
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের শহর ও গ্রামীণ এলাকায় পরিবহনের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। এটি মূলত চার্জযোগ্য ব্যাটারির মাধ্যমে চালিত হওয়ায় এটি ডিজেল বা পেট্রলচালিত যানবাহনের তুলনায় পরিবেশবান্ধব এবং সাশ্রয়ী। সহজলভ্যতা, কম ভাড়া ও আরামদায়ক যাত্রার জন্য মানুষ দিন দিন বেশি করে এই বাহন ব্যবহার করছে। ব্যাটারিচালিত রিকশার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি কোনো ধরনের ধোঁয়া বা শব্দদূষণ ছাড়াই চলতে পারে। ফলে নগরের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন থাকে এবং শব্দদূষণ কমে যায়। এ ছাড়া এটি চালাতে দক্ষতার চেয়ে ধৈর্য বেশি দরকার হয়, তাই অনেক অদক্ষ মানুষও সহজেই এই বাহনের চালক হিসেবে কাজ পেতে পারেন। এটি বেকারত্ব দূরীকরণেও ভূমিকা রাখছে। তবে এই বাহনের কিছু সমস্যা ও চ্যালেঞ্জও রয়েছে। যেমন অনেক ক্ষেত্রেই এগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে রাস্তায় চলাচল করে, ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে।
অধিকাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা রেজিস্ট্রেশনবিহীন এবং চালকদের কোনো লাইসেন্স নেই, যা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। এ ছাড়া, বিদ্যুৎচালিত হওয়ায় অতিরিক্ত ব্যাটারি চার্জিং লোডের কারণে স্থানীয় বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যাগুলোর সমাধানে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। রিকশাগুলোকে বৈধভাবে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা, চালকদের প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স প্রদান এবং চার্জিং স্টেশনগুলোর উন্নয়ন করলে এ বাহনের সুবিধাগুলো আরও সুদূরপ্রসারী হবে। পরিবেশবান্ধব এ যানটি যদি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা যায়, তবে এটি দেশের পরিবহন খাতে একটি টেকসই পরিবর্তন আনতে পারে। সবশেষে বলা যায়, ব্যাটারিচালিত রিকশা এখন শুধু একটি বাহন নয়, এটি কর্মসংস্থান, পরিবেশ সুরক্ষা ও স্বল্পমূল্যে যাতায়াতের সম্ভাবনাময় একটি মাধ্যম। যথাযথ নিয়ন্ত্রণ ও পরিকল্পনার মাধ্যমে এটি ভবিষ্যতের পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
সোনাগাজী, ফেনী
[email protected]