ঢাকা ১১ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

খবরের জন্যই হোক ‘খবরের কাগজ’

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:০৯ পিএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:১৪ এএম
খবরের জন্যই হোক ‘খবরের কাগজ’

গণমাধ্যম শব্দটি আমাদের কাছে অতি পরিচিত। গণমাধ্যমের ব্যাখ্যা অনেক। তবে এক কথায় যদি বলি তা হলো, গণমাধ্যম গণমানুষের কথা বলে, গণমানুষের না বলা কথা, তাদের ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষার কথা বলে। আবার এটাও বলা হয়ে থাকে, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। গণমাধ্যমের প্রতি যেমন রাষ্ট্রের দায় বা দায়িত্ব রয়েছে, ঠিক তেমনি রাষ্ট্রের প্রতিও গণমাধ্যমের দায় বা দায়িত্ব রয়েছে। সংবাদমাধ্যম বা গণমাধ্যম হলো ভালোকে ভালো বলা, খারাপকে পরিহার করে খারাপ হিসেবেই প্রচার বা প্রকাশ করা। আমাদের দেশের প্রত্যেক নাগরিক যেমন স্বাধীন দেশের সুনাগরিক দাবি করে বসবাস করছে, ঠিক প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীনতা চেতনার প্রতি বিশ্বাস, ভক্তি এবং শ্রদ্ধা রাখতে হয়। ঠিক অনুরূপ গণমাধ্যমও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, শ্রদ্ধাভক্তি এবং রাষ্ট্রের জন্য ভূমিকা রাখে বা রাখতে হয়। 

দৈনিক খবরের কাগজ। যার স্লোগান ‘মুক্তচিন্তার স্বাধীন দৈনিক’। এ থেকে খুব সহজেই বোঝা যায় পত্রিকা কেমন হবে, কেমন চিন্তার হবে। মজার বিষয় হলো, সংবাদপত্রের যে নামই হোক না কেন, অধিকাংশ পাঠক কিন্তু বলে থাকেন আজকের খবরের কাগজ দেখছ, আজকের খবরের কাগজে ভালো, চাঞ্চল্যকর খবর আছে ইত্যাদি। পত্রিকার যে নামই থাকুক না কেন, মূল জায়গা কিন্তু খবরের কাগজ। মোস্তফা কামাল ঠিক সেই জায়গাটিতে দৃষ্টি দিয়েছেন। আমি একজন সাংবাদিক হিসেবে বা একজন লেখক হিসেবে ভালো দিক নিতে চাই বা নিয়েছিও; একজন সাংবাদিক হিসেবে কৌতূহল থাকে নতুন সংবাদপত্র বা মিডিয়ার দিকে। সে কারণেই মোস্তফা কামাল ভাই দৈনিক কালের কণ্ঠ ছেড়ে দেওয়ার পর থেকেই কেমন যেন তার প্রতি একটু বেশি নজর রেখেছি। তার মতো প্রথিতযশা সাংবাদিক তো বসে থাকার মানুষ নন? ঠিক আমার ধারণাই প্রমাণিত হলো, কালের কণ্ঠ ছেড়ে দিয়ে ঢাকাপ্রকাশ সম্পাদনা শুরু করলেন। জাতের সাংবাদিক সম্পাদক হলে যা হয়, ঢাকা প্রকাশও বেশ পাঠকপ্রিয় হলো। কিছুদিন পরই সেটাও ছেড়ে দিলেন। আমার কৌতূহল আরও বেড়ে গেল। যদিও মোস্তফা কামাল ভাইয়ের সঙ্গে দু-চারটি সভা-সেমিনারে যুক্ত হয়েছি, কিন্তু তেমন সম্পর্ক হয়ে ওঠেনি। তবে একজন ক্ষুদ্র সংবাদকর্মী হয়ে সম্পাদকের প্রতি ভক্তি বা শ্রদ্ধা যেমনটা থাকা উচিত, সেটিই মোস্তফা কামাল ভাইয়ের প্রতি ছিল। কিছুদিন আগে হঠাৎ ঢাকা থেকে আমারই এক শুভাকাঙ্ক্ষী সাংবাদিক জানাল, মোস্তফা কামাল ভাইয়ের নেতৃত্বে নতুন একটি পত্রিকা বের হচ্ছে। তখন পত্রিকার নাম বলেননি তিনি। নাম নিয়েও কৌতূহল আরও বেড়ে গেল। এরপর থেকেই প্রতীক্ষায় থাকা...।

সংবাদপত্রসহ যে কোনো মিডিয়া চালিত হয় একেকটি স্বপ্ন বা আইডলজি নিয়ে। আসলেও সব গণমাধ্যমের কাজ একটিই, আর তা হলো সংবাদ পরিবেশন করা। প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটন করে সত্যতা উন্মোচন করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করে স্বাধীন বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে সম্মান রাখাই হলো একটি গণমাধ্যমের দায়িত্ব। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, সংবাদপত্রকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ; একটি বহুতল ভবন তৈরি করতে চারটি স্তম্ভ ছাড়া ভিত স্থায়িত্ব হয় না, ঠিক তেমনি একটি রাষ্ট্রের জন্যও চারটি স্তম্ভ দরকার। যার একটি সংবাদপত্র। এটি ছাড়া রাষ্ট্রও নড়বড়ে। রাষ্ট্রের প্রতি যেমন সংবাদপত্রের দায় রয়েছে, তেমনি সংবাদপত্রের প্রতিও রাষ্ট্রের দায় রয়েছে। 

গণমাধ্যমের মধ্যে সংবাদপত্র হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী ও কার্যকর গণমাধ্যম। যে কোনো দেশের জনগণের মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকার, স্বাধিকার ও স্বাধীনতার সঙ্গে সংবাদপত্রের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। সংবাদপত্র যে সত্য প্রকাশের বাহন, বাস্তবচিত্র তুলে ধরার গণমাধ্যম এবং প্রয়োজনের শিল্প, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে শিল্পটি তখনই সজীব ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে যখন জনগণ তাদের অধিকার, স্বাধিকার সম্পর্কে সচেতন উদ্দীপনা প্রকাশ করে। জনচিত্তের সরব প্রতিফলন ঘটানোই সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকের কাজ। আর এই দুরূহ ও সাহসী কাজটি সম্পন্ন করতে গিয়ে শাসককুলের ঝুলন্ত খড়গের তলায় সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের বলিদান হওয়ার আশঙ্কা থাকে শতভাগ। জেল-জুলুম, পীড়ন, নির্বাসন তো আছেই।

সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা একটি মহৎ পেশা। সাংবাদিকদের জাতির বিবেকও বলা হয়ে থাকে। সততা, বস্তুনিষ্ঠতা ও পক্ষপাতহীন হয়ে প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মাল্টিমিডিয়ার সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হয়। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক দায়বদ্ধতার ভেতর থেকে সাংবাদিকদের লেখার জন্ম। একদিকে সামাজিক দায়িত্ববোধ, অন্যদিকে সামাজিক প্রথাগত উৎপাদনে অনীহা- এই দুইয়ের মাঝখানে ঘটতে থাকে একজন সাংবাদিকের টিকে থাকা ও লেখার যুদ্ধ। এ ছাড়া রাষ্ট্রের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা বা মোকাবিলা করেই একটা জীবন কাটাতে হয় সাংবাদিকদের। প্রচলিত জীবনের প্রতি অনীহা ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির স্রোতে সভ্যতা ও ইতিহাস নির্মাণে নতুন জীবন অনুসরণেই সৃজনশীল সাংবাদিকতার পথ। শুদ্ধতা ও সমৃদ্ধির পথে মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী মিডিয়া, এর বিরাট একটি অংশজুড়ে আছে খবর। এ ছাড়া খেলাধুলা, তথ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনোদনের মতো বিষয়গুলো তো রয়েছেই। একটি মিডিয়ায় যেমন অনেক বিষয় প্রকাশ পায়, তেমনি আবার অনেক বিষয় অপ্রকাশিতও থাকে। অনেক বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হয়, আবার অনেক বিষয় গুরুত্ব তো পরের কথা, ভাবনায়ও আসে না গণমাধ্যমে দায়িত্বরত কর্তাদের। 

তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে এখন সাংবাদিকতা কতটা সহজ হয়েছে এবং একটি মিডিয়া হাউসও চালানো খুবই সহজ হয়েছে। তবে তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে মিডিয়া চালানো যেমন সহজ, তেমন চ্যালেঞ্জও বটে। পাশাপাশি অপসাংবাদিকতাও তৈরি হয়েছে, যার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। ঠিক এমন সময় আত্মপ্রকাশ ‘খবরের কাগজ’-এর। আমি একজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নাগরিক হিসেবে দাবি করি, একজন প্রকৃত সংবাদকর্মী তথা সাংবাদিক হিসেবে দাবি করি, যেহেতু উপকূলে থাকি, পেশাগত কারণে উপকূল নিয়ে ভাবতে হয়, উপকূল নিয়ে অনেক কিছুই লিখছি বা লিখে যাচ্ছি। আমি একজন সাংবাদিক হিসেবে গণমাধ্যমের কাছে অনেক কিছু প্রত্যাশা করি। একটি মিডিয়ার কাছে অনেকের অনেক কিছু দাবি থাকে বা করে। আমার দাবিটা ভিন্ন। 

বাংলাদেশ একটি বিশাল এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ মৎস্যসম্পদসমৃদ্ধ বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ব-দ্বীপ অঞ্চল। এটি দেশের ৭০-৮০ ভাগ প্রোটিন চাহিদার জোগান দিয়ে থাকে। ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় অঞ্চলের মোট ১৯টি উপকূলীয় জেলা ও ১৪৭টি উপজেলার মধ্যে ১২টি জেলার ৪৮টি উপজেলা সমুদ্রের অববাহিকায় অবস্থিত। বাকি ৯৯টি উপজেলা ভৌগোলিকভাবে অভ্যন্তরীণ উপকূলের অংশ। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩৬ শতাংশ বাস করে উপকূলীয় অঞ্চলে। এদের জীবন-জীবিকা প্রাথমিকভাবে নির্ভর করে মাছ, কৃষি, বন, স্থানীয় পরিবহন, লবণ ইত্যাদির ওপর। এ দেশের উপকূলের জনগোষ্ঠী প্রতিবছর নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা ইত্যাদির মুখোমুখি হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মানবসৃষ্ট নানা রকম দুর্যোগ যেমন- আর্সেনিকদূষণ, জলাবদ্ধতা, চাষের জমির জলাবদ্ধতা। আর এসবের সঙ্গে সংগ্রাম করেই বেঁচে আছেন এ অঞ্চলের মানুষ। 

বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ গ্রামে বসবাস করছেন। আর গ্রামের অধিকাংশই হচ্ছে সাগর ও নদীতে আচ্ছাদিত। যাকে এক কথায় বলা হয়ে থাকে উপকূল। উপকূলীয় অঞ্চল যেমন অবহেলিত, তেমনি সরকারেরও তেমন নজরদারি দেখা যায় না। উপকূল সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম যে ভূমিকা রাখছে তা একেবারেই অপ্রতুল। যদি বলি তা শূন্যের কোঠায়, তাও ভুল হবে না। জাতীয় গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক কেবল দুর্যোগকালীন বিপন্নতার দিকেই নজর রাখেন। ঘূর্ণিঝড় আসছে, কিংবা ঘূর্ণিঝড়ে সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে, এমন পরিস্থিতিতেই সাংবাদিকরা ক্যামেরা নিয়ে উপকূলে আসেন। আবার বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতেও উপকূলের খবরে তাদের আগ্রহ বাড়ে। কিন্তু স্বাভাবিক সময়েও উপকূলের মানুষের জীবন যে কতটা অস্বাভাবিক, সে খবর গণমাধ্যমের কাছে খুব কমই আছে। এসব এলাকার মানুষ প্রতিনিয়ত দুর্যোগের সঙ্গে যেমন যুদ্ধ করছে, তেমনি জীবিকার তাগিদে কঠোর পরিশ্রম করে। যার সিংহ ভাগই মাছের ওপর নির্ভরশীল। সব সময়ই উপকূলের দিকে মিডিয়ার নজর রাখা উচিত। আরও বেশি জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে। এত বড় উপকূলীয় এলাকা, এই উপকূলের মানুষের জীবন ও জীবিকা, উপকূলীয় জেলেদের অবদান সম্পর্কে গণমাধ্যমে কোনো ভূমিকাই দেখা যাচ্ছে না। শুধু গণমাধ্যমই নয়, সরকারেরও তেমন নজর দেখা যাচ্ছে না। গণমাধ্যমকে উপকূল নিয়ে ভাবতে হবে। প্রয়োজনে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধির পাশাপাশি উপকূলের স্বার্থে প্রতিটি গণমাধ্যমে উপকূল প্রতিবেদক বা উপকূলের বিশেষ প্রতিবেদক নিয়োগ করতে হবে। শুধু গণমাধ্যমেই নয়, উপকূলের উন্নয়ন এবং দেখভালের জন্য উপকূল উন্নয়ন বোর্ড বা উপকূলীয় মন্ত্রণালয় করা উচিত। এ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ঘোষণা অনুযায়ী পৃথিবীর সঙ্গে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করতে হলে উপকূলের জনগোষ্ঠীর একীভ‚ত এবং উন্নয়ন দরকার। তা হলে টেকসই উন্নয়নে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। এ ক্ষেত্রে দৈনিক ‘খবরের কাগজ’ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে, পেশাদারিত্বকে আগলে রেখে কাজ করছে, ঠিক তেমনি উপকূলের জীবন ও জীবিকা নিয়ে কাজ করবে এবং পত্রিকায় উপকূল নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন করবে বলে আশা করছি। 

বাংলাদেশ এখন আর ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ নয়, দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির মধ্য দিয়েই সেটা স্পষ্ট। বাংলাদেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে। তাই ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় এলাকার মানুষ দেশের উন্নয়নের অগ্রণী ভ‚মিকা রাখছে। গণতন্ত্র, অর্থনীতি ও দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে উপকূলীয় অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষদের ভ‚মিকা কম নয়। আর এসব খেটে খাওয়া মানুষের নিরাপত্তা, সুযোগ ও সুবিধা দিলে পরিপূর্ণভাবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। সে কারণে উপকূলের জন্য সরকারের এগিয়ে আসতে হবে, এনজিওসহ গণমাধ্যমেরও এগিয়ে আসা উচিত। যেহেতু গণমাধ্যম হচ্ছে জাতির আয়না, সে কারণে গণমাধ্যমের ভ‚মিকাও রয়েছে। উপকূলের স্বার্থে উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড বা উপকূল মন্ত্রণালয় গঠন এবং উপকূলের সঙ্গে সব সময় থাকবে গণমাধ্যম; তাই গণমাধ্যম হবে উপকূলবান্ধব, এটাই প্রত্যাশা। 

পরিশেষে বলতে চাই, মোস্তফা কামালের মতো একজন দক্ষ পেশাদার সাংবাদিকের নেতৃত্বে দৈনিক খবরের কাগজ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীন বাংলাদেশকে সমুন্নত রেখে, পেশাদারিত্ব বজায় রেখে করপোরেট পুঁজিবাদকে এড়িয়ে একঝাঁক পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে নিপীড়িত-নির্যাতিত, দুর্নীতিবাজ ও দেশবিরোধীদের মুখোশ উন্মোচনের মুখপত্র হিসেবে দৈনিক খবরের কাগজ সংবাদ পরিবেশন করবে। তাই আমি একজন সংবাদকর্মী হিসেবে প্রত্যাশা করি, স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থেকে গণতান্ত্রিক পন্থায় সব মত ও পথকে নিরপেক্ষভাবে ধারণ করে ন্যায়ের পথে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লেখনীতে ভরপুর থাকবে প্রতিটি লাইন পাতা ও পৃষ্ঠা। পাশাপাশি উপকূলের জীবন ও জীবিকা নিয়ে অনন্য নজির তৈরি করবে দৈনিক ‘খবরের কাগজ’।  

শফিকুল ইসলাম খোকন : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক
[email protected]

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করুন

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৮ পিএম
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করুন

রাজধানী ঢাকা এমনিতেই যানজটের শহর। এর মধ্যেই নতুন করে চাপ বাড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। নিয়ম না মেনে, অনুমতি ছাড়াই এই যানবাহনগুলো শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে মূল সড়কেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সাধারণত এ অটোরিকশাগুলোর কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। চালকদের অনেকেই অপ্রাপ্তবয়স্ক। বেশির ভাগই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। তারা ট্রাফিক সিগনাল মানেন না, চালান বেপরোয়া গতিতে। হঠাৎ থামা, হঠাৎ বাঁক নেওয়া এসবই নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

এতে করে রাস্তায় বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী রাজধানীতে এ ধরনের যানবাহন চলাচলের অনুমতি নেই। তার পরও দীর্ঘদিন ধরে এদের চলাচল চলছে নির্বিঘ্নে। এতে করে বৈধ যানবাহনচালকদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে ক্ষোভ ও আশঙ্কা। সাধারণ মানুষও পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে। এ ছাড়া এ যানবাহনগুলো নগরের যাতায়াতব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। নির্ধারিত রুট বা স্টপেজের তোয়াক্কা না করে যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করছে তারা। 

ফলে যানজট আরও বাড়ছে। এ সমস্যা অবহেলা করলে নাগরিক দুর্ভোগ আরও বাড়বে, আর নগরজীবন হয়ে উঠবে আরও দুর্বিষহ। তাই পরিবহনব্যবস্থার শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং জনজীবনের স্বস্তি ও নিরাপত্তা বিধানে অবিলম্বে রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। 

প্রজ্ঞা দাস 
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, ইডেন মহিলা কলেজ 
[email protected]

বজ্রঝড়ে হাওরের কৃষকদের প্রাণহানি বাড়ছে

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৭ পিএম
বজ্রঝড়ে হাওরের কৃষকদের প্রাণহানি বাড়ছে

এখন হাওরে ব্যাপকভাবে ধান কাটা শুরু হয়েছে। হাওরের ধানের মাঠগুলো সোনালি পাকা ধানে ঝলমল করলেও বজ্রঝড়ের শঙ্কায় কৃষকরা তা কাটতে মাঠে যেতে পারছেন না। নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ীতে একসঙ্গে তিনজন কৃষক বজ্রঝড়ে মারা যাওয়ায় তাদের ভয় এবং শঙ্কা আরও বেড়েছে। কৃষকদের মনে একদিকে বজ্রঝড় আতঙ্ক অপরদিকে পাহাড়ি ঢলের শঙ্কা বিরাজ করায় তারা তাদের মাঠের ধান নিয়ে মহাভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। 

দেশে ইতোমধ্যে ৩০ জনের মতো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বেশি হতাহত হচ্ছে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা এবং সুনামগঞ্জ হাওরাঞ্চলের কৃষক। বজ্রপাতে মৃত্যুর ৭০ ভাগই কৃষক। তার পর রয়েছে জেলে এবং রাখাল। পথচারী এবং ছাত্রছাত্রীরাও এখন বজ্রপাতের ভয়াবহ শিকার হচ্ছে। কৃষকদের ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করেই তাদের জমিতে কাজ করতে হয়। কৃষিজমির বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কোনো ধরনের বসতি না থাকায় তারা মূলত বজ্রঝড়ের সময় সম্পূর্ণ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন। এ সময় আশপাশে বড় বড় গাছই হলো তাদের আশ্রয়। সচেতনতার অভাবেই তারা বজ্রপাতের শিকার হচ্ছেন। অপরদিকে গরু চড়াতে গিয়ে রাখালরাও এ ভয়াবহতার মুখোমুখি হচ্ছেন। স্কুলফেরত অনেক ছাত্রছাত্রীও প্রাণ হারাচ্ছে বজ্রঝড়ে।

বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার সে তাপ শোষণ করার মতো প্রচুর গাছপালা, নদী, খালবিলও নেই। প্রতিনিয়তই নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। খালবিল ড্রেজার দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। তাই তাপপ্রবাহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধরণী বসবাসের অনুপযোগী করে তুলছি আমরা। এতে ভয়াবহ বজ্রঝড়ের মহাবিপর্যয় তৈরি হচ্ছে। এটা আমাদের হাওরবাসীর মরণ ডেকে আনছে।

অলিউর রহমান ফিরোজ
সাংবাদিক
মিরাপাড়া, রিকাবীবাজার, মুন্সীগঞ্জ
[email protected]

লোকাল বাসে যাত্রীদের হেনস্তা কবে বন্ধ হবে?

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
লোকাল বাসে যাত্রীদের হেনস্তা কবে বন্ধ হবে?

যারা প্রথম ঢাকায় আসেন তাদের কাছে ঢাকা শহরের রাজপথগুলো রূপকথার গোলকধাঁধার মতো মনে হয়। প্রতিদিনই ঢাকা শহরে নতুন নতুন মানুষের পা পড়ে। তার পর একটা নির্দিষ্ট গন্তব্যে কম খরচে অনেক দূর যেতে উঠে পড়েন ঢাকা শহরের নিত্যদিনের ব্যস্তময় চেহারার কাঙ্ক্ষিত সেই লোকাল বাসে। তো নতুন অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে নিয়ে কেউ ম্যানিব্যাগ এবং ফোন পকেটমারের কাছে সহজেই হারিয়ে ফেলে হতাশ হয়ে যান। বাসের হেলপার যখন এসব নতুন যাত্রীকে এক জায়গায় নামানোর নাম করে আরেক জায়গায় নামান তখন তারা আরও বেশি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়েন। প্রতিটি স্টপেজে বাস থামানোর আগে যাত্রীরা নামবে কি না তা আগে জিজ্ঞেস করতে হবে। তারা তা না করে নতুন করে যাত্রী তোলার জন্য বেশি হন্তদন্ত হয়ে পড়ে। 

এতে অসহায় লোকগুলো বুঝতে না পেরে বাস থেকে নামতে পারে না। তখন তাদের সঠিক গন্তব্যের চাইতে আগে কিংবা অনেক পরে নামতে হয়। তার পর সেই ভুল স্টপেজ থেকে আবারও তাদের সঠিক গন্তব্যে যেতে অনেক বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তাই লোকাল বাসের হেলপারদের সচেতন করতে হবে। ঢাকা শহরের লোকাল বাস মালিক সমিতিগুলোর উচিত যাত্রীদের এই প্রয়োজনীয় সেবাটি দিয়ে তাদের যাত্রার নিরাপত্তা ও জানমালের সুরক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করা। বৃদ্ধ ও শিশুদের প্রতি হেলপারদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। প্রায়শই তারা অসহায় যাত্রীদের হেনস্তা করে, নারীদের সঙ্গে বাজে আচরণ করে। বাসের ভেতর প্রতিনিয়ত এসব অসৎ ও অসামাজিক কার্যকলাপের প্রতি পুলিশ-প্রশাসনের তদারকি জোরদারের দাবি জানাচ্ছি। 

ইসতিয়াক আহমেদ হৃদয় 
শিক্ষার্থী, নওগাঁ সরকারি কলেজ
[email protected]

 

ই-বর্জ্যের ঝুঁকি!

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৫৯ পিএম
ই-বর্জ্যের ঝুঁকি!

প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ই-বর্জ্য! প্রযুক্তিগত অগ্রগতির দরুন দৈনন্দিন জীবনের নানা ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের ফলে ই-বর্জ্য বিশ্বব্যাপী আজ ক্রমবর্ধমান একটি উদ্বেগ! এটি স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতার জন্যও দায়ী! এই শ্রেণির বর্জ্যের মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, প্রিন্টার, টেলিভিশন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেট। 
ই-বর্জ্যে সীসা, পারদের মতো ক্ষতিকর ও বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতির কারণে এটি পরিবেশগত হুমকি সৃষ্টি করে! এবং এতে করে বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বায়ু ও পানি দূষিত হয়! 

ই-বর্জ্যে বিপজ্জনক পদার্থ থাকে, যা পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে! ই-বর্জ্য কমিয়ে আনতে জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে। বেশির ভাগ মানুষই জানে না ই-বর্জ্য বলতে কী বোঝায়? এটি কীভাবে আমাদের পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে? এজন্য ই-বর্জ্যের ক্ষতিকর দিকগুলো গণমাধ্যমে বেশি করে প্রচার করতে হবে। আর এই প্রচারণার কাজে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে সামাজিক মাধ্যমগুলো। এ ছাড়া সরকারের সার্বিক সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। সঠিক নীতির অভাব, প্রশাসনের উদাসীনতা আর সর্বোপরি ই-বর্জ্যের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতার অভাবে দিন দিন বেড়েই চলেছে এর ঝুঁকি! 

আসিফ আল মাহমুদ 
আকবরশাহ মাজার, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম ৪২০২ 
[email protected] 

পেঁয়াজের বাজারে কারসাজি বন্ধ করুন

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪১ এএম
পেঁয়াজের বাজারে কারসাজি বন্ধ করুন

দেশের পেঁয়াজের বাজারে যে ভয়াবহ কারসাজি কিংবা সিন্ডিকেট চলছে তা আর নিছক বাজারের সমস্যা নয়, এটা এখন সরাসরি অর্থনৈতিক শোষণে রূপান্তরিত হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে উৎপাদনের মৌসুমে কৃষককে ঠকানো এবং সংকটের সময় ভোক্তার কাছ থেকে চরম মূল্য আদায়ের এই ‘সিন্ডিকেট’ চক্র এখন এক ভয়ংকর সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। উৎপাদক কৃষক ন্যায্য দাম পায় না, অথচ ভোক্তা বাজারে দ্বিগুণ-তিন গুণ দামে পেঁয়াজ কিনে প্রতিদিনের রান্না চালাতে হিমশিম খায়। মাঝখানে লাভবান হয় কিছু অসাধু চক্র।

 পেঁয়াজ এমন একটি কৃষিপণ্য, যার মৌসুমি উৎপাদন এবং সংরক্ষণের সীমাবদ্ধতা বাজারে চরম অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু  মহাজন পরিকল্পিতভাবে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। আমদানির নামে বিলম্ব, গোডাউনে পচিয়ে ফেলা কিংবা হঠাৎ করে বাজার থেকে উধাও করে দেওয়ার মতো কৌশল ব্যবহার করেই ভোক্তার ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। অথচ এই বাজারে সুষ্ঠু নজরদারি ও পরিকল্পিত বিপণনব্যবস্থা থাকলে কৃষক যেমন ন্যায্যমূল্য পেত, তেমনি ভোক্তাও ভোগ্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি পেত। তাই কৃষক এবং ভোক্তা উভয়েরই স্বার্থ রক্ষায় এবং বাজারে স্বস্তি আনতে এসব অসাধু ব্যবসায়ীর দৌরাত্ম্য বন্ধ এবং এদের যথাযথ আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।


প্রজ্ঞা দাস 
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ 
ইডেন মহিলা কলেজ