ঢাকা ৫ বৈশাখ ১৪৩২, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫
English
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

অল্প আমলে বেশি সওয়াব

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ০৯:৫১ এএম
অল্প আমলে বেশি সওয়াব
মোনাজাতরত মুসল্লির ছবি

এমন অনেক আমল রয়েছে, যা সহজেই করে অনেক বেশি সওয়াব অর্জন করা যায়। আল্লাহর প্রিয় হ‌ওয়া যায়। এখানে তেমন কিছু আমল সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনার আলোকে আলোচনা তুলে ধরা হলো


বিশুদ্ধ নিয়তে অল্প দান: প্রতিটি আমলের জন্য নিয়ত শুদ্ধ রাখা আবশ্যক। আল্লাহ মানুষের নিয়ত দেখেন। বিশুদ্ধ নিয়তের প্রতিদান আল্লাহ বেশি দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ দান করে, (আর আল্লাহ হালাল ছাড়া গ্রহণ করেন না) আল্লাহ তা ডান হাতে গ্রহণ করেন। অতঃপর তা লালন-পালন করে বড় করতে থাকেন। যেমন তোমরা ঘোড়ার বাচ্চা লালন-পালন করো। একপর্যায়ে এই সামান্য দান পাহাড়সম হয়ে যায়।’ (বুখারি, হাদিস: ১৪১০)

ইফতার করানো: রোজাদারকে ইফতার করানো স‌ওয়াবের কাজ। ইফতার করাতে বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় না; শুধু খেজুর ও পানি দিয়েও করানো যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, তার জন্যও রোজা পালনকারীর সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে। কিন্তু এর ফলে রোজা পালনকারীর সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৭৪৬)

পানি পান করানো: তৃষ্ণার্ত মানুষকে পানি পান করানো ইবাদত। এই সহজ আমলটি করে এর অসামান্য ফজিলত অনায়াসেই অর্জন করা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কোনো মুসলিমকে এমন স্থানে পানি পান করাল, যেখানে তা সহজলভ্য। সে যেন একটি গোলামকে মুক্ত করল। যে কোনো মুসলিমকে এমন স্থানে পানি পান করাল, যেখানে তা দুষ্প্রাপ্য, সে যেন তাকে জীবন দান করল।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২৪৭৪)

সাধ্যমতো সাহায্য করা: মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। টাকা-পয়সা দিয়েই যে শুধু সাহায্য করা যায়, বিষয়টি এমন নয়। উপকার করার মানসিকতা পোষণ করলে কথা দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে, শ্রম দিয়েও করা যায়। এতে একদিকে মানবিকতা প্রকাশ পায়, অন্যদিকে আমলনামায় যুক্ত হয় অগণিত স‌ওয়াব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে আপন কোনো ভাইয়ের কাজের জন্য পায়ে হেঁটে যায়, তার এ কাজ দশ বছরের ইতেকাফ থেকে উত্তম। যে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য একদিনের ইতেকাফ‌ও করে, আল্লাহতায়ালা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দেয়াল করে দেন। প্রতি খন্দক আসমান ও জমিনের দূরত্ব থেকে বেশি।’ (আল-মুজামুল আওসাত, হাদিস: ৭৩২৬)

বিপদগ্রস্তকে সান্ত্বনা দেওয়া: বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানো কর্তব্য। বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়ানোতে রয়েছে অনেক স‌ওয়াব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কোনো বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দান করে, তার জন্য‌ও বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির মতো স‌ওয়াব রয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৬০২)

রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা: রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানোর মাধ্যমে অর্জিত হয় সদকার স‌ওয়াব, অর্জিত হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পথের কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া সদকা।’ (মুসলিম, হাদিস: ১০০৯)

অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে সকালবেলা কোনো অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে যায়, ৭০ হাজার ফেরেশতা বিকাল পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর বিকালে রোগী দেখতে গেলে সকাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর তার জন্য জান্নাতে একটি ফলের বাগান তৈরি করা হয়।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৯৬৯)

তাসবিহ পড়া: আল্লাহর নামের স্মরণে অনেক সওয়াব আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি পড়বে, তার জন্য জান্নাতে একটি গাছ হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৬৪)

হাসিমুখে কথা বলা: হাসিমুখে কথা বলা সদকা। অথচ এতে না শারীরিক কোনো কষ্ট হয়, না আর্থিক কোনো ক্ষতি হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি ভালো কাজ সদকা। গুরুত্বপূর্ণ একটি ভালো কাজ হলো অন্য ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৯৭০)

 

লেখক: শিক্ষার্থী, মারকাজুশ শাইখ আরশাদ আল-মাদানী

স্বপ্নে রক্ত দেখা কীসের আলামত?

