
দুনিয়াতে আল্লাহকে ভয় করা আখেরাতে নিরাপত্তার মাধ্যম। এ ভয় উভয় জগতে সফলতার পথ। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যেমন ভয় করা উচিত। আর মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০২)। আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় করতে হবে। যে আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় করে, আল্লাহ তার সব বিষয় সমাধান করে দেন।
আল্লাহর ভয়ে নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকা; যে কাজ করার কারণে মানুষকে আল্লাহর শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়, তা থেকে নিজেকে রক্ষা করা হচ্ছে তাকওয়া বা আল্লাহভীতি। যাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় রয়েছে এবং যারা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকেন তাদের বলা হয় মুত্তাকি। যার অন্তরে যত বেশি আল্লাহর ভালোবাসা ও ভক্তি-শ্রদ্ধা আছে, আল্লাহর ব্যাপারে জ্ঞান আছে, সে আল্লাহকে তত বেশি ভয় করে। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী তারাই তাঁকে ভয় করে।’ (সুরা ফাতির, আয়াত: ২৮)
আল্লাহর ভয়ে কান্নার গুরুত্ব অত্যধিক। কান্না স্বতন্ত্র কোনো কাজ নয়; কান্না হলো হৃদয়ের অভিব্যক্তির স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ। নবি-রাসুলদের পর সাহাবিরা ছিলেন সেরা মানুষ। আল্লাহতায়ালার প্রতি তাদের ভালোবাসা, ভয় এবং ইসলামের জন্য তাদের অসাধারণ ত্যাগ আমাদেরকে বিস্মিত করে। আল্লাহর ভয়ে তারাও কেঁদেছেন। তাঁর ভয়ে দু-ফোঁটা চোখের পানি ফেলতে পারা গোটা পৃথিবীর প্রশান্তি, পরিতৃপ্তি ও মুগ্ধতার চেয়ে অনেক বেশি উত্তম। যার মূল্য হচ্ছে কিয়ামতের ভয়াবহ দিনে আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া লাভ এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি। এই চোখের পানি আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে আল্লাহর ভয়ে কাঁদে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। দুধ দোহন করার পর তা যেমন আর গাভীর ওলানে ফিরিয়ে নেওয়া অসম্ভব। আল্লাহর পথে যুদ্ধের ধুলাবালি এবং জাহান্নামের আগুন কখনো একত্রিত হবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৬৩৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘কিয়ামত দিবসে সাত শ্রেণির লোককে আল্লাহ তাঁর আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। তাদের অন্যতম হলো, যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে (জিকির করে), ফলে তার দু-চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হয়।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৬০)
আরেক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুই প্রকার চোখকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না—এক. যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কাঁদে। দুই. যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় পাহারাদারিতে নির্ঘুম রাত অতিবাহিত করে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৬৩৯)
অশ্রু হৃদয়ের প্রশান্তি। অশ্রুতে আছে মুক্তি; হোক তা অল্প। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর (আজাবের) ভয়ে যে মুমিন বান্দার দু-চোখ থেকে অশ্রু বের হয়, যদিও তা মাছির মাথা পরিমাণ হয়; এরপর তার চেহারায় কিছু গড়িয়ে পড়ে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪১৯৭)
ভয় ও কান্না একটি আরেকটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যখন কারও অন্তরে ভয় ঢোকে, তখন আপনা আপনিই কান্না আসে। অশ্রুই বলে দেয় তার অন্তরে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। আল্লাহর নেক বান্দাদের মধ্যে এটি বিদ্যমান থাকে। আল্লাহর ভয়ে কান্না ও ভীত থাকা প্রকৃত ঈমানদারের মহৎ গুণ ও বৈশিষ্ট্য।
লেখক: সম্পাদক, মাসিক সারস, পূর্ব রূপসা, খুলনা