
বর্তমানে একশ্রেণির মানুষের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ট্যাটু আঁকা বা উল্কি অঙ্কন। অনেকে না জেনে ফ্যাশন হিসেবে শরীরে ট্যাটু আঁকে। ট্যাটু আঁকা বা উল্ক অঙ্কন সম্পর্কে ইসলামের বিস্তারিত বিধান তুলে ধরা হলো—
আল্লাহ মানুষকে সুন্দর অবয়ব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম কাঠামো দিয়ে।’ (সুরা তিন, আয়াত: ৪)। তবে একশ্রেণির মানুষ এই সুন্দরকে অসুন্দর করছে। অসুন্দরের চর্চায় হারামে জড়াচ্ছে। প্রাচীনকাল থেকেই কিছু মানুষ শরীরে ট্যাটু আঁকত। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগেও এর প্রচলন ছিল। একে ইংরেজিতে ট্যাটু, বাংলায় উল্কি এবং আরবিতে ওয়াশম বলে। মানবদেহের ত্বকে সুই বা এ জাতীয় কোনো কিছু দিয়ে ক্ষত করে বাহারি রঙের নকশা করার নামই উল্কি বা ট্যাটু। ট্যাটু সাধারণত স্থায়ী হয় অথবা সহজে মুছে ফেলা যায় না। ইসলামে ট্যাটু করা হারাম।
আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন সব নারীর ওপর অভিসম্পাত করেছেন, যারা শরীরে উল্কি আঁকে ও অন্যকে দিয়ে উল্কি আঁকায় এবং সৌন্দর্যের জন্য ভ্রুর চুল উপড়িয়ে আল্লাহতায়ালার সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে।’ (তিরমিজি, ২৭৮২)
ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘যেসব নারী নকল চুল ব্যবহার করে, যারা অন্য নারীকে নকল চুল এনে দেয় এবং যেসব নারী উল্কি আঁকে ও যাদের জন্য করে; রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের অভিশাপ দিয়েছেন।’ (তিরমিজি, ১৭৫৯)
ট্যাটুতে বিভিন্ন প্রাণীর ছবি আঁকা হয়, যা গুনাহের কাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যারা প্রাণীর ছবি আঁকে, তাদের কেয়ামতের দিন শাস্তি দেওয়া হবে এবং তাদের বলা হবে, তোমরা যা সৃষ্টি করেছিলে তাদের আত্মা ও জীবন দাও।’ (বুখারি, ৪৭৮৩)
শরীরের মধ্যে ট্যাটু বা উল্কি আঁকা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃতির নামান্তর। রাসুলুল্লাহ (সা.) ট্যাটু করতে নিষেধ করেছেন। ট্যাটুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিসম্পাত করেছেন।
কৃত্রিম উপায়ে অঙ্গে বিকৃতি সাধন করা গুনাহের কাজ। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ক্ষতি হয় এমন যেকোনো কাজই ইসলামে নিষেধ। একইভাবে ট্যাটু করতে গিয়ে পর্দার বিধান পুরোপুরি লঙ্ঘিত হয়, যা শরিয়তের বিধান অনুযায়ী অপরাধের শামিল। যেখানে সর্বদা নারীর অঙ্গ ঢেকে রাখা আবশ্যক, সেখানে একজন নারীর অঙ্গে ট্যাটু করে মানুষকে দেখিয়ে বেড়ানো মারাত্মক গুনাহের কাজ। এই বিধান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য।
এটি একটি অভিশপ্ত প্রথা, যা প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। শরীরে ট্যাটু বা উল্কি আঁকা বেশির ভাগ ইসলামি আইন বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিতে হারাম। তারা বলেছেন, যেসব উপায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্ট অঙ্গে পরিবর্তন আনা হয়, তার সবই নিষিদ্ধ। আলাদা চুল লাগানো, ভ্রু প্লাক করা, চোখে আলাদা পালক লাগানো ইত্যাদি ইসলাম অনুমোদন করে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যেসব নারী সৌন্দর্যের জন্য উল্কি অঙ্কন করে এবং যাদের জন্য করে এবং যেসব নারী ভ্রু উৎপাটন করে এবং দাঁত ফাঁকা করে, আল্লাহতায়ালা তাদের অভিসম্পাত করেছেন।’ (বুখারি, ৫৬০৪)
লেখক: শিক্ষক, মারকাজুল কোরআন মাদরাসা, শ্রীপুর