
সিলেট নগরীতে ২০১০ সালে ছাত্রদলের সশস্ত্র মহড়া দিয়ে প্রথম আলোচনায় আসেন তিনি। আলোচিত হওয়ায় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে একটি শক্তিশালী বলয় তৈরি করেন। ৫ আগস্ট পরবর্তী বাস্তবতায় নানা অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। এরপর শ্বশুরবাড়ির ঘটনায়ও নেতিবাচকভাবে আলোচিত হন। এর সূত্র ধরে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
তিনি সিলেটে বিএনপির রাজনীতিতে আলোচিত নেতা সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কোহিনুর আহমেদ।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বহিষ্কারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হয়।
বুধবার (১১ জুন) রাতে দলীয় প্যাডে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সিলেট জেলাধীন দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কোহিনুর আহমেদকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’
বহিষ্কারের কারণ সম্পর্কে স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্ট পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনায় আলোচিত হন কোহিনূর। তার বিরুদ্ধে সীমান্ত পথে চিনি চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইকারী নিয়ন্ত্রণের নানা অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে সম্প্রতি তার শ্বশুরবাড়ির একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ঘটনাটি ‘শ্বশুরবাড়িকাণ্ড’ হিসেবে ছড়িয়েছে।
শ্বশুরবাড়ির ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (১০ জুন) কোহিনুর আহমেদের শ্বশুরবাড়ি দক্ষিণ সুরমার সিলাম ইউনিয়নের টিলাপাড়ায় খন্দকার বাড়ির গেটের নামকরণ নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওইদিন সকালে তার শ্বশুরবাড়ির রাস্তায় নির্মিত গেটে ‘খন্দকার বাড়ি’ নাম ফলক লাগানোর চেষ্টা করলে বিরোধের সূত্রপাত হয়।
এরপর কোহিনুর আহমেদের সম্বন্ধী জুবেল খন্দকার, রুমেল খন্দকার, মবু শিকদার, সুহেল খন্দকারদের সঙ্গে প্রতিপক্ষ তজমুলদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে কোহিনুর আহমেদের ছেলে ও শাহপরান কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি নাদিলের নেতৃত্বে ছাত্রদল, যুবদল ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা তজমুলের পক্ষের লোকজনের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এরপর এলাকাবাসী মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিলে উত্তেজিত জনতা ছুটে আসলে কোহিনুরের পক্ষ ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে কোহিনুর বিতর্কের মুখে পড়েন। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে এই বিষয়টি জানানো হয়। ঘটনার পরদিনই কোহিনুর আহমেদকে বহিষ্কার করা হয়।
তবে কোহিনুরের দাবি, শ্বশুরবাড়ির ঘটনাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহার করেছে। এ ব্যাপারে তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার শ্বশুরবাড়ির এলাকার ঘটনাটি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থেকে ঘটেছে। এটা কোনো রাজনৈতিক ঘটনা নয়। এর পরও তাতে আমাকে জড়ানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে। দলীয়ভাবে খোঁজ নিলেই আসল তথ্য বের হয়ে আসবে। আমি দলের শীর্ষ নেতাদের এ ব্যাপারে খোঁজ নেওয়ার আহ্বান জানাই।’
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে বিএনপির রাজনীতিতে কোহিনুর আহমদ একটি আলোচিত নাম। ২০১০ সালে বিএনপির দুইপক্ষের বিরোধে একপক্ষের হয়ে কোহিনুর সিলেট নগরীতে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সশস্ত্র মহড়া করে ব্যাপকভাবে আলোচিত হন। তখন তিনি ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। অস্ত্রবাজির সেই ঘটনার পর অস্ত্র আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা হলে তিনি অন্তরালে চলে যান। এরপর বিরতি দিয়ে নিজ এলাকা দক্ষিণ সুরমায় উপজেলা বিএনপির রাজনীতিতে নিজস্ব গ্রুপ নিয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরীর বলয়ে সক্রিয় হন। ৫ আগস্টের আগে ও পরে দক্ষিণ সুরমায় তার নেতৃত্বাধীন বিএনপির শক্ত অবস্থান ছিল।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলাটি সিলেট মহানগরীর একটি অংশ নিয়ে গঠিত হওয়ায় কোহিনূরের বহিষ্কারের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া জেলা ও মহানগর বিএনপির রাজনীতিতেও আলোচিত হচ্ছে। সরব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকও। পক্ষে-বিপক্ষে নানা প্রতিক্রিয়া চলছে। বহিষ্কারের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে অনেকে বিএনপিকে বিতর্কমুক্ত রাখার প্রয়াস বলছেন। কেউ কেউ আবার ঘটনাটিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তৎপরতার একটি ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করছেন।
কোহিনুরের বহিষ্কার দক্ষিণ সুরমা বিএনপিকে ‘দুর্বল’ করা হয়েছে জানিয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. মাহবুব আলম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। ৫ আগস্টের আগে-পরে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের ছবিসংবলিত ফেসবুক পোস্টে মাহবুব আলম লিখেছেন, ‘দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় বিএনপির রাজনীতিকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে কিছু অদৃশ্য শক্তি যে অপচেষ্টা চালাচ্ছে, তা কোনো অবস্থাতেই সফল হবে না- ইনশাআল্লাহ। অপপ্রচার, ষড়যন্ত্র ও ভুল ব্যাখ্যার যে অপচেষ্টা চলছে, সেটির বিচার ও সত্য উদঘাটন হবে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তদন্তের মাধ্যমে। তিনি (কোহিনুর) সেই সুরাহার অপেক্ষায় আছেন, দৃঢ় মনোবল নিয়ে, বিশ্বাস নিয়ে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে। বিএনপির তৃণমূলের হৃদয়ে যারা জায়গা করে নিয়েছেন, তাদের সরিয়ে রাখা যায় না - বরং তারা আরও উজ্জ্বল হয়ে ফিরে আসে।’
অমিয়/