মানুষ নফসের প্ররোচনা, শয়তানের ধোঁকা ও পরিবেশের কারণে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় অনেক নিকৃষ্ট কাজে জড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ১০টি কাজ এতটাই নিকৃষ্ট ও মন্দ, যেগুলোয় জড়ানোর পরিণাম খুবই ভয়াবহ।
শিরক করা : আল্লাহতায়ালা তাঁর সঙ্গে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে অংশীদার সাব্যস্ত করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহর অধিকারসংশ্লিষ্ট সব গুনাহ তিনি মাফ করবেন, কিন্তু শিরকের গুনাহ কখনো মাফ করবেন না। শিরক নিষিদ্ধ কাজ। আল্লাহ কোরআনে বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সঙ্গে শরিক তথা অংশীদার সাব্যস্ত করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্নপর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে লোক অংশীদার সাব্যস্ত করল আল্লাহর সাথে, সে যেন আল্লাহকে অপবাদ দিলো।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৪৮)
মাপে কম দেওয়া : ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেনদেনের ক্ষেত্রে ওজনে কম দেওয়া জঘন্যতম পাপ। এর ভয়াবহতার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘দুর্ভোগ ঠকবাজদের জন্য (যারা মাপে বা ওজনে কম দেয়), যারা লোকের কাছ থেকে মেপে নেওয়ার সময় পুরো মাত্রায় নেয়, আর যখন তাদের মেপে দেয় বা ওজন করে দেয় তখন কম দেয়।’ (সুরা মুতাফফিফিন, আয়াত: ১-৩)
জাকাত না দেওয়া : জাকাত আদায়ে যেমন বিত্তবানদের সম্পদ পবিত্র হয়, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রে অর্থনৈতিকভাবে নিপীড়িত, নিষ্পেষিত বিশাল এক জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য ও অসচ্ছলতা দূর হয়ে সচ্ছলতা আসে। বিপরীতে যারা জাকাতকে বর্জন করে তারা অত্যন্ত নিকৃষ্ট ও কঠিন শাস্তিযোগ্য কাজে নিপতিত। আল্লাহ বলেন, “যারা সোনা-রুপা পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদের যন্ত্রণাময় শাস্তির ‘সুসংবাদ’ দাও।” (সুরা তওবা, আয়াত: ৩৪)
মদপান : ইসলামে মদপান, মদ বিক্রি হারাম। আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! মদ, জুয়া আর মূর্তি ও ভাগ্য নির্ধারক তির ঘৃণিত শয়তানি কাজ, তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সাফল্যমণ্ডিত হতে পারো।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৯০)
সুদ খাওয়া : ইসলামে সুদ হারাম। সুদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি উভয় জগতে অত্যন্ত ভয়াবহ শাস্তির মধ্যে পড়বে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘যারা সুদ খায়, কেয়ামতের দিন তারা সেই ব্যক্তির মতো উঠবে, শয়তান যাকে স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দিয়েছে। এটা এজন্য হবে যে, তারা বলেছিল, ব্যবসাও তো সুদের মতো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৭৫-২৭৬)
ব্যভিচার : ইসলামে ব্যভিচার অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ ও হারাম। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর জেনা-ব্যভিচারের কাছেও যেও না, তা হচ্ছে অশ্লীল কাজ আর অতি জঘন্য পথ।’ (বনি ইসরাইল, আয়াত: ৩২)
অঙ্গীকার ভঙ্গ করা : একজন সত্যিকারের বুদ্ধিমান ও খাঁটি মুমিনের গুণ হলো, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার রক্ষা করা। আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা আল্লাহর সঙ্গে শক্ত ওয়াদা করার পর তা ভঙ্গ করে, আল্লাহ যা বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে, আর জমিনে অশান্তি সৃষ্টি করে, তাদের প্রতি অভিশাপ, তাদের জন্য আছে অতি মন্দ আবাসস্থল।’ (সুরা রাদ, আয়াত: ২৫)
সম্পদ আত্মসাৎ : এতিমের সম্পদ আত্মসাৎকারীদের ব্যাপারে কোরআন-হাদিসে কঠিন শাস্তির কথা এসেছে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা এতিমের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে, তারা নিজেদের পেটে শুধু আগুন ভরে। তারা অচিরেই এক জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১০)
মা-বাবার অবাধ্যতা : মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ ও উত্তম ব্যবহার করা মুমিনের গুণ। বাবা-মার অবাধ্য হওয়া এবং তাদের কষ্ট দেওয়া সম্পূর্ণ হারাম। ইসলামের দৃষ্টিতে নিকৃষ্ট কাজ। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, “তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না, বাবা-মার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো, বাবা-মার কোনো একজন কিংবা উভয়ে যদি তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হন, তবে তাদের ‘উফ’ পর্যন্ত বলো না এবং তাদের ধমক দিও না; বরং তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বলো।” (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৩)
মুনাফিকি করা : ইসলামের দৃষ্টিতে মুনাফিকি মারাত্মক রোগ। নিকৃষ্ট কাজ। যার ভেতরের অবস্থা প্রকাশ্যের বিপরীত, তাকে মুনাফিক বলে। বিশ্বাসগত দিক থেকে কুফরির নিকৃষ্টতম প্রকার হলো মুনাফিকি। যার মধ্যে নিফাক রয়েছে সে মুনাফিক। মুনাফিকদের পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্থানে অবস্থান করবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১৪৫)
লেখক : আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক