ঢাকা ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫
English

মুহাররম মাসের আমল

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ০৯:০০ এএম
মুহাররম মাসের আমল
আরবি ও ইংরেজিতে মুহাররামুল হারাম লেখা ছবি

হিজরি সনের প্রথম মাস মুহাররম। কোরআনে যে চারটি মাসকে সম্মানিত বলা হয়েছে, এর মধ্যে মুহাররম অন্যতম। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারো, এর মধ্যে ৪টি মাস (মুহাররম, রজব, জিলকদ, জিলহজ) সম্মানিত।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ৩৬)


সম্মানিত মাসের কথা বলতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিনটি মাস হলো ধারাবাহিক—জিলকদ, জিলহজ ও মুহাররম, অন্যটি হলো রজব।’ (বুখারি, ৩১৯৭)। এ মাসগুলোকে সম্মান দেখানো ও মর্যাদা দেওয়া মুমিনের নৈতিক দায়িত্ব।


মুহাররম মাস অত্যন্ত ফজিলত ও গুরুত্বপূর্ণ। রমজানের পরই এ মাসের শ্রেষ্ঠত্বের কথা হাদিসে এসেছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের পর সবচেয়ে সম্মানিত মাস হলো মুহাররম। আর ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ নামাজ হলো রাতের নামাজ।’ (মুসলিম, ১১৬৩)। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ মাসকে আল্লাহর মাস বলে অভিহিত করেছেন। (নাসায়ি, ৪২১৬)

এ মাসে রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বিশেষত একটি আমলে বর্ণনা পাওয়া যায় আর সেটা হলো আশুরার দিন রোজা রাখা। এখানে মুহাররম মাসের কয়েকটি আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—

নফল রোজা রাখা
আল্লাহ প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করেছেন। এ ছাড়া অন্যান্য মাসের রোজা নফল করা হয়েছে। রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হলো মুহারমম মাসের রোজা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহাররমের রোজা।’ (মুসলিম, ২৬৪৫)
আলি (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে বসা অবস্থায় তাঁকে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল, রমজানের পর কোন মাসে আপনি আমাকে রোজা রাখার নির্দেশ দেবেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, যদি তুমি রমজানের পর রোজা রাখতে চাও, তাহলে মুহাররম মাসে রাখো। কারণ মুহাররম আল্লাহর মাস।’ (তিরমিজি, ৭৪১)
উম্মুল মুমিনিন হাফসা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) চারটি কাজ কখনো পরিত্যাগ করেননি। আশুরার রোজা, জিলহজের প্রথম দশকের রোজা, আইয়ামে বিদের (প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ) রোজা, ফজর ওয়াক্তে ফরজের আগে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ।’

তওবা-ইতসিগফার করা
এ মাসে ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। এ মাসে বিশেষ এক সময় আছে, যে সময়ের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। এক সাহাবির প্রশ্নে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘…মুহাররম আল্লাহর মাস। আর এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহতায়ালা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।’ (তিরমিজি, ৭৪১)

গুনাহ বর্জন করা
ইসলামে অন্যের ওপর জুলুম করা নিষেধ। বিশেষ করে সম্মানিত মাস মুহাররমে জুলুম করার তো প্রশ্নই আসে না। গুনাহ করা হলো সবচেয়ে বড় জুলুম। এটি ছেড়ে দিতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এই চার মাসের মধ্যে তোমরা (গুনাহ করে) নিজেদের প্রতি জুলুম করো না।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৩৬)। পাশাপাশি বিধর্মীদের অনুসরণ-অনুকরণ ত্যাগ করতে হবে। কোনো ধরনের অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত হওয়া যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, কিয়ামতের দিন সে ওই জাতির দলভুক্ত হবে। অর্থাৎ ওই দল জান্নাতবাসী হলে সে-ও জান্নাতবাসী হবে। আর ওই দল জাহান্নামবাসী হলে সে-ও জাহান্নামবাসী হবে।’ (আবু দাউদ, ৪০৩১)

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

নিজের কোরবানি না দিয়ে বাবা-মায়ের নামে কোরবানি দেওয়ার বিধান কী?

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৫, ১২:০০ পিএম
আপডেট: ০৪ জুন ২০২৫, ১২:৫১ পিএম
নিজের কোরবানি না দিয়ে বাবা-মায়ের নামে কোরবানি দেওয়ার বিধান কী?
কোরবানির পশুর ছবি । সংগৃহীত

ইসলামি ফিকহ অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তির ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়, তবে তাকে অবশ্যই নিজের কোরবানি আদায় করতে হবে। অন্য কারো পক্ষ থেকে কোরবানি দিয়ে নিজের ওয়াজিব কোরবানি আদায় হয় না। ওয়াজিব কোরবানি আদায় না করে শুধুমাত্র বাবা-মায়ের নামে কোরবানি দেওয়া শরিয়তসম্মত নয়। আদ্দুররুল মুখতারের মতো নির্ভরযোগ্য ফিকহ গ্রন্থগুলোতেও এই বিষয়টি স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে (আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮)।

বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে কোরবানি কখন দিবে
নিজের ওয়াজিব কোরবানি আদায় করার পর, যদি আপনার আর্থিক সামর্থ্য থাকে, তবে আপনি ঐচ্ছিকভাবে আপনার বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে আলাদা কোরবানি দিতে পারবেন। এটি সওয়াবের কাজ এবং বাবা-মায়ের প্রতি আপনার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রকাশ। কিন্তু কোনোভাবেই নিজের ওয়াজিব কোরবানি বাদ দিয়ে এই ঐচ্ছিক কোরবানিকে অগ্রাধিকার দেওয়া যাবে না।

তাই, কোরবানির সময় প্রতিটি মুসলমানের উচিত, নিজের ওপর ওয়াজিব হয়েছে কিনা তা যাচাই করে সে অনুযায়ী প্রথমে নিজের কোরবানি নিশ্চিত করা। এরপর যদি অতিরিক্ত সামর্থ্য থাকে, তবেই বাবা-মায়ের নামে কোরবানি দেওয়ার কথা বিবেচনা করা উচিত। এতে শরিয়তের বিধানও পালিত হবে এবং সওয়াবও পূর্ণ হবে।

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

কখন আপনার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে?

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১০:০০ পিএম
আপডেট: ০৪ জুন ২০২৫, ১১:১২ এএম
কখন আপনার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে?
আলোচনায়রত দুই মুমিনের ছবি । সংগৃহীত

শুধু জিলহজের ১০ তারিখে কোরবানির নেসাব পরিমাণ সম্পদ না থাকলে কোরবানি ওয়াজিব হবে না বলে ধারণা করা হয়। ফলে জিলহজের ১১ বা ১২ তারিখে কারো কাছে হঠাৎ কোনভাবে নেসাব পরিমাণ সম্পদ আসলে সে আর কোরবানি করে না। যেমন, যে অবিবাহিত মেয়ের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয় কোরবানির পরদিন তথা যিলহজ্বের ১১ তারিখে তার বিয়ে হল, সেদিন স্বামী তাকে স্বর্ণ, টাকা-পয়সা ইত্যাদি দিলে, যা সাড়ে ৫২ তোলা রুপার সমপরিমাণ বা তার চেয়েও বেশি। তখন সে এই ভেবে কোরবানি করে না যে, কোরবানির দিন তো অতিবাহিত হয়ে গেছে। এধারণা ভুল। মাসআলা হলো, জিলহজের ১০ তারিখ সুবহে সাদিক থেকে ১২ তারিখ সূযার্স্ত পর্যন্ত মোট তিন দিন কোরবানি করা যায়। এ তিন দিনের মধ্যে যেকোন সময় কেউ নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তাকেই কোরবানি দিতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮; আলমগীরী ৫/২৯৫)

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

কাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব?

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ০৪ জুন ২০২৫, ১১:১১ এএম
কাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব?
দুই মুমিনের আলোচনার ছবি। সংগৃহীত

অনেকে মনে করেন, যাকাত ফরয হওয়ার জন্য যে ধরনের সম্পদ জরুরি যেমন, টাকা-পয়সা, সোনা-রুপা, ব্যবসায়িক সম্পদ, তেমনি কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্যও একই শর্ত। ফলে কোন কোন সচ্ছল পরিবারের লোকজনকেও কোরবানি দিতে দেখা যায় না। এটি ভুল ধারণা। সঠিক মাসআলা হল, যে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির নিকট কোরবানির দিনগুলোতে সাড়ে ৫২ তোলা রুপার মূল্য পরিমাণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত যেকোন ধরনের সম্পদ থাকবে তার ওপরই কোরবানি ওয়াজিব। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২)

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

কোরবানির পশু জবাইকারীকে কোন পারিশ্রমিক দিতে হবে কী?

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
কোরবানির পশু জবাইকারীকে কোন পারিশ্রমিক দিতে হবে কী?
কোরবানির পশু জবাইকারার প্রস্তুতির ছবি। সংগৃহীত

কোরবানি আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক মহান ইবাদত। এই ইবাদত পালনের ক্ষেত্রে শরিয়তের বিধি-বিধান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। কোরবানির পশু জবাই করার পর জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া প্রসঙ্গে অনেকেই দ্বিধায় ভোগেন। এ বিষয়ে ইসলামের বিধান অত্যন্ত পরিষ্কার।

ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী, কোরবানির পশু জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া জায়েজ। অর্থাৎ, আপনি আপনার কোরবানির পশু জবাই করার জন্য কাউকে নিযুক্ত করলে তাকে তার শ্রমের বিনিময়ে অর্থ বা অন্য কোনো হালাল বস্তু পারিশ্রমিক হিসেবে দিতে পারবেন। এতে কোনো সমস্যা নেই। এটি শ্রমের মূল্যায়নের অন্তর্ভুক্ত।

তবে, একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয়। কোরবানির পশুর কোনো অংশ, যেমন - গোশত, চামড়া, মাথা ইত্যাদি পারিশ্রমিক হিসেবে জবাইকারীকে দেওয়া যাবে না। এর কারণ হলো, কোরবানির পশু সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত। এর গোশত, চামড়া বা অন্য কোনো অংশ বিক্রি করা বা পারিশ্রমিক হিসেবে প্রদান করা জায়েজ নয়। যদি এমনটা করা হয়, তাহলে কোরবানির উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে। ফিকাহশাস্ত্রের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ 'কিফায়াতুল মুফতী' (৮/২৬৫) এবং 'খুলাসাতুল ফাতাওয়া' (৪/৩১৯) তে এই মাসআলাটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

অতএব, কোরবানির পশু জবাইকারীকে তার কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক দিতে চাইলে নগদ অর্থ প্রদান করা উচিত। কোরবানির পশুর কোনো অংশ পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। এই বিধান মেনে চললে আমাদের কোরবানি আল্লাহর দরবারে মাকবুল হবে ইনশাআল্লাহ।

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

কোরবানির নিজ অংশের গোশত বিক্রি কী জায়েজ?

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১২:০০ পিএম
আপডেট: ০৪ জুন ২০২৫, ১১:২৭ এএম
কোরবানির নিজ অংশের গোশত বিক্রি কী জায়েজ?
চামড়া ও গোশতের ছবি। সংগৃহীত

কোরবানি, মুসলিম উম্মাহর এক মহান ইবাদত। ত্যাগের এই দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করা হয়। কোরবানির গোশত বিতরণ ও ব্যবহার নিয়ে সমাজে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, যা নিরসনে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মুসনাদে আহমাদ বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রাথমিকভাবে কোরবানির গোশত তিন দিনের বেশি খেতে নিষেধ করেছিলেন, যাতে সবাই গোশত পায়। পরে তিনি এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে অনুমতি দেন যে, যতদিন ইচ্ছা কোরবানির গোশত খাওয়া যাবে। তবে, তিনি সুস্পষ্টভাবে কোরবানির গোশত এবং হাদী (হজের সময় কোরবানিকৃত পশু) এর গোশত বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। তাঁর নির্দেশ ছিল, নিজেরা খাও এবং অন্যদেরকে দান করো।’(হাদিস,১৬২১০)

একইভাবে, কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করাও নিষেধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এগুলোর চামড়া নিজেদের কাজে ব্যবহার করো। তা বিক্রি করো না।’ এর অর্থ হলো, চামড়া ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা যাবে, যেমন জায়নামাজ বা বালিশের কভার বানানো। যদি চামড়া বিক্রি করতেই হয়, তবে সেই অর্থ দরিদ্রদের মাঝে সদকা করতে হবে; নিজের জন্য ব্যবহার করা যাবে না।

অতএব, এই হাদিসের আলোকে মাসয়ালাটি স্পষ্ট হয় যে, কোরবানির নিজ অংশের গোশত হোক বা অন্য কোনো অংশের, তা বিক্রি করা জায়েজ নয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং অভাবীদের মাঝে গোশত বিতরণ করে তাদের হক আদায় করা। কোরবানির এই মহৎ উদ্দেশ্যকে সমুন্নত রাখতে আমাদের শরিয়তের নির্দেশনা মেনে চলা আবশ্যক। যদি কেউ আপনাকে হাদিয়া হিসেবে কোরবানির গোশত দেয়, তবে তা আপনি খেতে পারবেন।

 

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক