ঢাকা ১৬ বৈশাখ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

হিজরি নতুন বছর: স্বাগতম ১৪৪৬

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১০:০৭ এএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১০:০৯ এএম
হিজরি নতুন বছর: স্বাগতম ১৪৪৬
আরবিতে ‘১৪৪৬ হিজরি’ লেখা ছবি। সংগৃহীত

দুয়ারে কড়া নাড়ছে হিজরি নতুন বছরের আগমনী বার্তা। ক’দিন পরই আকাশে উঠবে মুহাররম মাসের আলো ঝলমলে বাঁকা চাঁদ। মুহাররমের প্রথম চাঁদের অভ্যর্থনায় আরবি নববর্ষের শুভসূচনা হবে পৃথিবীর ক্যালেন্ডারে। নববর্ষ মানুষকে আনন্দিত করে। আন্দোলিত করে। জীবনের খেরোখাতায় সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও স্বপ্ন যোগ করে। আবার হারিয়ে যাওয়া সময়ের জন্য বেদনা জাগে। পেছনের ভুলভ্রান্তি, গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করতে হবে। সামনের দিনে অন্তরে আল্লাহর ভয় (তাকওয়া) অর্জনের পাশাপাশি সব ধরনের পাপ থেকে বিরত থাকার প্রতিশ্রুতি নিতে হবে। 

আরবি মাস বারোটি। মুসলিম জীবনে বারো মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামের বিধিবিধান চাঁদের সঙ্গে সম্পর্কিত। চান্দ্র তারিখের ওপর নির্ভরশীল মুসলিমদের আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর কাছে মাস গণনায় মাস বারোটি।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ৩৬)

পরিকল্পনা গ্রহণ করুন
সফলতার পূর্বশর্ত পরিকল্পনা করে কাজ করা। পরিকল্পনা কাজে ধারাবাহিকতা, গতি ও সফলতা আনে। বছরের শুরুতে পরিকল্পনা করুন সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটাবেন। সর্বোপরি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলাম প্রাধান্য দেওয়ার পরিকল্পনা আপনাকে সুন্দর ও অমলিন জীবন উপহার দেবে। 

সময় ধারণ করতে হবে
সময়ই জীবন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্ধারিত আয়ু কমে। সময়কে কাজে লাগাতে হবে। সময়কে ধারণ না করলে গর্ভবতী হয় না কোনো প্রাণী। গাছ ও ফসলে আসে না ফুল ও ফল। ওমর ইবনুল আবদুল আজিজ (রহ.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই সময় তোমার ভেতর সক্রিয়। সুতরাং তুমি তাতে সক্রিয় থাকো।’ সময়ের হিসাব দিতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন মানুষ চারটি প্রশ্নের উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত সামনে যেতে পারবে না—১. সে তার জীবনকাল কোন কাজে ব্যয় করেছে ২. তার যৌবনকাল কোথায় ক্ষয় করেছে।…’ (তিরমিজি, ২৪১৬)

তওবা করা
মানুষের জীবনে ভুল হতেই পারে। গুনাহ হওয়াটাও স্বাভাবিক। এ জন্য আল্লাহর কাছে সব সময় তওবা করতে হবে। নতুন বছরের শুরুতে তওবা করে নিন। আল্লাহ তওবাকারীকে ভালোবাসেন। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২২) 

গুনাহ ছেড়ে দেওয়া
আল্লাহকে পেতে হলে গুনাহ ছাড়তে হবে। গুনাহযুক্ত জীবনে ঈমানের স্বাদ পাওয়া যায় না। নতুন বছরের শুভক্ষণে গুনাহ ছেড়ে দেওয়ার মানসিকতা গড়ে তুলুন। রাসুলুল্লাহ (সা.) আয়েশা (রা.)-কে ছোট ছোট গুনাহ ছেড়ে দেওয়ারও আদেশ দেন। (মিশকাত, ৫৩৫৬)

নতুন বছরের দোয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবিরা নতুন বছরের আগমনে কিংবা নতুন মাসের শুরুতে এই দোয়া পড়তেন—

বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আদখিলহু আলাইনা বিল আমনি, ওয়াল ঈমানি, ওয়াস সালামাতি, ওয়াল ইসলামি, ওয়া রিজওয়ানিম মিনার রাহমানি, ওয়া জাওয়ারিম মিনাশ শায়তানি।’ 

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের ঈমান ও ইসলামকে নিরাপদ করুন। আমাদের সুরক্ষা দিন। দয়াময় রহমানের কল্যাণ দান করুন। শয়তানের কুমন্ত্রণার মোকাবিলায় আমাদের সাহায্য করুন। (আল-মুজাম আল-আওসাত, ৬/২২১)

বিশেষ করে নতুন বছরের শুরুতে আল্লাহর সঙ্গে সুসম্পর্ক, ব্যক্তিগত অধ্যয়ন, রোজগার বৃদ্ধি, দান-সদকা, আদর্শ পরিবার গঠনের নানা কর্মসূচি, সেবামূলক কাজে যুক্ত হওয়া, ভ্রমণ, শরীরচর্চা, বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান, টেকনোলজি, বন্ধু তৈরি, মাতৃভূমির উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

মধু রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পরীক্ষিত ওষুধ

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
মধু রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পরীক্ষিত ওষুধ
মৌমাছি ও মধুর ছবি। সংগৃহীত

আমরা সবাই জানি, অসুস্থ হলে চিকিৎসা গ্রহণ করা আমাদের জন্য অপরিহার্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের শেখালেন, অসুস্থ হলে চিকিৎসা করা সুন্নাহ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি ব্যাধির প্রতিকার রয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭৩০) এ জন্য সঠিক সময়ে ও যথাযথ উপায়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে, আর আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা আরোগ্য লাভ করব।

চিকিৎসা সম্পর্কিত বিভিন্ন হাদিসের মধ্যে একটি খুবই উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো মধু পান। মধু একটি বিশেষ উপাদান, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী, বিশেষত পেটের ব্যথায়। একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ‘আমার ভাইয়ের পেটে অসুখ হয়েছে।’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, ‘তাকে মধু পান করাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৯৮৬)

এই ঘটনা বারবার ঘটেছিল। লোকটি প্রথমবার মধু পান করলেও তাঁর পেটের ব্যথা সেরে ওঠেনি। তখন আবারও রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে মধু পান করতে বলেছেন। দ্বিতীয়বারও যখন ফলপ্রসূ কিছু হয়নি, তখন তিনি তৃতীয়বারও একই নির্দেশ দেন। অবশেষে লোকটি আবার এসে জানালেন যে, মধু পান করার পর তাঁর পেট ভালো হয়ে গেছে। এই ঘটনাটি আমাদের শেখায় যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কিছু নির্দেশ দেন, তখন তার ওপর পূর্ণ আস্থা রাখা জরুরি।

এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, রাসুলুল্লাহ (সা.) শুধু শারীরিক চিকিৎসা সম্পর্কেই বলেননি, বরং তিনি মধুর প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখার গুরুত্বও তুলে ধরেছেন। একবার যদি মধু পান করা ফলপ্রসূ না হয়, তবে দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বারে চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহর ইচ্ছায় রোগের প্রতিকার হবে, তবে আমাদের বিশ্বাস থাকতে হবে।

কোরআনের সুরা নাহলে বলা হয়েছে, ‘তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রোগের প্রতিকার রয়েছে।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৬৯) এটি মধুর উপকারিতা এবং এর মাধ্যমে রোগের প্রতিকার পাওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই আয়াতের দ্বারা আমাদেরকে মধুর উপকারিতা বুঝিয়ে দিয়েছেন।

মধু পান কেবলমাত্র একটি সুন্নাহ নয়, বরং এটি আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের শারীরিক সুস্থতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি। তবে, এর অর্থ এই নয় যে আমরা ডাক্তারদের কাছে যেতে নিষেধ। বরং ডাক্তারদের পরামর্শ নেওয়া উচিত, সেই সঙ্গে মধু পান করা আমাদের জন্য একটি সুন্নাহ হিসেবে পালন করা উচিত, যাতে আমরা আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রেখে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় সুন্নাহ অনুসরণ করে বিরাট পুরস্কার অর্জন করতে পারি।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

 

পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো ইসলামের একটি মহৎ শিক্ষা

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো ইসলামের একটি মহৎ শিক্ষা
পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানোর ছবি । সংগৃহীত

সমাজে শান্তি, সুরক্ষা এবং সহযোগিতা স্থাপন করা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহর মধ্যে এমন অনেক কাজ রয়েছে, যা আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ ও সুন্দর করে তোলে। এক্ষেত্রে এমন অনেক কাজ রয়েছে যেগুলো দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না- এই অজুহাতে অনেকে এড়িয়ে যান। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের উৎসাহিত করেছেন আমাদের নিজেদের ছোট ছোট উদ্যোগ দিয়ে সমাজকে আরও সুন্দর, মানবিক ও সুষ্ঠু করে তুলতে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহর হলো পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো, যা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো একটি সদকা। (সহিহ বুখারি, ২৮২৭) অর্থাৎ, আমরা যখন রাস্তার ওপর পড়ে থাকা কাঁটা, পাথর বা অন্য কোনো ঝুঁকিপূর্ণ বস্তু সরিয়ে দিই, তখন আল্লাহর কাছে তা একটি সদকা হিসেবে গণ্য হয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের শুধু একে অপরকে সাহায্য করার জন্য উৎসাহিত করেননি, বরং সমাজে এমন কাজ করার গুরুত্বও তুলে ধরেছেন, যেগুলোতে কোনো ব্যক্তি বা নির্দিষ্ট উপকারিতার পরিচয় থাকে না। যেমন রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো। এ কাজটি করতে গিয়ে একজন ব্যক্তির কোনো প্রত্যাশা বা নিজের সুবিধার উদ্দেশ্য থাকতে পারে না, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মানুষের উপকারের উদ্দেশ্যেই এটি করা হয়।

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দেহের প্রতিটি জোড়ার বিনিময়ে মানুষের সদকা আদায় করা কর্তব্য, সূর্য ওঠে এমন প্রতিদিন দুই ব্যক্তির মাঝে সুবিচার করা একটি সদকা, কাউকে সাহায্য করতে তাকে বাহনে উঠিয়ে দেওয়া বা তার মালপত্র তাতে তুলে দেওয়া একটি সদকা, ভালো কথা একটি সদকা, নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে গমনের প্রতিটি কদম একটি করে সদকা এবং পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা একটি সদকা (সহিহ মুসলিম, ১০০৯)

এখানে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের বিভিন্ন সামাজিক কাজের প্রতি উৎসাহিত করেছেন, যার মাধ্যমে আমরা শুধু নিজেরাই উপকৃত হই না, বরং সমাজের অন্য সদস্যদের জন্যও উপকারী হতে পারি। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো একদম সহজ একটি কাজ। কিন্তু এর মাধ্যমে আমাদের সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর বিনিময়ে আল্লাহর কাছে অনেক পুরস্কার অর্জন করা যায়।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি উল্লেখযোগ্য হাদিসে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তি একদিন রাস্তায় একটি কাঁটাযুক্ত ডাল দেখে সেটি সরিয়ে রাখেন এবং আল্লাহতায়ালা তাঁর এই কাজের কারণে তাকে ক্ষমা করে দেন (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৯১৪) কেবল একটি কাঁটাযুক্ত ডাল সরিয়েই একজন ব্যক্তি আল্লাহর কাছে এত বড় পুরস্কার লাভ করেছেন! এটি আমাদের শেখায়, যে কাজটি সমাজে কোনো বড় পরিবর্তন আনতে পারে না বলে মনে হয়, সেটিও আল্লাহর কাছে গুরুত্বপূর্ণ এবং পুরস্কৃত হতে পারে।

পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো শুধু একটি সুন্নাহ নয়, এটি একটি মহান সামাজিক দায়িত্ব ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের একটি উপায়। তাই আসুন, আমরা সবাই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এই মহান সুন্নাহ অনুসরণ করি এবং সমাজে শান্তি, সহযোগিতা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করি।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

স্বপ্নে জেলখানা দেখার ব্যাখ্যা কী?

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
স্বপ্নে জেলখানা দেখার ব্যাখ্যা কী?
জেলখানার ছবি । সংগৃহীত

স্বপ্ন মানুষের মনে নানা রহস্যের জাল বিছিয়ে রাখে। এর মধ্যে অন্যতম একটি রহস্যময় প্রতীক হলো— জেলখানা। ইসলামি তাফসির অনুযায়ী, জেলখানা একাধারে দুঃখ, শাস্তি, প্রতিবন্ধকতা, এমনকি কবরেরও প্রতীক হতে পারে।
তাফসিরুল আহলামের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে— জেলখানা যেমন অপরাধীদের আবাসস্থল, তেমনি জাহান্নামও অবাধ্যদের জায়গা। তাই কেউ যদি স্বপ্নে নিজেকে জেলখানায় দেখে, তবে তাকে তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ব্যাখ্যা করতে হবে।

যদি স্বপ্নদ্রষ্টা অসুস্থ হন এবং জেলখানা অপরিচিত হয়, তবে সেটি হতে পারে তার কবরের ইঙ্গিত— যেখানে সে কেয়ামত পর্যন্ত আবদ্ধ থাকবে। তবে যদি জেলখানাটি পরিচিত হয়, তা হলে সেটি ইঙ্গিত দেয়— তার অসুস্থতা দীর্ঘায়িত হবে, কিন্তু ভালো হওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে। একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিসে বলা হয়েছে, ‘দুনিয়া হলো মুমিনের জন্য জেলখানা এবং কাফেরের জন্য জান্নাত।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৯৫৬)

এ অনুযায়ী, দুনিয়ার দুঃখ-কষ্টকেই অনেকে স্বপ্নে জেলখানার প্রতীক হিসেবে দেখতে পারেন। যদি স্বপ্নদ্রষ্টা কোনো গোনাহগার বা অপরাধী ব্যক্তি হন, তবে জেলখানা তার কবর বা জাহান্নামের ইঙ্গিত হতে পারে। তবে যদি সে তওবা করে বা সুস্থ হয়, তবে মুক্তির সম্ভাবনা থাকে।

স্বপ্নে জেলখানায় নিজেকে দেখা সুস্থ ব্যক্তির জন্যও সতর্কতা বয়ে আনতে পারে। যদি সে সফররত হয়, তবে তার ভ্রমণে বৃষ্টি, ঝড়, শত্রু বা কোনো বাধা আসতে পারে। আর যদি সে ভ্রমণরত না থাকে, তবে সে এমন কোনো জায়গায় প্রবেশ করতে পারে যেখানে আল্লাহর অবাধ্যতা হচ্ছে— যেমন গির্জা, মদের আসর বা অন্য কোনো পাপের স্থান।

তবে সব ব্যাখ্যাই নেতিবাচক নয়। কেউ যদি স্বপ্নে দেখে যে, সে নিজেই নিজের জন্য জেলখানা তৈরি করেছে বা তা নির্বাচন করেছে, তবে তাতে ভালো দিকও থাকতে পারে। এর মানে হতে পারে— তার স্ত্রী তাকে ভালোবাসে, তার মঙ্গল কামনা করে এবং আল্লাহ তাকে স্ত্রীর কোনো ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করবেন।

একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা রয়েছে— সাবুর ইবনে আরদাশির একবার স্বপ্নে দেখেন, তিনি জেলখানা নির্মাণ করছেন এবং সেখানে পারস্য থেকে বানর ও শূকর ধরে আনছেন। সঙ্গে ছিল ৩১টি মুকুট। পরবর্তী সময়ে একজন স্বপ্নবিশারদ এই স্বপ্নের গভীর ও প্রতীকী ব্যাখ্যা দেন।

স্বপ্নে জেলখানা দেখা সর্বদা খারাপ নয়, আবার একে হালকাভাবে নেওয়াও ঠিক নয়। এটি হতে পারে অন্তরের পাপের প্রতিচ্ছবি, দুনিয়ার সীমাবদ্ধতার চিত্র কিংবা আখিরাতের ভয়াবহ এক সংকেত। তবে আল্লাহর রহমত থেকে কখনো হতাশ হওয়া উচিত নয়। 

 

বি.দ্র. এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত ইমাম ইবনে সীরীন (রহ.)-এর মূল্যবান ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে সংকলিত।

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

রাগ সংবরণ করাকে আল্লাহ পছন্দ করেন

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
রাগ সংবরণ করাকে আল্লাহ পছন্দ করেন
রাগের কার্টুন। সংগৃহীত

রাগ মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি। পৃথিবীতে রাগ নেই এমন ব্যক্তির সংখ্যা খুবই কম। সাধারণত মানুষ যখন কোনো বস্তু বা ব্যক্তির ওপর বিরক্ত হয় তখন তার ভেতর থেকে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আর এই রাগ এক সময় মানুষকে বড় বড় পাপের দিকে টেনে নিয়ে যায়। নিচে রাগ সংবরণের কয়েকটি পদ্ধতির কথা তুলে ধরা হলো— 


দোয়া পড়া: যখনই অন্তরে রাগের আবির্ভাব হতে শুরু করবে তখনই আমাদের উচিত ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বনির রাজিম’ দোয়াটি পড়া। কেননা এ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া হয়। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, ‘আর যদি তোমার মনে শয়তানের পক্ষ থেকে কোনো কুমন্ত্রণা আসে, তবে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ২০০) 

চুপ থাকা: ক্রুদ্ধ অবস্থায় চুপ থাকা রাগ সংবরণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। বিশ্বনবি (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ রাগান্বিত হলে সে যেন নীরবতা অবলম্বন করে। (ইমাম বুখারি; আদাবুল মুফরাদ: ২৪) 

অজু করা: রাগ কমানোর জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে অজু করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘রাগ আসে শয়তান থেকে। শয়তানকে আগুন থেকে তৈরি করা হয়েছে। আগুনকে নেভাতে পারে কেবলই পানি। অতএব, তোমাদের কারও রাগ হলে সে যেন অজু করে নেয়। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৭৮৪) 

ক্ষমা করা: ক্ষমা আল্লাহতায়ালার এক মহৎ গুণ। আল্লাহর এই গুণ যে বা যার অন্তরে লালিত আছে, তাঁর অন্তরে ক্ষোভ প্রবেশ করতে পারে না। পবিত্র কোরআনে বলা আছে, তোমরা যদি কল্যাণ করো প্রকাশ্যভাবে কিংবা গোপনে অথবা যদি তোমরা অপরাধ ক্ষমা করে দাও, তবে জেনে রেখো আল্লাহ নিজেও ক্ষমাকারী, মহা-শক্তিমান। (সুরা নিসা: ১৩৪)   

 

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  

আল্লাহর কাছে চাওয়ার অন্যতম মাধ্যম সালাতুল হাজত

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
আল্লাহর কাছে চাওয়ার অন্যতম মাধ্যম সালাতুল হাজত
নামাজরত মুসল্লির ছবি। সংগৃহীত

বান্দার বিশেষ প্রয়োজনে অথবা শারীরিক-মানসিক, পারিবারিক-সামাজিকভাবে দুশ্চিন্তায় পতিত হলে আল্লাহতায়ালার কাছে চাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হলো সালাতুল হাজত। বিপদ থেকে রক্ষা পেতে সালাতুল হাজতের ভূমিকা অনন্য। সালাতুল হাজতের শাব্দিক অর্থ হলো প্রয়োজনের নামাজ। বৈধ কোনো প্রয়োজনের জন্য আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করাকে সালাতুল হাজত বলে। (ইবনে মাজাহ, ১৩৮৪-১৩৮৫)


সালাতুল হাজতের গুরুত্ব ও ফজিলত: রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে যেকোনো প্রয়োজনে সালাতুল হাজতের নামাজ পড়তেন এবং সাহাবিদের এ নামাজ পড়ার নির্দেশ দিতেন। কোরআন শরিফে আল্লাহতায়ালা এ নামাজের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, হে ঈমানদাররা, তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। (সুরা বাকারা: ১৫৩)


হাদিস শরিফেও সালাতুল হাজতের ব্যাপারে অনেক বর্ণনা এসেছে। হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যখন গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রয়োজন সামনে আসত, তিনি সঙ্গে সঙ্গে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। (আবু দাউদ: ১৩২১)


অন্যত্র রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তির আল্লাহর কাছে বা মানুষের কাছে কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়, সে যেন উত্তমরূপে অজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে এবং আল্লাহতায়ালার প্রশংসা ও নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পাঠ করে। (তিরমিজি: ৪৮১)


সালাতুল হাজত যখন পড়ব, যেভাবে পড়ব: সালাতুল হাজত পড়ার আলাদা কোনো নিয়ম নেই। অন্যান্য নামাজের মতোই। নিষিদ্ধ সময় (সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত, দ্বিপ্রহর) ও মাকরুহ সময় ব্যতীত অন্য যেকোনো সময় পড়া যাবে। উত্তমভাবে অজু করে হাজতের নিয়ত করে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে এবং নামাজ শেষে আল্লাহতায়ালার প্রশংসা ও নবি কারিম (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করে আল্লাহর কাছে নিজ ভাষায় বৈধ প্রয়োজনের জন্য দোয়া করবে। 


তবে হাদিসে এ দোয়াটির কথা বর্ণিত হয়েছে, উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম। সুবহানাল্লাহি রব্বিল আরশিল আজিম। আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন। আসআলুকা মুজিবাতি রহমাতিকা ওয়া আজা ইমা মাগফিরাতিকা অয়াল গনিমাতা মিন কুল্লি বিররিউ ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইছমিন লা তাদালানা- জাম্বান ইল্লা গাফারতাহু ওয়ালা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু ওয়ালা হাজাতান হিয়া লাকা রিযান ইল্লা কজাইতাহা ইয়া আর হামার রাহিমিন।


অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি ধৈর্যশীল ও মহামহিম। মহান আরশের মালিক আল্লাহতায়ালা খুবই পবিত্র। সব প্রশংসা সারা বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহতায়ালার জন্য। (হে আল্লাহ!) আমি তোমার কাছে তোমার রহমত লাভের উপায়গুলো, তোমার ক্ষমা লাভের কঠিন ওয়াদা, প্রত্যেক ভালো কাজের ঐশ্বর্য এবং সব খারাপ কাজ থেকে নিরাপত্তা চাইছি। হে মহা অনুগ্রহকারী! আমার প্রতিটি অপরাধ ক্ষমা কর। আমার প্রতিটি দুশ্চিন্তা দূর করে দাও এবং যে প্রয়োজন ও চাহিদা তোমার সন্তোষ লাভের কারণ হয় তা পরিপূর্ণ করে দাও। (তিরমিজি, ৪৭৯; ইবনে মাজাহ, ১৩৮৪)

 

লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক