
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে খুলনায় শক্তিশালী সাংগঠনিক অবস্থান গড়ে তুলছে বিএনপি। দ্বিধা-বিভক্তি কাটিয়ে প্রায় ১৬ বছর পর মহানগর বিএনপির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে সম্মেলনের মাধ্যমে শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচিত করা হয়।
কঠোর ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। একইভাবে প্রায় দেড় দশক পর খুলনা নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে দলীয় কার্যালয় চালু করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলের অবস্থান দৃঢ় করার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিও শুরু করেছে দলটি।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, খুলনায় বিএনপিতে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব বেশ পুরোনো। এ অবস্থা থেকে দলকে উত্তরণে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি মহানগর বিএনপির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে উপস্থিত থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর মধ্যে সম্মেলন সফল করতে ২১টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ছাড়া খুলনা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়। পরে ১৩ ডিসেম্বর মনিরুজ্জামান মন্টুকে আহ্বায়ক ও আবু হোসেন বাবুকে সদস্যসচিব করে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
ওই কমিটি তৃণমূল পর্যায়ে দলকে শক্তিশালী করতে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠনে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ ছাড়া গত ১২ ফেব্রুয়ারি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে খুলনায় জেলা বিএনপির জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
তবে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে জামায়াতে ইসলামী। এরই মধ্যে দলটি খুলনার ছয়টি আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। তারা হলেন খুলনা-১ আসনে বটিয়াঘাটা উপজেলা জামায়াতের আমির শেখ আবু ইউসুফ, খুলনা-২ আসনে মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, খুলনা-৩ আসনে মহানগরের আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, খুলনা-৪ আসনে জেলার নায়েবে আমির অধ্যক্ষ মাওলানা কবিরুল ইসলাম, খুলনা-৫ আসনে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং খুলনা-৬ আসনে খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ।
জামায়াত নেতারা জানান, গত ১৫ বছর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও পুলিশের চাপে তারা ঠিকমতো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারতেন না। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এখন অনুকূল পরিবেশে দলকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল জানান, এখন আর দুঃশাসন না থাকায় জামায়াত নির্বিঘ্নে দলীয় সব কর্মকাণ্ড করতে পারছে। দলকে শক্তিশালী করার জন্য তারা কাজ করছেন।
একইভাবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করতে মহানগর সম্মেলনকে সফল করতে চায় খুলনা বিএনপি। মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন, ‘ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে প্রতিটি স্তরে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা হয়েছে। দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতারা নেতৃত্বে আসছেন। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হবে।’
২০০৯ সালের ২৩ নভেম্বর সর্বশেষ খুলনা মহানগর বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে নজরুল ইসলাম মঞ্জু সভাপতি ও মনিরুজ্জামান মনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর শফিকুল আলম মনাকে আহ্বায়ক ও শফিকুল ইসলাম তুহিনকে সদস্যসচিব করে ৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ২০২২ সালের ১ মার্চ ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
এ ছাড়া বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে জেলা বিএনপিতে আমীর এজাজ খানের নেতৃত্বে থাকা আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। সেখানে ১৩ ডিসেম্বর মনিরুজ্জামান মন্টুকে আহ্বায়ক, আবু হোসেন বাবুকে সদস্যসচিব ও অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলামকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে জেলা বিএনপির তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।