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৩৬ পিএম
স্বপ্নে রক্ত দেখা কীসের আলামত?
প্রতীকী ছবি । সংগৃহীত

স্বপ্নে রক্ত দেখা সাধারণত মানুষের মনে ভয়, দুশ্চিন্তা বা অপরাধবোধের প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখা দেয়। বিশেষত বৃদ্ধ বা বৃদ্ধার স্বপ্নে রক্ত দেখা তাদের মনের গভীরে লুকানো দুশ্চিন্তার ইঙ্গিত বহন করে। তবে ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে এর রয়েছে আরও গভীর ব্যাখ্যা।

স্বপ্নে রক্ত দেখার অর্থ অনেক সময় হারাম সম্পদ উপার্জন বা বড় কোনো গোনাহের দিকে ইঙ্গিত করে। যদি কেউ দেখে যে সে রক্তে রঞ্জিত, তবে বুঝতে হবে সে হারাম পথে উপার্জনে জড়িয়ে পড়বে অথবা কোনো বড় গোনাহে লিপ্ত হবে।

কেউ যদি স্বপ্নে দেখে তার কাপড়ে রক্ত লেগেছে এবং কোথা থেকে লেগেছে তা সে জানে না, তবে এটি এমন একটি পরিস্থিতির প্রতীক- যেখানে কেউ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেবে, যেমনটি ঘটেছিল হযরত ইউসুফ (আ.)-এর ঘটনায়।

একটি বিশেষ স্বপ্ন হলো- যদি কেউ দেখে সে কোনো প্রাণীকে তার পেছন দিক থেকে জবাই করছে, তবে এটি একটি ভয়ানক ইঙ্গিত, যা সমকামিতার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা হলো: কেউ যদি স্বপ্নে দেখে সে কোনো শিশুকে জবাই করে তা আগুনে ভুনছে এবং সেই ভুনা অপূর্ণ থাকে- তবে এই স্বপ্নের তাৎপর্য বোঝায় যে শিশুটির পিতা-মাতার প্রতি কোনো ধরনের জুলুম হচ্ছে। তবে ভুনা যদি সম্পূর্ণ হয়, তা হলে বোঝাবে যে সেই জুলুম স্বপ্নদ্রষ্টার নিজের ওপরই আসবে।

শিশুকে জবাই করে ভুনা দেখতে পাওয়ার আরেকটি ব্যাখ্যা হলো, এটি শিশুর শৈশব থেকে প্রাপ্তবয়স্কতার দিকে অগ্রগতির ইঙ্গিত। যদি তার পরিবারের সদস্যরা সেই মাংস খেতে দেখায়, তবে বোঝা যায়, শিশুটি ভবিষ্যতে তার পরিবারকে কল্যাণ প্রদান করবে।

বাদশাহ যদি স্বপ্নে কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করে এবং তার লাশ স্বপ্নদ্রষ্টার ঘাড়ে মাথাবিহীন রেখে দেয়, তবে এর অর্থ বাদশাহ জনসাধারণের ওপর জুলুম করবে। কিন্তু যদি সেই লাশের সঙ্গে মাথাও থাকে, তা হলে বোঝা যাবে বাদশাহ মানুষের প্রয়োজন পূরণে সক্ষম হবেন।

একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা রয়েছে: এক মহিলা ইমাম ইবনে সীরীনের কাছে এসে বললেন, ‘আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমি আমার স্বামীকে স্বজাতির সঙ্গে হত্যা করেছি।’ ইমাম ইবনে সীরীন (রহ.) বললেন, ‘তুমি তোমার স্বামীকে গোনাহের কাজে উদ্বুদ্ধ করেছ।’ মহিলা বললেন, ‘আপনি সত্যই বলেছেন।’

