ঢাকা ২৫ ভাদ্র ১৪৩১, সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ঈমানের শাখা-প্রশাখা কতটি ও কী কী?

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:১৬ এএম
ঈমানের শাখা-প্রশাখা কতটি ও কী কী?
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ওসমানের আঁকা কালিমা তাইয়্যেবার ক্যালিগ্রাফি

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “ঈমানের সত্তর অথবা ষাটের অধিক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোত্তম শাখা হলো, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর স্বীকৃতি প্রদান করা। সর্বনিম্ন শাখা হলো, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা। আর লজ্জা ঈমানের অন্যতম একটি শাখা।” (বুখারি, হাদিস : ৯)

উল্লিখিত হাদিস থেকে বোঝা যায়, ঈমানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা রয়েছে। বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনে হিব্বান (রহ.)-এর মতে, ঈমানের মোট ৭৯টি শাখা রয়েছে। (আল-ইহসান ফি তাকরিরি ইবনে হিব্বান, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা-৩৮৭)

বিশিষ্ট মুহাদ্দিস আবদুল জলীল আল-কসরি (রহ.) তার রচিত শুআবুল ঈমান নামক গ্রন্থে ৭৪টির কথা উল্লেখ করেছেন। হাফেজ আবু আবদিল্লাহ আল-হালিমি (রহ.) তার রচিত আল-মিনহাজ ফি শুআবিল ঈমানে ৭৭টি এবং ইমাম আবু বকর বাইহাকি (রহ.) তার রচিত জামিউল মুছান্নাফ ফি শুআবিল ঈমানে ঈমানের ৭৭টি শাখা-প্রশাখার বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও আলোচনা তুলে ধরেছেন। (উসুলুল ঈমান, ড. আহমদ আলী, গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স, পৃষ্ঠা-৪২-৪৩)

 

মর্যাদার বিবেচনায় ঈমানের শাখা-প্রশাখাগুলো সমান নয়। পূর্ণাঙ্গ মুমিন-মুসলমানের মাঝে সবগুলো শাখা-প্রশাখা পাওয়া যাবে। যাদের মধ্যে কম পাওয়া যাবে, তারা দুর্বল বা ত্রুটিযুক্ত মুমিন।

ঈমানের কিছু শাখা-প্রশাখা অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করতে হয়—যা গোপন। কিছু আছে প্রকাশ্য। কিছু আছে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং ইবাদতকেন্দ্রিক আবার কিছু শাখা সামাজিকতানির্ভর। লজ্জা ও আদবের মতো নৈতিকতায় মোড়ানোও কিছু শাখা রয়েছে। (দ্য ব্রাঞ্চেস অব ঈমান, ড. ইয়াসির কাদি, (ঈমানবৃক্ষ) অনুবাদ: মুহাম্মাদ খালিদ সাইফুল্লাহ, গার্ডিয়ান, পৃষ্ঠা-৮-৯)

ঈমানের সংজ্ঞা অনুযায়ী এর শাখা-প্রশাখাগুলো মোট তিন ভাগে বিভক্ত করা সম্ভব। যথা—

 

ক. ঈমানের কিছু শাখা-প্রশাখা অন্তর বা বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কিত, এর সংখ্যা ৩০টি।

 

খ. কিছু জবান বা মৌখিক স্বীকৃতির সঙ্গে জাড়িত, এর সংখ্যা ৭টি।

 

গ. কিছু শাখা-প্রশাখা শরীর বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বা আমলের সঙ্গে জড়িত, এর সংখ্যা ৪০টি।

 

ফলাফল দাঁড়াল—(ক.) ৩০ + (খ.) ৭ + (গ.) ৪০ = ঈমানের ৭৭টি শাখা-প্রশাখা। (উসুলুল ঈমান, ড. আহমদ আলী, গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স, পৃষ্ঠা-৪৩)

 

(ক.) অন্তর বা বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কিত শাখা-প্রশাখাগুলো হলো

১. আল্লাহতায়ালার প্রতি ঈমান। (সুরা নিসা, আয়াত : ১৩৬; মুসলিম, হাদিস নং-২৬)

২. আল্লাহ ছাড়া বাকি সবকিছুই তাঁর সৃষ্টি। (সুরা জুমার, আয়াত : ৬২)

৩. ফেরেশতাদের অস্তিত্বে বিশ্বাস। (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৮৫)

৪. পবিত্র কোরআন ও আসমানি সব কিতাবের প্রতি বিশ্বাস। (সুরা নিসা, আয়াত : ১৩৬)

৫. রাসুল (সা.)-সহ সব নবী-রাসুলের প্রতি বিশ্বাস। (মুসলিম, হাদিস : ৮)

৬. তাকদির। (সুরা নিসা, আয়াত : ৭৮; মুসলিম, হাদিস : ৬৫০১)

৭. আখেরাত ও পুনরুদ্ধার। (সুরা তাওবা, আয়াত : ২৯)

৮. হাশর, মিজান, কিয়ামত ও বিচার দিবসের প্রতি বিশ্বাস। (সুরা জাসিয়া, আয়াত : বুখারি, হাদিস : ৬৫৩১)

৯. জান্নাত ও জাহান্নাম। (সুরা বাকারা, আয়াত: ৮১; বুখারি, হাদিস : ১৩৭৯)

১০. আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালোবাসা। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৬৫; বুখারি, হাদিস : ১৫)

১১. আল্লাহর প্রতি ভয়। (সুরা তাওবা, আয়াত : ১৭৫; সুরা মায়েদা, আয়াত : ৪৪)

১২. আল্লাহর প্রতি সুধারণা। (সুরা আরাফ, আয়াত : ৫৬; সুরা জুমার, আয়াত : ৫৩)

১৩. আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসা। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১২২, ১৬০; বুখারি, হাদিস : ৫৭০৫)

১৪. রাসুলুল্লাহকে (সা.) ভালোবাসা। (বুখারি, হাদিস : ১৫)

১৫. আল্লাহর জন্য কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব বা শত্রুতা করা। (বুখারি, হাদিস : ৬৬০)

১৬. ইখলাসের সঙ্গে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা। (সুরা বাইয়িনা, আয়াত : ৫; তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯০)

১৭. গুনাহ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তওবা করা। (সুরা তাহরিম, আয়াত : ৮; মুসলিম, হাদিস : ৭০৩৬)

১৮. লজ্জা করা। (তিরমিজি, হাদিস : ২০০৯; মুসলিম, হাদিস : ১৬২)

১৯. নিয়ামতের শোকর আদায়। (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৭; মুসলিম, হাদিস : ৭২২৯)

২০. বৈধ প্রতিশ্রুতি পালন। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৩৪; বুখারি, হাদিস : ১/৩৩)

২১. ধৈর্য ধারণ করা। (সুরা আনফাল, আয়াত : ৪৬; বুখারি, হাদিস : ৫৬৫৩-১২৫২)

২২. বিনয়ী হওয়া। (সুরা শুআরা, আয়াত : ২১৫; বুখারি, হাদিস : ৬২৫৬)

২৩. সৃষ্টিজীবনের প্রতি দয়া। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯; বুখারি, হাদিস : ৬০১৩)

২৪. আল্লাহর ফয়সালার ওপর সন্তুষ্টি থাকা। (সুরা আহজাব, আয়াত : ৩৬)

২৫. অহংকার ত্যাগ করা। (সুরা বাকারা, আয়াত : ৩৪; মুসলিম, হাদিস : ৯১)

২৬. বড়দের সম্মান এবং ছোটদের স্নেহ করা। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯২০; আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৪৩)

২৭. হিংসা-বিদ্বেষ ত্যাগ করা। (সুরা ফালাক, আয়াত : ৫; বুখারি, হাদিস : ৬০৬৫)

২৮. রাগ-ক্রোধ ও মনোমালিন্য ত্যাগ। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৪; বুখারি, হাদিস : ১৩৭)

২৯. সবার কল্যাণ কামনা করা। (সুরা আরাফ, আয়াত : ৬২; মুসলিম, হাদিস : ৫৫)

৩০. পার্থিব ধন-সম্পদ ও নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব-ক্ষমতার প্রতি মোহ না থাকা। (সুরা ফাতির, আয়াত : ৫; মুসলিম, হাদিস : ৭১২৪)

 

(খ.) জবান বা স্বীকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত শাখা-প্রশাখাগুলো হলো

১. ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বা তাওহিদের স্বীকৃতি প্রদান করা। (সুরা ফাতির, আয়াত : ৩; বুখারি, হাদিস : ৯)

২. পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত। (সুরা আনফাল, আয়াত : ২)

৩. দ্বীনি জ্ঞানার্জন করা। (সুরা জুমার, আয়াত : ৯; বুখারি, হাদিস : ৭১)

৪. দ্বীনি ইলম শিক্ষা দেওয়া ও দ্বীনের প্রচার করা। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১১০; বুখারি, হাদিস : ৫০২৭-২৮)

৫. দোয়া করা। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৬; তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৭১)

৬. আল্লাহর জিকির করা। (সুরা রাদ, আয়াত : ২৮; বুখারি, হাদিস : ৬৪০৭)

৭. অনর্থক কথা বলা ও শোনা থেকে বিরত থাকা। (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৩)

 

(গ.) শরীর, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বা আমলের সঙ্গে জড়িত শাখা-প্রশাখাগুলো হলো

১. পবিত্রতা অর্জন। (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৬; মুসলিম, হাদিস : ৪৪১)

২. নিয়মিত নামাজ আদায়। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৪৩; সুরা নিসা, আয়াত : ৭৭)

৩. জাকাত আদায় ও দান-সদকা করা। (সুরা বাইয়িনা, আয়াত : ৫; বুখারি, হাদিস : ২৯)

৪. রমজানের রোজা রাখা। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩; বুখারি, হাদিস : ২১)

৫. হজ পালন। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭; সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৬)

৬. রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১২৫; বুখারি, হাদিস : ২০২৬)

৭. হিজরত করা। (সুরা নাহাল, আয়াত : ৪১)

৮. আল্লাহর নামে মান্নত করলে, তা পূর্ণ করা। (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৭০)

৯. আল্লাহর নামে বৈধ কসম করলে, তা আদায় করা। (বুখারি, হাদিস : ৬১০৮)

১০. কসম ভঙ্গ করলে, তার কাফফারা আদায় করা। (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৮৯)

১১. সতর আবৃত রাখা। (সুরা আরাফ, আয়াত : ২৬; মুসলিম, হাদিস : ৩৩৮)

১২. কোরবানি দেওয়া। (সুরা কাউসার, আয়াত : ২; তিরমিজি, হাদিস : ১৫০৭)

১৩. মৃত ব্যক্তির জানাজা আদায় ও দাফন-কাফন করা। (বুখারি, হাদিস : ১২৪০)

১৪. ঋণ পরিশোধ করার দৃঢ় ইচ্ছা। (বুখারি, হাদিস : ২৩৮৯)

১৫. ধোঁকা না দেওয়া। (মুসলিম, হাদিস : ১০২)

১৬. সত্য সাক্ষ্য গোপন না করা। (সুরা ফুরকারন, আয়াত : ৭২; বুখারি, হাদিস : ২৬৫৪)

১৭. সামর্থ্য থাকলে বিয়ে করা। (বুখারি, হাদিস : ৫০৬৬)

১৮. হক আদায়। (মুসলিম, হাদিস : ২৫৮১)

১৯. মা-বাবার সঙ্গে সদ্বব্যবহার। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৩)

২০. সন্তান-সন্তুতির সুলালন ও পালন করা। (সুরা তাহরিম, আয়াত : ৬)

২১. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা। (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত : ২২; বুখারি, হাদিস : ২০৬৭)

২২. মনিবের আনুগত্য করা। (মুসলিম, হাদিস : ১৩৩)

২৩. ন্যায়বিচার। (সুরা নিসা, আয়াত : ৫৮; সুরা হুজুরাত, আয়াত : ৯)

২৪. মুসলিম জামাতে শামিল থাকা এবং উম্মতের মাঝে ফাটল সৃষ্টি না করা। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১০৩; মুসলিম, হাদিস : ১৮৪৮)

২৫. মুসলিম খলিফা বা নেতার আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। (সুরা নিসা, আয়াত : ৫৯)

২৬. ঝগড়া-বিবাদের মীমাংসা করা। (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ৯; তিরমিজি, হাদিস : ২৫০৯)

২৭. ভালো কাজে সহায়তা করা। (সুরা মায়েদা, আয়াত : ২; বুখারি, হাদিস : ২৪৪৪)

২৮. সৎকাজে আদেশ করা ও অসৎ কাজে বাধা প্রদান। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১০৮-১১০)

২৯. শরিয়ত প্রবর্তিত শাস্তির বিধান বাস্তবায়ন করা। (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৩৩-৩৪; সুরা নুর, আয়াত : ২)

৩০. প্রয়োজন অনুযায়ী জিহাদ করা। (সুরা হজ, আয়াত : ৭৮)

৩১. আমানত রক্ষা এবং তা সঠিকভাবে আদায় করা। (সুরা নিসা, আয়াত : ৫৮)

৩২. অভাবী ও ঋণগ্রস্তদের ঋণ দেওয়া। (বাইহাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩২৮৫)

৩৩. প্রতিবেশীর হক আদায়। (সুরা নিসা, আয়াত : ৩৬; তিরমিজি, হাদিস : ১৯৪৩)

৩৪. হালালভাবে উপার্জন এবং ভক্ষণ করা। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭২; সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৫১; বাইহাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৯২০৩)

৩৫. শরিয়তের বিধান মেনে আয়-ব্যয় সমন্বয় করা। (সুরা ফুরকান, আয়াত : ৬৭)

৩৬. সালাম দেওয়া এবং সালামের উত্তর দেওয়া। (সুরা নিসা, আয়াত : ৮৬)

৩৭. হাঁচিদাতা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে উত্তরে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা। (বুখারি, হাদিস : ১২৪০; মুসলিম, হাদিস : ২৯৯২)

৩৮. কাউকে কষ্ট না দেওয়া এবং কারও কোনও ক্ষতি না করা। (সুরা আহজাব, আয়াত : ৫৮; সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১১)

৩৯. অবৈধ খেলাধুলা ও রং-তামাশা থেকে বেঁচে থাকা। (সুরা জুমআ, আয়াত : ১১)

৪০. রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৫৭)

 

লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

বানভাসিদের পাশে আল-মারকাজুল ইসলামী

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০৪ পিএম
বানভাসিদের পাশে আল-মারকাজুল ইসলামী
লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছেন আল-মারকাযুল ইসলামীর স্বেচ্ছাসেবীরা। ছবি: সংগৃহীত

ভারী বর্ষণ আর ভারত থেকে নামা ঢলে দেশের ১২ জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। দেশের এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে আল-মারকাজুল ইসলামী। বন্যার শুরু থেকে ত্রাণ বিতরণ, পানিবন্দিদের উদ্ধার ও আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো, মৃতদের উদ্ধার ও কাফন-দাফন এবং বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে সংস্থাটি। বন্যায় মৃত ৯ জনের মরদেহ উদ্ধারপূর্বক কাফন-দাফন করেছে তারা। 

জানা গেছে, ৪ হাজার পরিবারকে শুকনো খাবার, ৬ হাজার পরিবারের মাঝে ভারী ফুড আইটেম, ১৫ হাজার পরিবারকে ৫ লিটারের বিশুদ্ধ পানি দেওয়া হয়েছে। ময়লা পানি বিশুদ্ধকরণ ৭০ হাজার পিস ট্যাবলেট বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 

এদিকে সংস্থাটির নেতৃত্বে ফেনীর ৬টি উপজেলায় ৮ হাজার মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। জনপ্রতি বিনামূল্যে ১,২০০ টাকার ওষুধ দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালীতে মেডিকেল ক্যাম্প করে ফ্রিতে ১০ হাজার রোগী দেখার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। 

সংস্থাটির চেয়ারম্যান হামজা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মারকাজুল ইসলামী প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিপন্ন, অসহায় ও দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। ১৯৮৭ সালে আমার বাবা মুফতি শহীদুল ইসলাম বিন-নুরী টাউনে পড়াকালে বন্ধুদের নিয়ে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাও হয়েছে বন্যার্তদের সহায়তাকে কেন্দ্র করে। ৮৮ এর বন্যায় বিপুল পরিমাণ সহায়তা করেছে। ৯৮ এর বন্যায় ২০ হাজার মেট্রিক টন চাল দিয়েছে সংস্থাটি। ১২ কোটি টাকার নগদ অর্থও সহায়তা করা হয় সেসময়। কভিড-১৯ এ মৃতদের কাফন-দাফনের পাশাপাশি ব্যাপক কাজ করেছি আমরা। এবারের বন্যায় শুরু থেকে আমরা কাজ করেছি। প্রথমে উদ্ধার কাজ করেছি। শুকনো ও রান্না করা খাবার থেকে শুরু করে বিনা মূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ দিয়েছি।’ 

প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সাল থেকে মানবসেবায় নিবেদিত আল-মারকাজুল ইসলামী (এএমআই)। সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নড়াইল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুফতি শহীদুল ইসলাম। বিশেষত ১৯৮৮ ও ১৯৯৮-এর বন্যা ও কোভিড-১৯-এ সংস্থাটির কার্যক্রম ছিল চোখে পড়ার মতো। কোভিড-১৯-এ জীবন বাজি রেখে মৃতদের শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছে সংস্থার লোকজন। সংস্থাটির সরাসরি তত্ত্বাবধান ও অর্থায়নে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্যও তাদের মাদরাসা রয়েছে। সংস্থাটি তিনটি কাজ সামনে রেখে কাজ করছে- শিক্ষা, আত্মশুদ্ধি ও সেবা। 

এ ছাড়া সংস্থাটির অধীনে স্বল্প খরচে চিকিৎসার জন্য নিজস্ব হাসপাতাল, ফ্রি লাশ গোসল ও কাফনসেবা, ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, দুর্যোগে জরুরি ত্রাণ ও পুনর্বাসন, স্বাবলম্বীকরণ, বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য ডিপ টিউবওয়েল বা সাধারণ টিউবওয়েল স্থাপন ইত্যাদি কার্যক্রম রয়েছে। 

রায়হান/মিরাজ রহমান

সুরা ওয়াকিয়া পড়ার ফজিলত

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৮ এএম
আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৯ এএম
সুরা ওয়াকিয়া পড়ার ফজিলত
পবিত্র কোরআনের প্রচ্ছদ। ছবি: ইন্টারনেট

সুরা ওয়াকিয়া পবিত্র কোরআনের ৫৬তম সুরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এর আয়াত সংখ্যা ৯৬। রুকু আছে ৩টি। ওয়াকিয়া অর্থ নিশ্চিত ঘটনা। মুফাসসিররা বলেন, ওয়াকিয়া অর্থ কিয়ামতও বটে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সুরা ওয়াকিয়া তেলাওয়াত করবে তার ওপর অভাব আসবে না।’ (বায়হাকি, হাদিস: ২৪৯৭)

সুরা ওয়াকিয়া কখন পড়তে হয়
দিন-রাত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সকাল-সন্ধ্যা খুব গুরুত্বপূর্ণ দুটি সময়। মহান আল্লাহ এ দুই সময়ে জিকির করার নির্দেশ দিয়েছেন। মাগরিবের নামাজের পর সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করার অভিমত ব্যক্ত করেছেন ইসলামি স্কলাররা।

সুরা ওয়াকিয়া শেখা-শেখানো
সুরা ওয়াকিয়া পাঠের বিশেষ একটি শিক্ষা পাওয়া যায় আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর সঙ্গে আমিরুল মুমিনিনের বিশেষ কথোপকথন থেকে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) যখন অন্তিম শয্যায় শায়িত ছিলেন তখন ওসমান (রা.) তাকে দেখতে গিয়ে বলেন, আপনার অসুখটা কী? ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমার পাপ আমার অসুখ। ওসমান (রা.) বলেন, আপনার বাসনা কী? তিনি বলেন, আমার পালনকর্তার রহমত কামনা করি। তিনি বলেন, আমি সরকারি বায়তুল মাল থেকে কোনো উপঢৌকনের ব্যবস্থা করে দেব, যা আপনার এবং আপনার কন্যাদের উপকারে আসবে? ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, এর কোনো প্রয়োজন নেই। আমি আমার কন্যাদের সুরা ওয়াকিয়া শিক্ষা দিয়েছি। আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করে, অভাব তাকে কখনো স্পর্শ করবে না। (তাফসিরে জালালাইন, ৬/৩৫৩)

লেখক: আলেম ও অনুবাদক

বন্যার্তদের পাশে নানা আয়োজনে পিসব

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫২ পিএম
আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬ পিএম
বন্যার্তদের পাশে নানা আয়োজনে পিসব
মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে পিপলস ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশের (পিসব) স্বেচ্ছাসেবিরা। ছবি: সংগৃহীত

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অনেক জেলার অধিকাংশ অঞ্চল। বন্যার শুরুতে গভীর রাতে হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় মানুষেরা ঘর ছাড়েনি বা ছাড়ার সুযোগ পায়নি। দুই সপ্তাহ ধরে ঘরবন্দি হয়ে খাবার-পানিবিহীন এক অনিশ্চিত সময় পার করেন লাখো মানুষ। মানুষের যখন এমন বিপদ, তখন তো আর ঘরে বসে থাকা যায় না। শুরু থেকেই বিরামহীনভাবে বানভাসি মানুষের জন্য কাজ করছে মাওলানা মুহাম্মাদ ইমরান হাবিবীর পিপলস ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ (পিসব)।

পিসবের নেতৃত্বে শুরুতে দক্ষ সাঁতারুদের চারটি টিম আটকেপড়াদের উদ্ধার করেছে। ফেনী ও নোয়াখালী জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কয়েকটি টিমে ভাগ হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা, শিশুখাদ্য, রান্না করা খিচুড়ি, শুকনো খাবার, পানি ও মোমবাতিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী বন্যাদুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা।

জানা যায়, ১৫ হাজার বন্যার্ত মানুষকে খাদ্য সহায়তার আওতায় শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার, শিশুখাদ্য, প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দিয়েছে তারা। এ পর্যন্ত দেড় লাখ টাকার ওষুধ সংগ্রহ করেছে সংগঠনটি। প্রায় চার লাখ টাকার চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ বিতরণ করবেন বলে জানা গেছে।

বন্যাপরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও অসহায় মানুষের সহায়তায় বহুমুখী সেবামূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে পিসব। প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে ৩ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা, শিশুখাদ্য ও স্যানিটাইজের জন্য পরিবারপ্রতি ১৫০০ টাকা, পুনর্বাসন প্রকল্পে পরিবারপ্রতি ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা, জরুরি গৃহ-আসবাব প্রকল্পে ১৫০০ টাকা, টিউবওয়েলের জন্য ২৫ হাজার টাকা ও টয়লেট নির্মাণে পরিবারপ্রতি ১২ হাজার টাকা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মাদরাসাছাত্রদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ, ট্রাঙ্ক ও বিছানাপত্রের জন্য জনপ্রতি ২৫০০ টাকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। এর মধ্যে বহু মানুষকে সহায়তা দিয়েছেন।

সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মাদ ইমরান হাবিবী বলেন, ‘পিসব প্রতিষ্ঠার পর থেকে সেবামূলক কাজ করে আসছে। বন্যার শুরু থেকে নানামুখী সেবা নিয়ে আমরা মানুষের কাছে হাজির হয়েছি। বন্যাপরবর্তী অসহায়দের পুনর্বাসন এবং স্বাবলম্বী করার প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। মাদরাসাছাত্রদের আসবাব, শিক্ষা উপকরণ, মাদরাসা সংস্কার এবং অসহায়দের জন্য টিউবওয়েল স্থাপন ও টয়লেট নির্মাণ করব।’

উল্লেখ্য, মুসলিম সন্তানদের মৌলিক ধর্মীয় শিক্ষা ও নানামুখী সেবামূলক কাজের জন্য ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পিপলস ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ (পিসব)। প্রতিষ্ঠা করেন মাওলানা মুহাম্মাদ ইমরান হুসাইন হাবিবী। এ পর্যন্ত সংস্থাটি মুসলিম শিশুদের মৌলিক ধর্মীয় শিক্ষার জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মক্তব প্রতিষ্ঠা, অসহায়দের স্বাবলম্বী ও ঘর নির্মাণ করে দেওয়া, দেশে বিভিন্ন সময় বন্যা ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা, মসজিদ নির্মাণ ও আলেমদের সহায়তা দিয়ে আসছে। করোনাকালে প্রায় ১ লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা ও নগদ অর্থ দিয়েছেন তারা।

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

দুশ্চিন্তা মুক্তির আমল

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
দুশ্চিন্তা মুক্তির আমল
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত যুবকের ছবি

দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশন—মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। রোগবিহীন দেহ ও দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন কল্পনা করা অসম্ভব। নবি-রাসুলরাও বিপদে ও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তারা ধৈর্য ধরেছেন এবং আল্লাহর বলে দেওয়া পথে সমাধান খুঁজে পেয়েছেন। এমন কিছু আমল রয়েছে, যা মানলে দুশ্চিন্তা দূর হবে। 

আল্লাহই একমাত্র উদ্ধারকারী: আল্লাহর নির্দেশে মানুষের জীবনে বিপদাপদ আসে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর অনুমতি ছাড়া (মানবজীবনে) কোনো বিপদাপদ আসে না।’ (সুরা তাগাবুন, আয়াত: ২৬)। বিপদ থেকে উদ্ধারকারীও একমাত্র তিনি। আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসুল, আল্লাহ যদি আপনার ওপর কোনো বিপদ দেন, তা হলে তিনি ছাড়া তা দূর করার ক্ষমতা অন্য কারও নেই। (সুরা ইউনুস, আয়াত: ১০৭)। এ জন্য যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখা এবং তাঁকেই একমাত্র উদ্ধারকারী হিসেবে বিশ্বাস করা ঈমানি দায়িত্ব।  

ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করা: জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করা দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির অন্যতম উপায়। জীবনে বয়ে চলা কোনো ঘটনা আপাতদৃষ্টিতে অকল্যাণকর মনে হলেও এ বিশ্বাস রাখা যে, এতেই আমার কল্যাণ রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘এবং হতে পারে কোনো বিষয় তোমরা অপছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হতে পারে কোনো বিষয় তোমরা পছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহই (তোমাদের ভালো-মন্দ সম্পর্কে বেশি) অবগত আছেন এবং তোমরা অবগত নও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৬)

আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করা: দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশনে ভেঙে পড়া যাবে না; বরং আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখতে হবে। আল্লাহকেই একমাত্র অভিভাবক হিসেবে মানতে হবে। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি বান্দার সঙ্গে ঠিক তেমন আচরণ করি, যেমন বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৯০১)। আরেক আয়াতে আছে, ‘আর যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান।’ (সুরা তালাক, আয়াত: ৩)

জিকির করা: অস্থির ও হতাশাগ্রস্ত হৃদয়কে স্থির এবং শান্ত করার কার্যকরী পদ্ধতি হলো জিকির করা। জিকির মুমিন হৃদয়কে প্রশান্ত করে। পরিতৃপ্ত করে। আল্লাহ বলেন,  ‘আল্লাহর প্রতি অনুরাগী তারা, যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে তাদের অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। জেনে রেখ, আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমেই অন্তরের সত্যিকারের প্রশান্তি লাভ করা যায়।’ (সুরা রাদ, আয়াত: ২৮) 

তওবা করা এবং নিজেকে সৎকাজে ব্যস্ত রাখা: বেশি বেশি তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং নিজেকে ভালো কাজে ব্যস্ত রাখা একজন মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। এতে দুশ্চিন্তা দূর হয়। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তবে যারা তওবা করবে, ঈমান আনবে এবং সৎ কাজ করবে। আল্লাহতায়ালা এদের পাপগুলো পুণ্য দিয়ে পরিবর্তন করে দেবেন; আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৭০)

পরামর্শ করা: যে সমস্যার কারণে দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন হচ্ছে, তা নির্ণয় করে উক্ত বিষয়ে পারদর্শী দ্বীনদার অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং কাজ-কর্মে তুমি তাদের সঙ্গে পরামর্শ করো। এরপর যখন (কোনো ব্যাপারে) সংকল্পবদ্ধ হও, তখন আল্লাহরই প্রতি ভরসা করো; নিশ্চয় আল্লাহ ভরসাকারীদের পছন্দ করেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫৯)

দোয়া পড়া: দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে মুক্তির জন্য কোরআনে বর্ণিত বিভিন্ন দোয়া ও দোয়া ইউনুস বেশি বেশি পাঠ করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি এমন একটি দোয়া সম্পর্কে অবগত আছি, কোনো বিপদগ্রস্ত লোক তা পাঠ করলে আল্লাহতায়ালা তার সেই বিপদ দূর করে দেন; সেটি হচ্ছে আমার ভাই ইউনুসের দোয়া। দোয়াটি হলো—বাংলা উচ্চারণ: ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জলিমিন।’ বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫০৫)

লেখক: আলেম, খতিব ও শিক্ষক

গুনাহ মাফের উপায়

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৬ এএম
গুনাহ মাফের উপায়
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত তাওবারত মুসল্লির ছবি

স্বভাবগতভাবে মানুষ গুনাহপ্রবণ। শয়তানের ধোঁকা, নফসের প্ররোচনা ও পরিবেশের কারণে নানা ধরনের গুনাহে মানুষ জড়িয়ে পড়ে। গুনাহ থেকে মুক্তি লাভের কিছু আমল রয়েছে। এখানে কয়েকটি আমলের বর্ণনা তুলে ধরা হলো–

তওবা করা: পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘এবং তিনিই নিজ বান্দাদের তওবা কবুল করেন ও গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। আর তোমরা যা কিছু করো, তা তিনি জানেন।’ (সুরা শুরা, আয়াত: ২৫)  

ক্ষমা প্রার্থনা করা: আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তাদেরকে বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল।’ (সুরা নুহ, আয়াত: ১০)

বিপদাপদ: নানা সময় মানুষের জীবনে  নেমে আসা বিপদাপদে গুনাহ মাফ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে সকল যাতনা, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা ও কষ্ট আপতিত হয়, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে বিদ্ধ হয়, এসবের দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৬৪১) 

পশুপাখির ওপর দয়া করা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এক ব্যভিচারিণীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। সে একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সে দেখতে পেল কুকুরটি একটি কূপের পাশে বসে হাঁপাচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, পানির পিপাসা তাকে মুমূর্ষু করে দিয়েছিল। তখন সেই নারী তার মোজা খুলে ওড়নার সঙ্গে বাঁধল। অতঃপর সে কূপ থেকে পানি তুলল (এবং কুকুরটিকে পানি পান করাল) এ কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৩২১) 

দান করা: মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, তোমাকে কি কল্যাণগুলোর কথা বলব না? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, রোজা মানুষের জন্য ঢালস্বরূপ। আর সদকা গুনাহ এমনভাবে মুছে দেয়, যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়।’ (তারগিব-তারহিব, হাদিস: ৯৮৩)

জিকির করা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া-বিহামদিহি’ দৈনিক একশ বার পাঠ করবে, তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে, যদিও তা সাগরের ফেনা পরিমাণ হয়।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৪৫০)

মানুষের সঙ্গে সদাচরণ: আবু জার (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, ‘তুমি যেখানে থাকবে আল্লাহকে ভয় করবে, কোনো কারণে মন্দ কাজ হয়ে গেলে পরক্ষণে ভালো কাজ করবে, ভালো কাজ মন্দ কাজ মিটিয়ে দেয়। আর মানুষের সঙ্গে সদাচরণ করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২০২৭)

রোজা রাখা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশা রেখে রমজানের রোজা রাখে, তার আগের পাপ ক্ষমা হয়ে যায়।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৮১৭)

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তাহাজ্জুদের প্রতি যত্নবান হও। কেননা তা তোমাদের আগের ভালো পূর্বপুরুষদের অভ্যাস এবং রবের নৈকট্য লাভের বিশেষ মাধ্যম। আর তা পাপমোচনকারী এবং গুনাহ থেকে বাধা প্রদানকারী।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৪৯)

দোয়া করানো: সাহাবিরা অন্যের কাছে দোয়া চাইতেন, দোয়া করাতেন। আবু হুরায়রা (রা.) ছোট ছোট বাচ্চাদের বলতেন, ‘এই বাচ্চারা, তোমরা দোয়া করো, আল্লাহ যেন আবু হুরায়রাকে মাফ করে দেন। তারা যখন দোয়া করতেন, আবু হুরায়রা আমিন, আমিন, বলতেন।’ (জামেউল উলুম, ১/৩৯৭)

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলুম মাদরাসা, মধুপুর