ঢাকা ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রবীন্দ্রনাথের কৃষি ভাবনা

প্রকাশ: ১০ মে ২০২৪, ০৪:০৩ পিএম
আপডেট: ১০ মে ২০২৪, ০৪:০৪ পিএম
রবীন্দ্রনাথের কৃষি ভাবনা
ছবি : সংগৃহীত

‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে,
সারা দিন পাখি-ডাকা ছায়ায়-ঢাকা তোমার পল্লীবাটে,
তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে,
মরি হায়, হায় রে-
ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, ও মা, তোমার রাখাল তোমার চাষি॥’

জমিদার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে চাষিদের প্রতি যে গভীর ভালোবাসা ও পল্লীপ্রকৃতি সৌন্দর্যদৃশ্য ধ্বনির অপরূপরতার কাব্যিক বর্ণনা ‘আমার সোনার বাংলা’ কবিতায় স্পষ্ট দেখা যায়।

সময়টা ১৯৮০ সাল, দেবেন্দ্রনাথ তার কনিষ্ঠ ছেলে রবীন্দ্রনাথকে জমিদারির কাজ পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেন। তখনো রবীন্দ্রনাথের ওপর জমিদারির সব দায়িত্ব অর্পণ হয়নি। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর কঠোর শিক্ষানবিশির কাজ শেষে ১৮৯৫ সালের ৮ আগস্ট ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নির’ মাধ্যমে পিতা দেবেন্দ্রনাথের কাছ থেকে সমগ্র জমিদারি কর্তৃত্ব পান অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ পুরোপুরি জমিদার রূপে নিযুক্ত হন। জমিদার হয়ে রবীন্দ্রনাথ পুণ্যাহ উৎসব যোগ দিতে শিলাইদহে যান। সেখানে গিয়েই তিনি বুঝিয়ে দিলেন যে তিনি তার পূর্বসূরিদের পথে হাঁটবেন না। উৎসবের শুরুতে ভাষণে বলেন, ‘সাহাদের হাত থেকে শেখদের বাঁচাতে হবে। এটাই আমার সর্বপ্রধান কাজ’। মহাজন অর্থে ‘সাহা’ শব্দের ব্যবহার করেছেন, দরিদ্র প্রজা বলতে তিনি ‘শেখ’ শব্দ ব্যবহার করেছেন কারণ তার জমিদারিতে অধিকাংশ প্রজাই দরিদ্র মুসলমান। দরিদ্র প্রজার অসহায়ত্ব তিনি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেন। তাই তো বলেছেন-

‘সে অন্ন যখন কেহ কাড়ে,
সে প্রাণে আঘাত দেয় গর্বান্ধ নিষ্ঠুর অত্যাচারে,
নাহি জানে কার দ্বারে দাঁড়াইবে বিচারের আশে-
দরিদ্রের ভগবানে বারেক ডাকিয়া দীর্ঘশ্বাসে
মরে সে নীরবে। এই-সব মূঢ় ম্লান মূক মুখে
দিতে হবে ভাষা- এই-সব শ্রান্ত শুষ্ক ভগ্ন বুকে
ধ্বনিয়া তুলিতে হবে আশা- ডাকিয়া বলিতে হবে-
মুহূর্ত তুলিয়া শির একত্র দাঁড়াও দেখি সবে’

রবীন্দ্রনাথ তার জমিদারিতে পল্লী উন্নয়নের দিকে নজর দেন এবং বুঝতে পারলেন কৃষি খাতের আধুনিকীকরণ ছাড়া পল্লী উন্নয়ন সম্ভব নয়। কৃষির উন্নতির জন্য রবীন্দ্রনাথের প্রচেষ্টা ছিল অভিনব। তিনি বুঝতে পারেন নতুন চাষের প্রবর্তনের মাধ্যমে গ্রামের আর্থিক অবস্থার উন্নতিসাধন করতে হবে। তাই শিলাইদহের কুঠিবাড়ি সংলগ্ন জমিতে নতুন ধরনের ধান চাষ, পাটনাই মটর, কপি চাষ শুরু করেন। ধান ও পাটের ওপর নির্ভরশীল না থেকে অন্যান্য অর্থকরী শস্যের দিকে কৃষকদের দৃষ্টি ফেরানোর চেষ্টা করেন। তাই পরগণায় মাছ চাষ, আলুর চাষ, খেতের আলে কলা আনারস চাষে উৎসাহিত করেন। ১৯০৮ সালে এক কর্মীকে কবি চিঠিতে লিখেছিলেন- ‘প্রজাদের বাস্তুবাড়ি, খেতের আইল প্রভৃতি স্থানে আনারস, কলা, খেজুর প্রভৃতি ফলের গাছ লাগাইবার জন্য তাহাদের উৎসাহিত করিও। আনারসের পাতা হইতে খুব মজবুত সুতা বাইর হয়। ফলও বিক্রয়যোগ্য। শিমুল, আঙ্গুর গাছ, বেড়া প্রভৃতির কাজে লাগাইয়া তার মূল হইতে কিরূপে খাদ্য বাইর করা যাইতে পারে তাহাও প্রজাদিগকে শিখানো আবশ্যক। আলুর চাষ প্রচলিত করিতে পারিলে বিশেষ লাভের হইবে।’

রাজশাহীতে রেশমচাষের অবস্থা বেশ রমরমা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভুট্টা এ দেশে চাষের উপযোগী করেন। বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুকে চিঠিতে লিখেন: ‘আমার চাষাবাসের কাজ মন্দ চলিতেছে না। আমেরিকার ভুট্টার বীজ আনাইয়াছিলাম। তাহার গাছগুলি দ্রুতবেগে বাড়িয়া উঠিতেছে।’

রবীন্দ্রনাথের কৃষি বিষয়ে প্রবল জ্ঞান ছিল বলেই যখন পতিসর ও শিলাইদহে সারের অভাব দেখা দেয়, এ অভাব মেটানোর জন্য রবীন্দ্রনাথ একটি উপায় বের করেন। তখন বেশ কয়েক বছর থেকে পদ্মা নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে, বেড়াজালে একসময় এত মাছ ওঠে যে শিকারিরা নিতে চায় না। দেখা যায় ডিম বের করে নিয়ে নুন দিয়ে তা রাখছে আর মাছগুলো নদীর জলে ফেলে দিচ্ছে। নামমাত্র মূল্যে কৃষকরা নৌকাবোঝাই মাছ কিনে নিয়ে তা চুন দিয়ে মাটির নিচে পুঁতে রাখেন। এক বছর পর মাটি খুঁড়ে দেখা যায় চমৎকার সার হয়েছে। তখন মাছের সার প্রচলন করা হয়।

‘মানুষ যেমন একদিন হাল লাঙল, চরকা তাঁত, তীর ধনুক, চক্রবান যানবাহনকে গ্রহণ করে তাকে নিজের জীবনযাত্রার অনুগত করেছিল, আধুনিক যন্ত্রকেও আমাদের সেইরকম করতে হবে। যন্ত্রে যারা পিছিয়ে আছে, যন্ত্রে অগ্রবর্তীদের সঙ্গে তারা কোনোমতেই পেরে উঠবে না।’- ‘পল্লীপ্রকৃতি’ প্রবন্ধে এমন লেখা কৃষিভাবনার সুদূরপ্রসারী চিন্তার প্রতিফলন।

