হাজিদের সেবায় অবদান রেখে সৌদি হজ সার্ভিস থেকে টানা ৫ বার সম্মাননা পেয়েছেন কাজী মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। সৌদি আরবে গড়ে তুলেছেন বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অনেক বাংলাদেশি কাজ করেন সেখানে। মানুষের দুঃখমোচনে ছুটে চলেন দিগ্বিদিক। প্রতিষ্ঠা করেছেন সেবা সংস্থাও। তার মাধ্যমে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের রেমিট্যান্স খাত।
কাজী মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের জন্ম সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার গোলগাঁও হলেও বেড়ে উঠেছেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর গ্রামে। বয়স ৪১ ছুঁইছুঁই। বাবা কাজী মাওলানা শাহেদ আলী ছিলেন মিরেরচর মাদরাসার প্রিন্সিপাল। শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ক্যাটাগরিতে জাতীয় পদকও পেয়েছেন তিনি। মা মাজহুরা বেগম গৃহিণী। কাজী শফিকের শ্বশুর মরহুম হাফিজ দুস্ত মোহাম্মদ শেখ ছিলেন মক্কার মসজিদুল হারামের তাহফিজুল কুরআনের উস্তাদ।
শিক্ষা: কাজী মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের পড়াশোনার শুরু গ্রামের মসজিদের মকতবে। কামিল করেছেন ঢাকা নেছারিয়া কামিল মাদরাসা থেকে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ভাষা নিয়ে বিশেষ কোর্স সম্পন্ন করেছেন জার্মানির একটি ইনস্টিটিউট থেকে। কাজী শফিকুল ইসলাম যখন লেখালেখি শুরু করেন, তখন তিনি মাদরাসার ছাত্র। ছড়া দিয়ে লেখালেখির যাত্রা শুরু। পরে জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত কলাম লেখেন। কাজ করেছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
হাজারও মানুষের কাজের জায়গা: সাংবাদিকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন শফিকুল ইসলাম। টুকটাক ব্যবসাও করতেন সে সময়। ২০০৭ সালে প্রথম বিদেশের মাটিতে পা রাখেন তিনি। দেশ থেকে সৌদি আরবে হজযাত্রীদের পাঠানোর কাজ শুরু করেন। এর মাধ্যমে জীবিকায় প্রশস্ততা আসে। এক সময় সৌদি আরবে আতরের দোকান দেন। এর মাধ্যমে সৌদি আরবে আনুষ্ঠানিকভাবে তার ব্যাবসায়িক কার্যক্রম শুরু হয়। পরে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সেখানে গড়ে তুলেছেন বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ‘ফিরদাউস মোকাওয়াত’ নামে রয়েছে কনস্ট্রাকটিং কোম্পানি, সফটওয়্যার কোম্পানির নাম ‘হিকমা সফট’। এছাড়া ট্যুর কোম্পানি, হোটেল বুকিং, ট্রান্সপোর্ট, ক্যাটারিংসহ বেশকিছু ব্যবসায়িক প্রজেক্ট চলমান রয়েছে। কাজী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার স্বপ্নের সবগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আলেমসহ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।’ তিনি আরও জানান, ‘মা-বাবার দোয়ার বরকতেই বর্তমান অবস্থানে এসেছেন তিনি।’
মানুষের জন্য মন পোড়ে: বাবা ছিলেন কাজী। বাবাকে কাজে সহযোগিতা করতে গিয়ে নিজেও বিয়ে পড়াতে শুরু করেন। গরিব পাত্র-পাত্রীদের প্রয়োজনে বিয়ের খরচ দিতেন। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো ব্রতী হয়ে ওঠে শফিকের। করোনাকালে প্রবাসী বাংলাদেশিদের চাল, ডাল, আটা ও তরকারি দিয়েছেন। রাত-দিন এক করে বহু দূর-দূরান্তে প্রবাসীদের সহযোগিতায় এগিয়ে গিয়েছেন। লন্ডনের সেবা সংস্থা জমজম ওয়েল ফেয়ার ও গ্লোবাল সাবিল মুসলিম উম্মাহর পরিচালক ছিলেন তিনি। বর্তমানে তার গড়ে তোলা সেবাপ্রতিষ্ঠান কাজী শফিক ফাউন্ডেশন আর্তমানবতা সেবা ও শিক্ষা নিয়ে কাজ করছে।
হাজিদের সেবায় পুরস্কার পেয়েছেন: হাজিদের সেবা করছে কাজী শফিক হজ গ্রুপ। মক্কা-মদিনায় মাঠপর্যায়ে হাজিদের সেবায় নিয়োজিত থাকেন তারা। সাউথ এশিয়ার সৌদি হজ সার্ভিস অফিস থেকে ২০১৩ সালের পর টানা পাঁচবার সেরা সার্ভিসের সনদ ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান।
স্বপ্ন তার উম্মাহর সেবা: সৌদি আরবে কয়েক হাজার বাংলাদেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চান তিনি। প্রবাসীদের জন্য করতে চান নিরাপদ আবাসস্থল। ভালো কাজের জন্য এর মধ্যে বেশকিছু পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। কাজী শফিক বললেন, ‘মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি আর মানুষের মুখে হাসি ফোটানো আমার স্বপ্ন। আল্লাহ ও তার রাসুলের মেহমানসহ উম্মার জন্য আমৃত্যু সেবামূলক কাজ করে যেতে চাই।’