ঢাকা ২৫ ভাদ্র ১৪৩১, সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সুখী হওয়ার মূলমন্ত্র অল্পে তুষ্টি

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:০৩ এএম
সুখী হওয়ার মূলমন্ত্র অল্পে তুষ্টি
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত প্রতীকী ছবি

মানুষের চাহিদার সীমা-পরিসীমা নেই। আশা-আকাঙ্ক্ষার শেষ নেই। মানুষ যত ইচ্ছা কামনা করতে পারে। প্রত্যাশার ঘোড়াকে  দ্রুতবেগে দৌড়াতে পারে। কিন্তু যারা আশা-আকাঙ্ক্ষা পাওয়ার কাতরতায় বুঁদ থাকে, অধিক পাওয়ার ইচ্ছায় সর্বদা ব্যস্ত থাকে, তারা প্রতি মুহূর্তে না পাওয়ার বেদনায় যন্ত্রণায় ভোগে। অভাব-অনটন তাদের লেগেই থাকে। বঞ্চনার বেদনা থেকে তারা সহজে রক্ষা পায় না। তাই জীবন চলার পথে আত্মিকভাবে বিত্তশালী অভাবমুক্ত হওয়ার জন্য অল্পে তুষ্টির বিকল্প নেই। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ধনের আধিক্য হলে ধনী হয় না, অন্তরের ধনীই প্রকৃত ধনী’ (বুখারি, হাদিস: ৬৪৪৬)

 

পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষই আছেন, যাদের অর্থবিত্ত আছে, কিন্তু সুখ নেই। আবার কারও বিত্তবৈভব তেমন না থাকলেও সুখ-শান্তির অভাব নেই। তবে কেউ যদি অন্যের ধনৈশ্বর্য বা সুখ-শান্তি দেখে মন খারাপ করে, না পাওয়ার বেদনায় ভোগে, তাহলে তার জীবনে সুখ আসবে না। তার দুর্ভোগ দুর্দশা বেড়ে যাবে। অন্যের সুখ-শান্তি ধন-সম্পত্তির প্রতি লোভ না করার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের কাউকে কারও ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন তোমরা তার লালসা করো না। পুরুষ যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ আর নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ। আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৩২)

 

নিজের চেয়ে অধিক সম্পদশালী ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টি দিলে নিজেকে অসহায় অভাবগ্রস্ত মনে হয়। এতে ব্যক্তির আফসোস পরিতাপ বেড়ে যায়। বঞ্চনার হাহাকার নিজের মধ্যে বৃদ্ধি পায়। পক্ষান্তরে কেউ যদি তার চেয়ে কম সম্পদের অধিকারী লোকের প্রতি তাকায়, তাহলে তার মধ্যে সুখী হওয়ার বোধ জাগ্রত হয়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পার্থিব ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে কম সম্পদশালী মানুষদের প্রতি দৃষ্টি দিও; তোমাদের চেয়ে ধনী লোকদের দিকে নয়। এতে করে তোমাদের কাছে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতসমূহ নগণ্য মনে হবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫১৩)

 

প্রচলিত বচন আছে, ‘অর্থই সব অনর্থের মূল অর্থ অনেক সময় অন্যায়, অনাচার পাপাচারের দিকে নিয়ে যায়। জাগতিক উন্নতি অগ্রগতির অতিশয় আসক্তি মানুষকে পরকাল ভুলিয়ে দেয়। জাগতিক লোভ-লালসা দুনিয়ার মোহ বর্জনকারীকে আল্লাহতায়ালা ভালোবাসেন। অনুরূপভাবে জাগতিক বিষয়াশয়ের প্রতি অনাসক্ত লোককে মানুষও ভালোবাসে। মানুষকে উপকারকারী ব্যক্তিও মানুষের ভালোবাসা পায়। সাহল ইবনে সাদ আস-সাইদি (রা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি নবী (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এমন একটি কাজের কথা বলে দিন, যা করলে আল্লাহ আমাকে ভালোবাসবেন এবং লোকেরাও আমাকে ভালোবাসবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি অবলম্বন করো। এতে আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন। আর মানুষের কাছে যা আছে, তুমি তার প্রতি অনাসক্ত হয়ে যাও, তাহলে তারাও তোমাকে ভালোবাসবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪১০২)

 

জীবন ধারণের জন্য সহায়-সম্পদ অর্থবিত্তের প্রয়োজন অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু সেই প্রয়োজনের পরিমাণ পরিধি কতটুকু? খুব বেশি নয়। হালাল রিজিকের ওপর নির্ভর করে যদি পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করা যায়, তাহলেই যথেষ্ট। কিন্তু বহু মানুষ দিনরাত দুনিয়ার পেছনে ছুটে চলে। অঢেল সম্পদের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও বিরাম নেই। বিশ্রাম নেই। হালাল-হারামের ধার ধারে না।

 

নীতি-নৈতিকতার তোয়াক্কা করে না। এমন মানসিকতার লোককে সফল বলা যায় না। সফল ওই ব্যক্তি, যে নিজের সম্পত্তির ওপর সন্তুষ্ট থাকে। আবদুল্লাহ ইবনে উমর ইবনুল আস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির ইসলাম কবুল করার সৌভাগ্য হয়েছে, যাকে প্রয়োজন পরিমাণ রিজিক দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহতায়ালা তাকে যে সম্পদ দিয়েছেন এর ওপর তুষ্ট থাকার শক্তি দিয়েছেন, সেই সফলতা লাভ করেছে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩১৬)

 

পৃথিবীতে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষই পথচারীর মতো। বুদ্ধিমান পথচারী শুধু ততটুকুই বহন করে, পথ চলার জন্য যতটুকু প্রয়োজন। মানুষের জীবন যেহেতু অনিশ্চিত ভ্রমণের মতো তাই হাদিসে লোকদের পথিকের মতো জীবনযাপন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার আমার দুই কাঁধ ধরে বললেন, তুমি দুনিয়ায় থাকো যেন তুমি একজন প্রবাসী অথবা পথচারী।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪১৬)

 

লেখক: শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, চকবাজার

বানভাসিদের পাশে আল-মারকাজুল ইসলামী

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০৪ পিএম
বানভাসিদের পাশে আল-মারকাজুল ইসলামী
লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছেন আল-মারকাযুল ইসলামীর স্বেচ্ছাসেবীরা। ছবি: সংগৃহীত

ভারী বর্ষণ আর ভারত থেকে নামা ঢলে দেশের ১২ জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। দেশের এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে আল-মারকাজুল ইসলামী। বন্যার শুরু থেকে ত্রাণ বিতরণ, পানিবন্দিদের উদ্ধার ও আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো, মৃতদের উদ্ধার ও কাফন-দাফন এবং বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে সংস্থাটি। বন্যায় মৃত ৯ জনের মরদেহ উদ্ধারপূর্বক কাফন-দাফন করেছে তারা। 

জানা গেছে, ৪ হাজার পরিবারকে শুকনো খাবার, ৬ হাজার পরিবারের মাঝে ভারী ফুড আইটেম, ১৫ হাজার পরিবারকে ৫ লিটারের বিশুদ্ধ পানি দেওয়া হয়েছে। ময়লা পানি বিশুদ্ধকরণ ৭০ হাজার পিস ট্যাবলেট বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 

এদিকে সংস্থাটির নেতৃত্বে ফেনীর ৬টি উপজেলায় ৮ হাজার মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। জনপ্রতি বিনামূল্যে ১,২০০ টাকার ওষুধ দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালীতে মেডিকেল ক্যাম্প করে ফ্রিতে ১০ হাজার রোগী দেখার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। 

সংস্থাটির চেয়ারম্যান হামজা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মারকাজুল ইসলামী প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিপন্ন, অসহায় ও দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। ১৯৮৭ সালে আমার বাবা মুফতি শহীদুল ইসলাম বিন-নুরী টাউনে পড়াকালে বন্ধুদের নিয়ে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাও হয়েছে বন্যার্তদের সহায়তাকে কেন্দ্র করে। ৮৮ এর বন্যায় বিপুল পরিমাণ সহায়তা করেছে। ৯৮ এর বন্যায় ২০ হাজার মেট্রিক টন চাল দিয়েছে সংস্থাটি। ১২ কোটি টাকার নগদ অর্থও সহায়তা করা হয় সেসময়। কভিড-১৯ এ মৃতদের কাফন-দাফনের পাশাপাশি ব্যাপক কাজ করেছি আমরা। এবারের বন্যায় শুরু থেকে আমরা কাজ করেছি। প্রথমে উদ্ধার কাজ করেছি। শুকনো ও রান্না করা খাবার থেকে শুরু করে বিনা মূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ দিয়েছি।’ 

প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সাল থেকে মানবসেবায় নিবেদিত আল-মারকাজুল ইসলামী (এএমআই)। সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নড়াইল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুফতি শহীদুল ইসলাম। বিশেষত ১৯৮৮ ও ১৯৯৮-এর বন্যা ও কোভিড-১৯-এ সংস্থাটির কার্যক্রম ছিল চোখে পড়ার মতো। কোভিড-১৯-এ জীবন বাজি রেখে মৃতদের শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছে সংস্থার লোকজন। সংস্থাটির সরাসরি তত্ত্বাবধান ও অর্থায়নে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্যও তাদের মাদরাসা রয়েছে। সংস্থাটি তিনটি কাজ সামনে রেখে কাজ করছে- শিক্ষা, আত্মশুদ্ধি ও সেবা। 

এ ছাড়া সংস্থাটির অধীনে স্বল্প খরচে চিকিৎসার জন্য নিজস্ব হাসপাতাল, ফ্রি লাশ গোসল ও কাফনসেবা, ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, দুর্যোগে জরুরি ত্রাণ ও পুনর্বাসন, স্বাবলম্বীকরণ, বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য ডিপ টিউবওয়েল বা সাধারণ টিউবওয়েল স্থাপন ইত্যাদি কার্যক্রম রয়েছে। 

রায়হান/মিরাজ রহমান

সুরা ওয়াকিয়া পড়ার ফজিলত

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৮ এএম
আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৯ এএম
সুরা ওয়াকিয়া পড়ার ফজিলত
পবিত্র কোরআনের প্রচ্ছদ। ছবি: ইন্টারনেট

সুরা ওয়াকিয়া পবিত্র কোরআনের ৫৬তম সুরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এর আয়াত সংখ্যা ৯৬। রুকু আছে ৩টি। ওয়াকিয়া অর্থ নিশ্চিত ঘটনা। মুফাসসিররা বলেন, ওয়াকিয়া অর্থ কিয়ামতও বটে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সুরা ওয়াকিয়া তেলাওয়াত করবে তার ওপর অভাব আসবে না।’ (বায়হাকি, হাদিস: ২৪৯৭)

সুরা ওয়াকিয়া কখন পড়তে হয়
দিন-রাত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সকাল-সন্ধ্যা খুব গুরুত্বপূর্ণ দুটি সময়। মহান আল্লাহ এ দুই সময়ে জিকির করার নির্দেশ দিয়েছেন। মাগরিবের নামাজের পর সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করার অভিমত ব্যক্ত করেছেন ইসলামি স্কলাররা।

সুরা ওয়াকিয়া শেখা-শেখানো
সুরা ওয়াকিয়া পাঠের বিশেষ একটি শিক্ষা পাওয়া যায় আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর সঙ্গে আমিরুল মুমিনিনের বিশেষ কথোপকথন থেকে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) যখন অন্তিম শয্যায় শায়িত ছিলেন তখন ওসমান (রা.) তাকে দেখতে গিয়ে বলেন, আপনার অসুখটা কী? ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমার পাপ আমার অসুখ। ওসমান (রা.) বলেন, আপনার বাসনা কী? তিনি বলেন, আমার পালনকর্তার রহমত কামনা করি। তিনি বলেন, আমি সরকারি বায়তুল মাল থেকে কোনো উপঢৌকনের ব্যবস্থা করে দেব, যা আপনার এবং আপনার কন্যাদের উপকারে আসবে? ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, এর কোনো প্রয়োজন নেই। আমি আমার কন্যাদের সুরা ওয়াকিয়া শিক্ষা দিয়েছি। আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করে, অভাব তাকে কখনো স্পর্শ করবে না। (তাফসিরে জালালাইন, ৬/৩৫৩)

লেখক: আলেম ও অনুবাদক

বন্যার্তদের পাশে নানা আয়োজনে পিসব

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫২ পিএম
আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬ পিএম
বন্যার্তদের পাশে নানা আয়োজনে পিসব
মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে পিপলস ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশের (পিসব) স্বেচ্ছাসেবিরা। ছবি: সংগৃহীত

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অনেক জেলার অধিকাংশ অঞ্চল। বন্যার শুরুতে গভীর রাতে হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় মানুষেরা ঘর ছাড়েনি বা ছাড়ার সুযোগ পায়নি। দুই সপ্তাহ ধরে ঘরবন্দি হয়ে খাবার-পানিবিহীন এক অনিশ্চিত সময় পার করেন লাখো মানুষ। মানুষের যখন এমন বিপদ, তখন তো আর ঘরে বসে থাকা যায় না। শুরু থেকেই বিরামহীনভাবে বানভাসি মানুষের জন্য কাজ করছে মাওলানা মুহাম্মাদ ইমরান হাবিবীর পিপলস ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ (পিসব)।

পিসবের নেতৃত্বে শুরুতে দক্ষ সাঁতারুদের চারটি টিম আটকেপড়াদের উদ্ধার করেছে। ফেনী ও নোয়াখালী জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কয়েকটি টিমে ভাগ হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা, শিশুখাদ্য, রান্না করা খিচুড়ি, শুকনো খাবার, পানি ও মোমবাতিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী বন্যাদুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা।

জানা যায়, ১৫ হাজার বন্যার্ত মানুষকে খাদ্য সহায়তার আওতায় শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার, শিশুখাদ্য, প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দিয়েছে তারা। এ পর্যন্ত দেড় লাখ টাকার ওষুধ সংগ্রহ করেছে সংগঠনটি। প্রায় চার লাখ টাকার চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ বিতরণ করবেন বলে জানা গেছে।

বন্যাপরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও অসহায় মানুষের সহায়তায় বহুমুখী সেবামূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে পিসব। প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে ৩ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা, শিশুখাদ্য ও স্যানিটাইজের জন্য পরিবারপ্রতি ১৫০০ টাকা, পুনর্বাসন প্রকল্পে পরিবারপ্রতি ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা, জরুরি গৃহ-আসবাব প্রকল্পে ১৫০০ টাকা, টিউবওয়েলের জন্য ২৫ হাজার টাকা ও টয়লেট নির্মাণে পরিবারপ্রতি ১২ হাজার টাকা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মাদরাসাছাত্রদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ, ট্রাঙ্ক ও বিছানাপত্রের জন্য জনপ্রতি ২৫০০ টাকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। এর মধ্যে বহু মানুষকে সহায়তা দিয়েছেন।

সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মাদ ইমরান হাবিবী বলেন, ‘পিসব প্রতিষ্ঠার পর থেকে সেবামূলক কাজ করে আসছে। বন্যার শুরু থেকে নানামুখী সেবা নিয়ে আমরা মানুষের কাছে হাজির হয়েছি। বন্যাপরবর্তী অসহায়দের পুনর্বাসন এবং স্বাবলম্বী করার প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। মাদরাসাছাত্রদের আসবাব, শিক্ষা উপকরণ, মাদরাসা সংস্কার এবং অসহায়দের জন্য টিউবওয়েল স্থাপন ও টয়লেট নির্মাণ করব।’

উল্লেখ্য, মুসলিম সন্তানদের মৌলিক ধর্মীয় শিক্ষা ও নানামুখী সেবামূলক কাজের জন্য ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পিপলস ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ (পিসব)। প্রতিষ্ঠা করেন মাওলানা মুহাম্মাদ ইমরান হুসাইন হাবিবী। এ পর্যন্ত সংস্থাটি মুসলিম শিশুদের মৌলিক ধর্মীয় শিক্ষার জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মক্তব প্রতিষ্ঠা, অসহায়দের স্বাবলম্বী ও ঘর নির্মাণ করে দেওয়া, দেশে বিভিন্ন সময় বন্যা ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা, মসজিদ নির্মাণ ও আলেমদের সহায়তা দিয়ে আসছে। করোনাকালে প্রায় ১ লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা ও নগদ অর্থ দিয়েছেন তারা।

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

দুশ্চিন্তা মুক্তির আমল

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
দুশ্চিন্তা মুক্তির আমল
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত যুবকের ছবি

দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশন—মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। রোগবিহীন দেহ ও দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন কল্পনা করা অসম্ভব। নবি-রাসুলরাও বিপদে ও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তারা ধৈর্য ধরেছেন এবং আল্লাহর বলে দেওয়া পথে সমাধান খুঁজে পেয়েছেন। এমন কিছু আমল রয়েছে, যা মানলে দুশ্চিন্তা দূর হবে। 

আল্লাহই একমাত্র উদ্ধারকারী: আল্লাহর নির্দেশে মানুষের জীবনে বিপদাপদ আসে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর অনুমতি ছাড়া (মানবজীবনে) কোনো বিপদাপদ আসে না।’ (সুরা তাগাবুন, আয়াত: ২৬)। বিপদ থেকে উদ্ধারকারীও একমাত্র তিনি। আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসুল, আল্লাহ যদি আপনার ওপর কোনো বিপদ দেন, তা হলে তিনি ছাড়া তা দূর করার ক্ষমতা অন্য কারও নেই। (সুরা ইউনুস, আয়াত: ১০৭)। এ জন্য যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখা এবং তাঁকেই একমাত্র উদ্ধারকারী হিসেবে বিশ্বাস করা ঈমানি দায়িত্ব।  

ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করা: জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করা দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির অন্যতম উপায়। জীবনে বয়ে চলা কোনো ঘটনা আপাতদৃষ্টিতে অকল্যাণকর মনে হলেও এ বিশ্বাস রাখা যে, এতেই আমার কল্যাণ রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘এবং হতে পারে কোনো বিষয় তোমরা অপছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হতে পারে কোনো বিষয় তোমরা পছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহই (তোমাদের ভালো-মন্দ সম্পর্কে বেশি) অবগত আছেন এবং তোমরা অবগত নও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৬)

আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করা: দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশনে ভেঙে পড়া যাবে না; বরং আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখতে হবে। আল্লাহকেই একমাত্র অভিভাবক হিসেবে মানতে হবে। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি বান্দার সঙ্গে ঠিক তেমন আচরণ করি, যেমন বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৯০১)। আরেক আয়াতে আছে, ‘আর যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান।’ (সুরা তালাক, আয়াত: ৩)

জিকির করা: অস্থির ও হতাশাগ্রস্ত হৃদয়কে স্থির এবং শান্ত করার কার্যকরী পদ্ধতি হলো জিকির করা। জিকির মুমিন হৃদয়কে প্রশান্ত করে। পরিতৃপ্ত করে। আল্লাহ বলেন,  ‘আল্লাহর প্রতি অনুরাগী তারা, যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে তাদের অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। জেনে রেখ, আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমেই অন্তরের সত্যিকারের প্রশান্তি লাভ করা যায়।’ (সুরা রাদ, আয়াত: ২৮) 

তওবা করা এবং নিজেকে সৎকাজে ব্যস্ত রাখা: বেশি বেশি তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং নিজেকে ভালো কাজে ব্যস্ত রাখা একজন মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। এতে দুশ্চিন্তা দূর হয়। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তবে যারা তওবা করবে, ঈমান আনবে এবং সৎ কাজ করবে। আল্লাহতায়ালা এদের পাপগুলো পুণ্য দিয়ে পরিবর্তন করে দেবেন; আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৭০)

পরামর্শ করা: যে সমস্যার কারণে দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন হচ্ছে, তা নির্ণয় করে উক্ত বিষয়ে পারদর্শী দ্বীনদার অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং কাজ-কর্মে তুমি তাদের সঙ্গে পরামর্শ করো। এরপর যখন (কোনো ব্যাপারে) সংকল্পবদ্ধ হও, তখন আল্লাহরই প্রতি ভরসা করো; নিশ্চয় আল্লাহ ভরসাকারীদের পছন্দ করেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫৯)

দোয়া পড়া: দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে মুক্তির জন্য কোরআনে বর্ণিত বিভিন্ন দোয়া ও দোয়া ইউনুস বেশি বেশি পাঠ করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি এমন একটি দোয়া সম্পর্কে অবগত আছি, কোনো বিপদগ্রস্ত লোক তা পাঠ করলে আল্লাহতায়ালা তার সেই বিপদ দূর করে দেন; সেটি হচ্ছে আমার ভাই ইউনুসের দোয়া। দোয়াটি হলো—বাংলা উচ্চারণ: ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জলিমিন।’ বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫০৫)

লেখক: আলেম, খতিব ও শিক্ষক

গুনাহ মাফের উপায়

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৬ এএম
গুনাহ মাফের উপায়
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত তাওবারত মুসল্লির ছবি

স্বভাবগতভাবে মানুষ গুনাহপ্রবণ। শয়তানের ধোঁকা, নফসের প্ররোচনা ও পরিবেশের কারণে নানা ধরনের গুনাহে মানুষ জড়িয়ে পড়ে। গুনাহ থেকে মুক্তি লাভের কিছু আমল রয়েছে। এখানে কয়েকটি আমলের বর্ণনা তুলে ধরা হলো–

তওবা করা: পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘এবং তিনিই নিজ বান্দাদের তওবা কবুল করেন ও গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। আর তোমরা যা কিছু করো, তা তিনি জানেন।’ (সুরা শুরা, আয়াত: ২৫)  

ক্ষমা প্রার্থনা করা: আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তাদেরকে বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল।’ (সুরা নুহ, আয়াত: ১০)

বিপদাপদ: নানা সময় মানুষের জীবনে  নেমে আসা বিপদাপদে গুনাহ মাফ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে সকল যাতনা, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা ও কষ্ট আপতিত হয়, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে বিদ্ধ হয়, এসবের দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৬৪১) 

পশুপাখির ওপর দয়া করা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এক ব্যভিচারিণীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। সে একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সে দেখতে পেল কুকুরটি একটি কূপের পাশে বসে হাঁপাচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, পানির পিপাসা তাকে মুমূর্ষু করে দিয়েছিল। তখন সেই নারী তার মোজা খুলে ওড়নার সঙ্গে বাঁধল। অতঃপর সে কূপ থেকে পানি তুলল (এবং কুকুরটিকে পানি পান করাল) এ কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৩২১) 

দান করা: মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, তোমাকে কি কল্যাণগুলোর কথা বলব না? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, রোজা মানুষের জন্য ঢালস্বরূপ। আর সদকা গুনাহ এমনভাবে মুছে দেয়, যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়।’ (তারগিব-তারহিব, হাদিস: ৯৮৩)

জিকির করা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া-বিহামদিহি’ দৈনিক একশ বার পাঠ করবে, তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে, যদিও তা সাগরের ফেনা পরিমাণ হয়।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৪৫০)

মানুষের সঙ্গে সদাচরণ: আবু জার (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, ‘তুমি যেখানে থাকবে আল্লাহকে ভয় করবে, কোনো কারণে মন্দ কাজ হয়ে গেলে পরক্ষণে ভালো কাজ করবে, ভালো কাজ মন্দ কাজ মিটিয়ে দেয়। আর মানুষের সঙ্গে সদাচরণ করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২০২৭)

রোজা রাখা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশা রেখে রমজানের রোজা রাখে, তার আগের পাপ ক্ষমা হয়ে যায়।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৮১৭)

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তাহাজ্জুদের প্রতি যত্নবান হও। কেননা তা তোমাদের আগের ভালো পূর্বপুরুষদের অভ্যাস এবং রবের নৈকট্য লাভের বিশেষ মাধ্যম। আর তা পাপমোচনকারী এবং গুনাহ থেকে বাধা প্রদানকারী।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৪৯)

দোয়া করানো: সাহাবিরা অন্যের কাছে দোয়া চাইতেন, দোয়া করাতেন। আবু হুরায়রা (রা.) ছোট ছোট বাচ্চাদের বলতেন, ‘এই বাচ্চারা, তোমরা দোয়া করো, আল্লাহ যেন আবু হুরায়রাকে মাফ করে দেন। তারা যখন দোয়া করতেন, আবু হুরায়রা আমিন, আমিন, বলতেন।’ (জামেউল উলুম, ১/৩৯৭)

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলুম মাদরাসা, মধুপুর