ঢাকা ২৯ আষাঢ় ১৪৩২, রোববার, ১৩ জুলাই ২০২৫
English

শকুন বিপন্ন, প্রকৃতিতে মহাবিপর্যয়

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৪, ১১:৫২ এএম
শকুন বিপন্ন, প্রকৃতিতে মহাবিপর্যয়

দেশে একসময় হাজার হাজার শকুন চোখে পড়ত। দিন দিন শকুন আমাদের কাছ থেকে বিপন্ন হতে চলেছে। মানবহিতৈষী হিসেবে শকুনের একটা আলাদা ভূমিকা ছিল। তা ছাড়া প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় শকুনের বিকল্প কিছু নেই। মানুষের কারণে শকুনের বিলুপ্ত খুব দ্রুতই ত্বরাম্বিত হয়েছে। ১৯৯০ সাল থেকে আমাদের দেশে গরুর ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহার করা হতো ডাইক্লোফেনাক। এই ওষুধ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করার ফলে গরু বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যেত। 

আর তা খেয়েই দেশের অধিকাংশ শকুন বিলুপ্তের প্রধান কারণ বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। শকুন মরা পশুপাখির বর্জ্য খেয়ে পরিবেশ রক্ষা করত। সেই সঙ্গে বর্জ্যে থাকা প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়াও নির্মূল হতো। তখন প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়া পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ার কোনো সুযোগ ছিল না। শকুন বিপন্ন হওয়ায় প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়া কুকুর-বিড়ালের মাধ্যমে মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ে মানুষকে রোগাক্রান্ত করছে। 

এতে মানুষের ব্যাপক মৃত্যুর কারণ বলে গবেষণায় উঠে আসে। জানা যায়, ভারতেই শুধু প্রতিবছর ১ লাখ লোকের মৃত্যু ঘটে শকুন বিলুপ্তের কারণে। আগে ময়লার ভাগাড়ে কোনো মরা প্রাণীর বর্জ্য থাকলে শকুন দল বেঁধে খেয়ে পরিচ্ছন্নতার কাজটি করত। তাই এখনই সময় মানবহিতৈষী প্রাণ-প্রকৃতির নীরব বন্ধু শকুনের অনুকূল পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। প্রকৃতিকে তার নিজস্ব বলয়ে চলতে দেওয়া উচিত। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় শকুন রক্ষাকবচ। মনে রাখতে হবে, শকুন ফিরিয়ে আনা গেলেই বেঁচে যাবে নিরীহ প্রাণী ও মানুষ।

অলিউর রহমান ফিরোজ
সাংবাদিক
মিরাপাড়া, রিকাবীবাজার, মুন্সীগঞ্জ
[email protected]

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অবহেলিত বাস্তবতা

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ১২:৫৮ পিএম
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অবহেলিত বাস্তবতা

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুধুই পড়াশোনা কিংবা ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্র নয়, এটি একজন শিক্ষার্থীর শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর বাস্তবতা বলছে, প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী নিয়মিত সকালের নাশতা গ্রহণ করে না। এর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, ঘুম থেকে না উঠতে পারা, কিংবা মানসিক অবসাদের মতো গভীরতর কারণ। অনেক শিক্ষার্থী মফস্বল থেকে এসে শহরে বাস করে। 

পরিবার থেকে সীমিত টাকা পাঠানো হয়, যা দিয়ে তাদের তিন বেলা খাবার, বই-খাতা, যোগাযোগ এবং চিকিৎসার খরচ মেটাতে হয়। এ অবস্থায় সকালের নাশতা অনেকের কাছে ‘অপশনাল’ বা ‘অপ্রয়োজনীয় খরচ’ হিসেবে পরিগণিত হয়। রাত জেগে পড়াশোনা, গ্রুপ স্টাডি, ক্লাস অ্যাসাইনমেন্টের কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী রাতে দেরিতে ঘুমায়। ফলে সকালে নাশতার সময়ের আগে তারা ঘুম থেকে উঠতে পারে না। অনেকেই জানেই না যে, সকালের নাশতা না খাওয়া শরীর ও মনের ওপর কতটা বিরূপ প্রভাব ফেলে। ক্লাসে মনোযোগের অভাব, মাথা ঝিমঝিম করা, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া, এমনকি দীর্ঘমেয়াদে গ্যাস্ট্রিক, আলসার ও মানসিক উদ্বেগ দেখা দিতে পারে। 

সকালের নাশতা না খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়, ফলে ক্লাসে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অথবা ছাত্রকল্যাণ সংস্থা যদি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ১০-১৫ টাকায় স্বাস্থ্যকর নাশতা সরবরাহ করত, তাহলে অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত নাশতা করতে আগ্রহী হতো। একটি জাতির ভবিষ্যৎ যারা গড়ে তুলবে, সেই তরুণদের মৌলিক পুষ্টি ও সুস্থ জীবন নিশ্চিত করা রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈতিক দায়িত্ব। প্রশাসনের সদিচ্ছা এবং সামান্য নীতিগত পরিবর্তন এ সমস্যা সমাধানে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

রাতুল হাসান রাফি
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

 

বন্যা একটি প্রকৃতিক দুর্যোগ

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৫, ১২:২৪ পিএম
বন্যা একটি প্রকৃতিক দুর্যোগ

বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ, যেখানে প্রতি বছরই কোনো না কোনো অঞ্চলে বন্যা দেখা যায়। বন্যা হলো একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা অতিবৃষ্টি, নদীর পানি বৃদ্ধি, পাহাড়ি ঢল বা সাগরজলের জোয়ারের কারণে ঘটে। এটি মানুষের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে এবং কৃষি, বাসস্থান, অবকাঠামোসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বন্যার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- অতিবৃষ্টি, নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি ধারণক্ষমতা কমে যাওয়া, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন। বিশেষ করে হিমালয় থেকে নেমে আসা বরফগলা পানি ও ভারী বর্ষণের ফলে পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা নদীতে পানি বেড়ে গিয়ে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়। সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের বন্যায় শুধু সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় প্রায় ৭০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়।

‎বন্যার ফলে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে, খাদ্য ও পানীয় জলের অভাব দেখা দেয়, রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। গবাদিপশু, ধান, সবজি, মাছের ঘের ইত্যাদি নষ্ট হয়ে কৃষকদের মারাত্মক ক্ষতি হয়। কিছু প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। যেমন- নদী খনন, বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ, পূর্বাভাস ব্যবস্থার উন্নয়ন, জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি ও দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশিক্ষণ। বন্যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে হলেও এর প্রভাব কমাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। সরকার, স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা বন্যা-পরিস্থিতি অনেকটাই মোকাবিলা করতে পারি।

‎অনিরুদ্ধ সূত্রধর
‎লালমাই সরকারি কলেজ, কুমিল্লা
[email protected]

রূপকথার দিন ফিরে আসবে

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৪:৩৯ পিএম
রূপকথার দিন ফিরে আসবে

বইয়ের বাজার বেশ খারাপ। মানুষ ভুল করেও যেন বই ধরতেই চান না। কোথায় গেল সেই বইপোকা পাঠক-পাঠিকা? রাতারাতি সব পাল্টে যাবে? ভাবাই যায় না! সবার হাতে স্মার্টফোন। আর জগৎটাও যেন হাতের মুঠোয়। এমন ভাব দেখানো, যেন সবজান্তা বা সর্বজ্ঞানী।

কিন্তু স্মার্টফোনের অন্যতম একটি কুফল হলো, মুহূর্তের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া কুরুচিকর ভাষা, উসকানিমূলক মন্তব্য অনেক সময় উত্তপ্ত পরিস্থিতির জন্ম দেয়। স্মার্টফোন বা অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মধ্যে যা যা আছে সবই যেন অসভ্যতামি। এ জন্য এক্ষেত্রে প্রশাসনের পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। স্মার্টফোনের ব্যবহারও হোক আবার বই পড়ার অভ্যাসও চালু হোক। মেধা বিকশিত হোক। 

লিয়াকত হোসেন খোকন 
রূপনগর, ঢাকা
[email protected]

পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা নাওডোবাবাসী

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৪:৩৮ পিএম
পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা নাওডোবাবাসী

পদ্মার ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে এখন জাজিরার নাওডোবা প্রান্তে। পদ্মার গর্ভে বিলীন হচ্ছে হাজার হাজার মানুষের জমিজমা, ঘরবাড়ি আর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। মুহূর্তের মধ্যে ঘরবাড়ি পদ্মার করাল গ্রাসে হারিয়ে যাচ্ছে। ভুক্তভোগীদের যেন চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই। 

প্রথম দিকে পদ্মার নদীশাসন এলাকার উজানের ২ কিলোমিটার জিরো পয়েন্ট এলাকায় সামান্য ভাঙন দেখা দেয়। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে তা মেরামত না করায় এ ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রথম দিকে পদ্মা সেতু কর্তপক্ষ ২ কিলোমিটার এলাকা ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ বাঁধ নির্মাণ করে। কিন্তু তা ছিল অনিয়মে এবং লুটপাটে ভরপুর। নদীর তলদেশ থেকে বাঁধ দেওয়ার কথা থাকলে তা যথাযথভাবে করা হয়নি। তাতেই এখন ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। 

কেউ কেউ ঘর সরিয়ে নিরাপদ দূরত্বে নিতে পারলেও অনেক গরিব মানুষ টাকার অভাবে ঘর সরিয়ে নিতে পারেনি। চোখের সামনেই তাদের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হতে দেখেছেন। তাদের আর্তচিৎকারে প্রশাসনের কেউ এগিয়ে এসে সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়নি। নদীভাঙন এলাকা প্রভাবশালী দুজন উপদেষ্টা গত জুনে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তখন কার্যকর পদক্ষেপ নিলে ভাঙনের এত তীব্রতা হতো না। তবে এখন ভাঙনকবলিত এলাকায় ডাম্পিং করা হচ্ছে। এখন বর্ষাকাল। দেশের নদ-নদীগুলো বর্ষায় ভাঙন শুরু হয়েছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড সময়মতো ভাঙনের কাজ শুরু না করে অসময়ে করার কারণে তা মূলত কোনো কাজেই আসছে না। 

হাজি মো. রাসেল ভূঁইয়া
খলিফাবাড়ী, সিপাহীপাড়া, মুন্সীগঞ্জ
[email protected]

কবে থামবে মিডিয়া ট্রায়ালের দৌরাত্ম্য?

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৬:৪৫ পিএম
কবে থামবে মিডিয়া ট্রায়ালের দৌরাত্ম্য?

বিচারিক কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতা ও আস্থাহীনতাই মিডিয়া ট্রায়ালের অন্যতম কারণ। এর দ্বারা নিমেষেই কারও অর্জিত সুনাম ভূলুণ্ঠিত হতে পারে। বিভীষিকাময় হয়ে উঠতে পারে তার সামাজিক সম্পর্কগুলো। স্বাভাবিক জীবনেও ঘটতে পারে ছন্দপতন। তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ মিডিয়া ট্রায়ালের প্রবণতা আরও প্রবল করেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডিসইনফরমেশন, ডিপফেকের মতো অনুষঙ্গ। সুষ্ঠু সাংবাদিকতার ধারা অব্যাহত রাখতে গণমাধ্যমের এ নেতিবাচক চর্চা পরিহার করা উচিত। 

সহজ ভাষায়, মিডিয়া ট্রায়াল হলো সংবাদপত্র ও টেলিভিশন কাভারেজের ফল। এর মাধ্যমে বিচারিক আদালতের রায়ের আগেই কোনো ব্যক্তিকে সম্ভাব্য দোষী হিসেবে আখ্যায়িত করে তার সুনাম ক্ষুণ্ন করা হয়। তখন সেই ব্যক্তির জীবনযাপন করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এ ধরনের বিচার উচ্ছৃঙ্খল মানসিকতাকে উৎসাহিত করে। গণমাধ্যম নীতির ন্যূনতম মানদণ্ড হলো, বিচার কিংবা দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে কাউকে কোনো নেতিবাচক অভিধায় অভিযুক্ত করা যাবে না। এমনকি বিচারে প্রমাণিত হওয়ার আগে ‘দুর্নীতিবাজ’ বলে চিহ্নিত করাও মিডিয়া ট্রায়ালের অন্তর্ভুক্ত। 

যদিও বাংলাদেশে এর বহুল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বাস্তবতার নিরিখে বলতে হয় যে, আমাদের দেশে এখনো মিডিয়া ট্রায়ালের পরম্পরা চলমান। এর ফলে ধ্বংস হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। কাউকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতে গিয়ে গোটা সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে অস্থিরতার বিষবাষ্প। মনে রাখা প্রয়োজন, বিচারিক প্রক্রিয়া ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে আলাদা এবং স্বতন্ত্র। বিচারিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব থাকা কোনোভাবেই উচিত নয়। অবশ্য সংবাদমাধ্যমগুলো নানাভাবে প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ থাকে।

আসিফ আল মাহমুদ 
আকবরশাহ মাজার, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম ৪২০২ 
[email protected]