বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। বর্তমানে মুসলিম নারীদের অনেককেই পড়াশোনা, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিভিন্ন সেবা ও উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে ঘরের বাইরে অবস্থান করতে হয়। তাছাড়া অনেক সময় দেখা যায়, কোনো ধর্মপ্রাণ নারী তার স্বামী, সন্তান, পিতা বা ভাইয়ের সঙ্গে কেনাকাটা করতে বা কোথাও বেড়াতে বের হন। এ অবস্থায় পুরুষরা নিকটবর্তী মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতে পারলেও নারীদের জন্য পৃথক কোনো নামাজের জায়গা না থাকায় প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তারা নামাজ আদায় করতে পারেন না। এজন্য তারা তীব্র মনোকষ্টে ভোগেন।
রাজধানী ঢাকাকে বলা হয় মসজিদের নগরী। এ শহরের মসজিদে মসজিদে নারীদের জন্য পৃথক নামাজের জায়গা থাকা জরুরি। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য ফরজ। যদিও নারীদের জন্য তাদের নিজ নিজ গৃহের অভ্যন্তরেই নামাজ আদায় করা উত্তম বলে রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেছেন, তবুও বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীরা কোনো প্রয়োজনে বাইরে বের হলে তার ফরজ নামাজ আদায়ের জন্য পৃথক নামাজের জায়গা ও ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
তাই আমরা আশা করব, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, অফিস-আদালত, শিল্পকারখানা, শপিং সেন্টার, বাসস্টেশন, রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট, যানবাহন-যাত্রাপথ, পর্যটন এলাকা, বিনোদনকেন্দ্র, হোটেল-মোটেলসহ সব জায়গায়ই পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যেন শরিয়তসম্মতভাবে নামাজ আদায় করতে পারেন; সে ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিশ্চিত করা এখন সময়ের অনিবার্য দাবি।
পরিশেষে বলব, বাংলাদেশের নারীরা সাধারণত তাদের বাসাবাড়িতেই নামাজ আদায় করে থাকেন। কিন্তু যখন তারা ঘরের বাইরে কোনো কাজে বের হন, তখন তো তাদের ফরজ নামাজ মাফ করে দেওয়া হয়নি। সেজন্য দেশের প্রতিটি জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে, মসজিদে এবং মার্কেটে নারীদের জন্য নামাজ পড়ার পৃথক ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। কেননা সুযোগের অভাবে কারও নামাজ কাজা হয়ে গেলে তার দায়-দায়িত্ব পুরো জাতির ওপরই পড়বে।
ঢাকার যেসব স্থানে নারীদের পৃথক নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে
বায়তুল মোকাররম মসজিদের নিচ তলা, সোবহানবাগ জামে মসজিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ, ধানমন্ডি ১২/এ লেকের সঙ্গেই অবস্থিত মসজিদ-উত-তাকওয়া, সায়েন্স ল্যাবের বায়তুল মামুর জামে মসজিদের দ্বিতীয় তলা, মিরপুর-১-এর ফেরদৌসী মসজিদ, ধানমন্ডি ৮-এর বায়তুল আমান জামে মসজিদ, উত্তরা ৪ নম্বর, ৬ নম্বর ও ৭ নম্বর সেক্টর মসজিদ, রমনা থানা জামে মসজিদ। এ ছাড়া মোহাম্মদপুর স্যার সৈয়দ রোডের আল আমিন মসজিদ, গুলশান-২-এর আজাদ মসজিদ, ঢাকা কলেজের পেছনে অবস্থিত নায়েম ভবন মসজিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাটাবন মসজিদ, ফার্মগেট এয়ারপোর্ট রোডের বায়তুশ শরফ মসজিদ, মহাখালী টি বি গেটের মসজিদ-ই-গাউসুল আজম।
যেসব এলাকার শপিং সেন্টারে নারীদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে- ঢাকা নিউমার্কেট মসজিদ, জিগাতলার সীমান্ত স্কয়ার, ইস্টার্ন মল্লিকার ছাদে, মিরপুর রোডের রাপা প্লাজার পঞ্চম তলা ও জয়িতা শোরুমে, গাউছিয়া মার্কেটের নিচ তলা, চাঁদনী চকের তৃতীয় তলা ও যমুনা ফিউচার পার্কের পঞ্চম তলায়।
এ ছাড়া আবদুল্লাহপুরের পলওয়েল কারনেশন সেন্টার, বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের চতুর্থ তলা, মৌচাক মার্কেটের চতুর্থ তলা, ধানমন্ডি ২৭-এর জেনেটিক প্লাজার প্রথম তলা, গুলশান-১-এর ডিসিসি সুপার মার্কেট, টুইন টাওয়ার শপিং সেন্টারের চতুর্থ তলা, পিংক সিটির বেইজমেন্টে এবং উত্তরার নর্থ টাওয়ার মার্কেটের অষ্টম তলায় নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। বেশকিছু হাসপাতালেও নারীদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন- স্কয়ার হসপিটাল, ইউনাইটেড হসপিটালের তৃতীয় তলা, অ্যাপোলো হসপিটালের পঞ্চম তলা, কল্যাণপুরের ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ, ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক হসপিটালের ১.৫ তলা এবং ধানমন্ডির ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বেইজমেন্টে।
লেখক : আলেম ও কলেজ শিক্ষক