
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় ৫ দশমিক ৫ শতাংশ মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
মঙ্গলবার (৩ মে) তাদের কেউ সংবাদ সম্মেলন করে, কেউ গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা নিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানান।
সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন অর্থ উপদেষ্টা।
তিনি বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে এবং মধ্য মেয়াদে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আমরা আশা করছি।’
অন্যদিকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামার আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর এ প্রত্যাশার কথা বলেন।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘এই বাজেটের প্রবৃদ্ধি নিম্নগামী। প্রবৃদ্ধি নিম্নগামী হলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সম্ভব হবে না, স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হবে এবং কম রাজস্ব আদায় হবে। মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। এপ্রিল পর্যন্ত এই হার ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ পর্যন্ত আনা সম্ভব হয়েছে। সামনের দিকে মূল্যস্ফীতির হার কমবে এমন কোনো লক্ষণ আমরা দেখছি না।’
প্রবৃদ্ধির নিম্নগামী অবস্থানের কারণে কর্মসংস্থান ও ব্যবসা-বাণিজ্যের মন্দাভাব দেখা দেবে বলে আশঙ্কা করে তিনি বলেন, ‘প্রাক্কলিত মূল্যস্ফীতি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয়। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। ফলে সাধারণ মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর অবস্থায় পৌঁছাবে।’
বর্তমান বাজেট ‘বাস্তবায়নযোগ্য নয়’ উল্লেখ করে জি এম কাদের আরও বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে, তা অবাস্তব বা কাছাকাছি যাওয়াও সম্ভব নয় বর্তমান প্রেক্ষাপটে। যতদিন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, ততদিন বিদেশি ঋণ বা সাহায্য পাওয়া নিয়েও সংশয় আছে। ফলে বাজেট ঘাটতির আকার অনেক বড় হবে।’
প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে বাম গণতান্ত্রিক জোটের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বৈষম্য দূর করার কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না থাকায় দেশে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য আরও বাড়বে।’ বাম জোট নেতারা বলেন, ‘এই বাজেটে বৈষম্যহীনতা ও টেকসই উন্নয়ন ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলা হলেও বাস্তবে মুক্তবাজারের পুরোনো ধারাবাহিকতার পুনরাবৃত্তি ঘটানো হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট বৈষম্য, বেকারত্ব, মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগসংকট কোনোটাই মোকাবিলা করতে পারবে না।’
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রস্তাবিত ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেটে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি এবং ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার সুদ পরিশোধের বোঝা রয়েছে। স্পষ্টত এ বোঝা তথা করের চাপ পড়বে জনগণের ওপর।’
উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাস্তবতায় ব্যক্তি করদাতাদের করমুক্ত সীমা না বাড়ানো এবং ই-কমার্সসহ বিভিন্ন খাতে কর বৃদ্ধির প্রস্তাব সরাসরি সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলবে বলে মন্তব্য করেন খেলাফত মজলিসের নেতারা।