর্গঠন করতে পারি।’
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সদস্যপদ নবায়ন চলমান প্রক্রিয়া। যারা সদস্য আছেন তারাই নবায়ন করবেন। কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে জেলায়, জেলা থেকে উপজেলায় এবং সেখান থেকে ইউনিয়নে যাবে। এটা সাংগঠনিক সম্পাদকরা করবেন। তাহলে আমরা এক মাসের মধ্যেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।’
অতীতের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অতীতে যেটা হয়েছে, বিশেষ করে দলের আগ্রহী এমপি পদপ্রার্থী, তারা সবগুলো কিনে নিয়ে চলে গেছেন। এটা খেয়াল রাখতে হবে। এটা যেন সাংগঠনিকভাবেই যায়, যারা এমপি পদপ্রার্থী তারা যেন আবার না নিয়ে চলে যায়। আমাদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে খুব বেশি। আমাদের নেতা-কর্মীরা কেন জানি রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘গত ১৫-১৭ বছর কিন্তু বিএনপির নেতা-কর্মী বা সদস্য নির্যাতন, গুম-খুন ও লোভ-লালসা অতিক্রম করে ঐক্যবদ্ধ থেকেছে। তাদের কারণেই তো আমরা আজ নেতা। সেজন্য তাদের কাছেই প্রথমে গিয়ে সদস্যপদ নবায়ন করতে হবে। সদস্যপদ নবায়ন করতে গিয়ে এবার একটি তালিকা থাকা দরকার। তবে এমন লোকদের দলে আনা যাবে না, যাদের আনলে বদনাম হবে। সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সদস্য নবায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা সাধারণ মানুষের কাছে যাব। মেধাবী নেতৃত্ব তৈরি করতে হলে এর বিকল্প নেই। মেধাবীরাই কিন্তু আগামীর সংসদ সদস্য। যারা জাতিকে নেতৃত্ব দেবে, শাসনব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করবে। আমি প্রত্যাশা করি, জিয়াউর রহমান যেভাবে জাতিকে সমৃদ্ধ করার জন্য মাঝে মধ্যে মেধাবীদের বেড়াতে নিয়ে যেতেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও সেটি করবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সংস্কারের ৩১ দফা রূপরেখা আরও গভীরভাবে সারা দেশে মানুষের মাঝে তুলে ধরতে হবে। সেইসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যায় অপকর্মের খতিয়ান জাতির কাছে তুলে ধরতে হবে। আমরা জাতির কাছে ম্যাসেজ দিতে চাই যে, আগামীর বাংলাদেশ নতুন বাংলাদেশ। শহিদদের প্রত্যাশার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে হবে। আমাদের কেউ যাতে সমালোচনার সুযোগ না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, কোষাধ্যক্ষ রাশিদুজ্জামান মিল্লাত প্রমুখ।
শফিকুল/সালমান/