
দুয়ারে কড়া নাড়ছে হিজরি নতুন বছরের আগমনী বার্তা। ক’দিন পরই আকাশে উঠবে মুহাররম মাসের আলো ঝলমলে বাঁকা চাঁদ। মুহাররমের প্রথম চাঁদের অভ্যর্থনায় আরবি নববর্ষের শুভসূচনা হবে পৃথিবীর ক্যালেন্ডারে। নববর্ষ মানুষকে আনন্দিত করে। আন্দোলিত করে। জীবনের খেরোখাতায় সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও স্বপ্ন যোগ করে। আবার হারিয়ে যাওয়া সময়ের জন্য বেদনা জাগে। পেছনের ভুলভ্রান্তি, গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করতে হবে। সামনের দিনে অন্তরে আল্লাহর ভয় (তাকওয়া) অর্জনের পাশাপাশি সব ধরনের পাপ থেকে বিরত থাকার প্রতিশ্রুতি নিতে হবে।
আরবি মাস বারোটি। মুসলিম জীবনে বারো মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামের বিধিবিধান চাঁদের সঙ্গে সম্পর্কিত। চান্দ্র তারিখের ওপর নির্ভরশীল মুসলিমদের আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর কাছে মাস গণনায় মাস বারোটি।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ৩৬)
পরিকল্পনা গ্রহণ করুন
সফলতার পূর্বশর্ত পরিকল্পনা করে কাজ করা। পরিকল্পনা কাজে ধারাবাহিকতা, গতি ও সফলতা আনে। বছরের শুরুতে পরিকল্পনা করুন সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটাবেন। সর্বোপরি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলাম প্রাধান্য দেওয়ার পরিকল্পনা আপনাকে সুন্দর ও অমলিন জীবন উপহার দেবে।
সময় ধারণ করতে হবে
সময়ই জীবন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্ধারিত আয়ু কমে। সময়কে কাজে লাগাতে হবে। সময়কে ধারণ না করলে গর্ভবতী হয় না কোনো প্রাণী। গাছ ও ফসলে আসে না ফুল ও ফল। ওমর ইবনুল আবদুল আজিজ (রহ.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই সময় তোমার ভেতর সক্রিয়। সুতরাং তুমি তাতে সক্রিয় থাকো।’ সময়ের হিসাব দিতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন মানুষ চারটি প্রশ্নের উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত সামনে যেতে পারবে না—১. সে তার জীবনকাল কোন কাজে ব্যয় করেছে ২. তার যৌবনকাল কোথায় ক্ষয় করেছে।…’ (তিরমিজি, ২৪১৬)
তওবা করা
মানুষের জীবনে ভুল হতেই পারে। গুনাহ হওয়াটাও স্বাভাবিক। এ জন্য আল্লাহর কাছে সব সময় তওবা করতে হবে। নতুন বছরের শুরুতে তওবা করে নিন। আল্লাহ তওবাকারীকে ভালোবাসেন। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২২)
গুনাহ ছেড়ে দেওয়া
আল্লাহকে পেতে হলে গুনাহ ছাড়তে হবে। গুনাহযুক্ত জীবনে ঈমানের স্বাদ পাওয়া যায় না। নতুন বছরের শুভক্ষণে গুনাহ ছেড়ে দেওয়ার মানসিকতা গড়ে তুলুন। রাসুলুল্লাহ (সা.) আয়েশা (রা.)-কে ছোট ছোট গুনাহ ছেড়ে দেওয়ারও আদেশ দেন। (মিশকাত, ৫৩৫৬)
নতুন বছরের দোয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবিরা নতুন বছরের আগমনে কিংবা নতুন মাসের শুরুতে এই দোয়া পড়তেন—
বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আদখিলহু আলাইনা বিল আমনি, ওয়াল ঈমানি, ওয়াস সালামাতি, ওয়াল ইসলামি, ওয়া রিজওয়ানিম মিনার রাহমানি, ওয়া জাওয়ারিম মিনাশ শায়তানি।’
বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের ঈমান ও ইসলামকে নিরাপদ করুন। আমাদের সুরক্ষা দিন। দয়াময় রহমানের কল্যাণ দান করুন। শয়তানের কুমন্ত্রণার মোকাবিলায় আমাদের সাহায্য করুন। (আল-মুজাম আল-আওসাত, ৬/২২১)
বিশেষ করে নতুন বছরের শুরুতে আল্লাহর সঙ্গে সুসম্পর্ক, ব্যক্তিগত অধ্যয়ন, রোজগার বৃদ্ধি, দান-সদকা, আদর্শ পরিবার গঠনের নানা কর্মসূচি, সেবামূলক কাজে যুক্ত হওয়া, ভ্রমণ, শরীরচর্চা, বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান, টেকনোলজি, বন্ধু তৈরি, মাতৃভূমির উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করুন।
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক