মহামানব গৌতম বুদ্ধ আজ থেকে আড়াই হাজারের বছর পূর্বে যে শান্তি ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করেছিলেন, একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক এই বিশ্বজগতে এর কতটুকু প্রতিফলন ঘটছে, বিশ্বব্যাপী তা এখন অন্যতম গবেষণার বিষয়। তৎসময়ে ভগবান তথাগত গৌতম বুদ্ধ হিংসা, শত্রু, যুদ্ধ, বিদ্রোহ, সহনশীলতা, বৈরিতা, সুখ, দুঃখ, ভোগ, বিলাস থেকে মুক্ত হয়ে নিজেকে নিজে জয় করে মানবমুক্তির উদ্দেশ্যে মৈত্রী, শান্তি, সম্প্রীতির বাণী প্রচার করে মানুষের জীবনমানে এক আমুল পরিবর্ত ঘটিয়েছিলেন। আজ তার বাণী ও দর্শন বিশ্বের জ্ঞান-ভান্ডারকে আলোকিত করেছে।
তিনি কোনো ধর্মপ্রচারক ছিলেন না, তিনি ছিলেন মানবিক দর্শনের পুরোধা প্রবক্তা। যেটি নিজে আত্মস্থের মধ্য দিয়ে মানুষ হিসেবে প্রতিনিয়ত দুঃখ নিপীড়িত জর্জরিত জীবন থেকে মুক্তির পথে ক্ষয়ে ক্ষয়ে নিজেকে আবিষ্কার করেছেন। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি রক্ত মাংসের শরীরে গড়া মায়ের গর্বে জন্ম নেওয়া একজন অদ্ধিতীয় দৃশ্যমান ব্যক্তি মানবতার জয়গান গেয়ে মানুষের মনের গহীনে ঠাই করে নিয়েছেন।
তিনি অলোকিকতা বিশ্বাস করতে নিষেধ করেছেন। শোনা কথায় কান দিতে নিষেধ করেছেন। যাচাই-বাচাই করে ভাল লাগলে গ্রহণের কথা বলেছেন, খারাপ লাগলে ত্যাগ করার কথা বলেগেছেন। ভগবান বুদ্ধ বলেছেন বলে গ্রহণ করতে হবে তারও সর্তকবাণী দিয়েছেন। প্রাণী হত্যা, মিথ্যা কথা, চুরি, ব্যভিচার, লোভ, স্বার্থপরতা, অন্যের ক্ষতিসাধন থেকে মুক্ত থাকার কথা যেমন তিনি বলেছেন, তেমনি বলেছেন শত্রুকে মৈত্রী দিয়ে জয় করার কথা।
কিন্তু বাস্তবে আমরা কি দেখতে পাচ্ছি। বিশ্বব্যাপী এখন ভয়াবহ যুদ্ধের দামামা। নিরস্ত্র মানুষের সবলের প্রাণ সংহার, ধর্মের নামে মিথ্যার বসবাস। উগ্রবাদীদের প্রবল উন্মাদনায় সময়ে সময়ে বৌদ্ধ সংস্কৃতি হয়েছে আঘাতপ্রাপ্ত। অন্য ধর্মের মতবাদীদের দোষ দিই কেন! যেখানে এখন খোদ নিজ সম্প্রদায়েরর লাল কাপড় পরিহিতি গুটিকয়েক ছদ্মনামধারী ধর্মগুরুরা যখন ধর্মের নামে রাজনীতি-ব্যবসা খুলে সন্ত্রাসীদের সাথে উঠাবসা করে, ধর্মালয়ে সাধারণ গৃহীদের গায়ে হাত তুলে, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধ্বংযজ্ঞ, নারীর শাড়ি টেনে খুলে ফেলে নোংরা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা গুজব রটিয়ে পুরো দেশও সম্প্রদায়ের ভাবমূর্তি খুন্ন করে এই সব ধর্মগুরুরা কোন আদর্শ বাস্থবায়ন করার পথে নেমেছে সাধারণ ধর্মপ্রাণ নর-নারীর বোধগম্য নয়!
যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা অসাম্প্রদায়িক চেতনার মধ্যে দিয়ে দেশকে বিশ্বের সামনে উদার গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত করছে সে মুহুর্তে বৌদ্ধ উগ্রবাদী ধর্মগুরুদের এমন আস্ফালন দেশ ও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে একটি সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্র!
মহামানব সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধ খ্রিষ্টপূর্ব ৬২৩ অব্দে বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে নেপালের দেবদেহ নগরের সীমান্ত অঞ্চলের লুম্বিনী কাননের উদ্যানে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ছিলেন কপিলাবস্তু নগরীর রাজা শুদ্ধোধন। মায়ের নাম রাণী মহামায়া। সিদ্ধার্থের জন্মের সাতদিন পর মা মহামায়া ইহলোক ত্যাগ করেন। মায়ের মৃত্যুর পর কুমার সিদ্ধার্থকে কোলেপিঠে লালন পালন করে আপন সন্তানের মায়ায় বড় করে তুলেন সৎমা মহাপ্রজাপতি গৌতমী।
গৌতমী এমন স্নেহ-আদরে মানুষ করেন এ কথা সন্তান সিদ্ধার্থকে কখনো বুঝার সুযোগ দেয়নি। সংসারের প্রতি ছিল উদাসীন কুমার সিদ্ধার্থকে সংসার অনুরাগী করার জন্য ১৬ বছর বয়সে যশোধরা নামের সুন্দরী এক রাজকন্যার সঙ্গে তাঁর বিয়ে দেওয়া হয়। সিদ্ধার্থ-যশোধরা দম্পতির কোল আলো করে একটি সন্তান পৃথিবীতে আসে। ছেলের নাম রাখলেন রাহুল।
এদিকে সংসারচক্রে উদাসীন ছেলে সিদ্ধার্থকে খুশি রাখতে পিতা রাজা শুদ্ধোধন চার ঋতুর জন্য চারটি প্রাসাদ নির্মাণ করেন। যেখানে পুত্রের মনোজগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে সবরকম সুযোগ সুবিধা প্রদান করেন তাঁর পিতা। একদিন কুমার সিদ্ধার্থ রথে চড়ে নগর পরিভ্রমণের জন্য বের হন। ছেলের এমন মনোযোগে পিতা রাজা শুদ্ধোধন সারা কপিলাবস্তু নগরীতে সাধারণ মানুষদেরকে উৎসব করার নির্দেষ প্রদান করেন। বেশ কয়েকদিন ভ্রমণে বের হয়ে কিছু প্রশ্ন তাঁকে পেয়ে বসে। যে বিষয়গুলো রাজ সন্তানের জন্য কাঙ্খিত ছিল না।
প্রথম দিন পরিভ্রমণে বের হয়ে দেখেন এক বৃদ্ধ ব্যক্তি জীর্নশীর্ন অবস্থায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলাফেরা করছেন। দ্বিতীয় দিন একজন অসুস্থ মানুষ রাস্তার ধারে কাঁতরাচ্ছেন। তৃতীয় দিন কিছু মানুষ এক মৃত ব্যক্তির লাশ নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য তাঁর দৃষ্টি গোচরীভূত হয়। চতুর্থদিন একজন সন্ন্যাসীকে হেঁটে যেতে দেখে তিনি তাঁর সঙ্গে থাকা সারথীকে প্রশ্ন করেন- হে সারথি, এই চার দিন একে একে আমি রক্তমাংসে গড়া মানুষদেরকে যে অবস্থায় দেখলাম, তাদের জীবনটা এরকম হলো কেন? সারথি সিদ্ধার্থকে বললেন, ‘হে রাজপুত্র- জগত দুঃখময়’।
আরও বললেন, সংসারের মায়া-মমতা, রাজ্য, ধন-সম্পদ কোনো কিছুই চিরকাল স্থায়ী নয়। এই সুন্দর অবিনশ্বর পৃথিবী থেকে সবকিছু একদিন মুছে যাবে। আপনজন বলতে কোনো কিছুই থাকবে না। এইভাবে কুমার সিদ্ধার্থ দুঃখের কারণ খুঁজতে গিয়ে ২৯ বছর বয়সে এক বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে পরিবারের সকলের অগোচরে গৃহ ত্যাগ করেন। পাহাড়-পর্বত, বনে-জঙ্গলে নীরব কোলোহল মুক্ত পরিবেশে দীর্ঘ ছয় বছর কঠোর সাধনার পর ভারতের বিহার প্রদেশের বুদ্ধগয়া নামক স্থানে ৫৮৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ৩৫ বছর বয়সে বোধি বৃক্ষের নিচে বোধিজ্ঞান লাভ করে সম্যকসম্বুদ্ধ প্রাপ্ত হন।
এরপর তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘ ৪৫ বছর তাঁর অর্জিত জ্ঞান মানুষের কল্যাণে প্রচার করেছিলেন। তাঁর এই বাণী ও দর্শন পরবর্তীকালে নামানুসের একটি সার্বজনীন মনস্কতাপূর্ন ধর্মে পরিণত হয়।
৫৪৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মহামানব তথাগত বুদ্ধ আরেক বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে কুশিনগর নামক স্থানে শালবৃক্ষের নীচে ৮০ বছর বয়সে ইহধাম ত্যাগ করেন।
পুরো পৃথিবীজুড়ে এই মহামানবের বাণী আজও সর্বজনীনভাবে সমাদৃত।
আত্মশুদ্ধি, র্নিলোভ, নিরহংকর, ত্যাগময় জীবনের পথে উৎসর্গ করার সাধনাই হলো ধর্ম। কিন্তু বর্তমানে আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি সম্পূর্ণ তার বিপরীত চিত্র। গত ৮ ও ৯ মার্চ ২০২৪ এবং এরপর ১১ মে ২০২৪ তারিখে একাধিকবার একশত আটত্রিশ বছরের প্রাচীন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারে সংগঠিত অপ্রীতিকর ঘটনার সূত্রধরে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দুটি বিবদমান গ্রুপের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনা এবং ঘটনা থেকে রটনার কীর্তিকলাপ, মারমার, কাটকাট অবস্থা যা দেখলাম তা রীতিমতো বিস্মিত হয়েছি।
এর একটি পক্ষে হচ্ছে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি আর অপর পক্ষ হচ্ছে ব্যক্তি ভদন্ত ড. জিনবোধি ভিক্ষু। কেন এই তাণ্ডব ঘটানাে হলো এর উদ্দেশ্যই বা কি, সে বিষয়ে আমি ছোট্ট পরিপরে ঘটনার আলোকপাত করতে চাই। বিগত ১০/০৪/ ২০১২ সালে চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের পুজনীয় শতবর্ষী অধ্যক্ষ, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একুশে পদকে ভূষিত, বাংলাদেশি বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয়গুরু মহামান্য সংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাথের, বিহার পরিচালনা কমিটির যৌথ সিদ্ধান্তক্রমে ড. জিনবোধি ভিক্ষুকে ধর্মীয় বিধিবিধান লঙ্ঘন ও নিয়ম বহির্ভূত আচরণের জন্য বিহারের উপাধ্যক্ষ পদ থেকে অপসারণ করা হয়। জিনবোধি ভিক্ষু ১০/০৫/২০১২ সালে অপসারণ আদেশের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জজ আদালতে একটি মামলা করেন।
দীর্ঘ দুই বছর দুই দিন পর অর্থাৎ ১২-০৫-২০১৪ তারিখ জিনবোধির করা মামলাটি আদালত তাঁর আবেদন নামঞ্জুর করেন। কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ৯৯৫৭/২০১৬ সালে রিট আবেদন করলে ২৯/০৫/২০১৭ সালে আগের দেওয়া রায় বহাল রাখেন। ২৮/০২/ ২০২১ এবং ১৭/০৭/২০২৩ সালে দুইবার আপিল আদালত তা খারিজ করে দেন। তারপর একের পর তিনি দীর্ঘ ১৩ বছরে অসংখ্য মামলা করেন বৌদ্ধ সমিতির নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে। প্রথম ঘটনাটি পুরো বৌদ্ধ সমাজকে ছাড়িয়ে সার্বজনীন সমাজে “ টপ অব দ্যা বড়ুয়া নিউজ”-এ পরিণত হয়। একইভাবে ঘটেছে শেষ ঘটনাটির ক্ষেত্রেও।
এ ঘটনায় কী এক পক্ষের দোষ? না উভয় পক্ষের দোষ? সমাজের নীতিনির্ধারণী মহলে এনিয়ে চলছে বিশ্লেষণ। আমি কোনো পক্ষকে বড় করে দেখা বা দোষী সাব্যস্ত করা আমার লেখার প্রধান উপজীব্য নয়। এই চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহার ব্যক্তি জিনবোধি কিংবা সংগঠন বৌদ্ধ সমিতি যেই পরিচালনা করুক সে নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যাথা নেই। আমার বিষয়বস্তু হচ্ছে অন্যখানে।
ড. জিনবোধি ভিক্ষু ও বৌদ্ধ সমিতি কেন তর্কে জড়ালো এবং তর্ক থেকে একজন মহিলার শাড়ি টানাটানি হলো, শাড়ি টানা রোধ করতে গিয়ে নারীর স্বামী ভিক্ষুকে স্ত্রীর হাতে থাকা পার্স দিয়ে প্রতিরোধ করে। জিনবোধি ভিক্ষু নিজের মুখে জুতা দিয়ে আঘাত করেছে বলে মিথ্যা প্রপাগান্ডা প্রচার করলে তাঁর কিছু ভিক্ষু অনুসারী পরবর্তীতে বৌদ্ধ বিহারকে পরিণত করে নরক কুন্ডুলিতে।
দুইবারের ঘটনা পুলিশের সামনে সংঘঠিত হয়েছে। প্রথম দিনের অপ্রীতিকর ঘটনা কারো কাম্য ছিল না। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৌদ্ধ সমাজের মান ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করি। আমরা যদি একটু সুক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে দেখি ঘটনাটিকে সেদিন তাৎক্ষণিকভাবে কী মিটিয়ে ফেলা যেতো না? যদি প্রথমটি তাৎক্ষণিকভাবে মিটিয়ে ফেলা যেতো তাহলে পরের ঘটনাটি ঘটার কোনো সম্ভাবনা থাকতো না। দুটি ঘটনাই জিনবোধি ভিক্ষুর অনুসারী কিছু ধর্মান্ধ উগ্রবাদী উশৃঙ্খল ভিক্ষুদের কারণে সংঘঠিত হয়েছে বলে সাধারণ জনগণের ভাষ্য।
ভিক্ষুরা হবেন আত্মত্যাগী কিন্তু না ভিক্ষু সংঘের কাছ থেকে সামান্যতমও সংযম প্রদর্শন করতে দেখা যায়নি। রাগ-ক্রোধ মানুষকে যে কী রকম ভয়াবহ হিংস্ত্র করে তোলে তার জ্বলন্ত উদাহরণ পুরো বৌদ্ধ সমাজ এই তিন দিন স্বচক্ষে দেখেছে। যা বৌদ্ধ সমাজ একটি বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এই ঘটনা উঠতি প্রজন্মের সন্তানদের বহু বছর ভোগাবে।
তথ্যসুত্রে জানতে পারি, ৮ মার্চ ২০২৪ তারিখ রাতে পুলিশ উভয়পক্ষকে ডেকে শান্তিশৃঙ্খলা বজার রাখার স্বার্থে পুলিশ দলগতভাবে বিহারে প্রবেশাধিকার নিষেধ করে। কিন্তু পরের দিন দুপুরে জিনবোধি ভিক্ষুর কিছু তরুণ ভিক্ষু ও গৃহী অতর্কিত বিহারে প্রবেশ করে যেভাবে আসবাবপত্র ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দিয়ে ধর্মীয় বই, বিহারের দলিল পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে।
এটা সত্য যে, এই বিষয়টিকে অনেকে ভাল চোখে গ্রহণ করেনি। কেন এরা এইরকম করল?
প্রিয় পাঠক, আপনারা আমার মতের সাথে আপনাদের মতের মিল নাও হতে পারেন? পুলিশের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ড. জিনবোধি ভিক্ষুর অনুসারীরা বিনা বাধায় ৯ তারিখ যেভাবেই হোক বিহারে গেলেন তাতে কারো কোনো রকম আপত্তি নেই, কিন্তু ওইদিন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা যদি না ঘটাতো আপনাদের ওপর কারো আঙুল তোলার প্রশ্নই আসতো না। অতিউৎসাহীরা যে ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা ঘটালো তা সেদিন অন্যধর্মের হাজার হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে।
ভিক্ষুরাই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটালো ১১ মে ২০২৪ তারিখে। সেদিন বৌদ্ধ সমিতির নেতৃবৃন্দ প্রতিবছরের ন্যায় বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপন করার জন্য প্রস্তুতি সভার মিটিং আহ্বান করছিল। সেখানে বৌদ্ধ সমিতি ও বৌদ্ধ সমাজের অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবর্গরা যখন মিটিং করে এই ফাঁকে জিনবোধি ভিক্ষুর অনুসারী ভিক্ষুরা হামলা করে গৃহীদের রক্তাক্ত করে বৌদ্ধ বিহারকে রক্তে রঞ্জিত করে।
ভিক্ষুরা যেখানে সাম্য মৈত্রী করুণার কথা বলবে সেখানে গৃহীদেরকে মেরে জখম করার এদৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে। এনিয়ে মামলা হয়েছে। বৌদ্ধ সমিতির নেতৃবৃন্দরা তো আমাদের সমাজের মানুষ। কারো না কারো আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব। সমাজের নেতৃস্থানীয় প্রবীন ব্যক্তিত্ব। যাদের অর্থ-বিত্ত মেধায় বৌদ্ধ সমাজ এগিয়েছে সেইসব ব্যক্তিদের ওপর আঘাত! সোশ্যাল মিডিয়ায় যখন ভিক্ষুদের মারমুখি চেহারাগুলো দেখছিলাম তখন লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে গেছে।
তাহলে দেখুন, এই যে ফাটল দেখা দিলো তা দিয়ে কী লাভ হলো, কার লাভ হলো। জিনবোধি ভিক্ষুর, সমিতির না বৌদ্ধ সমাজের? ঘটনার পর তৃতীয় কোনো পক্ষকেও সংকট নিরসনে উদ্যেগ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। উল্টো একের পর এক মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়ছে। তাহলে বৌদ্ধ সমাজ কী এভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে?
বিবেকের কাছে একবার প্রশ্ন করুন, ঘটনাকে কেন্দ্র করে যারা যেভাবে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিলেন এবং তৎপরবর্তী যেভাবে ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করেছিল, মিছিল-মানবন্ধন করেছিল, সোশ্যাল মিডিয়ায় অধিকাংশ ফেইক আইডি খুলে অশালীন ভাষায় গালাগাল ও সামাজিক ব্যক্তিত্বদের ছবিতে জুতার মালা, বিহার অঙ্গনে কুশপুত্তলিকা দাহ, টানানো, আগুন দেওয়া, ঝাড়ু ও লাথি মারা, ভিক্ষুরা গৃহী উপাসকদের মেরে রক্তাক্ত করে জখম এগুলো কি বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কাজ?
যে ক্ষত সৃষ্টি হলো, সম্প্রদায়ের সম্মানে চুনকালি লাগল, এটির ক্ষত আগামী কত বছর পর্যন্ত বয়ে বেড়াবে কেউ চিন্তা করেছেন কি? এর দায়ভার কে নেবে? বৌদ্ধ সমাজ যে অহিংসা, সাম্য, মৈত্রী, করুণা মুদিতার কথা বলা হয় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কাছ থেকে তার কোনো রকম অস্তিত্ব-নিশানা দেখতে পেলাম কী?
২০২৪ সালের বুদ্ধ পূর্ণিমার মহান দিন যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন হবে তার গ্যারান্টি কোথায়? ঘোর এই অমানিশায় গ্রাস করা অস্তিত্বের সংকট থেকে সমতলীয় বৌদ্ধ সমাজকে বাঁচাবে কে? আর কতবার বৌদ্ধ বিহার অপবিত্র হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে এই উগ্রবাদ ধর্মান্ধ রাহুর কবল থেকে রক্ষা করুন।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিষ্ট
[email protected]