
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে শীর্ষ পদে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা। এই ঘটনার জেরে এবার সিলেট মহানগর কমিটিকে শোকজ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানো নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বছরের শুরুতেই সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত ১৫ জানুয়ারি। কিন্তু নির্বাচনে শীর্ষপদের পাশাপাশি সর্বোচ্চ পদধারী হয়েছেন আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা। তাই ১৬ জানুয়ারি ভোরে ফলাফল ঘোষণা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আদালতপাড়া থেকে গড়িয়েছে বিভিন্ন মহলে। বিশেষ করে তৃণমূলের বিএনপির নেতাকর্মী ও আইনজীবীদের তথ্যমতে সুষ্ঠু ভোট হওয়ার পরও দলীয় কোন্দলেই ভরাডুবি হয়েছে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের।
কারণ নোটিশটি মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েছ লোদী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী বরাবর পাঠানো হয়। নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সম্প্রতি সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী প্যানেলকে বিজয়ী করার জন্য সিলেট মহানগর বিএনপি যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আপনি ও সাধারণ সম্পাদকের উদাসীন এবং নির্বিকার ভূমিকার জন্য জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী প্যানেলের বিপর্যয় ঘটে। সুতরাং এহেন দায়িত্বহীনতার কারণে কেন আপনাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব আগামী ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে দলের নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য আপনাদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।’
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেট শাখার কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও মহাসচিব এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। এর পর দলীয় প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল, যুগ্ম মহাসচিব মো. কামাল হোসেন ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলনকে দিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়। আগামী ৭ দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, বারের নির্বাচন হয়েছে। আমি আইনজীবী না। এখানে সচেতন আইনজীবী আছেন। আমরা যতটুকু কাজ করার করেছি, সেখানে আমাদের দলের হাই কমান্ড হয়তো ভেবেছে আমরা সঠিকভাবে কাজ করিনি। সে জন্য তারা নির্বাচনে হেরেছে। তাই আমাদেরকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আমরা এই নোটিশের উত্তর আমাদের মতো করে দেব।
এ ব্যাপারে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী খবরের কাগজকে বলেন, সাংগঠনিক একটি প্রক্রিয়ায় এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছে। এই নোটিশের জবাবের প্রেক্ষিতে মূল বিষয়টি সামনে আসবে।
২০২৩ সালের ১০ মার্চ কাউন্সিলরদের ভোটে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক পদে ইমদাদ হোসেন চৌধুরী নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দলীয় অনুষ্ঠানে নাসিম হোসাইনের অনুপস্থিতি ও ছাত্র আন্দোলন চলাকালে তার বিদেশ যাত্রাসহ নানা কারণে নাসিম হোসাইনকে বাদ দিয়ে মিফতাহ সিদ্দিকীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ইমদাদ হোসেন চৌধুরী দায়িত্ব পালন করেন। এর পর গত ৪ নভেম্বর ১৭০ সদস্যবিশিষ্ট সিলেট মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে রেজাউল হাসান কয়েস লোদীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইমদাদ হোসেন চৌধুরীকে আবারও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
শাকিলা ববি/জোবাইদা/