আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সমাজের বিভিন্ন স্তরে গোপনে অবস্থান করছে। তাদের হাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে, যা দিয়ে তারা পেট্রোল বোমা কিনে ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া এবং মানুষ হত্যা করার মতো ভয়ংকর কর্মকাণ্ড চালাতে সক্ষম বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া ঘর পরিদর্শন শেষে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, এই অস্ত্র ও অর্থ তারা কোথা থেকে পাচ্ছে, কারা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে- তা সরকার ও প্রশাসনের জানার কথা। তাদের অনেকেই পার্শ্ববর্তী দেশ বা অন্যান্য দেশে পালিয়ে গেছে। কিন্তু দেশে তারা কোথায় লুকিয়ে আছে, তা খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা সরকারের দায়িত্ব।'
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই সন্ত্রাসীদের দমন করতে আপনাদের নতুন কোনো আইন প্রণয়ন করতে হবে কি না, তা জনগণের কাছে পরিষ্কার করুন। যদি সরকার এ বিষয়ে ব্যর্থ হয়, তাহলে তারা জনগণের চোখে একটি ব্যর্থ সরকারে পরিণত হবে।
রিজভী বলেন, 'ফ্যাসিস্ট শক্তি মানবেন্দ্র ঘোষকে কিনতে পারেনি বলেই তাকে টার্গেট করেছে। মানবেন্দ্র ঘোষ ছিলেন পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনের মতো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিবেদিতপ্রাণ। তার প্রতিভা ও অটল মনোভাব ফ্যাসিস্টদের আতঙ্কিত করেছিল। তাই তারা তার শিল্পকর্ম পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে।'
রিজভী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি এসব দমন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে জনগণ আবারও রুখে দাঁড়াবে। জনগণ প্রস্তুতি নেবে প্রতিরোধ গড়ার। কারণ সরকারের দায়িত্বই হলো দেশের প্রতিটি নাগরিকের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।'
তিনি আরও বলেন, আজ আট মাস পেরিয়ে গেছে, তারপরও তারা কীভাবে উঁকি দেয়, কীভাবে গ্রামে ঢুকে এতটা ভয়ংকর আক্রমণ চালিয়ে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিতে পারে? তা আমার মাথায় আসে না।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই বর্বর ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এই দায় এড়ানোর সুযোগ সরকারের নেই।
রিজভী বলেন, 'আপনারা যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, সেটি কোন আইনের বলে? সাংবিধানিকভাবে এর কোনও ভিত্তি নেই। সমস্ত গণতন্ত্রকামী মানুষ আপনাদেরকে সমর্থন দিয়েছেন বলেই আজ আপনারা এখানে অবস্থান করছেন।'
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আপনারা আওয়ামী লীগকে নিয়ে কী করবেন, তা নিয়ে আপনাদের উপদেষ্টারা নানাভাবে মত প্রকাশ করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ রাজনীতি করবে কি করবে না, সেটা আইন ও আদালতের বিষয় বলছেন। তবে এখন আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কী হবে, তারা কীভাবে রাজনীতি করবে? সে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এখন আপনাদের হাতে। কারণ প্রশাসন আজ আপনাদের নিয়ন্ত্রণে। যারা ১৫ বছর যাবত শেখ হাসিনাকে পাহারা দিয়েছে, ব্যাংক লুট করেছে, অন্যের সম্পদ লুট করেছে, টাকা পাচার করেছে তারা আজ এই জনসমুদ্রের ভেতর কোথায় লুকিয়ে আছে অন্তর্বর্তী সরকার যদি খুঁজে বের করতে না পারে তাহলে তো এই সরকারকে মানুষ ব্যর্থ সরকার বলবে।'
বিএনপির এ সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, 'এই সরকার নির্বাচন নিয়ে কী ধরনের তালবাহানা করছে, তা দেশবাসী স্পষ্টভাবে দেখছে। অথচ এ সরকারই গণতন্ত্র সংগ্রামের ফসল। তাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা থাকা উচিত। জনগণের কাছে সরকারকে জবাব দিতে হবে। মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন লাগলো কীভাবে? তিনি তো ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নিজের চিত্রকর্ম ও শৈল্পিক চেতনার মাধ্যমে প্রতিবাদ করেছেন।'
পরিদর্শন শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে মানবেন্দ্র ঘোষের পরিবারকে এক লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।
এ সময় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খানম রিতা সহ কেন্দ্রীয় ও জেলা বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আসাদ/মেহেদী