সফররত মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল অ্যান চুলিকের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ‘দীর্ঘ আলোচনা’ হয়েছে।
গত বুধবার (১৬ এপ্রিল) রাতে বৈঠকের পর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। বৈঠকে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ আরোপ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় গুলশানে যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি হেড অব মিশনের বাসভবনে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ।
আমীর খসরু বলেন, ‘আলোচনার মধ্যে প্রথমত বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয় আলোচনা হয়েছে। সেখানে অর্থনীতির কথাও ওঠে এসেছে। ট্যারিফ আরোপের বিষয়টা ওঠে এসেছে। ট্যারিফের বিষয়ে বাংলাদেশ কী চিন্তা করছে সেটা আলোচনায় ওঠে এসেছে। আমরা বলেছি, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমরা সবাই মিলে ট্যারিফ ইস্যুটা কীভাবে অ্যাড্রেস করা যায়, এটা করতে হবে। ট্যারিফের বিষয়টা একটা টলারেবল লিমিটের মধ্যে না আনলে তো আমাদের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুতরাং এ বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী চুলিকের সঙ্গে বৈঠকের আগে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। ওই বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, যেখানে আমীর খসরুও উপস্থিত ছিলেন।
নিকোল চুলিকের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের বৈঠকেও জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সবাই জানতে চাচ্ছেন নির্বাচন কবে, আমরা কী চিন্তা করছি। এটা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে।’
আমীর খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফিরে না এলে আমরা বলেছি যে, বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের ভেতরে বাইরে যে সিদ্ধান্তগুলো স্থগিত আছে, যারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না, সেটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একটা নির্বাচিত সরকার আসার পরে যে সিদ্ধান্তগুলো সহজে আসবে এবং জনগণের সমর্থনে যে সরকার থাকে তাদের সিদ্ধান্তগুলো নিতে যত সহজ হয়, এটা অন্য ক্ষেত্রে হয় না।’
সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যারা বিনিয়োগ করবে এটা তো সংক্ষিপ্ত কিছু না, এটা স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি। সে জন্য সবাই অপেক্ষা করছে একটা নির্বাচিত সরকারের দিকে, তাদের নীতি কী হবে, তারা জানতে চেয়েছেন। বিএনপির নীতি কী হবে, অর্থনৈতিক নীতি কী হবে, সেটা আমরা বিস্তারিত তাদের বলেছি।’
আমীর খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশে যত সংস্কার হয়েছে অর্থনৈতিক সংস্কার, রাজনৈতিক সংস্কার সব বিএনপির সময় হয়েছে। বহুদলীয় গণতন্ত্র, মুক্ত বাজার অর্থনীতি, বিচার বিভাগের সংস্কার সব বিএনপির সময়ে হয়েছে। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা যেটা এসেছে তা বিএনপির অর্থনৈতিক সংস্কারের কারণেই এসেছে। আগামী দিনে আমরা বড় অর্থনৈতিক সংস্কারে যাব, সেটাতে তারা আশ্বস্ত হয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা আপনাদেরকে কী বলেছে জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ‘ট্যারিফের বিষয়টা নিয়ে আমরা যেরকম শঙ্কার মধ্যে আছি, তারাও আছে। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক তো কিছুটা ব্যাঘাত ঘটবে। সে জন্য তারা জানতে চেয়েছে, আমরা কী করতে যাচ্ছি। বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা যেটা চিন্তা করেছি সেটা বলেছি। আমরা এটা ওপরে আরও কাজ করছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিক তিন দিনের সফরে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশে আসেন। আগামীকাল শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) পর্যন্ত সফরে প্রধান উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।