পৃথিবীর প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী আদম (আ.)। তিনি মাটির তৈরি। সৃষ্টির পর জান্নাতে বসবাস করতেন তিনি। একাকী উদাস হয়ে থাকতেন। তার কোনো সঙ্গী বা স্ত্রী ছিল না; যার কাছে তিনি ভালোবাসা পেতে পারেন। প্রশান্তি লাভ করতে পারেন। সঙ্গীর শূন্যতা বিরাজ করত তার জীবনজুড়ে। একবার তিনি ঘুমালেন। ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখলেন, তার মাথার কাছে একজন নারী বসে আছেন। আদম (আ.) তার পরিচয় জানতে চাইলেন। তিনি বললেন, ‘আমি নারী’। আদম (আ.) জানতে চাইলেন, ‘তোমাকে কেন সৃষ্টি করা হয়েছে’। বললেন, ‘আপনার প্রশান্তির জন্য’।
ইসলাম, ইহুদি ও খিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস হলো—পৃথিবীর সব মানুষ আদম (আ.)-এর বংশধর। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তা থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেন, যিনি তাদের দুজন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন। (সুরা নিসা, আয়াত: ১)
এ আয়াতে হাওয়া (আ.)-কে সৃষ্টির বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। এখানে দুই ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে। ১. হাওয়াকে আদম (আ.)-এর পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। ২. আল্লাহতায়ালা পুরুষের সঙ্গে তারই স্বজাতীয় অপর এক নারী সৃষ্টি করেছেন; যে পুরুষের জীবনসঙ্গিনী হয়ে থাকে। (কাসাসুল কোরআন, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৪০)
তাফসিরবিদরা দ্বিতীয় ব্যাখ্যাকেই সমর্থন করছেন। এর সারমর্ম হলো—নারী জাতি পুরুষেরই স্বজাতীয় এবং একইভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে হাদিসে নারীকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। তাদের পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং হাড়ের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বাঁকা হাড় হলো এটা (আর তা থেকেই নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে)। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে তা ভেঙে যাবে আর যদি ছেড়ে দাও, তাহলে সব সময় তা বাঁকাই থাকবে। কাজেই নারীদের উত্তম উপদেশ দিতে থাকো।’ (বুখারি, হাদিস: ৫১৮৫; মুসলিম, হাদিস: ৩৭২০)
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইবনে ইসহাক বলেন, ‘হাওয়াকে আদম (আ.)-এর বাম পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।’
আল্লামা কুরতুবি বলেন, ‘নারীর সৃষ্টি পাঁজরের হাড় থেকে শুরু করা হয়েছে। তাদের অবস্থা পাঁজরের হাড়ের মতোই বাঁকা; বক্রতাকে সোজা করতে চাইলে ভেঙে যাবে। এ অবস্থায় তার কাছ থেকে কাজ নিতে হবে, বক্রতাকে সোজা করতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তার সঙ্গে নম্র ও কোমল ব্যবহার করা উচিত। অন্যথায় কঠোর ব্যবহারে পারস্পরিক সম্পর্কের মধুরতা ও নমনীয়তার পরিবর্তে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। (কাসাসুল কোরআন, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৪১)
আল্লাহতায়ালার আদেশে জান্নাতে তাদের (আদম ও হাওয়া) বসবাস শুরু হলো। তারা নিজেদের মতো করে সেখানে থাকতে লাগলেন। জান্নাতের নেয়ামত ভোগ করতে লাগলেন। সেসময় আল্লাহতায়ালা তাদের একটি বৃক্ষের ধারেকাছে যেতে নিষেধ করলেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি বললাম, হে আদম! তুমি তোমার সঙ্গিনীকে নিয়ে জান্নাতে বাস করো ও যেখানে ইচ্ছা যাও বা যা ইচ্ছা খাও কিন্তু ওই গাছের কাছে যেও না, গেলে তোমরা সীমা লঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ১৯)
কিন্তু শয়তানের ফাঁদে পড়ে গেলেন তারা। তারা খেয়ে ফেলেন নিষিদ্ধ সেই বৃক্ষের ফল। শাস্তি হিসেবে আল্লাহতায়ালা তাদের দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেন। শুরু হয় পৃথিবীতে মানুষের বসবাস।
লেখক : আলেম ও সাংবাদিক