আল্লাহর বিস্ময়কর নিদর্শন জমজম কূপ। প্রায় চার হাজার বছর আগে এক শিশুর পায়ের আঘাতে এ কূপের সৃষ্টি হয়েছে। শিশুটি ছিলেন ইবরাহিম (আ.)-এর ছেলে ইসমাইল (আ.)। এটি সৃষ্টির পর থেকে আজও বহমান। যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর কোটি কোটি মুসলমান এ পানি পানে পরিতৃপ্ত হয়েছেন। আজও এ পানি ঘিরে মুসলমানদের আগ্রহের শেষ নেই। এর পানি কখনও শুকায়নি। গুণ, রং, স্বাদ বদলায়নি।
কূপের ইতিহাস
তখন ইবরাহিম (আ.)-এর নবুয়াতকাল। তিনি আল্লাহর নির্দেশে স্ত্রী হাজেরা (আ.) ও পুত্র ইসমাইলকে ধু ধু মরুভূমির এক উপত্যকায় নির্বাসনে দিয়ে এলেন। যেখানে কোনো মানুষ, খাদ্য, পানি ছিল না। ছিল না পশু-পাখি। ধু ধু সাহারায় মা-ছেলে একাকী। খাবার ও পানি যা ছিল, তা ফুরিয়ে গেল একসময়। এদিকে হাজেরার বুকে দুধ নেই, পিপাসার্ত শিশু ইসমাইল। ছেলের করুণ অবস্থা দেখে দিশেহারা মা। এক ফোঁটা পানির তীব্র আশায় মা হাজেরা এদিক-সেদিক ছুটতে লাগলেন। একবার সাফায়, আবার মারওয়ায়।
এভাবে সাতবার দৌড়ালেন। প্রতিবারই পাহাড়ের মরীচিকা পানির নহর মনে হয় তার কাছে। নিরুপায় মা চূড়ান্ত হতাশায় লক্ষ করলেন, পুত্রের পায়ের নিচ দিয়ে বয়ে চলছে পানির ফোয়ারা—আবে জমজম। পানির ফোয়ারার সঙ্গে মায়ের চোখে বয়ে চলে আনন্দাশ্রু। হাজেরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন। ছেলেকে কোলে নিয়ে পানি পান করালেন, নিজেও পান করলেন।
হাজেরা (আ.) জমজমের নালায় খেজুরের বীজ বুনে দিলেন। অল্প দিনেই খেজুর বৃক্ষ মাথা উচিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। দলবেঁধে পাখি এল। জুরহম গোত্র এল। স্থায়ী বসবাস শুরু করল। গড়ে উঠল মক্কা নগরী। বেড়ে উঠল মক্কা নগরী।
পৌত্তলিক যুগে জুরহম গোত্র মক্কা থেকে বিতাড়িত হওয়ার সময় কূপটি মাটি দ্বারা ভরাট করে দিয়ে যায়। এভাবেই সাড়ে চারশ বছর পেরিয়ে যায়। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে আব্দুল মুত্তালিব স্বপ্নযোগে জমজমের খোঁজ পান। ছেলে হারেসকে সঙ্গে নিয়ে কূপ খনন করেন। পুনরায় চালু হয় জমজমের ঝরনাধারা। (সীরাতে ইবনে হিশাম, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৪৫)
কূপের ফজিলত
ইবনে আব্বাস (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘জমজম ভূপৃষ্ঠের শ্রেষ্ঠ পানি। এতে রয়েছে খাদ্যের বৈশিষ্ট্য ও রোগ থেকে মুক্তি।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, ৫৭১২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এটা বরকতময় পানি। এতে রয়েছে খাদ্যের বৈশিষ্ট্য।’ (মুসলিম, ২৪৭৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জমজমের পানি যে যেই নিয়তে পান করবে, তার সেই নিয়ত পূরণ হবে।’ (মুসনাদে আহমদ, ১৪৮৪৯)
পানি পানের নিয়ম
১. কিবলামুখী হয়ে পান করা।
২. তিন শ্বাসে পান করা।
৩. প্রত্যেকবার ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া।
৪. প্রতি শ্বাসের পর ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা।
৫. ডান হাতে পান করা।
৬. পেট ভরে পরিতৃপ্ত হয়ে বেশি বেশি পান করা।
৭. পান করার সময় দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভের দোয়া করা—
বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিয়া, ওয়া রিজকান ওয়াসিয়া, ওয়া শিফয়াম মিন কুল্লি দায়িন।’
বাংলা অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কল্যাণকর জ্ঞান, প্রশস্ত রিজিক এবং যাবতীয় রোগ থেকে আরোগ্য কামনা করছি। (দারা কুতনি, ৪৬৬)
লেখক: ম্যানেজিং ডিরেক্টর, আজওয়াহ হজ এজেন্সি, আফতাবনগর