কৃষিকাজকে আরও বেগবান করতে ১৯০৬ সালে পুত্র রথীন্দ্রনাথ ও বন্ধু পুত্র সন্তোষচন্দ্র মজুমদারকে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি শিক্ষার জন্য পাঠিয়েছিলেন। তার এক বছর পর জামাতা নগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়কেও ওই একই বিষয়ে শিক্ষালাভ করার জন্য আমেরিকায় পাঠান। রথীন্দ্রনাথ ও নগেন্দ্রনাথের ব্যয়ভার বহন করতে স্ত্রীর গহনা, পুরীর বাড়ি বিক্রি করতে হয়েছে। ১৯০৮ সালে রবীন্দ্রনাথ যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত এই তিনজকে লেখেন: ‘তোমরাও দুর্ভিক্ষপীড়িত প্রজাদের অনুগ্রাসের অংশ নিয়ে বিদেশে কৃষি শিখতে গেছ, ফিরে এসে এই হতভাগ্যদের অন্নগ্রাস কিছু পরিমাণে যদি বাড়িয়ে দিতে পার তাহলে এই ক্ষতি পূরণ হয়ে মনে সান্ত্বনা পাব। মনে রেখ এই টাকা চাষীর, এই চাষীরাই তোমাদের শিক্ষার ব্যয়ভার নিজেরা আধাপেটা খেয়ে এবং না খেয়ে বহন করছে- এদের এই অংশ সম্পূর্ণ শোধ করার দায় তোমাদের উপর রইল।’

১৯০৯ সালে ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিতে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফেরেন রথীন্দ্রনাথ। শুরু করেন পতিসরের মাটিতে বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষিকাজ। পতিসরের মাটিতে প্রথম ট্রাক্টর চাষাবাদ শুরু হয়, ট্রাক্টর চালান রথীন্দ্রনাথ নিজে। সে অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি লেখেন: ‘আমাদের দেশে তখনো ট্রাকটরের চলন হয়নি। ট্রাকটর তো পেলুম কিন্তু চালক পেলুম না। নিজেই চালাতে লাগলুম। কয়েকদিনের মধ্যে গ্রামের একটি ছোকরাকে চালানো শিখিয়ে দিলুম। হাজার হাজার লোক জমে গেল। ট্রাকটর নিয়ে আমি নেমে গেলুম ধান খেতে। তারা আশ্বাস দিল আপনি আলের ওপর দিয়ে চাষ দিয়ে যান, আমরা কোদাল নিয়ে থাকব, সঙ্গে সঙ্গে আল বসিয়ে নেব। ট্রাকটর দিয়ে চাষাবাদে কৃষকরা মহাখুশী।’

যে সময় মানুষ ব্যারিস্টারি, ডাক্তার ইত্যাদি বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য সন্তানদের বিদেশে পাঠানো হয়, জমিদার হয়েও রবীন্দ্রনাথ কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য তার নিজ পুত্রকে কৃষিতে শিক্ষা নিতে বিদেশে পাঠিয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন চাষির একার পক্ষ্যে কৃষির উন্নয়ন সম্ভব না। তাই ‘ভূমিলক্ষ্মী’তে বলেছেন, ‘আজ শুধু একলা চাষীর চাষ করিবার দিন নাই, আজ তাহার সঙ্গে বিদ্বানকে, বৈজ্ঞানিককে যোগ দিতে হইবে।’
‘শুধু বিঘে-দুই ছিল মোর ভুঁই, আর সবই গেছে ঋণে।
বাবু বলিলেন,‘বুঝেছ উপেন? এ জমি লইব কিনে।’
কহিলাম আমি, ‘তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই-
চেয়ে দেখো মোর আছে বড়জোর মরিবার মতো ঠাঁই।

কহিলাম তবে বক্ষে জুড়িয়া পাণি
সজল চক্ষে, ‘করুন রক্ষে গরিবের ভিটেখানি।
সপ্তপুরুষ যেথায় মানুষ সে মাটি সোনার বাড়া,
দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে এমনি লক্ষ্মীছাড়া!’

একজন জমিদার রবীন্দ্রনাথ কোনো এক ভূমিহারা কৃষকের হাহাকার তার মনোকষ্টের প্রকাশ ঘটিয়েছেন এমন ভাবেই ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায়। রবীন্দ্রনাথ দরিদ্র কৃষকদের দুঃখ দুর্দশা বুঝতে পারতেন। কৃষকের হাহাকারের কারণ খুঁজতে গিয়ে ‘পল্লীপ্রকৃতি’ প্রবন্ধে বলেছেন- ‘জমিও পড়িয়া রহিল না, ফসলেরও দর বাড়িয়া চলিল, অথচ সম্বৎসর দুইবেলা পেট ভরিবার মতো খাবার জোটে না, আর চাষী ঋণে ডুবিয়া থাকে, ইহার কারণ কী ভাবিয়া দেখিতে হইবে। এমন কেন হয়- যখনই দুর্বৎসর আসে অমনি দেখা যায় কাহারো ঘরে উদ্বৃত্ত কিছুই নাই। কেন এক ফসল নষ্ট হইলেই আর এক ফসল না ওঠা পর্যন্ত হাহাকারের অন্ত থাকে না।’

তিনি দেখলেন দরিদ্র কৃষকদের কাছে অর্থ তো দূরের কথা, তারা সুদখোর মহাজনদের কবলে পড়ে সহায় সম্বলহীন হয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের আর্থিক সমস্যা দূর করতে ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন পতিসর কৃষি ব্যাংক। তখনো এই উপমহাদেশে লোন কোম্পানি বা ব্যাংক চালু হয়নি। বলা যায় পতিসর কৃষি ব্যাংক নতুন দিগন্ত। রবীন্দ্রনাথ এসব ব্যাংকের মূলধন সংগ্রহ করেন তার ধনী বন্ধুদের থেকে ধার করে। ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকে ঠাকুর পরিবারের অনেক সদস্য, আত্মীয়স্বজন টাকা জমা রাখেন। নোবেল পুরস্কারের ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে ১ লাখ ৮ হাজার টাকা তিনি পতিসর কৃষি ব্যাংকে বিনিয়োগ করেন। এই ব্যাংক থেকে কৃষক শতকরা তিন টাকা হারে সুদে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করত। ফসল ওঠার পর সুদসহ ঋণের টাকা পরিশোধ করে পরবর্তীতে আবার ঋণ নেওয়ার সুযোগ পেত। এই পদ্ধতি চালু হওয়ায় চাষিরা মহাজনের চক্রবৃদ্ধি হারে সর্বনাশা সুদের কবল থেকে রক্ষা পেতে থাকল।

১৩১৪ বঙ্গাব্দে পাবনায় অনুষ্ঠিত জাতীয় মহাসভার প্রাদেশিক সম্মেলনে পল্লীর উন্নয়নের যে ১৫ দফা কর্মসূচি পেশ করেন তাতে ছিল আধুনিক কৃষি, কুটিরশিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ব্যাংক ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের এক সমবায়ভিত্তিক রূপরেখা। তার এই কাজে যুক্ত হন সমাজকর্মী কালীমোহন ঘোষ। পরবর্তীতে আসেন বিপ্লবী অতুল সেন। তার সহকারী হিসেবে ছিলেন উপেন ভদ্র, বিশ্বেশ্বর বসুসহ আরও অনেকেই। অতুল সেনের কাঁধেই কৃষি ব্যাংকের কাজে ভার পড়ে। এই কৃষি ব্যাংকের আর্থিক সহায়তা ও প্রজাদের খাজনার সঙ্গে টাকা প্রতি এক আনা অতিরিক্তি অর্থ দিয়ে পতিসর, কমতা এবং রাতোয়ালে দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠিত হয়; যার উদ্দেশ্য দরিদ্র কৃষকদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। একবার কালিগ্রামে মহামারিরূপে ওলাওঠা রোগ দেখা যায়। এই রোগ থেকে কৃষক ও প্রজাদের রক্ষার জন্য রবীন্দ্রনাথ অতুল সেনকে চিঠি লেখেন- ‘আমি কয়েকটি ওলাওঠার ওষুধের বাক্স পাঠাইতেছি এবং যদি হোমিয়োপ্যাথি ডাক্তার পাঠাইতে পারি, সেটা দেখবে।’

