
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকেও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
শনিবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
দিনভর উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এবং গুঞ্জনের মধ্যে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যর একটি প্রতিনিধি দল। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় এই বৈঠক শুরু হয়। ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে পৌণে ৯টার দিকে বের হন তারা। প্রতিনিধি দলের অপর তিন সদস্য হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ। এরপর জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির একই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু আলোচনার বিষয়বস্তু আমাদের আগে জানানো হয়নি। বর্তমান রাজনৈতিক পেক্ষাপটে আমরা যা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম তার ওপর ভিত্তি করে একটা লিখিত বক্তব্য তার হাতে দিয়েছি।
লিখিত বক্তব্য সারাংশ তুলে ধরে তিনি জানান, বাংলাদেশে গণতন্ত্র উত্তরণের লক্ষ্য বিএনপি প্রথম থেকেই একটি সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে আসছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বির্তকিত উপদেষ্টা বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের জন্য আমরা দাবি জানিয়েছি। বিএনপির প্রতিটি নেতা-কর্মী ব্যক্তিগত রাজনৈতিক এবং পারিবারিক ভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। এবং সেজন্য আওয়ামী লীগের বিচার সবচেয়ে বেশি দাবি করে বিএনপি। এই বিচার কোনোভাবে অসম্পূর্ণ থাকলে বিএনপি আগামী দিনে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এলে স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে।
খন্দকার মোশাররফ জানান, নির্বাচনের সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম অবিলম্বে শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজনের জন্য দ্রুত একটি রোডম্যাপ ঘোষণার দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। জনগণ বিশ্বাস করে, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব হচ্ছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে গণতন্ত্রে উত্তরণে একটি প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করবে সরকার। আমরা মনে করি, যেকোনো উছিলায় নির্বাচন যত বিলম্ব করা হবে, জাতির কাছে পুনরায় স্বৈরাচার ফিরে আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। এর দায়দায়িত্ব সরকার ও তাদের সংশ্লিষ্টদের ওপর বর্তাবে। সম্প্রতি নানা গুজবের পেক্ষিতে আমরা বলেছি, বিএনপির কখনো প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি। বরং প্রথম দিন থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে আসছে।
এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মোশাররফ বলেন, সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন ছিল আলোচনার মূল বিষয়। আমরা বলেছি, সংস্কার চলমান বিষয়, এটা চলতে থাকবে। সব দলের আলোচনার ভিত্তিতে সরকার একটা সংস্কার প্রস্তাব দেবে এবং সেটা চলমান থাকবে। জনগণ যদি আমাদের ক্ষমতায় বসায় তাহলে আগামীতে সেই সংস্কার বাস্তবায়ন করবে বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান থেকে শুরু তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সবচেয়ে আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের কর্তাব্যক্তি যারা দায়ী তাদের বিচার তো আমরা চাচ্ছি। আমরা তো বিচারের পক্ষে তবে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা এই বিচার করবে। এই বিচার দিন তারিখ ঠিক করে সম্ভব নয়। যে বিচার সম্পূর্ণ না হবে ক্ষমতায় গেলে সেগুলো বিচারের আওতায় এনে সম্পূর্ণ করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। উনারা জানিয়েছেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার কাজ শেষ করা হবে। এখানে সংস্কার ও বিচারের ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। সূতরাং ডিসেম্বরে আগেও নির্বাচন করা সম্ভব, এ আলোচনাও হয়েছে।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন বলেন, নির্বাচনের রোডম্যাপ বিষয়ে স্পেসিক কোন আলোচনা হয় নাই, জানান নাই। আমরা দাবি করেছি। হয়তোবা উনারা প্রেসের মাধ্যমে জানাবেন, আমরা অপেক্ষায় আছি। উনারা জানানোর পরে আমরা প্রতিক্রিয়া জানাবো।
তিনি বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও দুজন ছাত্র উপদেষ্টার ও যাদের কারণে এ সরকারে নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তাদের পদত্যাগের দাবি প্রধান উপদেষ্টাকে আজকেও আমরা লিখিতভাবে জানিয়েছি। সেটা উনারা দেখবেন।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন- একটার সঙ্গে আরেকটা কোনো সম্পর্ক নেই। এবং যদি দ্রুত নির্বাচন দেওয়া হয় তাহলে আজকে বাংলাদেশে যে নৈরাজ্য হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে- এটা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করলে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
শফিকুল ইসলাম/মেহেদী/এমএ/