কাতারে বাংলাদেশি প্রবাসীদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে পারদর্শী করে গড়ে তুলতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন মাওলানা মাহমুদুল হাসান চৌধুরী। কম্পিউটার শেখানোর পাশাপাশি অফিস ম্যানেজমেন্ট, কাজে দক্ষতা প্রমাণ ও কর্মী পরিচালনার কাজ শেখাচ্ছেন। কাতারে প্রতিষ্ঠা করেছেন নুজুম গ্রুপ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গড়ে তুলেছেন বিশ্বমানের ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ইনোভেটিভ থট।
শিক্ষার হাতেখড়ি
মাহমুদুল হাসান চৌধুরীর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘনশ্যামপুর গ্রামে। বাবা প্রভাষক আবদুল মান্নান চৌধুরী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স করেন। বাংলা বিভাগের লেকচারার হিসেবে কর্মজীবন কাটান। মাহমুদুলের পড়াশোনার হাতেখড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর পড়েছেন গ্রামের মাদরাসায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইউনুসিয়া থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) করেন। সে সময় কম্পিউটার মাল্টিমিডিয়াতে ডিপ্লোমাও সেরে ফেলেন। মাদরাসায় পড়ার সময় গ্রামের তরুণদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন আল-মদিনা পাঠাগার। সাহিত্য চর্চাও শুরু করেন। যুক্ত হন তিতাস সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদে। ‘রেঁনেসা’ নামে মাসিক পত্রিকাও বের করতেন এক সময়।
ব্যবসা শুরু করেছিলেন
ছাত্রজীবনে নানা রকম সামাজিক কাজ করতেন মাহমুদুল হাসান। কিন্তু অর্থাভাবে অনেক কাজ হতো না। সিদ্ধান্ত নিলেন ব্যবসা করবেন। ব্যবসার একটা অংশ খরচ করবেন সামাজিক কাজে। পাঁচ বন্ধু মিলে সুহৃদ গ্রুপ নামে ব্যবসা শুরু করেন। সুহৃদের ছিল নানা রকম ব্যবসা। জমি ছিল। ২০১৩ সালে শেয়ার বাজারের পতন ও ডেসটিনির ধসের ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে জায়গার ব্যবসার ব্যাপক দরপতন হয়। সুহৃদ ব্যাপক লসে পড়ে। ব্যবসায় লসে পড়ে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারলেন না মাহমুদুলরা।
যেভাবে কাতারে যাত্রা
২০১৩ সালের শেষের দিকে কাতার পাড়ি জমান। শুরুতে বেশ কষ্ট করলেন। সেখানে ক্লিনারের কাজ থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক্স, কারপেন্টার, রাজমিস্ত্রির কাজসহ নানা পেশায় কাজ করেন তিনি। পরে কোম্পানি পরিচালনা শেখার জন্য কাতারের একটি কোম্পানিতে প্রায় দুই বছর অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার ও মানদুব হিসেবে কাজ করেন। ‘এই কাজগুলো আমি অভিজ্ঞতার জন্য করেছি। সে সময় কষ্ট করেছি। তখন স্বপ্ন দেখতাম, কাতারে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সম্মানজনক কর্মসংস্থান তৈরির চেষ্টা করব।’ বললেন মাহমুদুল হাসান।
নতুন প্রজন্মের জন্য আইআইটি
দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে কাজ শুরু করেছেন মাহমুদুল। কাতারে থেকেই চার সহোদরকে সঙ্গে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে আইআইটি নামে স্কুল ও মাদরাসা শিক্ষা সিলেবাসের সমন্বয়ে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। মাহমুদুল বললেন, ‘আইআইটির শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্যবইয়ের শিক্ষাই অর্জন করবে না, তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষায়ও শিক্ষিত হবে।’
প্রায় হাজার মানুষের কর্মসংস্থান আছে নুজুমে
২০১৫ সালে আরওয়াদ ট্রেডিং অ্যান্ড কন্ট্রাক্টিং কোম্পানিতে অ্যাকাউন্স ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেন মাহমুদুল। আরওয়াদে থাকাকালে ২০১৭ সালের জুনে কাতার আওকাফের ইমাম হাফেজ মাওলানা তাজ উদ্দিন আহমাদকে সঙ্গে নিয়ে নুজুম ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট শুরু করেন। পরে নুজুমের পরিচালনা পরিষদে আরও পাঁচজনকে যুক্ত করেন। বর্তমানে মোট সাতজন পরিচালকের সমন্বয়ে নুজুমের বোর্ড অব ডিরেক্টর। মাহমুদুল গ্রুপটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর। কাতারের গ্র্যান্ড হামাদ স্ট্রিটে নুজুমের হেড অফিস।
কাতারে নুজুমের কয়েকটি শাখা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে নুজুম লিমিজুন, নুজুম তাকদির লিমুজুন, নুজুম কন্সট্রাকশন, নুজুম ট্রাভেলস, নুজুম আইটি অন্যতম। এই কোম্পানির মূলধন এখন কয়েক কোটি টাকা। এখানে কাজ করছেন ৬০০-এরও বেশি লোক। মাহমুদুল বললেন, ‘আমার কাছে সাফল্যের একটাই মন্ত্র—সঠিক পথে চেষ্টা করতে থাকা।’
লেখক : আলেম ও সাংবাদিক