
বিচারিক কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতা ও আস্থাহীনতাই মিডিয়া ট্রায়ালের অন্যতম কারণ। এর দ্বারা নিমেষেই কারও অর্জিত সুনাম ভূলুণ্ঠিত হতে পারে। বিভীষিকাময় হয়ে উঠতে পারে তার সামাজিক সম্পর্কগুলো। স্বাভাবিক জীবনেও ঘটতে পারে ছন্দপতন। তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ মিডিয়া ট্রায়ালের প্রবণতা আরও প্রবল করেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডিসইনফরমেশন, ডিপফেকের মতো অনুষঙ্গ। সুষ্ঠু সাংবাদিকতার ধারা অব্যাহত রাখতে গণমাধ্যমের এ নেতিবাচক চর্চা পরিহার করা উচিত।
সহজ ভাষায়, মিডিয়া ট্রায়াল হলো সংবাদপত্র ও টেলিভিশন কাভারেজের ফল। এর মাধ্যমে বিচারিক আদালতের রায়ের আগেই কোনো ব্যক্তিকে সম্ভাব্য দোষী হিসেবে আখ্যায়িত করে তার সুনাম ক্ষুণ্ন করা হয়। তখন সেই ব্যক্তির জীবনযাপন করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এ ধরনের বিচার উচ্ছৃঙ্খল মানসিকতাকে উৎসাহিত করে। গণমাধ্যম নীতির ন্যূনতম মানদণ্ড হলো, বিচার কিংবা দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে কাউকে কোনো নেতিবাচক অভিধায় অভিযুক্ত করা যাবে না। এমনকি বিচারে প্রমাণিত হওয়ার আগে ‘দুর্নীতিবাজ’ বলে চিহ্নিত করাও মিডিয়া ট্রায়ালের অন্তর্ভুক্ত।
যদিও বাংলাদেশে এর বহুল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বাস্তবতার নিরিখে বলতে হয় যে, আমাদের দেশে এখনো মিডিয়া ট্রায়ালের পরম্পরা চলমান। এর ফলে ধ্বংস হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। কাউকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতে গিয়ে গোটা সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে অস্থিরতার বিষবাষ্প। মনে রাখা প্রয়োজন, বিচারিক প্রক্রিয়া ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে আলাদা এবং স্বতন্ত্র। বিচারিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব থাকা কোনোভাবেই উচিত নয়। অবশ্য সংবাদমাধ্যমগুলো নানাভাবে প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ থাকে।
আসিফ আল মাহমুদ
আকবরশাহ মাজার, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম ৪২০২
[email protected]
প্রকৃতিতে এখন বর্ষাকাল। এ ঋতু অনেকের কাছে মনোমুগ্ধকর হলেও শরীরের জন্য বয়ে আনতে পারে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিশেষ করে বর্ষায় বাড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ। আর ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে ব্যক্তিসচেতনতার বিকল্প নেই। বিশেষ করে এ সময় জ্বর হলে কখনো তা নিয়ে অবহেলা করা উচিত নয়। কারণ, হতে পারে তা ডেঙ্গু জ্বর। শরীরে ডেঙ্গুর ভাইরাস প্রবেশ করলে প্লাটিলেটের সংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ফলে ডেঙ্গু রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজন।
প্রচণ্ড জ্বর (১০৪ ডিগ্রি), প্রচণ্ড মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেশি ও শরীরের বিভিন্ন গাঁটে যন্ত্রণা, বমি বমিভাব, মাথা ঘোরা, বিভিন্ন গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া, শরীরে র্যাশ বের হওয়া ইত্যাদি। যাদের একবার ডেঙ্গু সেরে যাওয়ার পর আবারও ডেঙ্গু হয়, তাদের সিভিয়ার ডেঙ্গু হওয়ার ঝুঁকি বেশি। অর্থাৎ তাদের ক্ষেত্রে মারাত্মক আকার নিতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে উচ্চ তাপমাত্রা রোধ করতে শরীর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুছে দিতে হবে। শরীর বেশি ঠাণ্ডা মনে হলে খাবার স্যালাইন দিতে হবে। নিজেকে ও পরিবারের সবাইকে ডেঙ্গু থেকে নিরাপদে রাখতে প্রয়োজন সতর্কতা। বর্ষাকাল যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বার্তা আনে, তেমনি রোগজীবাণুর জন্যও উপযুক্ত সময়। একটু সচেতন থাকলেই নিজেকে ও পরিবারকে ডেঙ্গু থেকে সহজেই সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব। এখনই সতর্ক হোন, সুস্থ থাকুন।
ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
বাঙালির রসনাবিলাস যেন একটু বেশিই বেশি! শোল মাছের ঝোল মেখে ভাত খেয়ে বাঙালি ‘ভাতঘুম’ দেওয়ার কল্পনায় উদ্বেলিত হয়, আবার ঘুম থেকে উঠে কী খাবে সে ভাবনায় বিভোর থাকে! বাঙালির কাছে খাবার কেবল জৈবিক উদরপূর্তির চাহিদা নয়! বাঙালির খেয়ে সুখ, খাইয়ে সুখ, খাবারের কথা ভেবে কিংবা কে কত খেতে পারে তার প্রচ্ছন্ন বা প্রকাশিত তুল্যমূল্য বিচারে নেমেও সুখ! বাঙালি ভোজনবিলাসী, ভোজনরসিক, আবার ভোজনপটুও বটে! এমনকি নিজেদের ভোজনবিশারদ দাবি করেও বাঙালি আনন্দ পায়! বাঙালির সুখ, আনন্দ উদ্যাপনে খাবারদাবারের বেশ এক যোগ আছে বৈকি!
সবাইকে আয়োজন করে খাওয়ানোর রেওয়াজ রয়েছে! আবার গভীর দুঃখ কিংবা শোকের আবহে বিশেষ খাবার খাওয়ানোর প্রথা চলে আসছে যুগ থেকে যুগান্তরে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে, সীমান্তের এপারে-ওপারে! ‘ভজন’-এর চাইতে ‘ভোজনেই’ বাঙালির আগ্রহ বরাবর বেশি!
মজার ব্যাপার হলো, ইদানীং বাঙালি খাবারের ক্ষেত্রে ‘হালাল’ খুঁজছে! যদিও বাঙালির জীবনাচরণ, মানসিকতা ও চিন্তাভাবনায় খুব একটা ‘হালাল’ উপাদান দেখা যায় না! বাঙালির ভাষাতেও রয়েছে খাওয়াদাওয়ার আধিক্য! বাঙালি ঘুষ খায়, সুদ খায়, মদ-গাঁজা এসবও খায়! এমনকি হুংকার ছাড়ে- খাইছি তোরে! বাঙালি চা-কফি খায়। আনন্দে অথবা দুশ্চিন্তায় বিড়ি-সিগারেট খায়! কর্তাব্যক্তিরা সুযোগ পেলে অধস্তনের ‘চাকরি’ খায়! আবার কখনো বিপদে পড়ে ‘খাবি’ খায়, ‘মার’ খায়! বাঙালি স্ত্রী স্বামীর ‘মাথা’ খায়! সর্বভুক হয়তো নয়, তবে বাঙালি নিশ্চিতভাবেই বহুভুক, বিচিত্রভুক! বাঙালির দৈনন্দিন জীবনে খাওয়ার বিচিত্র ফিরিস্তি! তবে গৃহসুখপরায়ণ, ভেতো বাঙালির স্বাস্থ্যকর, সহজপাচ্য, বলবর্ধক বস্তু খাওয়া উচিত।
আসিফ আল মাহমুদ
আকবরশাহ মাজার, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম ৪২০২
[email protected]
মাদক আজ আমাদের সমাজের এক ভয়াবহ ব্যাধি, যা তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এর ছোবলে অসংখ্য পরিবার ছারখার হয়ে যাচ্ছে, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে কত স্বপ্ন! মাদক কেবল একজন ব্যক্তিকে নয়, একটি পুরো পরিবার ও সমাজকে অসুস্থ করে তোলে। এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায়, অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি করে এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সহজেই মাদকের ফাঁদে পা দিচ্ছে। বন্ধুদের প্ররোচনা, হতাশা, বেকারত্ব, কিংবা নিছক কৌতূহল তাদের এ অন্ধকার জগতে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। একবার এ জালে আটকা পড়লে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। তাই আমাদের সবার দায়িত্ব, বিশেষ করে অভিভাবক ও শিক্ষকদের, এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা।
মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। সরকার, প্রশাসন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার এবং সমাজের প্রতিটি মানুষের উচিত এ ভয়াবহ আগ্রাসন রুখতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা। পাঠ্যপুস্তকে মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা, কর্মশালা ও সেমিনারের আয়োজন করা এবং গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালানো অত্যন্ত জরুরি। মনে রাখতে হবে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। আমাদের সন্তানদের মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে, তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে হবে। সুস্থ বিনোদন ও খেলাধুলার সুযোগ তৈরি করে তাদের মানসিক বিকাশে সহায়তা করতে হবে। আসুন, আমরা সবাই মিলে মাদকমুক্ত একটি সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গড়ার শপথ গ্রহণ করি।
ওসমান গনি
সহসভাপতি, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ পরিষদ কুমিল্লা উত্তর জেলা শাখা
[email protected]
২৪-এর ৫ আগস্টের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেকটা অবনতি হয়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই পত্রিকার পাতায় খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদকের খবর দেখা যায়। গ্রামের চেয়ে শহরে পরিস্থিতি আরও জটিল। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী নারী, পথচারী, কেউই আজ নিরাপদ নয়। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের মনে ভয় ও অনাস্থা সৃষ্টি হবে। অপরাধীরা যদি বিচার না পায়, তবে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। তাই এখনই সময় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সক্রিয় ও দক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে। থানা পর্যায়ে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে অপরাধ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
এ ছাড়া রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অপরাধীরা যেন রক্ষা না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। মাদক, অস্ত্র ও সন্ত্রাসের গডফাদারদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। দেশবাসীর শান্তিপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করতে হলে অপরাধ দমন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া চলবে না। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ, কঠোর হস্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করুন এবং জনগণকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিন।
ওসমান গনি
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
[email protected]