
ময়মনসিংহে নবগঠিত উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেলের বিরুদ্ধে যতসামান্য পড়ালেখা-সহ একাধিক অভিযোগ তুলেছে একই কমিটির পদধারী ছয় নেতা। এর মাধ্যমে নবগঠিত কমিটির নেতাদের বিভক্তির বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়েছে।
কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ পাঠানোর বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার (৬ জুন) সকালে লিখিত অভিযোগটি খবরের কাগজের হাতে এসেছে। এতে দেখা যায়, অভিযোগপত্রে ছয়জন পদধারী নেতা স্বাক্ষর করেছেন। তারা হলেন- নবগঠিত উত্তর জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি নাইমুর আরেফিন পাপন, মাসুদুর রহমান মাসুদ, মাসুদ আলম (মাসুদুল আলম মাসুদ), নাদিম সারোয়ার টিটু, যুগ্ম সম্পাদক সাইফুজ্জামান সরকার শাওন ও সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম রুবেল।
অভিযোগের একাংশে তারা উল্লেখ করেন - যারা জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করেছে, সংগ্রাম করেছে, কমিটিতে তাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। যাকে সভাপতি করা হয়েছে, তিনি যতসামান্য পড়ালেখা করেছেন। এছাড়া তিনি বিগত সময়ে নৌকার পক্ষে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। যার ভিডিওফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়।
আরও বলা হয় - রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো মেরামতে বিএনপির ৩১ দফার মধ্যে ২৪ নম্বর দফায়, বিরাজমান নৈরাজ্য দূর করে নিম্ন ও মধ্য পর্যায়ে চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া অভিযোগে সভাপতির কোনো ছাত্রত্ব না থাকাসহ যতসামান্য পড়ালেখা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
এদিকে নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম সুজা উদ্দিন চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি সাংগঠনিক নিষ্ক্রিয়তার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) পাওয়ার বিষয়টি অভিযোগপত্রে উল্লেখ করলেও এর চেয়ে বেশি কোনো অভিযোগ তুলেননি ওই ছয় নেতা।
অভিযোগপত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, গত ১৮ মে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবর তারা লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের অনুলিপি বিএনপির নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ময়মনসিংহ বিভাগীয় টিমের (উত্তর ছাত্রদল) কাছে পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগপত্রের বিষয়টি খবরের কাগজকে নিশ্চিত করেছেন নবগঠিত উত্তর জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুদ।
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলের কমিটিতে যারা নেতৃত্ব দেবেন, তাদের অবশ্যই শিক্ষিত হতে হবে। যতসামান্য পড়ালেখা করা নেতার নেতৃত্ব কর্মীরা মেনে নিতে চায় না। নেতৃত্বনির্ভর ছাত্রদলের রাজনীতি সবাই দেখতে চায়। যেই পদের জন্য যিনি উপযুক্ত না, তাকে ওই পদ দেওয়া ঠিক না। ত্যাগী নেতাদের বঞ্চিত করে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটি বিলুপ্ত করার দাবি জানাচ্ছি।’
একই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম রুবেল বলেন, ‘ছাত্রদলে নেতৃত্ব দেওয়া কোনো নেতার যদি যতসামান্য পড়ালেখা থাকে, তাহলে এটি আমাদের জন্য লজ্জাজনক। এমন নেতার নেতৃত্ব মেনে নিতে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন। কারণ, যেসব নেতা কিংবা কর্মীরা পড়ালেখা চলমান রেখেছেন, অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছেন, তাদের পক্ষে এমন নেতার নেতৃত্ব মেনে নেওয়া কঠিন। ফলে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নিহাদ সালমান দুনন খবরের কাগজকে বলেন, ‘কমিটি দেওয়ার আগে শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ অনেককিছু যাচাই-বাছাই করা হয়। নবগঠিত কমিটির সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেলের পড়ালেখা নিয়ে ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। যদিও ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষর করে কমিটি ঘোষণা করেছেন।’
নবগঠিত কমিটির সাধারণত সম্পাদক এ কে এম সুজা উদ্দিন বলেন, ‘আমি ফুলপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ছিলাম। আমাকে একবার শোকজ করলেও সশরীরে উপস্থিত হয়ে জবাব দিয়েছিলাম। দল অনেক যাচাই-বাছাই করে উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদে আমাকে দ্বায়িত্ব দিয়েছে।’
একই কমিটির সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেল খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ তোলা হয়েছে। আমি কখনোই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করিনি। যে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে, সেটিতে সুপার এডিট হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি এসএসসি পাস করতে পারিনি, এটি অসত্য। বিগত সময়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা থাকাসহ নানা কারণে খুব বেশি পড়ালেখা করা হয়নি। তবে কোন পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি, তা বলতে চাই না।’
নুরুজ্জামান সোহেলের গ্রামের বাড়ি জেলার গৌরীপুর উপজেলায়। তিনি গৌরীপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ও ময়মনসিংহ উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বলে জানিয়েছেন গৌরীপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহম্মদ তায়েবুর রহমান হিরন।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে ভিডিওটি ছড়িয়েছে এই ভিডিওতে নুরুজ্জামান সোহেল উপস্থিত থাকার বিষয়টি সত্য। তিনি তখন আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার অংশ হিসেবে একটি বাসার কক্ষে অবস্থান করছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার যতদুর মনে আছে, সোহেল ২০০২ সালে গৌরীপুরের আর কে উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। তখন পাস করতে পারেনি সোহেল। কয়েকবার পরীক্ষা দিয়েও অকৃতকার্য হয়েছে কিনা এই মুহুর্তে মনে নেই। তবে সোহেল এসএসসি পাস করতে না পেরে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছিল। পরে জানতে পেরেছি, ২০১২ সালে ময়মনসিংহে উন্মুক্ত, টেকনিক্যাল অথবা মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাস করেছে। এরপর তিনি কলেজেও ভর্তি হয়েছিলেন। তবে এইচএসসি পাস করেছে কিনা, তা জানা নেই।’
এর আগে গত ১৫ মে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে ময়মনসিংহ জেলা দক্ষিণ, উত্তর, মহানগর, আনন্দমোহন কলেজ ও কোতোয়ালি থানা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। উত্তর জেলা ছাত্রদলের ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে নূরুজ্জামান সোহেল সভাপতি ও এ কে এম সুজা উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
এ ছাড়া কমিটির অন্যরা হলেন- সিনিয়র সহসভাপতি নাইমুর আরেফিন পাপন, সহসভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুদ, মাসুদ আলম (মাসুদুল আলম মাসুদ), নাদিম সারোয়ার টিটু, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মনোয়ার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুজ্জামান সরকার শাওন, রাসেল আহম্মেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম রুবেল ও দপ্তর সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন তালুকদার।