হোমিয়োপ্যাথি ঔষধের ওপর রবীন্দ্রনাথের ভরসা ও আগ্রহ ছিল অনেক বেশি। রবীন্দ্রনাথকে লেখা শান্তি কবিরের একটা চিঠিতে বিষয়টি সহজেই জানা যায়। সেখানে ছিল- ‘সেবার বছর দুই আগে যখন শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলাম, তখন কথায় কথায় একদিন আপনি হোমিওপ্যাথি দিয়ে ভীষ্ণ সব রোগ কেমন করে আরোগ্য করেছেন, সে কথা বলেছিলেন। আপনি তো জানেনই আমাদের দেশে হোমিওপ্যাথদের কি দুর্দশা। সে সমস্ত কারণে আমরা চেষ্টা করছি যাতে বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথির একটা কেন্দ্রীয় সঙ্ঘ করে বিধি ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের বন্দোবস্ত করা হয়’।

‘কিন্তু এবারে রাশিয়া ঘুরে এসে সেই সৌন্দর্যের ছবি আমার মন থেকে মুছে গেছে। কেবলই ভাবছি আমাদের দেশজোড়া চাষীদের দুঃখের কথা। আমার যৌবনের আরম্ভকাল থেকেই বাংলাদেশের পল্লীগ্রামের সঙ্গে আমার নিকট-পরিচয় হয়েছে। তখন চাষীদের সঙ্গে আমার প্রত্যহ ছিল দেখাশোনা- ওদের সব নালিশ উঠেছে আমার কানে। আমি জানি, ওদের মতো নিঃসহায় জীব অল্পই আছে। ওরা সমাজের যে তলায় তলিয়ে, সেখানে জ্ঞানের আলো অল্পই পৌঁছায়, প্রাণের হাওয়া বয় না বললেই হয়’- রাশিয়ার চিঠিতে কবি এভাবেই চাষিদের দুঃখের কথা প্রকাশ করেন। তাই কৃষি ব্যাংক স্থাপন ও কৃষিতে উৎপাদন পদ্ধতির উন্নতির পাশাপাশি তিনি ভেবেছিলেন সমবায়নীতি ও কৃষিক্ষেত্র একত্রীকরণ ছাড়া গ্রাম্যকৃষি ব্যবস্থার অগ্রগতি সম্ভব না। রাশিয়ায় গিয়ে সেখানকার কৃষিব্যবস্থা, যৌথখামার ইত্যাদি দেখে রবীন্দ্রনাথ অভিভূত হয়েছিলেন।

‘চাষিকে আত্মশক্তিতে দৃঢ় করে তুলতে হবে, এই ছিল আমার অভিপ্রায়। এ সম্বন্ধে দুটো কথা সর্বদাই আমার মনে আন্দোলিত হয়েছে- জমির স্বত্ব ন্যায়ত জমিদারের নয়, সে চাষির। দ্বিতীয়ত, সমবায়নীতি অনুসারে চাপের ক্ষেত্র একত্র করে চাষ না করতে পারলে কৃষির উন্নতি হতেই পারে না। মান্ধাতার আমলের হাল লাঙল নিয়ে আলবাধা টুকরো জমিতে ফসল ফলানো আর ফুটো কলসিতে জল আনা একই কথা।’ রাশিয়ার চিঠিতে তিনি এভাবেই কৃষিতে সমবায়নীতির কথা তুলে ধরেন। তারপরই রাশিয়ার অনুরূপ কৃষিক্ষেত্রে একত্রীকরণের পরিকল্পনাও করেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপও গ্রহণ করেছিলেন এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জমিকে একত্রিত করে সমবায়ের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনের কাজে হাত দেন।

‘রাশিয়ার চিঠি’তে নির্দ্বিধায় বলেছেন ‘আমাদের দেশে আমাদের পল্লীতে ধান উৎপাদন ও পরিচালনার কাজে সমবায়নীতির জয় হোক, এই আমি কামনা করি’। কৃষিতে সমবায়নীতির একটা অংশ হচ্ছে কৃষকরা যাতে ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় এবং সহজে উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে পারে সে জন্য তিনি ‘ট্যাগোর এন্ড কোম্পানি’ নামে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চালু করেন।

রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন, কাজের সঙ্গে আনন্দের মিশ্রণ করলে কৃষকরা কর্মে উজ্জীবিত হবে। গান-বাজনাসহ বিভিন্নি অনুষ্ঠান আয়োজন করলে কৃষকরা কাজে অনুপ্রেরণা পাবে, আত্মশক্তি জাগ্রত হবে। তাই কৃষি উন্নয়নের পাশাপাশি তিনি গ্রামবাংলায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। সেসবের মাঝে ছিল গ্রামীণ মেলা, বাউল গান, যাত্রা, নাটক ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘গ্রামকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করতে হবে। সকলে শিক্ষা পাবে, গ্রামজুড়ে আনন্দের হাওয়া বইবে, গান-বাজনা-কীর্তন পাঠ চলবে, আগের দিনে যেমন ছিল’। তিনি জানতেন, কৃষকের মাঝে একতার জন্য সাংস্কৃতিক চর্চা অপরিহার্য। তাই ‘কাত্যায়নী’ মেলা, ‘রাক-রাজ্যেশ্বরী’ মেলার আয়োজনসহ বৃক্ষরোপণ উৎসব, পৌষমেলা, মাঘোৎসব আয়োজন করেন। শিলাইদহ, পতিসর ও শ্রীনিকেতনে ঋতুভিত্তিক উৎসবের আয়োজন করেন। ১৯২৮ সালে হলকর্ষণ নামে একটি উৎসবের আয়োজন করেন। হলকর্ষণ মানে জমি চাষের উৎসব। ‘পল্লীপ্রকৃতি’ প্রবন্ধে এই অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলেন- ‘আজকার অনুষ্ঠান পৃথিবীর সঙ্গে হিসাব-নিকাশের উপলক্ষ নয়। মানুষের সঙ্গে মানুষের মেলবার, পৃথিবীর অনুসূত্রে একত্র হবার যে বিদ্যা মানবসভ্যতার মূলমন্ত্র যার মধ্যে, সেই কৃষিবিদ্যার প্রথম উদ্ভাবনের আনন্দস্মৃতিরূপে গ্রহণ করব এই অনুষ্ঠানকে।’ এইসব উৎসবে বিভিন্ন গান হয়। রবীন্দ্রনাথের লেখার সেসব গানেও কৃষি ও ফসলের কথাই উঠে আসে। যেমন:

‘আমরা চাষ করি আনন্দে।
মাঠে মাঠে বেলা কাটে সকাল হতে সন্ধে॥
রৌদ্র ওঠে, বৃষ্টি পড়ে, বাঁশের বনে পাতা নড়ে,
বাতাস ওঠে ভরে ভরে চষা মাটির গন্ধে॥’

ফসল কাটার উৎসবে কৃষকদের উৎসাহিত করতে লিখেন :
‘আয় রে মোরা ফসল কাটি
বাদল এসে রচেছিল ছায়ার মায়াঘর,
রোদ এসেছে সোনার জাদুকর-
মোরা নেব তারি দান, তাই-যে কাটি ধান,
ও সে সোনার জাদুকর’
এমন বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কৃষকদের একত্রীকরণ করে কৃষির উন্নতি ও সমবায়নীতি সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে নিয়েছিলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ‘আজি ধানের ক্ষেতে রৌদ্র ছায়ার, লুকোচুরি খেলারে ভাই, লুকোচুরির খেলা। নীল আকাশে কে ভাসাল, সাদা মেঘের ভেলারে ভাই, সাদা মেঘের ভেলা’। কৃষি উন্নয়নে রবীন্দ্রনাথের অবদান অসামান্য এবং অনুসরণীয়।

আদর্শ কৃষিক্ষেত্র সম্প্রসারণে তার বহুমুখী কর্মসূচি প্রশংসার দাবিরার। তিনি নিবিড়ভাবে অনুধাবন করতেন যে, কৃষক বাঁচলেই গ্রাম বাচবে। আর তাহলেই ‘গ্রামগুলো বেঁচে উঠবে এবং সমস্ত দেশকে বাঁচাবে’। তাই বলেছিলেন- ‘আমি একলা সমস্ত ভারতবর্ষের দায়িত্ব নিতে পারব না, আমি কেবল জয় করব একটি বা দুটি গ্রাম। আমি যদি কেবল দুটি-তিনটি গ্রামকেও মুক্তি দিতে পারি অজ্ঞতা, অক্ষমতার বন্ধন থেকে, তবে সেখানেই সমগ্র ভারতের একটি ছোট আদর্শ তৈরী হবে।’

রবীন্দ্রনাথের সে ভাবনাই আজ একুশ শতকে পৌঁছে বাংলাদেশে স্লোগান: ‘আটষট্টি হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে’।

রাষ্ট্র সংস্কারের আগে শিক্ষা সংস্কার কেন জরুরি

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১০:৫৩ এএম
রাষ্ট্র সংস্কারের আগে শিক্ষা সংস্কার কেন জরুরি
হাসিবুল হাসান

৫ আগস্টের পর দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান সংস্কারের লক্ষ্যে নতুন সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্র সংস্কারের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে যে প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেন সেগুলো হলো সংবিধান সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন, শ্রম সংস্কার কমিশন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন, খুন ও গুমসংক্রান্ত সংস্কার কমিশন। দুঃখের বিষয়, উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারের প্রয়োজন পড়ে বিগত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন আমলের প্রেক্ষিতে। কিন্তু রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু শিক্ষা খাত সংস্কারের জন্য কোনো কমিশন গঠন করা হয়নি। অথচ স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নানান কারণে শিক্ষায় সমস্যা ও সংকট বহু গুণে বেড়েছে। নানান কারণে বির্তকিত হয়েছে শিক্ষা খাত বিভিন্ন সময়ে। শিক্ষার বিভিন্ন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে জনগণ বাতিল করেছে, সংস্কার করার জন্য রাজপথে নামলেও কোনো ফল আসেনি। দিনের পর দিন শিক্ষায় সংকট, সমস্যা ঘনীভূত হয়েছে, দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে সমস্যাই বেড়েছে সম্ভাবনা তৈরি হয়নি। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হলে জনগণ বিশেষ করে শিক্ষক সমাজ ভেবেছিল শিক্ষাব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সংস্কার হবে কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, প্রায় ডজনখানেক প্রতিষ্ঠান, সংস্থাকে সংস্কারের আওতায় আনলেও শিক্ষায় কোনো সংস্কারের উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করেনি। অথচ পাহাড়সমান সমস্যা নিয়ে টিকে আছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। এ সমস্যা শিক্ষকরা যতটুকু বোধ করেন অন্যরা ততটুকু হয়তো বোঝেন না। ২০২০ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো একযোগে বন্ধ হয়ে যায়। টানা ৬৭ সপ্তাহ বন্ধ থাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যা বিশ্বে রেকর্ড। বন্ধের এই ধারাবাহিকতার মধ্যেই শুরু হয় অনলাইন ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট নামের পানি পড়া অটোপাস, পুরোনো কারিকুলাম বাতিল করে, নতুন কারিকুলাম চালু, রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদি নানান সংকটে ভেঙে পড়ে শিক্ষাব্যবস্থা।

২০২০ সালের করোনা মহামারির পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী আর কেউই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ক্লাসে ফিরতে পারেনি। পুরোনো সৃজনশীল কারিকুলাম বুঝে ওঠার আগেই একমুখী নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের তোড়জোড়- সব মিলিয়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় চরম অস্থির অবস্থা পার করছে। বিভিন্ন সময় নানান দাবিদাওয়া নিয়ে শিক্ষকদের রাজপথে অবস্থান, নন-এমপিও শিক্ষকদের আন্দোলন, বিভিন্ন ইস্যুতে শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন, প্রাথমিক শিক্ষকদের দশম গ্রেডপ্রাপ্তির আমলাতান্ত্রিক সমস্যা, বেসরকারি শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, বেতনবৈষম্য নিয়ে শিক্ষকদের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ, ইএফটি জটিলতায় গত পাঁচ মাসের বেতন-বোনাসবঞ্চিত শিক্ষকদের অমানবিক জীবনযাপন, এনটিআরসির নিয়োগবাণিজ্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বহুমাত্রিক সমস্যা, শিক্ষকতার নিম্নমান ইত্যাদির কারণে দারুণভাবে বিঘ্নিত হয়েছে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ। চলতি বছরের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেছে তবুও সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে এসে পৌঁছায়নি, রয়েছে চলমান নানান জটিলতা। সবমিলিয়ে চরম এক বিশৃঙ্খলায় জর্জরিত শিক্ষা খাত। ২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে শিক্ষায় সব অনিয়ম দূর করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে শিক্ষা আইন বাস্তবায়নের কথা বলা থাকলেও সেটার বাস্তবায়ন বিগত দিনগুলোয় রাজনৈতিক কারণেই সম্ভব হয়নি। বিপ্লবের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকার ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কিত বিষয়ে সংস্কার কমিশন গঠন করে সংস্কারের উদ্যোগ নিলে শিক্ষক সমাজ আশায় বুক বাঁধে এই ভেবে যে, স্বতন্ত্র একটি কমিশন গঠন করে সরকার শিক্ষায় চলমান সব সমস্যার সমাধান করবে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে আশাও ক্রমান্বয়ে ক্ষীণ হয়ে আসে। নতুন সরকার সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংস্কার উদ্যোগ শুরু করলেও শিক্ষা খাত এখনো রয়ে গেল উপেক্ষিত। অথচ বিগত ৫০ বছরের অধিক সময় কল্যাণমুখী, গণমুখী পদক্ষেপ দৃশমান হয়নি। শিক্ষায় যথার্থ পরিকল্পনা আর বিনিয়োগের মাধ্যমে পৃথিবীর অনেক দেশই অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করতে পেরেছে, আমরা করেছি উল্টোটা। একটি উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা একটি জাতিকে  উন্নত, ধনী, ঐশ্বর্যবান সর্বোপরি স্বাস্থ্যবান করে তোলে। এজন্য প্রয়োজন দূরদর্শী পরিকল্পনা, রাষ্ট্রের আর্থিক স্বক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, বাস্তবায়নের আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসা। নতুন বাংলাদেশের পুনর্নির্মাণ সফল করতে সংস্কার অপরিহার্য, প্রয়োজনীয় বটে তবে সেটা শিক্ষাকে অবজ্ঞা, উপেক্ষা করে নয় বরং সঙ্গে নিয়ে। নতুন সরকার সেদিকে নজর দেবে, প্রত্যাশিত পরিবর্তনের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষাকে আরও একধাপ এগিয়ে নেবে, এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

প্রোগ্রাম অফিসার, দেশভিত্তিক উৎকর্ষ কার্যক্রম, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ঢাকা।
সাবেক অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, এসইডিপি প্রোগ্রাম, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ঢাকা।
[email protected]

অপ্রকাশিত অনুভূতি

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫, ১০:৫৮ এএম
অপ্রকাশিত অনুভূতি
মো. ইব্রাহিম আজাদ

সকাল বেলার রোদটা আজ যেন একটু বেশি নরম। কলেজের পাশে ছোট একটা বাসায় একাই থাকেন রায়হান সাহেব। সাহিত্যের অধ্যাপক। স্ত্রী-সন্তান ঢাকায় থাকে। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। মাথার চুলে পাক ধরেছে। চোখে রিডিং চশমা লাগে। শ্যামল বর্ণের মাঝারি গড়ন। প্রথম দেখাতেই আকর্ষণীয় কোনো ভাব নেই। নিরীহ গোছের গোবেচারা টাইপের মানুষ। নিজের মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। কিন্তু ক্লাসে যখন পড়ান, তখন তিনি পড়ার মধ্যে নিজেকে একাত্ম করে নেন। ছাত্রছাত্রীরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো রায়হান সাহেবের কথা শোনেন।

আজ রায়হান সাহেব নিজের কক্ষের সামনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে চায়ের কাপে আনমনে চুমুক দিতে দিতে দেখেন সামনের কাঁঠাল গাছ থেকে আকাশে উড়ে যাচ্ছে এক জোড়া শালিক। সেই দৃশ্য দেখতে দেখতে হঠাৎ তার মনের মণিকোঠায় একটা মুখ হালকা মেঘের মতো উঠেই পরক্ষণেই মিলিয়ে যায়। অনেক মুখের ভিড়ে কোনো একটা মুখ বিশেষ কোনো ক্ষণে কেন ভেসে আসে তার ব্যাখ্যা রায়হান সাহেব খুঁজে পান না। তার মনে হয় এ বয়সে এসে মানুষ যখন পেছন ফিরে তাকায় তখন যা মনে থাকে, তা আর কোনো ঘটনা নয়- তা হয় কিছু অনুভব, কিছু গন্ধ, কিছু না বলা কথার দাগ।

সময়টা ছিল আশির দশকের শুরুর দিকে। গ্রামের ছেলে রায়হান। তার অনেকটা চরের মতো চারপাশে আবাদি জমি ছিল, আবার প্রচুর বালুময় রাস্তাও ছিল। প্রতি বছর প্রায় বন্যা হতো। রায়হান নিজের বাড়ির পাশের বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে গ্রামে অবস্থিত উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়।

সে সময় নিয়ম ছিল ছেলেরা নিজ নিজ ক্লাসে বসে থাকত আর মেয়েরা তাদের জন্য নির্ধারিত কমন রুমে থাকত। ক্লাস শুরু হওয়ার সময় স্যারের সঙ্গে সঙ্গে ক্লাসে আসত আবার ক্লাস শেষ হলে স্যারের সঙ্গে সঙ্গে কমন রুমে ফিরে যেত। প্রথম দিন রায়হান দুরুদুরু বুকে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়। প্রথম দিন কারও সঙ্গে তেমন একটা কথা হয়নি। সে দ্বিতীয় বেঞ্চে বসে। রায়হান ছাত্র হিসেবে ভালোর দিকে ছিল। প্রতিদিনের পড়া তৈরি করে যেত। অবশ্য এর কারণও ছিল। সে সময় শিক্ষকরা পড়া না পারলে শাস্তি দিত। হাতে বেত নিয়ে ক্লাসে যাওয়া এক প্রকার নিয়ম ছিল। 

ধীরে ধীরে রায়হান নতুন সহপাঠীদের নাম, পরিচয় আত্মস্থ করে। কারও কারও সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে যায়। আবার আশপাশের এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় অনেকের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্কের যোগসূত্র বেরিয়ে আসে। শাহিন, শওকত, মোল্লা, বাদল, রতনের সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠতা হয়। ফলে তার মনের মধ্যে যে দুরুদুরু ভাব ছিল তা দূর হয়ে যায়। গ্রামে সে সময় মেয়েদের পড়াশোনা বেশ ভালো মতোই শুরু হয়ে গেছে। তাদের ক্লাসে আটজন মেয়ে ভর্তি হয়েছে। কোনো কোনো মেয়ের নামও জেনে গেছে। এর মধ্যে যা তার মনে গভীর দাগ রেখে যায় তা হলো জ্যোতি ও মলি। তারা দুই বোন একই ক্লাসে অর্থাৎ ষষ্ঠ শ্রেণিতে রায়হানদের সঙ্গে পড়ত। জ্যোতি ছোট মলি বড়। বাবা ছিলেন উকিল। তাই তাদের মধ্যে আলাদা কী যেন একটা কাজ করত। ক্লাসের বাইরে তাদের সঙ্গে রায়হানের কখনো কোনো কথা হয়নি। কিন্তু কেন রায়হান নিজেও জানে না, জ্যোতির মুখ মাঝে মাঝে মেঘের মতো ভেসে উঠে আবার মিলিয়ে যায়। শুধু তাই নয় ছাত্রজীবনে অনেকের সঙ্গেই তো পড়েছে তাদের কারও মুখ-মনের গহীনে ভেসে ওঠে না। তবে কি জ্যোতিকে ভালোবাসত। না, সেরকম কিছু না। কেননা রায়হান জানে ভালোবাসা আলাদা। হয়তো ভালো লাগা। কোনো কূলকিনারা খুঁজে পান না। তবে কি লিকলিকে কালো বর্ণের হীনম্মন্যতায় ভোগা রায়হানের কাছে সে ছিল রূপকথার পরী।

সপ্তম শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করে যে যার মতো ছুটি কাটানো শেষে নতুন বছরের ক্লাসে উপস্থিত হয়ে রায়হান জানতে পারে জ্যোতি ও মলি তাদের সঙ্গে পড়বে না। তারা শহরের বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। এতে রায়হানের মনে বেশ ব্যথা করে। কেন করে তাও জানে না। এ নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কিছু বলতেও পারে না। শুধু কষ্টটা বয়ে বেড়ায়। 

কিছুদিন পর রায়হান শুধু ওই বিদ্যালয় নয় নিজ এলাকা ছেড়ে দেশের অন্য প্রান্তে চলে যায় এবং সেখানে একটা বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। সময়ের আবর্তনে রায়হান নতুন পরিবেশ, নতুন পরিচয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যায়। পড়াশোনা শেষ করে সরকারি কলেজে চাকরি হয়, বিয়ে হয়। চাকরি, স্ত্রী, সন্তান নিয়ে অনেকটা গুছানো জীবন। তারপরও কিছু ক্ষণ, কিছু মুহূর্ত থেকে থেকে আসে যখন বাতাসে শালিকের ডানা ঝাপটানোর শব্দ শুনে কিংবা নীল আকাশে বকের ভেসে যাওয়া সারি দেখে স্থির হয়ে যায়। কিছু শব্দ হৃদয়ের গভীরে গেঁথে যায়। যেমন কিছু অনুভব বেঁচে থাকে নিশ্বাসে। 

মাঝে মাঝে কৈশোরের অবাধ্য সময়গুলো; স্পষ্ট করে বললে বলা যায়, স্মৃতিগুলো একটার পর একটা দৃশ্যকল্প এঁকে চলে যায়। এসবের কোনো অর্থ সাধারণ দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না। কেনই-বা এগুলো হয় তা বুঝতে পারে না। তবুও কেন জ্যোতির মুখ মনের মাঝে ভাসে। তিনি ভাবেন জ্যোতিকে খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু কাউকে সরাসরি জিজ্ঞেস করতে পারেন না। তা ছাড়া নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন করেন। কেন আমি তাকে খুঁজব? অন্ধকারে হাতড়ানোর মতো নিজের হৃদয়ে হাতড়ান। কোনো কিছু নেই। তারপরও কী অদম্য আগ্রহ।

বেশ কিছু দিন পেরিয়ে গেছে। রায়হান একসময় জানতে পারে জ্যোতি একজন সুখী মানুষ। স্বামী সংসার হয়েছে। শুধু তাই নয় সেও একজন সাহিত্যের অধ্যাপক। শুনে জ্যোতিকে দেখার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। তার সঙ্গে দেখা করার জন্য অস্থিরতা অনুভব করে রায়হান। কিন্তু একা দেখা করার সাহস হয় না। কেননা জ্যোতির সঙ্গে তার সরাসরি কোনো কথাই হয়নি কখনো। এখন ৪০ বছর পর দেখা হলে জ্যোতিই-বা রায়হানকে চিনবে কেন? মনের মাঝে ক্ষীণ আলো রেখা দেখে যদি চেনে?

অনেক ভেবে রায়হান তার বাল্যবন্ধু সহপাঠী রতনকে খুলে বলে জ্যোতির কথা। রতনও জ্যোতিকে দেখেনি ক্লাস সেভেনের পর। রায়হান ও রতন সিদ্ধান্ত নেয় কোনো একদিন হঠাৎ জ্যোতির বাসায় হাজির হবে। আবার দুজনে কী জন্য কিংবা কী পরিচয়ে যাবে। নানা শঙ্কা কাজ করে ভেতরে ভেতরে।

কিন্তু আবিষ্কারের নেশায় সব আশঙ্কাকে অসার মনে হয়। উচিত অনুচিতের প্রশ্নকে আড়ালে রেখে সব আশঙ্কাকে বুকের ভেতর লুকিয়ে রেখে একদিন দুই বন্ধু হাজির হয় জ্যোতির বাসার সামনে। অধ্যাপক হিসেবে তাকে পাড়ার সবাই জানেন। রতন বাসার কলিং বেল টিপ দিতেই একজন বাসা থেকে বের হয়ে জানতে চান আমরা ঠিক কাকে খুঁজছি। রতন জ্যোতির কথা জিজ্ঞেস করতেই সে বলল আমিই জ্যোতি। কিন্তু আপনাদের তো চিনলাম না। রতন জ্যোতিকে জিজ্ঞেস করল আমরা যে বিদ্যালয়ে পড়তাম তার কথা। তারা দুই বোন পড়ত কি না। সে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। রতন জিজ্ঞেস করল তাকে চিনতে পারছি কি না। সে আবার না সূচক মাথা নাড়ল। রতন নানাভাবে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করল, তবুও জ্যোতির কোনো স্মৃতি মনে করতে পারছিল না।

রায়হান চুপ করে একপাশে দাঁড়িয়ে তাদের কথোপকথন শুনতে শুনতে ভাবছিল তার আশঙ্কা সত্য হয়ে যায় কি না। ভেতরে উৎকণ্ঠা কাজ করছিল।

এটাও ভাবছিল এতদিনের ব্যবধানে তাদের না চেনাটাই স্বাভাবিক। তা ছাড়া সময়ের আবর্তনে মানুষ তার কত কিছুই ভুলে যায়। খানিকটা বিরক্ত হয়ে রতনের হাতে টান দিয়ে বলে, চল আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। ঘরের ছেলে ঘরে চল। অকস্মাৎ চিৎকার করে জ্যোতি বলে, আরে থাম, তুই রায়হান না। রায়হান হতবিহ্বল হয়ে যায়। নিজের কানকে তার বিশ্বাস হচ্ছিল না। জ্যোতি শুধুই যে তাকে চিনতে পেরেছে তা নয়, তার নাম পর্যন্ত মনে রেখেছে। রায়হানের নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। সে শুধু অনুভব করে, যাকে দেখার জন্য এত অপেক্ষা তা সার্থক হয়েছে।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক (অর্থনীতি বিভাগ), পলাশবাড়ী সরকারি কলেজ, গাইবান্ধা

সড়ক দুর্ঘটনা: বাস্তবতা ও করণীয়

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫, ১২:১৪ পিএম
সড়ক দুর্ঘটনা: বাস্তবতা ও করণীয়
রিয়াজুল হক

গত সপ্তাহের ঘটনা। চোখের সামনে রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। সারা জীবনের স্বপ্ন এক মুহূর্তে শেষ। আর তিনি চলে যাবার পর পুরো পরিবার এখন অসহায় হয়ে পড়েছে। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন। অগণিত মানুষ চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ পুলিশের হিসাব মতে, দেশে বছরে পাঁচ থেকে সাত হাজার মানুষের মৃত্যু হয় সড়ক দুর্ঘটনায়।

যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্য, এ মৃত্যুর সংখ্যা ২১ হাজারের বেশি। কিন্তু বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা সেন্টারের তথ্যমতে, দেশে বছরে ১১ হাজারের মতো লোক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়।

সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে একাধিক কারণ কাজ করে। এর মধ্যে প্রধান কারণ হলো বেপরোয়া গাড়ি চালানো। বাংলাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে অনেক সময় ঘুষ ও অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়, ফলে অপেশাদার চালকরা রাস্তায় নামছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যানবাহনের ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রাংশ, যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং গাড়ির ওভারলোডিং।

আরেকটি বড় সমস্যা হলো সড়ক অবকাঠামোর দুর্বলতা। অপ্রশস্ত সড়ক, ফুটপাতহীন পথ, অপরিকল্পিত বাসস্ট্যান্ড ও মার্কেট এলাকায় যাত্রী ওঠানামা, সব মিলিয়ে রাস্তায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। এ ছাড়া ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতা ও আইন প্রয়োগে শৈথিল্য দুর্ঘটনা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

সড়ক দুর্ঘটনা কেবল একটি ব্যক্তির জীবন শেষ করে না, তার সঙ্গে একটি পরিবার ধ্বংস করে দেয়। দুর্ঘটনায় একজন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নিহত বা পঙ্গু হলে তার পরিবারে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। অর্থনৈতিক দিক থেকেও এটি একটি বড় ধাক্কা।

আন্তর্জাতিক গবেষণা বলছে, সড়ক দুর্ঘটনার ফলে বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ ক্ষতি হয় প্রতি বছর।

সড়ক দুর্ঘটনার সমাধানের পথ কোথায়? 
প্রথমত, চালক প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স প্রদান ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে হবে। একটি পেশাদার ও কঠোর ড্রাইভিং ট্রেনিং ও পরীক্ষার পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হবে। লাইসেন্স যেন সত্যিকারের যোগ্যতার ভিত্তিতে দেওয়া হয়, তা কঠোরভাবে মনিটর করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। বর্তমানে যে আইন আছে, তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। জরিমানা, লাইসেন্স বাতিল এবং কারাদণ্ডের বিধান কার্যকর করতে হবে।

তৃতীয়ত, গণপরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে মালিক-শ্রমিকদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। প্রতিযোগিতার নামে বাসচালকদের গতির প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। প্রত্যেক রুটে নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুযায়ী বাস চালনা নিশ্চিত করতে হবে।

চতুর্থত, সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়ন জরুরি। শহর ও গ্রামে সড়কের প্রশস্ততা, ইউটার্ন, স্পিডব্রেকার, ফুটওভারব্রিজ ও ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা যুগোপযোগী করতে হবে। পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জেব্রাক্রসিং ও ফুটপাতকে ব্যবহারযোগ্য ও বাধামুক্ত রাখতে হবে।

পঞ্চমত, সড়ক দুর্ঘটনা-সংক্রান্ত ডেটাবেজ তৈরি ও বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে হবে। কোথায় কোন ধরনের দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে, কোন সময়ে বেশি হচ্ছে, এসব তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ থেকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।

আইন ও অবকাঠামো ছাড়াও জনগণের সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রমে ট্রাফিক সচেতনতা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং স্থানীয় পর্যায়ে সেমিনার, ওয়ার্কশপের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করা সম্ভব। যাত্রীরা নিজেদের নিরাপত্তার দিকেও খেয়াল রাখতে শিখলে দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে যাবে।

আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, কিন্তু তা অসম্ভব নয়। প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক দক্ষতা ও জনসম্পৃক্ততা। আমাদের সড়ক যেন মৃত্যুকূপ না হয়ে বরং নিরাপদ যাত্রার পথ হয়, এই প্রত্যাশাই সবসময় করি।

লেখক: যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক

মৌলিক চাহিদা, সময় ব্যবস্থাপনা ও সেবাই যেখানে মূখ্য

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ১০:০৭ এএম
মৌলিক চাহিদা, সময় ব্যবস্থাপনা ও সেবাই যেখানে মূখ্য
মো. কামরুল ইসলাম

দেশের অর্থনীতির গতিপথ নির্ভর করছে প্রবাসীদের আয়ের অর্থের উপর। রেমিট্যান্স যোদ্ধারা দেশকে, দেশের মানুষকে ভালো রাখার জন্য প্রাণান্ত কষ্ট করে যাচ্ছেন। আর এই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে জিডিপিতে প্রতিনিয়ত কন্ট্রিবিউট করে যাচ্ছে। দেশের শিক্ষিত জনগোষ্টিকে কাজে লাগিয়ে বেকারত্ব লাগব করার চেষ্টা করছে ইউএস-বাংলা গ্রুপ। 

দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে ইউএস-বাংলা গ্রুপ প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে কাজ করছে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এই পাঁচটি মৌলিক চাহিদাকে দেশের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কাজ করছে ইউএস-বাংলা।

ইউএস-বাংলা গ্রুপ প্রতিষ্ঠার শুরুতে দেশের মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা বাসস্থান সমস্যার সমাধান খুঁজতে ইউএস-বাংলা এসেটস্ এর মাধ্যমে পূর্বাচল আমেরিকান সিটির আবির্ভাব ঘটায়। অধিক জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশে বাসস্থান সংকট প্রকট। মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত সব শ্রেণির নাগরিকদের জন্য আধুনিক সব ধরনের সুযোগ সুবিধা রেখে একটি সবুজায়নে ভরপুর পূর্বাচল আমেরিকান সিটি উন্নত নাগরিক সুবিধার প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বপ্নের চেয়ে বেশি সুবিধা সম্পন্ন প্রকল্প পূর্বাচল আমেরিকান সিটি।

মৌলিক চাহিদার অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থ্য। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। এই স্বাস্থ্য সেবাকে নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ইউএস-বাংলা গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেছে ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। ইউএস-বাংলা মেডিকেলে শুধু চিকিৎসা সেবাই দেয় না, উপরন্তু মেডিকেল কলেজ থেকে প্রতিবছর মেধাসম্পন্ন ডাক্তার পাশ করে সারা বাংলাদেশে আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে, যা দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে গতিশীল রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, উচ্চ শিক্ষার অন্যতম দিগন্ত। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় অবস্থানে পৌঁছে দিতে ইউএস-বাংলা গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেছে দেশের অন্যতম বিদ্যাপিট গ্রিন ইউনিভার্সিটি। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে গ্রিন ইউনিভার্সিটি প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।

ভাইব্রেন্ট আধুনিক বাংলাদেশ গঠনে, নতুন প্রজন্মের চাহিদা অনুযায়ী দাম ও মানের প্রতি যত্নশীল থেকে পন্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে ভূমিকা রাখছে। নারী, পুরুষ, শিশুসহ সব বয়সের মানুষের জন্য লেদারসামগ্রী, গার্মেন্টস পণ্যসহ নানাবিধ বস্ত্রসামগ্রী দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে ন্যনতম অংশীদারত্বের মাধ্যমে দেশের সেবা করে যাচ্ছে ভাইব্রেন্ট। সারা দেশে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন জেলা শহরগুলোতে ভাইব্রেন্টের পণ্যসামগ্রী বিক্রয়ের জন্য নিজস্ব আউটলেট স্থাপন করে চলেছে।

বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম নিজেদের একটা অবস্থান তৈরি করার চেষ্টা করছে। সেই চেষ্টায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ঘটিয়ে পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এখানে সময় একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। খাদ্য তৈরিতে সময়ক্ষেপণ না করে নতুন প্রজন্ম রুচিসম্মত খাদ্যগ্রহণে সারাবিশ্বেই ফুড অ্যাপের মাধ্যমে খাদ্য সংগ্রহ করে থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন প্রজন্মের জন্য সময়টাকে ক্যাশ করার জন্য ‘ফুডি’র আবির্ভাব। আর সেই আবির্ভাবে মূলে রয়েছে ইউএস-বাংলা গ্রুপ।

ইউএস-বাংলা গ্রুপ যাত্রা শুরুর পর থেকে ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধির পরিকল্পনায় ছিল সেবা। সেবাই ধর্ম- এই ব্রত থেকেই ইউএস-বাংলা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ইউএস-বাংলার এয়ারলাইন্সের আবির্ভাব ঘটান। দেশের ১৫ মিলিয়ন প্রবাসী বাংলাদেশিদের সেবা দেওয়ার মানসে, দেশের আকাশপথকে সাবলীল রাখার নিমিত্তে গড়ে তোলে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। বর্তমানে ৪৩৬ আসনের দুটি এয়ারবাস ৩৩০-৩০০, ৯টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ সহ মোট ২৪টি এয়ারক্রাফট রয়েছে। যা দিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর-সহ বিশ্বের ১০টি দেশের ১৪টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। 

পরিকল্পনা আর বাস্তবায়নকে সাথে নিয়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই থেকে বাংলাদেশের আকাশপথে বিস্তৃতি লাভ করেছে। যা দিয়ে বাংলাদেশের এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজেম ইন্ডাস্ট্রিকে স্থিতিশীলতা দিতে পারছে। ভবিষ্যত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ ইউরোপের গন্তব্য বিশেষ করে লন্ডন, রোম-সহ আরও অধিক গন্তব্য এবং ২০২৮ সাল নাগাদ টরেন্টো, নিউইয়র্কে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে।

অ্যাভিয়েশন ব্যবসা একটি সেবাধর্মী ব্যবসা। এয়ারলাইন্সকে আরো বেশি গতিশীল করার নিমিত্তে ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ব্যবসাকে সাবলীল করার লক্ষ্যে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি অ্যাপসের মাধ্যমে এক প্লাটফর্মে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, এয়ার টিকেট, লোকাল ট্রান্সপোর্টসহ যাবতীয় চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখতে ইউএস-বাংলা গ্রুপ চারটি ওটিএ কোম্পানি তৈরি করেছে। কোম্পানিগুলো হচ্ছে ট্রিপলাভার, ফার্স্টট্রিপ, ট্রাভেলচ্যাম্প ও টেকট্রিপ। যা দিয়ে ট্যুরিজম অ্যান্ড ট্রাভেল ব্যবসায়ে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ট্রাভেলারদের যোগ করতে পারছে। সারাবিশ্বের সব এয়ারলাইন্স, হোটেলকে এক প্লাটফর্মে উপস্থাপন করতে পারছে। ট্রাভেলাররা চাহিদামতো সেসব প্লাটফর্ম থেকে নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী টিকেট, হোটেলসহ অন্য সব সুবিধা গ্রহণ করতে পারছে।

সময়কে প্রাধান্য দিয়ে সেবাকে উপস্থাপন করে ইউএস-বাংলা গ্রুপ ই-কমার্স ব্যবসায় যোগ করেছে ‘কার্টআপ’, অনলাইন ভিত্তিক ‘ক্যারিবি’। বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের যেকোনো সংবাদ মুহুর্তে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনলাইন নিউজপেপার সকলের গ্রহণযোগ্য ঢাকাপোস্ট, ঢাকামেইল এবং অনলাইন ও প্রিন্ট ভার্সনে দৈনিক আজকের পত্রিকা পাঠকদের জন্য নিয়ে আসে ইউএস-বাংলা গ্রুপ। 

দেশের সফটওয়্যার ব্যবসাকে উচ্চমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার তাগিদে উন্নত জাতি গঠনে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে দেশের সব শিল্পকে দ্রুততার সঙ্গে সেবা দেওয়ার জন্য ইউএস-বাংলা গঠন করে ‘টেকনোনেক্সট’।

শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে ‘সময়’ আধুনিক বিশ্বে অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। সময় বাঁচিয়ে সেবাকে প্রাধান্য দিয়ে ইউএস-বাংলা গ্রুপ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণ করে চলেছে, যা দিয়ে দেশের বেকার সমস্যা দূরীকরণসহ অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা পালন করছে। 

মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা গ্রুপ

প্রকৃতির এয়ার কন্ডিশনার নিম গাছ

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ০২:৪৮ পিএম
প্রকৃতির এয়ার কন্ডিশনার নিম গাছ
রিয়াজুল হক

আমরা এক অস্বাভাবিক গরমের সময় পার করছি। প্রতিদিনের আবহাওয়ার খবরেই সেই প্রমাণ মেলে। দেশের সব অঞ্চলেই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই। কোথাও কােথাও ৪০ ছাড়িয়ে গেছে। বাতাসে আর্দ্রতা কম, ঘাম শুকায় না, ঘর ঠান্ডা হয় না। এই অবস্থায় প্রশ্ন ওঠে, আমরা কী কিছুই করতে পারি না? বিজ্ঞান ও প্রকৃতির উত্তর হচ্ছে- হ্যাঁ, পারি। আর সেই উপায়ের নাম হলো, গাছ। বিশেষত দেশীয় গাছ। আর তার মধ্যেও যেটি সবচেয়ে কার্যকর ও উপকারী, তা হলো নিম গাছ।

সম্প্রতি ভারতের আহমেদাবাদ শহরের সিইপিটি ইউনিভার্সিটি একটি গবেষণা করেছে, যেখানে দেশীয় প্রজাতির গাছের মধ্যে বিশেষভাবে নিম গাছ শহুরে উষ্ণতা প্রশমনে কতটা কার্যকর, তা পরিমাপ করা হয়। এই গবেষণায় তারা তাপমাত্রা, বিকিরণ এবং মানবদেহ কতটা গরম অনুভব করে - এই তিনটি দিক পরিমাপ করেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, নিম গাছের কারণে বাতাসের তাপমাত্রা গড়ে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যায়। মোট বিকিরণ তাপমাত্রা কমে ২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। মানবদেহে তাপমাত্রা ২ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কম অনুভূত হয়।

এই গবেষণা নগর পরিকল্পনা ও জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামোর পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের শহরগুলোতে, যেখানে ঘনবসতি, কংক্রিট এবং গাছপালা কম- সেখানে এ ধরণের দেশীয় ছায়াদানকারী গাছ লাগানো বাস্তবিক অর্থেই তাপমাত্রা কমাতে পারে।

সিইপিটি ইউনিভার্সিটির গবেষণার ফলাফল আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গেও মিলে যায়। আপনি যদি একটি বড় নিম গাছের নিচে গিয়ে দাঁড়ান, শরীর স্বস্তি পায়, যেন বাতাসও শীতল। কারণ, নিম গাছ ঘন ছায়া দেয়, ট্রান্সপিরেশন প্রক্রিয়ায় পরিবেশে আর্দ্রতা ছাড়ে এবং বিকিরণ তাপ শোষণ করে।

আমাদের দেশে নিম গাছ পরিচিত ও সহজলভ্য হওয়া সত্ত্বেও আজ শহরাঞ্চলে এর দেখা মেলে না বললেই চলে। অথচ ঢাকার মতো শহরগুলোতে যেখানে কংক্রিট আর পিচঢালা রাস্তায় ঘেরা, সেখানে যদি প্রতি ব্লকে, প্রতি স্কুল বা হাসপাতালের পাশে অন্তত কয়েকটি নিম গাছ থাকত, তাহলে শহরের গড় তাপমাত্রা অনেকটাই কমে আসত।

নিম গাছের আরও কিছু দারুণ বৈশিষ্ট্য আছে। এটি খুব কম যত্নে বড় হয়, শুষ্ক ও অনুর্বর মাটিতেও জন্মাতে পারে। এতে পানির চাহিদা কম এবং কোনো রাসায়নিক সার না দিলেও চলে। পাশাপাশি এটি বায়ু বিশুদ্ধ করে, রোগজীবাণু দমন করে এবং কৃষিকাজে প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

আজকের প্রেক্ষাপটে নিম গাছ যেন একযোগে পরিবেশ রক্ষাকারী, স্বাস্থ্যরক্ষাকারী এবং জলবায়ু-যোদ্ধা। শহরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য যে সবুজ অবকাঠামো দরকার, নিম গাছ তারমধ্যে অন্যতম।

আমাদের নাগরিক জীবনে এখনই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। ঢাকাসহ অন্যান্য শহরে যদি প্রতিটি খোলা জায়গায় তিন থেকে পাঁচটি নিম গাছ রোপণ করা যায়, তবে কয়েক বছরের মধ্যে আমরা স্পষ্ট পার্থক্য দেখতে পাব। স্কুল, কলেজ, মসজিদ, হাসপাতাল ও সরকারি অফিসে পরিকল্পিতভাবে নিম গাছ রোপণের কাজ চালানো যেতে পারে। 

একইসঙ্গে দরকার গাছ বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ। অনেক সময় দেখা যায়, গাছ লাগানো হলেও তা ঠিকমতো বড় হয় না, অথবা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শুকিয়ে যায়। তাই রোপণ থেকে শুরু করে রক্ষণাবেক্ষণ পর্যন্ত একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা থাকা দরকার।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আগামী দিনে গরমের মাত্রা আরও বাড়বে। এই আগাম সংকেতের মোকাবিলা করতে হলে আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। আর সেই প্রস্তুতির অন্যতম অংশ হলো, প্রতিটি অঞ্চলে দেশীয় গাছ লাগানো। আর যদি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, স্বল্প রক্ষণাবেক্ষণ, স্বাস্থ্যসুরক্ষা ও দীর্ঘস্থায়ী উপকার বিবেচনায় আনা হয়, তখন নিম গাছ হয়ে ওঠে সবচেয়ে কার্যকর সমাধান। নিজের শহর, গ্রাম, পাড়া কিংবা স্কুলের প্রাঙ্গণে অন্তত একটি করে নিম গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এই ছোট উদ্যোগই হতে পারে একটি বড় পরিবর্তনের সূচনা।

লেখক: যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক