'আমাদের দেশটা এখন খুব খারাপ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে' উল্লেখ করে জনগণ, জাতি, রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের জনগণকে যদি বিভক্ত হয় তাহলে দেশ আবারও ভারতীয় আধিপত্যবাদের হাতে চলে যাবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ থাকতেই পারে। তাই বিএনপি-জামায়াত, এনসিপিসহ সব দলকে জাতীয় স্বার্থে, দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।'
বুধবার (২৩ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবে গণতন্ত্র ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র, সংস্কার ও বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, 'বাংলাদেশি জনগণের একটাই শক্তি রয়েছে, সেটা হলো ঐক্য। সেটা আমরা জুলাই-আগস্টে প্রমাণ করেছি। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমরা দেশ থেকে স্বৈরাচারকে বিদায় করেছি। আমাদের বিপরীত শক্তি দলগুলোকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে। সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।'
দ্রুত নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'আজকে আমাদের যে নির্বাচনব্যবস্থা এটা কিন্তু ধসে পড়েছে। এই নির্বাচন ব্যবস্থাকে ড. ইউনুস ঠিক করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রকার ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা হচ্ছে। তবে আমি আশা করছি, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী এই সরকার ও নির্বাচন কমিশন নির্বাচন দিবেন। ড. ইউনুস বলেছেন নির্বাচন ডিসেম্বর না হলেও জুনের মধ্যে হবে। এই কথাটাই সবাইকে একটা বিব্রত অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।'
বিএনপির এই নেতা বলেন, আজকে দেশ একটা অবস্থায় এসেছে: নির্বাচন না সংস্কার। নির্বাচনের বিকল্প অন্য কোনো কিছু হতে পারে না। দেশের জনগণ ও নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন আমরা সেই সংস্কারটুকু চাই।'
মির্জা আব্বাস বলেন, 'কয়েকটা দল বলা শুরু করেছে এইটা না হলে নির্বাচন হবে না, ওইটা না হলে নির্বাচন হবে না। যদি এগুলো বলতে থাকে তাহলে নির্বাচন কেমনে হবে! কেউ কেউ আবার বলেই ফেলেছেন যে, আমরা নির্বাচনে যাব না। কয়েকদিন আগে হলে আপনারা নির্বাচনে গেলেই কি আর না গেলেই কি! আপনাদেরকে বাংলাদেশে কে চিনত? এখন ধমক দেন আপনারা নির্বাচনে যাবেন না। এগুলো করে কোনো লাভ নেই।'
বিদেশে বসে ব্লগাররা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের চরিত্র হননের চেষ্টা করছে অভিযোগ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ছড়িয়ে বিদেশে বসে অপপ্রচার চালাচ্ছে ব্লগাররা। এরা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু। সবার কথা বলার অধিকার আছে। সত্যি কথা বলেন। মিথ্যা কথা বলে কারো চরিত্রহনন করবেন না। এখন তো দেশ স্বাধীন। দেশে এসে দেশ গঠনে কাজ করুন।’
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, 'কয়েকদিন আগে শফিউর রহমান নামে একজন লোক নিয়োগ হয়েছে। এ তো আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট। আরও আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট কিন্তু আপনার ডানে বামে আছে। সচিবালয়ের চারজন সচিব, এর বাইরে আরেকজন সচিব মর্যাদায় রয়েছে- এই পাঁচজন এবং আপনার উপদেষ্টা পরিষদের কিছু লোক আপনাকে সঠিক রাস্তায় চলতে দেবে না। আপনার সারা জীবনের অর্জন কিন্তু এরা শেষ করে দেবে। আমরা আপনার সম্মান রক্ষা করে দেশটাকে সুন্দর করতে চাই। আপনি সফল হলে দেশটা ভালো হবে। আপনার সফলতার উপর নির্ভর করছে আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব।'
গণতন্ত্র ফোরামের সভাপতি ভিপি ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ওবায়দুর রহমান টিপুর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ।
শফিকুল/মেহেদী/