
রাজধানীতে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের প্রকাশ্যে কর্মসূচি দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টার মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতারা।
শুক্রবার (৭ মার্চ) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে হিযবুত তাহরীরের প্রকাশ্য কর্মসূচি ঠেকাতে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ব্যর্থতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়ে নেতারা এই অভিযোগ তোলেন।
হিযবুত তাহরীর আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে উল্লেখ করে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেন, ‘৫ আগস্টের পর যখন বাকস্বাধীনতা ফিরে এলে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে একটি জঙ্গি গোষ্ঠী। বিশ্বজুড়ে একটি বিষয় চাউর হয়েছে যে, জঙ্গিগোষ্ঠী হাসিনাকে সরিয়েছে। হাসিনার যে মতবাদ তা প্রতিষ্ঠার জন্য এ দেশে জঙ্গিবাদ মিছিল-মিটিং এবং মেয়েদের হেনস্তা করার চেষ্টা করছে। আমরা বলতে চাই, যারা শেখ হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবে, তাদের এক হয়ে প্রতিহত করব। যাদের নীরবতার কারণে প্রকাশ্যে হিযবুত তাহরীর উগ্রবাদী মিছিল করছে, সেই সব শেখ হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী মদদদাতাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে যারা উগ্রবাদের মিছিল বের করেছিল, তাদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে।’
হিযবুত তাহরীরের এমন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে ফিরয়ে আনতে চায় মন্তব্য করে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যসচিব জাহিদ আহসান বলেন, ‘একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন সমাবেশের আগে মেট্রোরেলের পিলারসহ বিভিন্ন জায়গায় তারা প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে। এত কিছুর পরও এই নিষিদ্ধ সংগঠনটির বিরুদ্ধে এই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। পুলিশ জুলাই বিপ্লবে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালাতে পারে, কিন্তু তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করে। এখন এই বিষয়টি ভাবার সময় এসেছে। হিযবুত তাহরীর যেই আকাঙ্ক্ষা পোষণ করতে চায়, তার সঙ্গে এ দেশের মুসলমান, আলেম সমাজের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করে গণ-অভ্যুত্থানকে বানচালের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে চায়। আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে সুবিধা দেয়, এমন কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই বাস্তবায়ন হতে দেব না।’
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনা সব সময়ই এই বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন। আমরা বাংলাদেশকে সেই জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা হতে দেব না। বায়তুল মোকাররমে যখন হিযবুত তাহরীর মিছিল করছিল, তখন মনে হচ্ছিল পুলিশ তাদের কোনো একটা রাজনৈতিক দল সামাজিক সমস্যা নিয়ে কর্মসূচি পালন করেছে, এভাবে ট্রিট করছিল। এই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যর্থতার কারণে তারা জমায়েত হতে পেরে মিছিল করতে পেরেছে। এর জবাব এই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দিতে হবে এবং এই ব্যর্থতার দায় স্বীকার করতে হবে।’
এতে অন্যদের মধ্যে ঢাবি মুখ্য সংগঠক হাসিব আল ইসলাম ও মুখপাত্র রাফিয়া রেহনুমা হৃদি বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ও ঢাবি শাখার নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে হিযবুত তাহরীরের প্রকাশ্যে এমন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে মশাল মিছিল করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। ঢাবির মধুর ক্যানটিন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় তারা ‘আমার মাটি, আমার মা’, ‘জঙ্গিবাদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘একটা জঙ্গি ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
মাহফুজ