
এমন অনেক আমল রয়েছে, যা সহজেই করে অনেক বেশি সওয়াব অর্জন করা যায়। আল্লাহর প্রিয় হওয়া যায়। এখানে তেমন কিছু আমল সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনার আলোকে আলোচনা তুলে ধরা হলো—
বিশুদ্ধ নিয়তে অল্প দান: প্রতিটি আমলের জন্য নিয়ত শুদ্ধ রাখা আবশ্যক। আল্লাহ মানুষের নিয়ত দেখেন। বিশুদ্ধ নিয়তের প্রতিদান আল্লাহ বেশি দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ দান করে, (আর আল্লাহ হালাল ছাড়া গ্রহণ করেন না) আল্লাহ তা ডান হাতে গ্রহণ করেন। অতঃপর তা লালন-পালন করে বড় করতে থাকেন। যেমন তোমরা ঘোড়ার বাচ্চা লালন-পালন করো। একপর্যায়ে এই সামান্য দান পাহাড়সম হয়ে যায়।’ (বুখারি, হাদিস: ১৪১০)
ইফতার করানো: রোজাদারকে ইফতার করানো সওয়াবের কাজ। ইফতার করাতে বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় না; শুধু খেজুর ও পানি দিয়েও করানো যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, তার জন্যও রোজা পালনকারীর সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে। কিন্তু এর ফলে রোজা পালনকারীর সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৭৪৬)
পানি পান করানো: তৃষ্ণার্ত মানুষকে পানি পান করানো ইবাদত। এই সহজ আমলটি করে এর অসামান্য ফজিলত অনায়াসেই অর্জন করা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কোনো মুসলিমকে এমন স্থানে পানি পান করাল, যেখানে তা সহজলভ্য। সে যেন একটি গোলামকে মুক্ত করল। যে কোনো মুসলিমকে এমন স্থানে পানি পান করাল, যেখানে তা দুষ্প্রাপ্য, সে যেন তাকে জীবন দান করল।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২৪৭৪)
সাধ্যমতো সাহায্য করা: মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। টাকা-পয়সা দিয়েই যে শুধু সাহায্য করা যায়, বিষয়টি এমন নয়। উপকার করার মানসিকতা পোষণ করলে কথা দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে, শ্রম দিয়েও করা যায়। এতে একদিকে মানবিকতা প্রকাশ পায়, অন্যদিকে আমলনামায় যুক্ত হয় অগণিত সওয়াব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে আপন কোনো ভাইয়ের কাজের জন্য পায়ে হেঁটে যায়, তার এ কাজ দশ বছরের ইতেকাফ থেকে উত্তম। যে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য একদিনের ইতেকাফও করে, আল্লাহতায়ালা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দেয়াল করে দেন। প্রতি খন্দক আসমান ও জমিনের দূরত্ব থেকে বেশি।’ (আল-মুজামুল আওসাত, হাদিস: ৭৩২৬)
বিপদগ্রস্তকে সান্ত্বনা দেওয়া: বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানো কর্তব্য। বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়ানোতে রয়েছে অনেক সওয়াব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কোনো বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দান করে, তার জন্যও বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির মতো সওয়াব রয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৬০২)
রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা: রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানোর মাধ্যমে অর্জিত হয় সদকার সওয়াব, অর্জিত হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পথের কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া সদকা।’ (মুসলিম, হাদিস: ১০০৯)
অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে সকালবেলা কোনো অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে যায়, ৭০ হাজার ফেরেশতা বিকাল পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর বিকালে রোগী দেখতে গেলে সকাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর তার জন্য জান্নাতে একটি ফলের বাগান তৈরি করা হয়।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৯৬৯)
তাসবিহ পড়া: আল্লাহর নামের স্মরণে অনেক সওয়াব আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি পড়বে, তার জন্য জান্নাতে একটি গাছ হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৬৪)
হাসিমুখে কথা বলা: হাসিমুখে কথা বলা সদকা। অথচ এতে না শারীরিক কোনো কষ্ট হয়, না আর্থিক কোনো ক্ষতি হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি ভালো কাজ সদকা। গুরুত্বপূর্ণ একটি ভালো কাজ হলো অন্য ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৯৭০)
লেখক: শিক্ষার্থী, মারকাজুশ শাইখ আরশাদ আল-মাদানী