বি.দ্র. এই স্বপ্নগুলোর ব্যাখ্যা আমাদের শেখায়, প্রতিটি স্বপ্নই কেবল নিছক কল্পনা নয়, বরং অন্তর্নিহিত বার্তা বা ইঙ্গিত বহন করতে পারে। তবে, এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (রহ.) এর ‘তাফসিরুল আহলাম' গ্রন্থের ওপর ভিত্তি করে সংকলিত।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

 

পরে যাওয়া খাবার তোলার বিষয়ে নবিজির উপদেশ

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
পরে যাওয়া খাবার তোলার বিষয়ে নবিজির উপদেশ
পরে যাওয়া খাবারের ছবি। সংগৃহীত

শয়তান ও মানুষের মধ্যে এক অবিরাম যুদ্ধ চলতে থাকে। শয়তান মানুষকে বিপথে চালিত করতে সর্বদা চেষ্টা করে এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের এই যুদ্ধে শয়তানের শক্তি সঞ্চয়ের উৎসগুলো সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। আমাদের উচিত শয়তানের শক্তি সঞ্চয়ের উপায়গুলো জানার পাশাপাশি, তাকে তার লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য না করা। এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো খাবারের সময় পড়ে যাওয়া খাদ্যাংশ পরিষ্কার করে তা খেয়ে নেওয়া।


আজকাল অনেকেই এ সুন্নাহকে কিছুটা অদ্ভুত মনে করেন, কিন্তু এটি বাস্তব সত্য। কেননা, যদি আমরা পড়ে যাওয়া খাবার পরিষ্কার করে না খাই, তাহলে শয়তান সে খাবার খেয়ে শক্তি সঞ্চয় করবে। জাবের (রা.)-এর বর্ণনায় এসেছে, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘শয়তান তোমাদের প্রতিটি কাজে উপস্থিত হয়। এমনকি যখন তোমরা খাবার খেতে বসো, তখনো সে সেখানে উপস্থিত থাকে। তাই যদি খাবারের লোকমা পড়ে যায়, সে যেন ময়লা দূর করে তা খেয়ে নেয়, শয়তান যেন তা খেয়ে শক্তি না অর্জন করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২০৩৩)


এ ছাড়া আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন খাবার খেতেন, তখন তাঁর তিনটি আঙুল চেটে খেতেন। তিনি বলতেন, তোমাদের কারও যদি খাবারের কোনো অংশ পড়ে যায়, সে যেন ময়লা দূর করে তা খেয়ে নেয়, শয়তানের জন্য রেখে না দেয়।’ (সুনানু আবি দাউদ, হাদিস: ৩৮৪৫) এই হাদিসগুলো থেকে আমরা দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে পারি- ১. শয়তানকে খাবার খাওয়ার সুযোগ না দেওয়া। ২. পড়ে যাওয়া খাবারে বরকত থাকতে পারে।


আমরা শয়তানকে দেখতে পাই না, কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ অনুসারে আমরা বিশ্বাস করি যে, শয়তান আমাদের প্রতিটি কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে, এমনকি খাবার খাওয়ার সময়ও। একইভাবে, আমরা খাবারের বরকতও দেখতে পাই না, তবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ অনুসারে আমরা বিশ্বাস করি যে, পড়ে যাওয়া খাদ্যেও বরকত আছে।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ পালন আমাদের ঈমানের একটি প্রমাণস্বরূপ। আমরা শয়তানকে তার সুযোগ থেকে বিরত রাখতে এবং বরকতের আশায় পড়ে যাওয়া খাদ্য খেয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক 

স্বপ্নে কাউকে হত্যা করতে দেখা কিসের বার্তা?

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৫ পিএম
স্বপ্নে কাউকে হত্যা করতে দেখা কিসের বার্তা?
প্রতীকী ছবি । সংগৃহীত

স্বপ্ন মানুষের মনের অবস্থা, চিন্তা এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নানা ইঙ্গিত প্রদান করে। তবে কিছু স্বপ্ন রহস্যময় ও ভীতিকর হয়, বিশেষ করে স্বপ্নে হত্যার দৃশ্য, যা অত্যন্ত জটিল এবং ভয়াবহ হতে পারে। ইসলামিক স্বপ্নতত্ত্ব অনুসারে, এ ধরনের স্বপ্নের ব্যাখ্যা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে করা হয়, যা ব্যক্তির আধ্যাত্মিক ও মানসিক অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত।

১. কাউকে হত্যা করা: যদি আপনি স্বপ্নে কাউকে হত্যা করতে দেখেন, এটি একটি বড় ধরনের কাজে লিপ্ত হওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে। কিছু মানুষ মনে করেন, এ ধরনের স্বপ্ন দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনাও নির্দেশ করতে পারে। অন্যদিকে, যদি আপনি নিজেকে হত্যা করতে দেখেন, তা হলে এটি হতে পারে যে, আপনি আত্মবিশ্বাসী হয়ে নিজের তওবা গ্রহণ করবেন এবং জীবনে কল্যাণ লাভ করবেন।

২. নিজেকে হত্যা করা: বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বপ্নে নিজেকে হত্যা করা মানে দীর্ঘ আয়ু লাভের লক্ষণ। এটি একটি ইতিবাচক সঙ্কেত হিসেবে ধরা হয়, যা জীবনের কষ্ট বা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করে।

৩. জবাই করা: যদি আপনি কাউকে জবাই করতে দেখেন, এর মানে হতে পারে যে, আপনি সেই ব্যক্তির চেয়ে উন্নত বা উত্তম হয়ে উঠবেন। তবে, যদি আপনি কাউকে জবাই করতে দেখেন এবং তিনি আপনার পরিচিত হন, তবে এটি ইঙ্গিত দেয় যে, আপনি তার প্রতি কোনো ভুল বা অন্যায় কাজ করবেন। এই স্বপ্নে উন্নতি আসার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে তা ওই ব্যক্তির কাছ থেকেই আসবে।

৪. পিতা-মাতা বা পিতাকে জবাই করা: স্বপ্নে যদি বাবা-মাকে জবাই করতে দেখেন, এটি ইঙ্গিত দেয় যে, আপনি তাদের প্রতি অবাধ্য বা সীমা লঙ্ঘনকারী হয়ে উঠতে পারেন। আবার যদি কোনো মহিলা বা প্রাণীকে জবাই করতে দেখেন, এটি সাধারণত আপনার যৌন জীবন বা সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত দেয়, যা ভুল পথে চলে যেতে পারে।

৫. শিশু বা অন্য কোনো প্রাণীকে জবাই করা: শিশুদের জবাই করা বা তাদের গোশত খাওয়া দেখতে পেলে, এটি ইঙ্গিত দেয় যে, আপনি আপনার জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছেন এবং আপনার কর্ম ও আচরণ থেকে আপনি পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে সম্মান এবং কল্যাণ লাভ করবেন।

৬. বাদশাহ বা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক: স্বপ্নে যদি বাদশাহ কাউকে জবাই করেন এবং তার মাথাবিহীন লাশ আপনার ঘাড়ে রাখেন, এটি একটি সতর্কবার্তা হতে পারে। এ ধরনের স্বপ্ন নির্দেশ করে যে, কর্তৃপক্ষ মানুষের প্রতি অন্যায় করতে পারে এবং তাদের চাহিদা পূরণে অক্ষম থাকবে।

এভাবেই হত্যার স্বপ্নের ব্যাখ্যা নানা দৃষ্টিকোণ থেকে ভিন্ন হতে পারে। তবে, এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত মুহাম্মাদ ইবনে সীরীনের 'তাফসিরুল আহলাম' গ্রন্থের ওপর ভিত্তি করে সংকলিত। স্বপ্নের সম্পূর্ণ অর্থ অনুধাবন করার জন্য ব্যক্তিগত প্রেক্ষাপট এবং অনুভূতির সঙ্গে মিলিয়ে দেখা জরুরি।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক 

 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করলে মেলবে যে প্রতিদান

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৭ পিএম
রাগ নিয়ন্ত্রণ করলে মেলবে যে প্রতিদান
ফোণে অন্যের সাথে রেগে কথা বলার দৃশ্য । ছবি সংগৃহীত

শয়তান সাধারণত ঝগড়া-বিবাদ ও দ্বন্দ্বের মাধ্যমে মানুষের রাগ উসকে দেয়। রাগের সময় মানুষকে নিয়ন্ত্রণে আনা তার পক্ষে সহজ। এর মাধ্যমে শয়তান মানুষকে তার কাঙ্ক্ষিত অকল্যাণের দিকে ঠেলে দেয়। সৃষ্টির সূচনাতেই আদম (আ.) এবং তার সন্তানদের এ সহজাত প্রবৃত্তি সম্পর্কে শয়তান খুব ভালোভাবে অবহিত ছিল।


আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা যখন জান্নাতে আদম (আ.)-এর আকৃতি গঠন করলেন, তখন আল্লাহ তার আকৃতিকে যত দিন ইচ্ছা ফেলে রাখলেন। এ সময় ইবলিস তার চতুর্দিকে ঘুরাফেরা করতে লাগল। দেখতে দেখতে সে অনুভব করল, এটি একটি শূন্য কাঠামো। তখন সে বুঝল যে, (আল্লাহ) এমন একটি সত্তা সৃষ্টি করেছেন, যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬১১)


এই বর্ণনার বিভিন্ন অর্থের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থ হলো—রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা কঠিন হলেও, রাসুলুল্লাহ (সা.) তার সুন্নাহর মাধ্যমে আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে রাগের মুহূর্তে নিজেকে সংযত রাখতে হয়, যাতে শয়তানের ফাঁদে পড়া থেকে বাঁচা যায়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রকৃত বীর সেই ব্যক্তি নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়; বরং প্রকৃত বাহাদুর সে, যে ক্রোধের সময় নিজেকে সংবরণ করতে সক্ষম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৬৩)


রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন, রাগ নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তির জন্য আল্লাহতায়ালা কত বড় পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, তোমরা ছুটে যাও তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা আসমান ও জমিনের মতো। এটি মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, যারা সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতার সময়ে (অর্থ) খরচ করে, যারা নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে এবং মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে। আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আল ইমরান, আয়াত: ১৩৩-১৩৪)


মুয়াজ ইবনে আনাস জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হলেও ক্রোধ সংবরণ করে, (এজন্য) কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সব সৃষ্টির সামনে ডেকে বলবেন, তুমি যে হুর চাও, পছন্দ করে নিয়ে যাও।’ (সুনানু আবি দাউদ, হাদিস: ৪৭৭৭)


এই সুন্নাহ আমাদের জন্য এক চমৎকার শিক্ষা। রাগ নিয়ন্ত্রণ করা কেবল আমাদের দুনিয়ার শান্তি ও সুখের জন্য নয়, বরং আখেরাতে আমাদের জন্য এক বিশাল পুরস্কার অপেক্ষা করছে। রাগ সংবরণ করার মাধ্যমে আমরা শয়তানের ফাঁদে না পড়তে পারি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হই। এটি আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের উন্নতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পথ।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

স্বপ্নে তরবারি ও তলোয়ার দেখা: কীসের পূর্বাভাস?

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
স্বপ্নে তরবারি ও তলোয়ার দেখা: কীসের পূর্বাভাস?
দুটি ধারলো তরবারির ছবি । সংগৃহীত

স্বপ্ন শুধু ঘুমের জগতের কল্পনা নয়— অনেক সময় এটি হয়ে ওঠে গভীর বার্তাবাহী। যেখানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা সংকেত ও ইঙ্গিত লুকিয়ে থাকে। স্বপ্নে তরবারি বা তলোয়ার দেখার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই অস্ত্রগুলোর প্রতীকী অর্থ রয়েছে যা আমাদের ভবিষ্যৎ, পারিবারিক সম্পর্ক, সন্তান কিংবা জীবনের বড় পরিবর্তন নিয়ে নানা বার্তা দেয়।

বীরত্ব ও নেতৃত্বের আগমন: স্বপ্নে তরবারি দেখার অন্যতম অর্থ হলো বীরত্ব বা শক্তি লাভ। তরবারি দেখলে এটি সাধারণত বীরপুরুষ হওয়ার লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। যদি স্বপ্নে আপনি তরবারি দিয়ে কাউকে আঘাত করেন বা হত্যার দৃশ্য দেখেন, এটি সাধারণত গোত্রের ঝগড়া বা পারিবারিক অশান্তি নির্দেশ করে। 

কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব:  গলায় তরবারি ঝোলাতে দেখলে, এটি রাজত্বের বড় দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বাভাস হতে পারে। তরবারি এখানে রাজকীয়তা ও কর্তৃত্বের প্রতীক হিসেবে উপস্থিত থাকে। তবে যদি তরবারিটি ভারী মনে হয় এবং আপনি সেটিকে টেনে নিয়ে চলেন, তা হলে এটি নির্দেশ করে যে, আপনি হয়তো অক্ষম হতে পারেন রাজত্ব বা নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করতে।

সন্তানবিষয়ক সংকেত: স্বপ্নে যদি গলায় চারটি তরবারি ঝোলানো দেখেন, তা হলে এটি চারটি সন্তানের জন্ম হতে পারে। এখানে তরবারির ধাতু অনুযায়ী সন্তানের বৈশিষ্ট্যও প্রতিফলিত হয়—লোহার তরবারি বীর সন্তানের, পিতল তরবারি ধনী সন্তানের, সীসার তরবারি নপুংসক সন্তানের এবং কাঠের তরবারি মোনাফিক সন্তানের আলামত। অন্যদিকে, মরিচাযুক্ত তরবারি দেখে কোষ থেকে বের করার স্বপ্ন, দুষ্টু সন্তান বা দুর্ঘটনার আগমনের সংকেত দিতে পারে।

স্বপ্নের প্রেক্ষাপট: স্বপ্নে তরবারি যদি কোষ থেকে বের করার চেষ্টা করেন, তা হলে এর মধ্যে কিছু বিপদের সঙ্কেত থাকতে পারে। যদি তরবারি ভেঙে যায়, তা হলে এটি মৃত্যু বা বড় ধরনের ক্ষতির পূর্বাভাস হতে পারে। কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন তরবারিটি যদি ভারী হয়, তবে এটি জড়তা বা সংকোচ বোঝাতে পারে এবং তরবারিতে ছিদ্র থাকলে, এর অর্থ হতে পারে যে সন্তান বোবা হবে।

পারিবারিক জীবন ও বিবাহ: যদি স্বপ্নে তরবারি দেখে আপনি আপনার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো পরিবর্তন দেখতে পান, তা সাধারণত সন্তানের আগমনের প্রতীক। গলায় দুটি বা তিনটি তরবারি ঝোলানো দেখলে, এটি তিন তালাকের পূর্বাভাস হতে পারে। তরবারিকে খাপের মধ্যে দেখতে পেলে, এটা স্ত্রী বা গর্ভাবস্থার প্রভাব বা সম্পর্কের অবনতি নির্দেশ করতে পারে।

সামাজিক প্রেক্ষাপট: স্বপ্নে তরবারি ও বেল্ট দেখলে, এটি প্রমাণ করে যে আপনি নিজের দায়িত্ব পালন করবেন এবং আমানত রক্ষা করবেন। তরবারি যদি পাশের দিকে রাখা থাকে, তা হলে এটি একটি কঠিন সাহসী ব্যক্তি হওয়ার ইঙ্গিত। তরবারিকে যদি বাতাসে দেখা যায়, তবে এটি মহামারি বা বিপদ সংকেত দিতে পারে।

এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত মুহাম্মাদ ইবনে সিরিনের 'তাফসিরুল আহলাম' গ্রন্থের ওপর ভিত্তি করে সংকলিত। স্বপ্নের সম্পূর্ণ অর্থ অনুধাবন করার জন্য ব্যক্তিগত প্রেক্ষাপট এবং অনুভূতির সাথে মিলিয়ে দেখা জরুরি।

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক