
দেশের লাখো তরুণ–তরুণীর স্বপ্নের নাম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষা। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের এ প্রতিযোগিতা শুধু ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, দেশের প্রশাসন এবং অগ্রযাত্রায় অংশ নেওয়ারও প্রতীক। কিন্তু ৪৪তম বিসিএসকে কেন্দ্র করে আজ স্বপ্ন আর শঙ্কা পাশাপাশি হাঁটছে অগণিত চাকরিপ্রত্যাশীর মনে।
৪৪তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় ১১ হাজার ৭৩২ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন, আর চূড়ান্তভাবে ক্যাডার পদ পাবেন মাত্র ১ হাজার ৭১০ জন। অর্থাৎ, প্রতি ছয়জনের মধ্যে কেবল একজন পাবেন তার স্বপ্নের পদটি। আগের বিসিএসগুলোর মতো চূড়ান্ত ফলাফলের আগমুহূর্তে পদসংখ্যা বাড়ানোর আশা করেছিলেন অনেকেই, কিন্তু তেমন কোনও ঘোষণা এখনও আসেনি।
এদিকে দেশের সরকারি দপ্তরগুলোর অর্ধলক্ষাধিক পদ শূন্য থাকা সত্ত্বেও সেগুলো পূরণে ধীরগতি এবং সমন্বয়হীনতার অভিযোগ উঠছে দীর্ঘদিন ধরে।
২০২১ সালে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শুরু হওয়া এ বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলের প্রতীক্ষায় কেটে গেছে সাড়ে তিন বছরের বেশি সময়, যা কেবল চাকরিপ্রত্যাশীর ধৈর্যচ্যুতি ঘটায়নি, দেশের প্রশাসনের অগ্রযাত্রাকেও শ্লথ করে দিয়েছে।
শিক্ষা খাতের চিত্রও হতাশাজনক। সরকারি কলেজগুলোর ১০ হাজারের বেশি শিক্ষক পদ খালি থাকা সত্ত্বেও ৪৪তম বিসিএস–এ শিক্ষা ক্যাডারে অতি অল্প পদ রাখা হয়েছে। আর নন–ক্যাডারের পদ রাখা হয়েছে মাত্র ১,৪০০টি, যার বেশিরভাগই কারিগরি খাতের। সাধারণ বিষয়ের স্নাতকদের জন্য এটি আগের চেয়েও প্রতিযোগিতাপূর্ণ করে তুলেছে।
চিকিৎসা খাতের চাহিদা আরও তীব্র। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে পাঁচ হাজারের বেশি চিকিৎসক পদ খালি রয়েছে বলে জানা গেছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের অভাবে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের কষ্ট প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। তবুও বিসিএসের মাধ্যমে চিকিৎসা খাতের শূন্য পদ পূরণে কার্যকর উদ্যোগের অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ অনেকের।
চাকরিপ্রত্যাশী তরুণদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ জমছে কেবল পদসংখ্যা নয়, বরং ধীর এবং অস্বচ্ছ নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়েও। তাদের আশা, আগামী বিসিএস এবং বিদ্যমান শূন্যপদ পূরণে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। নিয়মিতভাবে শূন্যপদ পূরণ এবং চূড়ান্ত ফলাফলে পদসংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অগণিত মেধাবীর স্বপ্ন পূরণ করা যায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
একটি কার্যকর এবং স্বচ্ছ নিয়োগব্যবস্থা শুধু ব্যক্তিগত স্বপ্নপূরণ নয়, দেশের প্রশাসন এবং সেবাখাতকে আরও শক্তিশালী করবে। তরুণদের আত্মবিশ্বাস এবং আগ্রহ ফিরিয়ে দিতে প্রয়োজন দ্রুত এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ।
দেশের মেধাবীরাই আগামীর চালিকাশক্তি, আর তাদের সঠিকভাবে কাজে লাগানোর মাধ্যমই হলো সুষ্ঠু এবং নিয়মিত নিয়োগ। তবেই দেশের অগ্রযাত্রা হবে ত্বরান্বিত আর স্বপ্ন আর শঙ্কা নয়, কেবল আত্মপ্রত্যয় আর সাফল্যই প্রতিধ্বনিত হবে আগামীর বিসিএস প্রতিযোগিতায়।
লেখক: এস এম নোমান চৌধুরী- চাকরিপ্রত্যাশী (৪৪তম বিসিএস)