
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি গত সোমবার মধ্যরাতে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার তিনটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে। এরপর থেকে এসব কমিটি নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের একাংশের মধ্যে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায় তাদের একাংশ। তাদের অনেকেই কমিটি বয়কট করে পদত্যাগ করেছেন।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে একাংশ। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেলকে চট্টগ্রামে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। পরে তারা তিন দফা দাবিতে নগরে সড়ক অবরোধ করে। এতে তীব্র যানজটে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে।
গতকাল দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের সমন্বয়ক আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুবাইরুল মানিক, সিয়াম ইলাহী ও আব্দুল বাছির নাঈম। এ সময় তারা ঘোষিত কমিটি গতকাল বেলা ৩টার দিকে বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন করতে তিন দিন সময় বেঁধে দেন। একই সঙ্গে নানা অপরাধে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন। তারা অবৈধ কমিটি, ছাত্রলীগের কমিটি, ডট গ্যাংয়ের কমিটি, কিশোর গ্যাংয়ের কমিটি বলে নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
সংবাদ সম্মেলনে সমন্বয়ক জুবাইরুল মানিক বলেন, ‘চট্টগ্রামে তিন কমিটিই প্রহসনের কমিটি। এতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশীজনদের মূল্যায়ন করা হয়নি। চাঁদাবাজ, নারী হেনস্তাকারী ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোরী ছাত্র আন্দোলনে কেন্দ্রীয় সদস্য রাসেল আহমেদ এই কমিটির বিষয়ে অবগত নন। আরেক সমন্বয়ক খান তালাত রাফির ইন্ধনে আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেল এই প্রহসনের কমিটি গঠন করেন। কারণ ঘোষিত কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাফি। আমরা এই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। এই কমিটি বাতিল না করা পর্যন্ত হাসনাত আবদুল্লাহ, আরিফ সোহেল ও খান তালাত মাহমুদ রাফিকে বীর চট্টলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘খান তালাত রাফি চট্টগ্রামের ইতিহাস জানেন না। তিনি চট্টগ্রামকে ধারণ করেন না। এখানের তরুণদের পালস তিনি বোঝেন না। আমাদের অবমূল্যায়ন করা হলে হাসনাত, আরিফ সোহেল, রাফি কাউকেই আমরা ছেড়ে কথা বলব না। আমাদের দরকার নেই তাদের। আমরা চট্টগ্রামে আন্দোলন করেছি নিজ উদ্যোগে। তারা আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। যখন ইন্টারনেট বন্ধ ছিল তখন কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এখন কেন তাদের আমাদের লাগবে।’
আরেক সমন্বয়ক আব্দুল বাছির নাঈম তিন দফা দাবি ঘোষণা করেন। এগুলো হলো বেলা ৩টার মধ্যে কমিটি বাতিল করে তিন দিনের মধ্যে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে কমিটি গঠন করতে হবে, আগামী তিন দিনের মধ্যে কমিটি গঠনের পূর্বে অভিযুক্ত সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে ও ব্যক্তির পছন্দে গঠিত এই কমিটিগুলো গঠনের সঙ্গে জড়িত সবার নাম-পরিচয় প্রকাশ করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
কিন্তু তারা বেলা ৩টার আগে নগরের লালখান বাজারে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় জিইসি মোড় থেকে পতেঙ্গার দিকের সড়কে যানজট দেখা দেয়। শত শত যানবাহন সড়কে আটকে যায়। পথচারী, চালকদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেকে কাজীর দেউড়ি হয়ে সিআরবি ঘুরে টাইগারপাস দিয়ে গাড়ি নিয়ে বের হন। কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুল করিমসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সড়ক ছাড়েননি। সমন্বয়ক আব্দুল বাছির নাঈম বিকেল ৪টায় খবরের কাগজকে বলেন, ‘সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চলবে। আমাদের বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি বৈঠকে বসেছে।’
জানা গেছে, সোমবার রাতে ৭৫৪ সদস্যবিশিষ্ট তিনটি কমিটি ছয় মাসের জন্য ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটি। এতে চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক করা হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) রিজাউর রহমানকে। আর আরিফ মঈনুদ্দিনকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ জেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জোবায়ের হোছেনকে আহ্বায়ক আর জোবায়েরুর আলম মানিককে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। অন্যদিকে চবির ইয়াছির আরাফাত চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও তাজমীর হোসেনকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। তিন কমিটিতেই বাকিদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও মুখপাত্র, মুখ্য সংগঠক এবং সংগঠক করা হয়েছে।
এদিকে ঘোষিত কমিটিতে স্থানপ্রাপ্তরা বেলা আড়াইটায় ষোলশহরে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেন।