
কাবা শরিফ
কাবাঘর আল্লাহর ঘর। পৃথিবীর প্রথম ঘর। এ ঘরকে কেন্দ্র করে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। হজ-উমরার মূল আকর্ষণ এ ঘর। সর্বপ্রথম ফেরেশতা কর্তৃক এ ঘর নির্মাণ হয়ে আদম (আ.), ইবরাহিম (আ.) ও রাসুলুল্লাহ (সা.) এ ঘরের পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার কাজে অংশগ্রহণ করেন।
সাফা-মারওয়া পাহাড়
কাবাঘর থেকে পূর্ব দিকে দুটি উঁচু পাহাড় পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। পূর্বদিকে দাঁড়িয়ে কাবার দিকে তাকালে বামের পাহাড়টি সাফা পাহাড় আর ডানের পাহাড়টি মারওয়া পাহাড়।
মাকামে ইবরাহিম
কাবাঘর নির্মাণের সময় উঁচুতে দাঁড়িয়ে দেয়াল তৈরির প্রয়োজন দেখা দিলে ইসমাইল (আ.) একটি পাথর আনেন। এ পাথরে দাঁড়িয়ে ইবরাহিম (আ.) দেয়াল নির্মাণ করেন। এটি কাবাঘরের পাশে আছে।
আরাফা ময়দান
মক্কা থেকে ১৮ কি.মি. দক্ষিণ-পূর্বদিকে অবস্থিত আরাফার বিস্তীর্ণ ময়দান। এ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় হজের মূল কার্যক্রম। পৃথিবীতে আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-এর পুনর্মিলনের স্থান এটি।
হাতিমে কাবা
কাবাঘরের পাশে ধনুকের মতো জায়গাটি হাতিমে কাবা। এ জায়গাটুকু কাবাঘরের অংশ ছিল। কুরাইশরা অর্থ সংকটের কারণে এ জায়গাটুকু বাদ দিয়ে কাবাঘর পুনঃনির্মাণ করেছিল ।
হাজরে আসওয়াদ
কাবার কোণে লাগানো জান্নাতি পাথরের নাম ‘আল হাজরুল আসওয়াদ’। বাংলায় বলা হয় কালো পাথর। তাওয়াফের সময় এই পাথরকে স্পর্শ করা ও চুমো দেওয়ার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে হাদিসে।
মুজদালিফা
৯ জিলহজ রাতে মুজদালিফায় অবস্থান করা হাজিদের জন্য আবশ্যক। এখানেই তারা এক আজান ও দুই ইকামতে সেদিনের মাগরিব ও ইশার নামাজ আদায় করেন। এখান থেকেই কুড়িয়ে নেন প্রায় ৭০টি কঙ্কর।
জমজম কূপ
শিশু ইসমাইল (আ.)-এর পায়ের আঘাতে তৈরি হওয়া পানির ফল্গুধারা ধীরে ধীরে জমজম কূপে রূপান্তরিত হয়। এ কূপ কাবাঘরের পূর্ব-দক্ষিণে অবস্থিত।
মসজিদে নামিরা
আরাফা ময়দানের পশ্চিম সীমানায় অবস্থিত মসজিদে নামিরা। রাসুলুল্লাহ (সা.) হজ পালনের সময় এ মসজিদে নামাজের ইমামতি করেন।
মিনা প্রান্তর
মক্কা থেকে ৫-৬ কিলোমিটার দূরের খোলা ময়দান হলো মিনা প্রান্তর। এখানে অবস্থানের মাধ্যমে হজের কার্যক্রম শুরু হয়। এখানেই ইবরাহিম (আ.) তার প্রিয়পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানির উদ্দেশ্যে মাটিতে শোয়ায়ে দিয়েছিলেন।
জাবালে সাওর
কাবা শরিফ থেকে তিন মাইল দূরে অবস্থিত ঐতিহাসিক পাহাড় জাবালে সাওর। মক্কা থেকে মদিনা হিজরতের সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) এখানে তিন দিন, তিন রাত কাটিয়েছেন।
জাবালে রহমত
আরাফার ময়দানের উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত জাবালে রহমত। এখানে দাঁড়িয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) আরাফা দিবসের শেষ প্রহর থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত মোনাজাতে নিমগ্ন সময় কাটিয়েছেন।
মসজিদে খায়েফ
মসজিদে খায়েফ মিনায় অবস্থিত। এ মসজিদে ৭০ জন নবি নামাজ পড়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজের সফরে এখানে নামাজ আদায় করেন।
জাবালে নুর
এ পাহাড় কাবাঘরের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। এই পাহাড়ের চূড়ায় একটি গুহা রয়েছে। এই গুহাতেই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর কোরআন অবতীর্ণ হয়। এ গুহাকে বলা হয় গারে হেরা বা হেরা গুহা।
মসজিদে জিন
ইসলাম আবির্ভাবের প্রথম দিকে জিনদের একটি প্রতিনিধি দল এ জায়গায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ এবং কোরআনের তালিম গ্রহণ করেন।
জান্নাতুল মোয়াল্লা
জান্নাতুল মোয়াল্লা মক্কার ঐতিহাসিক ও প্রাচীন একটি কবরস্থান। এর অবস্থান মসজিদুল হারামের পূর্ব দিকে।
মক্কা জাদুঘর
মক্কার প্রাচীন চিত্র ও অবস্থান সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম মক্কা জাদুঘর। হারাম শরিফ থেকে অল্প দূরে আন্তর্জাতিক ইসলামি সংস্থা ‘রাবেতায়ে আলমে ইসলামি’র কেন্দ্রীয় অফিসের বিপরীতে এই জাদুঘরটি অবস্থিত।
জামারাত
মিনায় অবস্থিত জামারাত হিসেবে পরিচিত তিনটি পাথরের স্তম্ভ শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের জন্য নির্দিষ্ট, হজের সময় এখানে পাথর নিক্ষেপ করতে হয়।
মুলতাজাম
হাজরে আসওয়াদ ও কাবার দরজার মাঝখানের অংশটি মুলতাজাম। কেউ কেউ বলেন, খানায়ে কাবার পূর্বপাশের সম্পূর্ণ দেয়ালটিই মুলতাজাম। এটি দোয়া কবুলের গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
মক্কা লাইব্রেরি
সাফা-মারওয়া পাহাড়ের সাঈর স্থান থেকে পূর্ব দিকে গেলে হলুদ রঙের দোতলা বাড়িটিই মক্কা লাইব্রেরি। অনেকেই মনে করেন, এ বাড়ির ভিটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)।
মসজিদে আয়েশা বা তানিম
আয়েশা (রা.) এখান থেকে উমরার ইহরাম বেঁধে উমরা করেছিলেন। পরে সেখানে একটি বিশাল মসজিদ গড়ে ওঠে।
আবু কুবাইস পাহাড়
সাফা পাহাড়ের পূর্বপাশে অবস্থিত আবু কুবাইস পাহাড়। সুনানে তাবরানির এক বর্ণনা অনুসারে, জান্নাত থেকে হাজরে আসওয়াদ পাথর এনে ৪০ বছর আবু কুবাইস পাহাড়ের ওপর রাখা হয়েছিল।
পুণ্যভূমি তায়েফ
মক্কা নগরী থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে তায়েফ। ঐতিহাসিক যুগের সাক্ষী তায়েফের প্রাচীন দুর্গগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এমটিথার্টিন ইম্পোলাই লিমিটেড