
লক্ষ্মীপুরে বিসিক শিল্পনগরীর কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারকে সরিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদল নেতা কাজ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চলতি মাসে এ কাজ শেষ হওয়া কথা থাকলেও এখনো অর্ধেক কাজ বাকী রয়েছে। এদিকে নিম্নমানের কাজের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী।
জানা গেছে, শিল্পনগরীতে সড়ক, ড্রেন ও কালভার্ট নির্মাণের লক্ষ্যে ১ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি উন্নয়ন প্রকল্প দরপত্রের মাধ্যমে বিজয়ী শিপড়া ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে গত মার্চ মাসে প্রকল্পের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়। গত ২২ মে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে সময় বাড়িয়ে ৪ জুন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। প্রকল্পের আওতায় ৪২০ ফুট দীর্ঘ সড়ক, তিনটি কালভার্ট, নতুন ড্রেন এবং বিসিক ভবনের সংস্কার করা হয়েছে। তবে বাস্তবে মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে দেয়নি স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদল নেতা। তারা প্রভাব খাটিয়ে নিজেরাই কাজটি করে যাচ্ছেন।
শিপড়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী চন্দন ঘোষ অভিযোগ করেন, 'প্রকল্পের ওয়ার্ক অর্ডার পেলেও স্থানীয় বিএনপি নেতারা তাকে কাজটি করতে দেননি। প্রভাব খাটিয়ে এ প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ নেন পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক কাজী হেলাল উদ্দিন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ ইব্রাহিম ও চররুহিতা ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মো. সবুজ। তারা নিজেরা কাজ ভাগাভাগি করে নেন। এতে কাজের গুণগত মান ঠিক থাকেনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ইতোমধ্যে কাজ সম্পন্ন করা বিসিকের নতুন সড়কের কাজ নিম্নমানের হওয়ায় সড়কের উপর পানি জমে থাকা, সড়কে ঢেউয়ের মতো উঁচু-নিচু অবস্থা বিরাজসহ সড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে পানি জমে রয়েছে। এ ছাড়া সড়ক ও ড্রেনের নির্মাণকাজে পাথর, রড ও সিমেন্ট ঠিকমতো দেওয়া হয়নি।
বিসিকসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা সিরাজ মিয়া, তাজুল ইসলাম ও রফিক জমাদার জানান, ঠিকভাবে মাটি ভরাট না করেই ঢালাই দেওয়া হয়েছে। এতে নতুন সড়কে ঢেউয়ের মতো তৈরি হয়েছে, যা যান চলাচলের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল কাদের বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম কোটি টাকার কাজ হবে মানসম্মত। কিন্তু এখনই রাস্তায় পানি জমে যাচ্ছে, মানুষ পড়ে গিয়ে আহত হচ্ছে। এটা দেখে মনে হয়, কাজ শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেছে।’
বিসিকের প্রকল্পের কাজে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক কাজী হেলাল উদ্দিন জানান, ঠিকাদারের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমেই কাজটি তারা করেছেন। জোর করে তারা কাজটি নেননি ।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ ইব্রাহিম বলেন, 'আগে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ছাত্রলীগ (নেতারা) করেছে। এখন ছাত্রদল উন্নয়ন কাজ করবে এটা স্বাভাবিক, সবাই জানে।'
সড়কের কিছু জায়গায় পানি জমার বিষয়টি নজরে এসেছে জানিয়ে বিসিক প্রকৌশল শাখার টেকনিক্যাল অফিসার আশিকুর রহমান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে কাজের মান পুনরায় মূল্যায়ন করা হচ্ছে। অনিয়ম প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিসিক শিল্পনগরীর উপব্যবস্থাপক মো. ফজলুল করিম জানান, কাজটি দেখতে আঞ্চলিক পরিচালক, টেকনিক্যাল কর্মকর্তাসহ অনেকে এসেছেন। অনিয়মের অভিযোগের বিষয়টি তারাও তদন্ত করে গেছেন।
রফিকুল/মেহেদী/