ঢাকা ৩০ আষাঢ় ১৪৩২, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
English

অরাজকতা ও নৈরাজ্য দূর করতে হবে

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৮ পিএম
অরাজকতা ও নৈরাজ্য দূর করতে হবে

মেয়েকে নিয়ে স্কুলে গিয়েছি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানে একজন সভাপতি বিদ্যমান। তার গলায় দলীয় কোনো সাইনবোর্ড নেই। সুধীজন হিসেবে তার যশখ্যাতি আছে। স্কুলের ভালোমন্দের সঙ্গে তাকে পাওয়া যায়। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে অশিক্ষিত এবং অমর্যাদাকর লোকদের এখন স্কুলের সভাপতি হতে হবে। রাজনৈতিক মাঠ গরম থাকতে থাকতেই এ দখলদারদের সভাপতি পদটি দখল করতে হবে। নিয়মনীতির কোনো বালাই নেই। অযোগ্যদেরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ বাগাতে হবে। এ চিত্র মফস্বলের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। দেশে এক দলের পতন ঘটেছে। সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি কিছুদিন বন্ধ ছিল। 

তাতে পণ্য পরিবহনে চাঁদা না লাগায় কাঁচা সবজির দাম কিছুটা কমে গিয়েছিল। মাস না পেরোতেই দখলদাররা আবার ফিরে এসেছে। নতুন লুটেরারা শুরু করছে লুটপাট। হাটের ইজারা, ঘাটের ইজারা। এ দখলদারদের জন্যই কি হাজার হাজার ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে? সব ক্ষেত্রেই দলীয় ক্ষুধার্তরা হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ছে। কোথাও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। একদল পালিয়েছে, আরেক দল তা এখন দখলে নিয়েছে। রাষ্ট্র যদি এ জঞ্জাল দূর করতে না পারে, তাহলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ছাত্র-জনতার লাশের ওপর দিয়ে যে অভ্যুত্থান সফল হলো তা বেহাত হবে এ লুটেরাদের কারণে। তাই আবার জেগে উঠতে হবে। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে সর্বত্র নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে হবে। দখলদারদের জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে ভয়াবহ বার্তা পাঠাতে হবে।

অলিউর রহমান ফিরোজ
সাংবাদিক
মিরাপাড়া, রিকাবীবাজার, মুন্সীগঞ্জ
[email protected]

ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৫, ০১:২১ পিএম
ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে পদক্ষেপ নিন

দেশের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে ফুটপাত দখল অন্যতম। এটি দেশের কর্মসংস্থানের যথেষ্ট ঘাটতির কারণ হিসেবে ধরা হয়। যেহেতু দেশের অধিকাংশ মানুষই দরিদ্র। তাই সার্বিক বিবেচনায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করা জরুরি। সমস্যা হলো- ফুটপাতে বসা হকারদের হঠাৎ উচ্ছেদ করা। এতে করে তারা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হন। এটা তাদের ওপর অমানবিক হিসেবে অনেকটা বিবেচিত।

 কেননা, সরকারিভাবে সঠিক আইনের প্রয়োগ ও পদক্ষেপ নিলে এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকত না। অর্থাৎ, একবার উচ্ছেদ করার পর দ্বিতীয়বার বসার কোনো সুযোগ না রাখলে বিষয়টি সমাধান হয়ে যেত। অথচ, হঠাৎ উচ্ছেদের কিছুদিন পর আবারও ফুটপাত দখল হয়ে যায়। এটা দুর্বল আইনের প্রয়োগ ও অকার্যকর পদক্ষেপের ফল। অতএব, সঠিক সমাধানের মাধ্যমে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে দরিদ্র মানুষের ক্ষতি এড়াতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি বিনীত আবেদন জানাচ্ছি।

আবদুর রশীদ
সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম
[email protected]

বর্ষায় জলাবদ্ধতা: চাই টেকসই প্রতিকার

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৫, ০১:২০ পিএম
বর্ষায় জলাবদ্ধতা: চাই টেকসই প্রতিকার

বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। প্রতি বছর বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে যা কৃষির জন্য যেমন আশীর্বাদ, তেমনি অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে হয়ে দাঁড়ায় অভিশাপ। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল কিংবা জেলা শহরগুলোতে বর্ষার মৌসুমে জলাবদ্ধতা এখন নিয়মিত এক দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। জলাবদ্ধতা কেবল পানি জমে থাকার সমস্যা নয়, এটি একটি সামগ্রিক উন্নয়নগত সংকট। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আগামী দিনে এ সংকট আরও তীব্র হতে পারে। তাই এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে ঢাকা, ফেনী, চট্টগ্রাম, খুলনা বা বরিশালের মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোকে জলাবদ্ধতা মুক্ত করার জন্য টেকসই শহর পরিকল্পনার বিকল্প নেই। 

পরিশেষে বলতে চাই, বর্ষায় জলাবদ্ধতা এখন একটি মৌসুমি দুর্ভোগের চেয়ে অনেক বেশি। এটি জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থনীতি ও নাগরিক জীবনের ওপর এক ভয়াবহ চাপ। তবে কার্যকর পরিকল্পনা, প্রযুক্তির ব্যবহার, পরিবেশ সচেতনতা ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ সমস্যার টেকসই সমাধান সম্ভব। চাই এমন একটি নগর যেখানে বর্ষার বৃষ্টিধারা হয়ে উঠবে শীতল প্রশান্তি, আর জলাবদ্ধতা হবে কেবল অতীতের এক দুর্বিষহ স্মৃতি।

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ 
[email protected]

বৃষ্টির দিনে রিকশাভাড়া দ্বিগুণ যাত্রীভোগান্তি চরমে

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৫:০৯ পিএম
বৃষ্টির দিনে রিকশাভাড়া দ্বিগুণ
যাত্রীভোগান্তি চরমে

বর্ষা নামলেই পুরান ঢাকার অলিগলিতে শুরু হয় নতুন এক সংকট। রিকশাভাড়া হঠাৎ করেই বেড়ে যায় দ্বিগুণ বা তারও বেশি। বৃষ্টির কারণে সড়কে জলাবদ্ধতা, যানবাহনের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং চলাচলের অনুপযুক্ত পরিবেশের কারণে যাত্রীদের নির্ভর করতে হয় মূলত রিকশার ওপরেই। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেক রিকশাচালক বৃষ্টির দিনে বাড়তি ভাড়া দাবি করেন। চকবাজার, লালবাগ, নারিন্দা, বংশাল, নবাবপুর ও আজিমপুরের মতো এলাকায় স্বাভাবিক সময়ে যে রিকশাভাড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা, তা বৃষ্টির দিনে বেড়ে দাঁড়ায় ৭০ থেকে ১০০ টাকায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রিকশা না থাকায় যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া দিতে বাধ্য হতে হয়।

 কেউ কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন না। পুরান ঢাকার সংকীর্ণ রাস্তাগুলোতে একটু পানি জমলেই যান চলাচল ব্যাহত হয়, রিকশার গতি ধীর হয়ে পড়ে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ভাঙাচোরা রাস্তা, কাদা-পানিতে ভর্তি গলি ও চলাচলের অনুপযোগী পরিবেশ। ফলে স্বল্প সংখ্যক রিকশা রাস্তায় বের হলেও তারা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অনেক বেশি দাবি করে। অনেক চালক আবার দূরত্ব কম হলেও যেতে রাজি হন না বা নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে অস্বীকৃতি জানান। এতে প্রতিদিনের কর্মস্থলে যাওয়া, শিশুদের স্কুলে পৌঁছানো, বাজারে যাওয়া সবকিছুই হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, এসব রিকশার ভাড়া নির্ধারণে কোনো বিধিনিষেধ নেই। কোনো প্রকার তদারকি বা নিয়ন্ত্রণ না থাকায় রিকশাভাড়া হয়ে উঠেছে একেবারে চালকনির্ভর। এ পরিস্থিতিতে যাত্রীদের দুর্ভোগ যেন বর্ষাকালের আরেকটি ‘নিয়মিত চিত্র’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মালিহা মেহনাজ 
শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা 
[email protected]

মানুষের জীবনে নৈতিকতার প্রভাব

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৫:০৮ পিএম
মানুষের জীবনে নৈতিকতার প্রভাব

নৈতিকতা হলো মানুষের চরিত্রের ভিত্তি ও সমাজে সহাবস্থানের অন্যতম প্রধান উপাদান। এটি মানুষের চিন্তা, আচরণ ও মূল্যবোধকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। একজন নৈতিক মানুষ শুধু নিজের কল্যাণ নয়, বরং সমাজ ও দেশের মঙ্গলের দিকেও সচেতন থাকে। নৈতিকতা ছাড়া কোনো ব্যক্তির জীবনে প্রকৃত শান্তি ও স্থায়িত্ব আসতে পারে না। ব্যক্তি জীবনে নৈতিকতা আত্মবিশ্বাস, আত্মসম্মান ও আস্থা তৈরি করে। একজন নৈতিক ব্যক্তি সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেয়, অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে। ফলে তার জীবন হয় পরিশীলিত ও গ্রহণযোগ্য।

 পারিবারিক জীবনে নৈতিকতা পারস্পরিক সম্মান, ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ তৈরি করে। একটি নৈতিক পরিবারে সন্তানরা সুশিক্ষিত, নম্র ও দায়িত্বশীল হয়ে গড়ে ওঠে। কর্মজীবনেও নৈতিকতা অপরিহার্য। একজন নৈতিক কর্মী নিজের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন, দুর্নীতিকে ঘৃণা করেন এবং সততা বজায় রাখেন। ফলে প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা ও সাফল্য বৃদ্ধি পায়। সমাজজীবনে নৈতিকতা আরও গুরুত্বপূর্ণ। একটি সমাজ তখনই সুশৃঙ্খল থাকে, যখন তার নাগরিকরা নৈতিকতার চর্চা করে। অন্যদিকে, নৈতিক অবক্ষয় সমাজে অপরাধ, দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলার জন্ম দেয়। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি, ভোগবাদিতা ও প্রতিযোগিতার চাপে অনেকেই নৈতিক মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমকে নৈতিকতার প্রচারে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। সর্বোপরি, নৈতিকতা ছাড়া মানুষ প্রকৃত মানুষ হতে পারে না। এটি শুধু ব্যক্তির উন্নতি নয়, বরং একটি সুন্দর, ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গঠনের মূল চাবিকাঠি।

‎অনিরুদ্ধ সূত্রধর
‎লালমাই সরকারি কলেজ, কুমিল্লা
[email protected]

জনসংখ্যা জনসম্পদে পরিণত করা জরুরি

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৫:০৩ পিএম
জনসংখ্যা জনসম্পদে পরিণত করা জরুরি

বছরে ২২ লাখ করে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় যেকোনো জটসহ যানজট নিশ্চিতভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। সড়ক ব্যবহারকারীর সংখ্যা তথা যানবাহনের সংখ্যা কমাতে হবে। ঈদের সময় এ মহানগরীতে বিপুল সংখ্যায় জনসংখ্যা কমে যায় বলেই যানজট শূন্য হয়। পরে তা ফেরার ফলেই যানজটও ফেরে উপচে পড়া ঘনত্বে। যানজটের প্রধান কারণ এটিই।...

ঈদুল আজহার ছুটি শেষে রাজধানীতে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। কারণ ২ কোটি ৬৫ লাখ শহরবাসীর মধ্যে যারা ঈদে শহরের বাইরে গিয়েছিলেন তারা সবাই কর্মস্থলে ফিরেছেন। ব্যবহার শুরু করছেন সব ধরনের যানবাহন, ফুটপাত, বিপণিবিতান, অলি-গলি। ফলে যানজট ফিরে এসেছে ঈদের পাঁচ দিন আগে যে স্তরে ছিল সেই স্তরে এবং ঘনত্বে। এ প্রসঙ্গে সরকারের নেওয়া বড় কয়েকটি ব্যয়বহুল প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে বলতে হয়- ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করে সিগন্যাল সিস্টেম আধনিুকায়ন করার যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল তা আগেই ব্যর্থ হয়েছে।

 এ প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গণপরিবহনব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ঢাকায় সিগন্যাল সিস্টেম আধুনিকায়নের যেকোনো প্রকল্প মুখথুবড়ে পড়বে। এর আগে ২০০১ সালে ঢাকা নগর অঞ্চল পরিবহন পরিকল্পনার অধীনে ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন শুরু হয়। ঢাকাসহ ৬০টি স্থানের সিগন্যাল স্থাপনে বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে ২৫ কোটি টাকা অর্থ সহায়তা দিয়েছিল। বলা হয়েছে, রক্ষাবেক্ষণের অভাবে এ সিগন্যালব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এ সিগন্যালব্যবস্থা অকার্যকর হওয়ার পেছনে যে কারণের কথা বলা হয়েছে তা আসলে অসার। রোগের কারণ নির্ণয় না করে উপসর্গগুলোকে বলপ্রয়োগ কিংবা নানা ছলচাতুরির মাধ্যমে দমন ও দূরীভূত করতে গেলে এমনটাই হবে। অতীতেও তাই হয়েছে।

দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বছরে ২২ লাখ। বিভিন্ন হিসাবে দেখা যায়, ঢাকা শহরে প্রতিদিন গড়ে ২৭০টি বিভিন্ন ধরনের যানবাহন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তুলনাক্রমে এ যানবাহন বৃদ্ধির হার একান্তই সামান্য। কারণ মানুষের গাড়ি কেনার সামর্থ্য এখনো খুবই নিচু পর্যায়ে। অন্যদিকে রাস্তা কমে যাচ্ছে। কারণ বর্ধিত যানবাহনের চলাচল, রাস্তার ওপর দোকানপাট, ফেরিওয়ালা, ফুটপাতে নানাবিধ ব্যবসায়ীর উপচে পড়া ভিড়ের কারণে পথচারীদের রাস্তার ওপর এসে পড়া ইত্যাদি। কাজেই প্রকল্পের নাম যাই দেন ডিএনসিসি, এসটিপি, সিগন্যালিং পদ্ধতি উন্নয়ন, আরএসটিপি কিংবা অন্য যাই হোক, এ দিয়ে বা নগর পরিকল্পনাবিদ এবং সড়ক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে ট্রাফিক সিগন্যালিং ব্যবস্থার কোনোরকম উন্নয়ন করা অলীক কল্পনা। মূল সমস্যা হলো গাড়ি চলার জন্য শহরে ২৫ ভাগ রাস্তা প্রয়োজন, তা কমে বর্তমানে ৬ ভাগে এসেছে। কোনো ধরনের গণপরিবহনব্যবস্থা এ ট্রাফিক জটকে নিরসন করতে পারবে না। তার প্রমাণ এমআরটি প্রকল্পের পিপি-তে যে উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছিল, প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সেই উদ্দেশ্য এতটুকু অর্জিত হয়নি। সে কারণে নানাবিধ উদ্যোগ ও পরামর্শ গ্রহণের কথা বলা হচ্ছে।

বিজ্ঞানে যেকোনো কিছুর একটি সর্বোচ্চ বহনক্ষমতা আছে। তেমনি একটি ট্রফিক সিগন্যালিং পয়েন্টেও সর্বোচ্চ ব্যবহার অর্থাৎ পিক আওয়ারে কতগুলো যানবাহন কোন দিকে আসা-যাওয়া করবে তা অঙ্ক ও জ্যামিতি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত। আমাদের ঢাকা শহরে এ সংখ্যাটি কয়েক গুণ ছাড়িয়ে গেছে। ফলে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে বিদ্যুচ্চালিত লাল-সবুজ সিগন্যালব্যবস্থা উন্নয়ন করলেও তা হাত ও বৈদ্যুতিক লাঠি নিয়ন্তিত ট্রাফিক পুলিশের বর্তমান ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার চাইতে এতটুকু উন্নতি আনতে পারবে না। যে বৈদ্যুতিক সিগন্যাল ৪০ সেকেন্ড বা ১ মিনিট ৫০-৬০টি যানবাহনকে সামনে চলার অনুমতি দিচ্ছে, হাতে চালিত সিস্টেমও ঠিক সেই কাজটি করছে। এ সময়ে গাড়ির অপেক্ষমানের তালিকা হয়ে যাচ্ছে আরও ৬০-৮০টি এবং এটি প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

প্রতিদিন নতুন ২৭০টির মতো যানবাহনের একটি অংশ প্রতিটি ট্রাফিক পয়েন্টে নতুন করে যোগ দিচ্ছে। মনে রাখতে হবে, ২০-৩০ বছর আগের মতো এক লেনে গাড়ির সংখ্যা এখন এক সারি নয়, তা তিন-চার সারি। ফলে সিগন্যাল পেলেও সামনে যাওয়ার গতি ধীর, কারণ সামন-পেছনে, ডানে-বামের গাড়িগুলোর সঙ্গে যেকোনো গাড়ির ধাক্কা লাগার আশঙ্কা রয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ বা যন্ত্রের কোনোটিই এ নির্গমন সংখ্যাকে বৃদ্ধি করতে পারবে না। কাজেই একান্ত ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতিতে অন্তত ট্রাফিক সিগন্যালব্যবস্থা উন্নয়নের নামে কোনো অর্থব্যয় করা সমীচীন হবে না। 

একটি কনসালট্যান্সি রিপোর্ট পাওয়ার আগেই দু-তিনজন করে কনসালট্যান্ট নিয়োগ করা হচ্ছে কী করে যানজট নিরসন করা যায় সে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য। ১০ মাসে তারা কোনো সমাধান দিতে পারেনি, তা পারা সম্ভবও নয়। যারা গণপরিবহনে চড়ছেন, তারা চড়বেন। যারা উঁচু শ্রেণির, তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি কেনা থেকে নিবৃত করার পরামর্শ দিয়ে গণপরিবহনে চড়ার পরামর্শ দেওয়ায় কোনো সুফল হবে না।

মানুষ সারা জীবনে যে টাকা সঞ্চয় করে তা ধস্তাধস্তি ও গায়ে ধাক্কাধাক্কি করে গণপরিবহনে চড়ার লক্ষ্যে নয়, বরং একটি ব্যক্তিগত সুশীতল মোটরগাড়িতে চড়ার লক্ষ্যে। দেশের সমৃদ্ধি বৃদ্ধির সঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়ি বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এ শহরে গাড়ি বেচাকেনার দোকান ৬০০টির মতো। ভাগ্য ভালো দারিদ্র্যর কারণে এর ৫০ শতাংশ দোকানেই প্রতিদিন গড়ে একটি গাড়িও বেচা হয় না। তবে সমৃদ্ধি বৃদ্ধির সঙ্গে তা হবে। তাহলে তখন কী হবে? গাড়ি আমদানি খাতে সরকার বিপুল পরিমাণ কর পাচ্ছে, যা ছাড়া বাজেট হবে বেশি ঘাটতির। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর উদাহরণ টেনেছেন। এ উদাহরণও একান্ত অঙ্ক ও বিজ্ঞানবিরোধী। কারণ, সেসব দেশ বিশাল, জনসংখ্যাও বাংলাদেশের তুলনায় অল্প। পরিবারপ্রতি ৩.৫টি করে ব্যক্তিগত যানবাহন থাকার পর তারা লম্বা দূরত্বের স্থানগুলোতে গণপরিবহন ব্যবহার করেন। 

এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. সারোয়ার খবরের কাগজকে বলেন, সিগন্যাল সিস্টেম আধুনিকায়ন করে যানজট রাতারাতি কমে যাবে তা মনে হয় না।’ সরকারি পেশায় থেকে এমন সৎ মন্তব্য প্রশংসাযোগ্য। এ সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ হচ্ছে দেশের জন্যসংখ্যাকে এবং ঢাকা শহরের ২ কোটি ৬৫ লাখ জনসংখ্যাকে ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা। তখন হ্রাসকৃত জনসংখ্যার ব্যবহার্য যানবাহন এবং অন্যান্য সবকিছু আনুপাতিক হারে কমে যাওয়ার ফলে বিভিন্ন ট্রাফিক সিগন্যালের সর্বোচ্চ বহনক্ষমতার কাছাকাছি চলে এলে ট্রাফিকব্যবস্থা সুস্থতায় ফিরে আসবে। তাছাড়া ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের সুষ্ঠু সংজ্ঞা কী তা নির্ধারণ না করে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়াও অর্থহীন। অন্য কোনো সংজ্ঞা না দিয়ে শুধু অনুভূতির ভিত্তিতে এ ব্যবস্থা উন্নয়নে হাত দেওয়া অর্থহীন হবে।

 যানবাহন ব্যবহারকারী এ অপেক্ষার সময়কে ২ মিনিট বা ৩ মিনিট করলে সন্তুষ্ট কি না তা জরিপের মাধ্যেমে নির্ণয় করে এ কাজটি করা সম্ভব। কিন্তু তাতেও ২ কোটি ৬৫ লাখ মানুষ অধ্যুষিত মাত্র ৪০০ বর্গমাইলের একটি শহরে যানবাহনে যাত্রীদের আরাম দেওয়া যাবে না। কারণ, এখন ট্রাফিক সিগন্যালগুলোতে দিন ও রাতে ১ মিনিট ৪০ সেকেন্ড বা দেড় মিনিট তো দূরের কথা, গড়ে ১৭ মিনিট করে যানবাহনগুলোকে সামনে যাওয়ার ক্লিয়ারেন্স পেতে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে, যা নিত্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এবার জট বৃদ্ধির সিগন্যালবহির্ভূত একটি কারণের কথা মনে করি। বিজয়নগর, মগবাজার, বারিধারাসহ কিছু এলাকার মূল রাস্তার চওড়ার ৮ ফুটের ওপর দাঁড় করিয়ে সকাল থেকে রাত ১০টা গাড়ির নানাবিধ ডেকোরেশনের যে কাজ করা হয় তা ওখানে যানবাহনের গতিকে কমিয়ে দিচ্ছে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত। এ গতিকে শ্লথ করছে বিপরীত দিক থেকে চালানো রিকশার স্রোত। বছরে ২২ লাখ করে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় যেকোনো জটসহ যানজট নিশ্চিতভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। সড়ক ব্যবহারকারীর সংখ্যা তথা যানবাহনের সংখ্যা কমাতে হবে। ঈদের সময় এ মহানগরীতে বিপুল সংখ্যায় জনসংখ্যা কমে যায় বলেই যানজট শূন্য হয়। পরে তা ফেরার ফলেই যানজটও ফেরে উপচে পড়া ঘনত্বে। যানজটের প্রধান কারণ এটিই। এক সন্তানবিশিষ্ট পরিবার গঠন, সমস্যার মূল সমাধানের পথের সূচনা করবে।

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও প্রজাতন্ত্রের সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল