
হিজরি সনের প্রথম মাস মুহাররম। কোরআনে যে চারটি মাসকে সম্মানিত বলা হয়েছে, এর মধ্যে মুহাররম অন্যতম। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারো, এর মধ্যে ৪টি মাস (মুহাররম, রজব, জিলকদ, জিলহজ) সম্মানিত।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ৩৬)
সম্মানিত মাসের কথা বলতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিনটি মাস হলো ধারাবাহিক—জিলকদ, জিলহজ ও মুহাররম, অন্যটি হলো রজব।’ (বুখারি, ৩১৯৭)। এ মাসগুলোকে সম্মান দেখানো ও মর্যাদা দেওয়া মুমিনের নৈতিক দায়িত্ব।
মুহাররম মাস অত্যন্ত ফজিলত ও গুরুত্বপূর্ণ। রমজানের পরই এ মাসের শ্রেষ্ঠত্বের কথা হাদিসে এসেছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের পর সবচেয়ে সম্মানিত মাস হলো মুহাররম। আর ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ নামাজ হলো রাতের নামাজ।’ (মুসলিম, ১১৬৩)। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ মাসকে আল্লাহর মাস বলে অভিহিত করেছেন। (নাসায়ি, ৪২১৬)
এ মাসে রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বিশেষত একটি আমলে বর্ণনা পাওয়া যায় আর সেটা হলো আশুরার দিন রোজা রাখা। এখানে মুহাররম মাসের কয়েকটি আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—
নফল রোজা রাখা
আল্লাহ প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করেছেন। এ ছাড়া অন্যান্য মাসের রোজা নফল করা হয়েছে। রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হলো মুহারমম মাসের রোজা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহাররমের রোজা।’ (মুসলিম, ২৬৪৫)
আলি (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে বসা অবস্থায় তাঁকে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল, রমজানের পর কোন মাসে আপনি আমাকে রোজা রাখার নির্দেশ দেবেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, যদি তুমি রমজানের পর রোজা রাখতে চাও, তাহলে মুহাররম মাসে রাখো। কারণ মুহাররম আল্লাহর মাস।’ (তিরমিজি, ৭৪১)
উম্মুল মুমিনিন হাফসা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) চারটি কাজ কখনো পরিত্যাগ করেননি। আশুরার রোজা, জিলহজের প্রথম দশকের রোজা, আইয়ামে বিদের (প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ) রোজা, ফজর ওয়াক্তে ফরজের আগে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ।’
তওবা-ইতসিগফার করা
এ মাসে ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। এ মাসে বিশেষ এক সময় আছে, যে সময়ের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। এক সাহাবির প্রশ্নে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘…মুহাররম আল্লাহর মাস। আর এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহতায়ালা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।’ (তিরমিজি, ৭৪১)
গুনাহ বর্জন করা
ইসলামে অন্যের ওপর জুলুম করা নিষেধ। বিশেষ করে সম্মানিত মাস মুহাররমে জুলুম করার তো প্রশ্নই আসে না। গুনাহ করা হলো সবচেয়ে বড় জুলুম। এটি ছেড়ে দিতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এই চার মাসের মধ্যে তোমরা (গুনাহ করে) নিজেদের প্রতি জুলুম করো না।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৩৬)। পাশাপাশি বিধর্মীদের অনুসরণ-অনুকরণ ত্যাগ করতে হবে। কোনো ধরনের অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত হওয়া যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, কিয়ামতের দিন সে ওই জাতির দলভুক্ত হবে। অর্থাৎ ওই দল জান্নাতবাসী হলে সে-ও জান্নাতবাসী হবে। আর ওই দল জাহান্নামবাসী হলে সে-ও জাহান্নামবাসী হবে।’ (আবু দাউদ, ৪০৩১)
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক