
নির্বাচন কমিশনে (ইসি) এখনো নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেনি নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। অথচ ইসির গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আগামী রবিবার শেষ হচ্ছে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর আবেদন করার সময়। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দলটির পক্ষ থেকে ইসিকে নিবন্ধন আবেদনের সময়সীমা আরও তিন মাস (৯০ দিন) বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে রবিবার সময় বাড়ানোসহ কয়েকটি দাবিতে সিইসির সঙ্গে বৈঠক করবে এনসিপির একটি প্রতিনিধিদল। দলটির যুগ্ম-আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার খবরের কাগজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ঘোষিত সময় পর্যন্ত অপেক্ষার পর সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে কমিশন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আবেদন আহ্বান জানিয়ে ইসি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে গত ১০ মার্চ। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৮ দিন পেরিয়ে গেলেও ইসিতে আবেদন জমা দিয়েছে মাত্র ১১টি রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে বাংলাদেশ কনজারভেটিভ পার্টি ছাড়া বাকি ১০টি দলই আবেদন করেছে সময় বাড়ানোর জন্য। ‘আওয়ামী লিগ’ নামে একটি দল নিবন্ধনের আবেদন করলেও তা যথাযথ না হওয়ায় গ্রহণ করেনি ইসি।
আইন অনুযায়ী, নিজেদের প্রতীকে নির্বাচন করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট দলকে ইসি থেকে নিবন্ধন নিতে হয়। এনসিপি আগামী নির্বাচনে নিজেদের প্রতীকে ভোট করতে চাইলে তাদেরকে ইসির নিবন্ধন নিতেই হবে। নিবন্ধনের শর্ত পূরণ দলটির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার সময় বাড়ানো হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার খবরের কাগজকে বলেন, ‘সময় বাড়ানোর এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জমা পড়া আবেদন দলগুলোর মধ্যে অনেকে বাড়তি সময় চেয়েছেন। এ বিষয়ে রবিবার আমরা কমিশনের সিদ্ধান্ত নেবো।’
নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ছিলো শর্ত সহজ/শিথিল করার। একই দাবি এসেছে দলগুলোর পক্ষ থেকেও। আপনাদের সিদ্ধান্ত কী-এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়েও আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত সময় অনুযায়ী আমরা ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ৩ মাসের মধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করে আমরা আগস্ট-সেপ্টেম্বরে দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করতে চাই। তাই আমাদের হাতে সময় কম।’
বৃহস্পতিবার নিবন্ধন আবেদনের সময়সীমা অন্তত ৯০ দিন বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে ইসি সচিবের দপ্তরে চিঠি দিয়েছে এনসিপি। দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার জানিয়েছেন, ‘চিঠিতে আমরা মৌলিক সংস্কার ও দল নিবন্ধনের জন্য সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি। একই সঙ্গে আমাদের একটা টিম আগামী রবিবার দুপুর ১২টায় সিইসির সঙ্গে দেখা করে উদ্বেগগুলো জানাবে। সেখানেও নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ানোসহ বেশকিছু বিষয়ে আলোচনা হবে।’
এনসিপির চিঠিতে বলা হয়েছে, মৌলিক সংস্কার কার্যক্রমের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি এবং বিদ্যমান আইন যুগোপযোগী করার আগেই ইসির রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের কার্যক্রম শুরু করায় তা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
এনসিপি মনে করছে, ২০০৮ সালের রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা ও প্রাসঙ্গিক আইনের অধীনে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন শর্তাবলিসমূহ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অসাংবিধানিক। আগের স্বৈরাচারী সরকারের আমলে তৈরি এই বিধিগুলো রাজনৈতিক বহুত্ববাদকে সংকুচিত এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে প্রণয়ন করা হয়। এজন্য নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রস্তাবকে সমর্থন করে জেলা পর্যায় ১০ শতাংশ এবং উপজেলা পর্যায়ে ৫ শতাংশ কার্যালয় স্থাপনের শর্ত সহজীকরণের পাশাপাশি প্রতি ৫ বছরে নিবন্ধিত সব দলের নিবন্ধন নবায়ন বাধ্যবাধমূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে সংস্কার কমিশনের সুপারিশের আলোকে প্রয়োজনীয় আইন ও বিধি প্রণয়ন বা সংশোধনের পর নিবন্ধন কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা এবং বিদ্যমান নিবন্ধিত দলগুলোর নিবন্ধন হালনাগাদ করাও আবশ্যক মনে করছে এনসিপি।
২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের জন্য নিবন্ধন প্রথা চালু করে নির্বাচন কমিশন। আইন অনুযায়ী, প্রতি সংসদ নির্বাচনের আগে নিজ দলের প্রতীক নিয়ে ভোটে অংশ নিতে নিবন্ধন পেতে আগ্রহী নতুন দলগুলোর কাছে আবেদন চায় সংস্থাটি। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৫৪টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তীতে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে ৫টি দলের নিবন্ধন বাতিল করে ইসি। দলগুলো হলো- জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা। ২০১৮ সালেও শর্ত পূরণ না হওয়ার কারণ দেখিয়ে আবেদনকারী ৭৬ দলের কোনটিকেই নিবন্ধন দেয়নি ইসি। পরে ২০১৯ সালে আদালতের আদেশে নিবন্ধন পায় ববি হাজ্জাজের দল জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম।