শহিদ আবু সাঈদ-সহ দেড় সহস্রাধিক শহিদের জীবন এবং লাখো মানুষের রক্তের সৌধে গড়া জুলাই অভ্যুত্থানের সুফলকে সংস্কারের কাজে না লাগিয়ে কেউ কেউ ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে ব্যব্যবহারের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি এটাকে খুবই দুঃখজনক বলে অভিহিত করেছেন। জুলাই অভ্যুত্থানের ঐক্য রক্ষার জন্য অনেকের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সহিষ্ণু আচরণ না করলে নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
বুধবার (১৬ জুলাই) জুলাই অভ্যুত্থানের বীর শহিদ আবু সাঈদের ১ম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে এবি পার্টি রংপুর জেলা ও মহানগর আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
দুপুর ১টায় শহিদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচির সূচনা করেন তিনি। এসময় দলের ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল দিদারুল আলম (অব.), লে. কর্নেল হেলাল উদ্দিন (অব.), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসাইন, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল বাসেত মারজান, রংপুর মহানগর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ সহ বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের বীর শহিদ আবু সাঈদের মৃত্যুবার্ষিকীতে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। ছবি: সংগৃহীত
এর আগে ঢাকা থেকে সড়ক পথে রওয়ানা হয়ে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি দল বেলা ১২টায় পীরগঞ্জ এসে পৌঁছালে স্থানীয় নেতারা তাদের স্বাগত জানান। পরে পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু সকলকে সঙ্গে নিয়ে শহিদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের খোঁজ খবর নেন।
এরপর কেন্দ্রীয় নেতারা বিকেল ৩টায় রংপুর টাউন হলে জেলা ও মহানগর শাখা আয়োজিত আলোচনা সভা, স্মরণ অনুষ্ঠান, দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ ও শোক মিছিলে অংশ নেন।
আলোচনা ও স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মঞ্জু বলেন, গণঅভ্যুত্থান যদি সফল না হতো, আজ আবু সাঈদের ভিটে মাটিকে ধ্বংস করে সেটাকে শ্মশানে পরিণত করা হতো। তার পরিবারের ওপর নেমে আসতো নৃশংস নির্যাতন। কত সহস্র মানুষ যে গুম আর খুনের শিকার হতো, তার কোনো হিসাব থাকতো না। অথচ সে সময়ে দুঃখ-কষ্টে থাকা রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীরা আজ ভীষণরকম বিভেদে লিপ্ত। একে অপরকে হেয় প্রতিপন্ন করে অনৈক্য সৃষ্টি করতে তাদের বিন্দুমাত্র বিবেকে বাঁধছে না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, শহিদ আবু সাঈদ-সহ দেড় সহস্রাধিক শহিদের জীবন এবং লাখো মানুষের রক্তের সৌধে গড়া জুলাই অভ্যুত্থানের সুফলকে সংস্কারের কাজে না লাগিয়ে কেউ কেউ ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে ব্যব্যবহারের চেষ্টা করছে, যা খুব দু:খজনক। রাজনৈতিক দলগুলো সহিষ্ণু আচরণ না করলে নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
এবি পার্টি রংপুর মহানগর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান লে.কর্নেল দিদারুল আলম (অব.) বলেন, আজ আমরা এক মর্মস্পর্শী ও গৌরবোজ্জ্বল দিনে সমবেত হয়েছি। আমাদের প্রিয় সংগ্রামী, আদর্শের ধারক, শহিদ আবু সাঈদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে। তার আদর্শ, তার সংগ্রামী চেতনা আমাদের হৃদয়ে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে। তিনি ছিলেন ন্যায় ও সত্যের পথের এক অকুতোভয় যোদ্ধা, যার আত্মত্যাগ আমাদের সংগ্রামী চেতনাকে আজও প্রজ্বলিত রাখে।
ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল হেলাল উদ্দিন বলেন, শহিদ আবু সাঈদ কেবল একজন নাম নন, তিনি একটি ইতিহাস, একটি আদর্শ। তার জীবন ছিল শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে নিঃশর্ত সংগ্রামের গল্প। তিনি মৃত্যুকে পরোয়া করেননি, কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন - মৃত্যুই যদি আসে, তবে তা হোক মানুষের মুক্তির পথে। আজও তার সেই অমর বাণী আমাদের প্রেরণা দেয়। তিনি যে কারণে আত্মদান করেছেন আমরা যেন তার দেখানো পথ থেকে বিচ্যুত না হই।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আলতাফ হোসাইন বলেন, আজ আমরা শুধু শোক প্রকাশ করছি না, আজ আমরা পুনর্বার শপথ নিচ্ছি। শপথ নিচ্ছি যে, তার স্বপ্নকে আমরা ধারণ করব, তার আত্মদানকে বৃথা যেতে দেব না। এই পথসভা হোক আমাদের সংকল্পের মঞ্চ - যেখানে আমরা বলব, ‘শহিদ আবু সাঈদ তোমার রক্ত বৃথা যাবে না।’
পথসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন রংপুর বিভাগ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল বাসেত মারজান, রংপুর মহানগর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ, কেন্দ্রীয় কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা বিষয়ক সম্পাদক এস এ জাহিদ সরকার, দিনাজপুর জেলা আহ্বায়ক অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম, সদস্য সচিব মেহেদী হাসান চৌধুরী পলাশ, নীলফামারী জেলা আহ্বায়ক মাওলানা লিয়াকত আলী, কুড়িগ্রাম জেলা আহ্বায়ক ডা. নজরুল ইসলাম, রংপুর মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক মুস্তাফিজুর রহমান রনজু ও পীরগঞ্জ উপজেলা আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান-সহ প্রমুখ।